১.০৮ নর ও নারীর যৌন-প্রকৃতিভেদ

নর ও নারীর যৌন–প্রকৃতিভেদ

নারী ও পুরুষের প্রকৃতিভেদ

পুরুষ ও নারীর দৈহিক বিভিন্নত হইতে মানসিক ও প্রাকৃতিক বিভিন্নতার সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া প্ৰাচীন পণ্ডিতগণের একটা সাৰ্বজনীন বিশেষত্ব। প্রাচীনকালের সভ্য ও অসভ্য সকল জাতির মধ্যেই এই মতবাদ দৃষ্ট হয় যে, পুরুষ সকল দিক দিয়াই নারী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। পুরুষ যুগযুগান্তর ধরিয়া নারীর উপর প্ৰাধান্য বিস্তার করিয়া আসিতেছে। প্ৰাচীনকালের শরীরতত্ত্ববিদগণেব মধ্যেও অনেকের মত এই যে, পুরুষ অপেক্ষা নারীর মস্তিষ্কের পরিমাণ অনেক কম। আধুনিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে নারীপুরুষেল প্ৰকৃতির তুলনামূলক অনেক গবেষণা হইয়াছে। প্রাগৈসলামিক যুগে ইউরোপে নারীর আত্মার অস্তিত্বই স্বীকার করা হইত না। ইসলাম নারীজাতিকে অনেক বিষয়ে পুরুষের সমান অধিকার দিয়াছে কিন্তু তবুও পুরুষ প্রাধান্য প্ৰতিষ্ঠা করিয়াছে। ভারতে নারীর আত্মার অস্তিত্ব বরাবর স্বীকার করা হইত। বৈদিক যুগে নরনারীর সমান অধিকার ছিল। পরবর্তী বহু শতাব্দী ধরিয়া প্ৰাক-মুসলিম ভারতে পর্দা প্রথা ছিল না। নারীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার ও গভীরতা ছিল এবং স্বয়ম্বর প্রথা ছিল।*

————

*Sex Life in Ancient India by Meyrs (1930) at Women in Ancient India by Altekar দেখুন।

————

কে শ্রেষ্ঠ?

অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসী বিপ্লবেব সমসময়ে সমগ্ৰ ইউরোপে নারী। সম্বন্ধে নূতন চেতনার সঞ্চার হয়। এই সময়ে কেহ কেহ স্ত্রীজাতির প্রতি দয়াশীল হইয়া প্রচার করিতে . লাগিলেন যে, নারী পুরুষে জন্মগত কোনও পার্থক্য নাই, শিক্ষা ও পাবিপাশ্বিক অবস্থাই পরবর্তী জীবনে শ্ৰেষ্ঠত নিকৃষ্টতা আনয়ন করিয়া থাকে এবং নারী সামাজিক ও রাষ্ট্ৰীয় জীবনে পুরষের সমান সুযোগ-সুবিধা পাইলে সকল কাজে, জীবনের সকল স্তরে, পুরুষের সমকক্ষ হইতে পারিত। রাসকিন (Ruskin) বলিয়াছেন,–“সমবয়স্ক একটি বালক ও একটি বালিকা যতদিন ধূলাখেলা করে, ততদিন তাহাদের মধ্যে কোন পার্থক্য দৃষ্ট হয় না। হঠাৎ একদিন একজনকে ধরিয়া শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের উজ্জল আলোকময় রাজপথে ছাড়িয়া দেওয়া হয় এবং অপরটিকে ধূলাখেলারই নামান্তর রান্নাঘরের অন্ধকার কক্ষে আবদ্ধ করা হয়। এই অবস্থায় তাহাদের জানিবুদ্ধিতে যে পার্থক্য দৃষ্ট হয়, তাহা যে প্রকৃতিগত বা জন্মগত, তাহা ন্যায়ত কিরূপে বলা যাইতে পারে?’

স্বাভাবিক পার্থক্য

আধুনিক পণ্ডিতগণ গবেষণা করিয়া দেখিয়াছেন যে, মেধা, মানসিক ক্ষমতা বা প্ৰতিভাব দিক হইতে বিচার কবিলে নারী ও পুরুষের মধ্যে একটা প্রকৃতিগত পার্থক্য পবিলক্ষিত হয়। এই পার্থক্য শুধু সুযোগ-সুবিধাব অভাব নহে। ডাঃ কোরা ক্যাস্‌ল (Cora Castle) একজন মহিলা। তিনি নারী-জাতির প্ৰতিভাব গবেষণা করিতে গিয়া দেখিয়াছেন যে, পৃথিবীব সৃষ্টি হইতে এ পর্যন্ত মাত্র ৮৬৩ জন মহিলা পুরুষের সমকক্ষ প্রতিভার পরিচয় দিয়াছেন। প্রতিভা স্বভাবজাত। ইহা সুযোগ-সুবিধার ধার ধারে না। পৃথিরীতে ধৰ্মনৈতিক রাজনৈতিক বা বৈজ্ঞানিক যত মনীষী জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, তাঁহাদের অনেকে সুযোগ-সুবিধা ত পানই নাই, উপরস্তু নির্যাতিত হইয়াছেন। সুতরাং নারীজাতির মধ্যে অসাধারণ মনীষা থাকিলে তাহাও সমস্ত বিরুদ্ধতা ঠেলিয়া আত্মপ্রকাশ করিত।

বর্তমানে নারীজাতি সকল ব্যাপারে পুরুষেরা প্ৰায় সমান সুযোগ-সুবিধা পাইতেছে। পাশ্চাত্য দেশে সহশিক্ষারও প্ৰচলন হইয়াছে। প্ৰাচীনকালে নারীকে এতটা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় নাই। তবু ঐ সময়ে যত নারী মনীষী জন্মগ্রহণ করিয়াছিল, বর্তমানে তাহার চেয়ে অধিক জন্মগ্রহণ করেন নাই; বরঞ্চ নারী যেন দিন দিন অধিক মাত্রায় খেলার পুতুলে পরিণত হইতেছে। মিঃ এইচ জি. ওয়েলস তাঁহার ‘The Work, Wealth and Happiness of Man kind’ নামক পুস্তকে অধ্যাপক মেশনিকফকে সমর্থন করিয়া বলিয়াছেন যে, নারীপুরুষে প্ৰকৃতি ও প্রতিভাগত বিভিন্নতা বিদ্যমান আছে।

কিন্তু আমেরিকা ও জার্মানীব গবেষকগণেব সকলে এ বিষয়ে একমত যে পুরুষের চেয়ে অনেক কম বয়সে নারীর জ্ঞান বিকশিত হয়। ডাঃ হেম্যানাল প্রভৃতি বহু বিজ্ঞানী এই সিদ্ধান্তে আসিয়াছেন যে, স্মৃতিশক্তি ভাবপ্ৰবণতায় নারীজাতি পুরুষের চেয়ে অনেকপানি শ্রেষ্ঠ।

দয়া, মায়া, স্নেহ, প্ৰেম, সেবা প্ৰভৃতিতে নারী পুরুষ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। মনুষ্যত্বের দিক দিয়া এগুলি পুরুষের শারীরিক শক্তি, বুদ্ধি, মেধা, চিন্তাশীলতা ইত্যাদি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর গুণ। স্বজনী প্রতিভায় নারীর ন্যূন হইবার কারণ সম্ভবত এই যে সস্থান প্ৰজনন ও পালনে তাহার অধিকাংশ সৃষ্টি ক্ষমতা নিঃশেষিত হওযার মানসিক সৃষ্টির ক্ষমতা বহুল পবিমাণে হ্রাস হয়। কিন্তু গড়পড়তা নিঃসন্তান নারীদের ও সৃজনী প্ৰতিভা অপরদেরই মত, অর্থাৎ গড়পড়তা পুরুষের অপেক্ষা নিকৃষ্ট।

এই সমস্ত গবেষণার ফলে বর্তমানে নারীপুরুষের তুলনামূলক শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদনের স্পৃহা কতকটা লোপ পাইয়াছে। আধুনিক পণ্ডিতগণের অনেকে ‘নারী শ্রেষ্ঠ কি পুরুষ ‘শ্রেষ্ঠ’-এই দুইটি মতবাদের একটি যুক্তিসঙ্গত মধ্য-পথ বাছিয়া লইয়াছেন।

নর ও নারী পরস্পরের পরিপূরক

ইহাদের মত এই যে, নারী ও পুরুষের মধ্যে একটা প্ৰকৃতিগত বিভিন্নতা আছে। কিন্তু উহাকে তুলনামূলক শ্রেষ্ঠতা বলা অন্যায় হইবে। স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রের মধ্যে উভয়েই শ্ৰেষ্ঠ। নারীপুরুষ পরস্পরের পরিপূরক, একজন ব্যতীত অন্য জন পূর্ণ নয়। সেইজন্য আমাদের ভাষায় স্ত্রীকে ‘অর্ধাঙ্গিনী’* বলা হইয়াছে। ডাঃ কিশ (Kish) এ বিষয়ে অতি সুন্দর কথা বলিয়াছেন। তিনি বলেন যে, যে নারী-স্বাধীনতা আন্দোলন নারীকে পুরুষ-নিরপেক্ষভাবে স্বাধীন করিতে চায়, তাহা প্ৰকৃতি বিরুদ্ধ, এ আন্দোলনের প্ৰবক্তরা নারীকে তাহার প্ৰকৃতিদত্ত দায়িত্ব বহনে অস্বীকৃত হইতে শিক্ষা দেন। কিন্তু নারী মাতৃত্ব, সন্তানের অভিভাবকত্ব ও নিঃস্বাৰ্থপরতা এড়াইবার যতই চেষ্টা করুক না কেন, সে কিছুতেই স্বীয় নারীত্ব হইতে মুক্ত হইতে পারে না।

এই সিদ্ধান্তই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত। জীবনযাপনে নারী ও পুরুষ পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক বলিয়াই উভয়ে সমান মনীষা সম্পন্ন না হইলেও মানুষ মোটের উপর ক্ৰমশঃ উন্নতির পথে অগ্রসর হইতেছে।

————-
* হয়ত এই জন্যই হিন্দু পুরাণে অর্ধনারীশ্বর (একই দেহে এক পার্শ্বের অর্ধেক শিব ও অর্ধেক শক্তি) মূর্তির কল্পনা দেখা যায়।
————

পুরুষের স্বার্থপরতা

নারী ও পুরুষ কেহই একে অন্য ব্যতিরেকে পূর্ণাঙ্গ নহে-ইহাই প্ৰকৃতির বিধান। শুধু মানুষের মধ্যেই যে এই কথা খাটে তাহা নহে, সমস্ত জীবজগতেই এই নিয়ম বিদ্যমান। নরনারী পরম্পর নির্ভবশীল অবস্থায় পদক্ষেপ করিয়া চলিয়াছে, তাহাদের কর্মক্ষেত্র বিভিন্ন হইয়া আসিয়াছে। তবে পুরুষ যে কোন কারণেই হউক এ যাবৎ প্ৰভুত্ব ও অধিকার পরিচালনা করিয়া আসিয়াছে।

প্রকৃতপক্ষে নারী ও পুরুষের মধ্যে কে শ্ৰেষ্ঠ ইহা লইয়া তর্ক করা, জাঁতার দুই পাটের মধ্যে যে কোনটি শ্রেষ্ঠ ইহা লইয়া তর্ক করার মতই নিস্ফল ও হাস্যকর। আমরা পূর্বেই বলিয়াছি, নিজ নিজ ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয়েই শ্ৰেষ্ঠ, কিন্তু সেই শ্রেষ্ঠত্ব তাহাদের তুলনামূলক শ্রেষ্ঠত্বেব সূচনা করে না, এবং করে না বলিয়াই এক শ্রেণীর উপর। প্ৰভুত্ব করিবার কোনও অধিকার অপর শ্রেণীর নাই। বিপুল প্রকৃতিব আর কোনও ক্ষেত্রে স্ত্রীপুরুষের এই পার্থক্য বিদ্যমান নাই, এবং আর কোথাও নারীর উপর পুরুষের এই অন্যায় এবং অনিষ্টকারী প্ৰভুত্ব দেখিতে পাওয়া যায় না।

নারীচরিত্র চিত্রণে পুরুষের বিরুদ্ধভাব

বহু প্ৰাচীনকাল হইতে পুরুষ স্বীয় বাহুবলে নারীকে পদানত করিয়া বাখিয়াছে। ইহার উপরে আবার শিক্ষার আলোক বঞ্চিত নারী নিজের সম্বন্ধে যতটুকু লিখুক আর না-ই লিখুক, পুরুষ তাহাকে লইয়া হরদম কলম চালাইয়াছে। ধর্মমতের প্রবর্তকগণ সকলেই পুরুষ হওয়ায় নারীকে পদমর্যাদা দিবার বেলায় অনেকটা কার্পণ্য করিয়াছেন।

নারীকে শুধু অবনত রাখিয়াই পুরুষ ক্ষান্ত হয় নাই। ইহার প্রতি আবিচারমূলক মতবাদ প্রচারও কম করে নাই। বাইবেলের মানবসৃষ্টি সম্বন্ধীয় বিভাগে (Book of Genesis) নারীকে হেয় করিয়া চিত্রিত করা হইয়াছে, নায়িকা হেলেনের চরিত্রকে খাটো করিয়া প্ৰাচীন গ্ৰীক কবি হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াড (Iliad) রচিত হইয়াছে, পুরাতন পুঁথি-পুস্তকে নারীকে অবলা অসহায় যত-না বলা হইয়াছে তাহার চেয়ে বেশী বলা হইয়াছে কুটিলা, কুচতুরা ও স্বার্থন্বেষিণী।

পুরাতন পুঁথি-পুস্তকের এক শ্রেণীর আলোচ্য বিষয় ছিল নারী-চরিত্রের খারাপ দিকটা। তখনকার মনোভাবের অনুকূলে মজাদার গল্প-উপন্যাস সাজাইয়া নারীকে অবিশ্বাস্ত প্ৰতিপন্ন করা, পুরুষকে নারীর কুহক হইতে মুক্ত থাকিবার উপদেশ দেওয়া, অথবা লেখকের দুর্ভাগ্যক্রমে কোনও দুষ্ট নারীর সংসর্গ করিয়া তিক্ত হইয়া সমগ্র নারীজাতিকেই আক্রমণ করা—ইত্যাদি লইয়া নারীজাতির বিপক্ষে এক প্রকার সাহিত্য গড়িয়া উঠিয়াছিল।

শঙ্করাচাৰ্য তাঁহার ‘মোহমুদগর’-এ লিখিয়াছেন ‘নরকের দ্বার কি? নারী’। চাণক্য শ্লোকে নারী, নদী, নখী (নখরধারী পশু) ও রাজাদের বিশ্বাস করিতে বারণ করা হইয়াছে। একটি উদ্ভট সংস্কৃত শ্লোকে বলা হইয়াছে যে, স্ত্রীজাতির চরিত্র ও পুরুষেরা ভাগ্য দেবতারাও জানেন না। অপর এক উদ্ভট শ্লোকে বলা হইয়াছে যে, নারী পুরুষ অপেক্ষা ভোজনে চতুর্গুণ, কলহে ষড়গুণ ও কামে অষ্টগুণ।

ইসলাম নারী জাতিকে অনেকটা স্বাধীনতা ও সম্মান দিয়াছে, তবুও বাল্যবিবাহ, দাসী উপভোগের ব্যবস্থা, বহু বিবাহ, তালাকের সহজ পন্থা ও পুরুষ প্রাধান্য ইত্যাদি সভ্য-মত-বিরুদ্ধ। আইন করিয়া মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ এ সবের প্রতিকার করিতেছেন। আমরা এ প্রচেষ্টাকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করি। প্ৰাচ্য দেশের আরব্যোপন্যাস, পাবস্যোপন্যাস, ‘বাহার দানেশ’ ইত্যাদি পড়িলে মনে হইবে, নারীজাতি কুচক্ৰী, খামখেয়ালী, শঠতাপূর্ণ।

বস্তুতঃ বিখ্যাত আরবী ‘আলফ লায়লা’ (সহস্ৰ বজনী বা ‘আরব্য উপন্যাস) নামক পুস্তকের গোড়ার উপাখ্যানই এই যে, কোনও রাজা তাহার এক স্ত্রীর চরিত্রহীনতার চাক্ষুষ প্রমাণ পাইয়া সিদ্ধান্ত করিয়া বসিলেন যে, তিনি আর তাহার স্পৃষ্টা নারীকে অন্য পুরুষেরা দ্বারা প্ৰলুব্ধ হইবার অবকাশই দিবেন না, তাহার শয্যাশায়িনী নারীকে প্ৰত্যুষেই মারিয়া ফেলা হইবে। এই অবিচারমূলক হত্যাকাণ্ড হইতে তাঁহাকে বিরত করিলেন অবশেষে তাহার মন্ত্রীর কন্যা। ইনি রাজাকে মনোজ্ঞ গল্প শুনাইয়া এবং সুকৌশলে গল্পগুলিকে অসমাপ্ত রাখিয়া রাখিয়া এক হাজার এক রাত্রি পার করিয়া দিলেন।

রাজাদের অসংখ্য স্ত্রীলোক রাখিয়া, তাহাদের সকলের যৌনজীবনকে নিষ্ঠুরুভাবে দলিত করার অপরাধের তুলনায় কোন কোন হতভাগিনীর পদস্খলন নগণ্য নয় কি?

১২৭৪ সালে ম্যাহিউ লে বিগামি (Mahieu Le Bigame) নামক একজন ফরাসী লেখক কতকগুলি অনুশোচনাত্মক উক্তি (Lamentations) প্ৰকাশ করেন। ইনি একজন বিধবাকে বিবাহ করেন এবং এই কারণে তাঁহাকে

পাদ্রীগোষ্ঠী হইতে বাহির করিয়া দেওয়া হয়।* দুর্ভাগ্যবশতঃ তাঁহার স্ত্রীটি রুক্ষস্বভাবের ছিল এবং তাঁহার সামাজিত অধঃপতন এবং মানসিক অশান্তির কারণ এই নারীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করিতে গিয়া তিনি সমগ্ৰ নারীজাতিকেই আক্ৰমণ করিয়া গিয়াছেন।

ইহাছাড়া এক প্রকার শ্লোকগাঁথা (Fabliaux) প্রচলিত আছে। সেগুলিতে ছোট ছোট ছড়ায় নারীজাতিকে জঘন্যভাবে আক্রমণ করা হইয়াছে। Jean de Meun-এর Roman de la Rose এই শ্রেণীর একখানি কাব্যগ্রন্থ। এই কবির মতে, নারী গর্বিতা, খেলো, কুচক্রী–পাপ এবং স্বেচ্ছাচার আসক্তা। ইহা ছাড়া তিনি একজন হতাশ প্রেমিকের মুখ দিয়া নারীজাতির প্ৰতি জঘন্য এই উক্তি করান :

‘All women are, will be, or were,
Indeed or in desire, base whores.’

অর্থাৎ সকল নারীই কাৰ্যতঃ বা বাসনায় হেয় বেশ্যা ছিল, আছে বা হইবে।

পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে আঁতোনে দে লা সেল (Antoine da la Sale) নামক এক ফরাসী লেখক Quinze Joyes (Fifteen Joys of Marriage-বিবাহের পনরটি সুখ) নামে একখানা মজাদার বই লিখিয়া গিয়াছেন। ইহাতেও বিবাহ হইতে মৃত্যু পৰ্যন্ত নারীর হাতে পুরুষ কিরূপ বিব্রত, লাঞ্চিত ও প্ৰতারিত হয় তাহা বেশ রসিকতার সহিত বৰ্ণনা করা হইয়াছে। Balzac-এর Physiology of Marriage অনেকটা নারী অবমাননাকব। তিনি খুব বিজ্ঞের মত গম্ভীরভাবে তাঁহার মতামত চালাইয়া দিতে চেষ্টা করিয়াছেন।

যুগযুগান্তরে দখলীস্বার্থের মোহে হয়ত নারীর অধিকাব দাবির আন্দোলন সহানুভূতির চক্ষে দেখিতে পারিবে না, কিন্তু সত্যানুসন্ধিৎসু পুরুষ যদি নিজেকে স্ত্রীলোকের অবস্থায় কল্পনা করিয়া একবার ধীরভাবে বিষয়টা পৰ্যালোচনা করিতে পারে, আমাদের মনে হয়, তবেই অধিকারের মোহ-কুজ্‌ঝটিকা অপসারিত হইয়া তাহার অন্তর ন্যায় ও সত্যের আলোকে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিবে।

আমরা জানি, ভুঞ্জিত অধিকারের মোহ সহজে ঘোচে না। আমায়া ইহাও জানি, অন্যায় অধিকারভোগীর ভোগ স্পৃহা বাহ্যতঃ সঙ্গত যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ধর্ম, নীতি ও সভ্যতার নামে যুগে যুগে কত শাসক কোটি কোটি মানবসন্তানেব উপর অন্যায় অনধিকার প্ৰতিষ্ঠা করিয়া নিজেদের ভোগালালসায় ইন্ধন যোগাইয়াছে, ইতিহাস তাহার সাক্ষী। আধুনিক যুগেও দেশ, জাতি, বর্ণ ও আবহাওয়ার নিতান্ত প্রকৃতির বিভিন্নতার সুযোগ গ্রহণ করিয়া এক জাতি অপর জাতির উপর অন্যায়ভাবে প্ৰাধান্য করিতেছে। অধিকারের এই মোহ, আভিজাত্যেব এই অভিমান, বর্ণশ্রেষ্ঠত্বের এই অহমিকা, সাধারণ মানুষ তা দূরের কথা, বড় বড় সত্যানুরাগী সাধক পণ্ডিতেরও সত্যদৃষ্টিকে কতটা মোহাচ্ছন্ন করিয়া ফেলিয়াছে, তাহার উদাহরণ ডাঃ ফোবেল। অন্যান্য বহু বিষয়ে সত্যানুরাগী হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁহার The Sexual Question গ্রন্থে প্ৰাচ্যজাতিসমূহের বিশেষত চীনা ও কাফ্রীদের জন্মের হার দর্শনে ইউরোপীয় সভ্যতার বিপদ কল্পনা করিয়া আতঙ্কিত হইয়া উঠিয়াছেন। ইউরোপের সোনার মাটিতে জন্মগ্রহণ করিবার প্ৰশংসা যেমন ডাঃ ফোবোলেব প্ৰাপ্য নহে, তেমনই প্রাচ্যের মৃত্তিকায় জন্মগ্রহণ করিবার দুর্ভাগ্যের জন্য চীনা বা কাফ্রী দায়ী নহে। ফলতঃ জন্ম, বৰ্ণ, শ্রেণী বা আবহাওয়ার জন্য নিন্দা বা প্ৰশংসার অধিকারী মানুষ নহে—দৈব ও প্রকৃতি। সুতরাং মানবতা ও সভ্যতায় সকলের অধিকার সমান।** এই পুস্তকের উপক্ৰমণিকায় আমরা যে সত্যানুরাগ ও মুক্তবুদ্ধির কথা বলিয়াছি, সেই দুইটি গুণ ব্যতীত আমরা এ বিষয়ে সত্যোপলব্ধি করিতে পারিব না।

—————-

* রোমান ক্যাথলিক পাদ্রী ও অপরাপর ধর্মের সন্ন্যাসীদের (monks or fathers) আজীবন কৌমার্য ব্ৰত গ্ৰহণ করিতে হয়। এই ব্যবস্থা নিছক কুসংস্কার প্রণোদিত এবং সভ্য জগৎকে আইন করিয়া সতীদাহ বা নির্যাতনের মত ইহার উচ্ছেদ সাধন করিতে হইবে।
** এই প্রসঙ্গে আমার ইংরেজি Art of Discipline, Management and Leadership Farewell to Bloodshed ও বাংলা ‘মানব মনের আযাদি’ পুস্তকগুলিতে সূদীর্ঘ আলোচনা করা হইয়াছে।

—————

নারীপুরুষের যৌনবোধের পার্থক্য

নারীপুরুষেরা প্রকৃতিগত বিভিন্নতা যৌনব্যাপারেও প্রয়োজ্য কি না তাহা লইয়াও পণ্ডিতগণের মধ্যে অনেক গবেষণা হইয়াছে। যৌনবাসনায় নারীজাতি পুরুষ অপেক্ষা ধীরগামী! মূলতঃ এই বিভিন্নতার দ্বারাই তাঁহাদের যৌনজীবন নিয়ন্ত্রিত হয়। এই পুস্তকের দ্বিতীয় খণ্ডের ‘দম্পতির রতিজীবন’ শীর্ষক অধ্যায়ে আমরা এই পার্থক্যের আরও ব্যাখ্যা করিয়াছি।

 () পুরুষ সকৰ্মক–শারীরিক গঠনপার্থক্য ও মিলনে কর্তব্যের বিভিন্নতাহেতু নারীপুরুষের মধ্যে যৌনবোধের পার্থক্য আছে। ডাঃ ফোরেল বলিয়াছেন, যৌনমিলনে পুরুষ সকর্মক। সেজন্য উহার গোড়াতে পুরুষের বাসনা খুব তীব্ৰ। পুরুষের এই বাসনা স্বতঃস্ফূর্ত এবং জন্মদাতা হিসাবে ইহাই তাহার পক্ষে স্বাভাবিক।

‘The Primary Functional Characters and Fecundation -t is gence rally accepted that was we may term sexual hunger or the dynamic drive of one sex towards the other is stronger in the male than it is in the female. All the world over it is the male who seeks and fights for the possession of the female. I o the female the male is a means to an end, for the nate she is an end in herself. The male seeks for the female as a means of satisfying his sexual urge : the female submits to him because by doing so she will achieve her maternal aim. The instinctive drive of the male towards the female is therefore more blind and compelling than that of the female towards the male. Not only in the animal. but also in the human world it is the male who searches for the female, just as in the cellular origins of multicellular life it is the spermatozoon that seeks for the ovum.’ Kenneth Walker

যৌনবোধ নারীজীবনে যতটা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করিয়া থাকে, পুকষজীবনে ততটা প্রভাব বিস্তার করিতে পারে না। তবু বিহারে পুরুষেরা এই সকর্মকতা তাহার মনের উপর বিপুল ক্রিয়া করিয়া থাকে।

() যৌনমিলনে পুরুষের প্রাধান্য–সকর্মকতাই পুরুষের যৌনবোধকে নারীর যৌনবোধ হইতে সুস্পষ্টরূপে পৃথক করিয়াছে। সুরতক্রিয়া নারী অপেক্ষা পুরুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে অনেক বেশী। উহাতে পুরুষের ইচ্ছা ও শক্তি প্ৰয়োজন, নারীর ইচ্ছা বা শক্তির ততটা প্রয়োজন নাই। সাধারণত যৌনবোধ যৌনক্ষমতার উপরই অনেকখানি নির্ভর করে। অবশ্য খুব শক্তিশালী পুরুষেরও বাসনার তীব্ৰতা না থাকিতে পারে এবং ধ্বজভঙ্গ রোগীরাও তীব্র বাসনা থাকিতে পারে, কিন্তু উহা সাধারণ অবস্থা নহে। সঙ্গমে পুরুষের এই সকর্মকতা তাহার কামনাকে খুব তীব্র করে বটে, কিন্তু শুক্রম্বলনের পরই তাহার উত্তেজনার হঠাৎ নিবৃত্তি হয় বলিয়া পুরুষের বাসনা যেমন ঝড়ের বেগে জাগ্রত হয়, তেমনই ঝড়ের বেগেই তিরোহিত হয়। পক্ষান্তরে নারীর বাসনা সহজে ও সহসা জাগ্রত হয় না। মৃদুভাবে আরম্ভ হইয়া ধীরে ধীরে তীব্র হয় এবং সুরত শেষে (পরমানন্দ লাভের পর) ধীরে ধীরে কমিতে থাকে।*

—————
* এই বৈষম্যই দম্পতির মিলনসুখের প্রধান অন্তরায়। ইহাকে “The Greatest Marital Problem” বলিতে পারি। এই নামে ইংরেজিতে একটি বইও লিখিয়াছি। এই পুস্তকের ২য় খণ্ডেও এ সমস্তায় সমাধানের বিস্তৃত আলোচনা করিয়াছি।
————-

 () শুক্রসঞ্চয় ও শুক্ৰস্খলন–পুরুষের যৌন-বাসনার দৈহিক প্রকাশের একটা বিশিষ্ট ভঙ্গি আছে। পুরুষের শুক্ৰকোষ শুক্ৰ সঞ্চিত হইলে তাহার বাসনা তীব্র হয় এবং শুক্রস্খলিত হইবামাত্রই উহা প্রশমিত হয়। অবশ্য শুক্রকোষে শুক্ৰ সঞ্চিত হইবা মাত্রই সব সময়ে পুরুষেরা উত্তেজনা হয় না, সেজন্য নারীর স্পর্শ বা অনুরূপ কামোদ্ৰেককারী কোনও ঘটনার প্রয়োজন। তথাপি পুরুষেরা বাসনা যে একদিকে শুক্রসঞ্চয় ও অপর দিকে শুক্ৰশ্বলন দ্বারা সীমাবদ্ধ তাহাতে সন্দেহ নাই।

() নরনারীর যৌনবোধের প্রকাশভেদ–পুরুষের যৌনবাসনার দ্বিতীয় বিশেষত্ব ইহার প্ৰকাশভঙ্গী। মুখমণ্ডলের পৈশিক ভঙ্গি হইতে আমরা তাহা কখনও কখনও বুঝিতে পারি। তাহার অন্তরের তীব্র বাসনা স্নায়ু কেন্দ্রের মধ্য দিয়া গতিবাহী স্নায়ু মণ্ডলের সাহায্যে সমস্ত দেহে বিক্ষিপ্ত হয়। তবে জননেন্দ্ৰিয়মণ্ডলেই উহার ক্রিয়ী সর্বাপেক্ষা বেশী। বস্তুত: পুরুষের জননেন্দ্ৰিয়ের ঘোর পবিবর্তনই নারী ও পুরুষের যৌনবোধ প্ৰকাশের সুস্পষ্ট পার্থক্য। বলা বাহুল্য, পুরুষের লিঙ্গোত্থানের ন্যায় এতটা সুস্পষ্ট দৈহিক পরিবর্তন নারীর মধ্যে হয় না, যদিও তীব্র কামের সময় তাহার ভগাঙ্কুর ও স্তনবৃন্ত অল্প দৃঢ় ও উত্থিত হয়।

() পুরুষের বহু-ভোগ বাসনা–পুরুষের যৌনবাসনার তৃতীয় বিশেষত্ব তাহার একে-অতৃপ্তি। মিলনে পুরুষের কোনও দৈহিক দায়িত্ব নাই–সন্তান ধারণা করিতে হয় না বলিয়া পুরুষেরা বহু নারীভোগের প্ৰাকৃতিক সুবিধা আছে। এই সুবিধাবোধ হইতে তাহার বহুনারীভোগের বাসনা স্ফুরিত হইয়াছে। রতিক্রিয়ায় সকর্মকত্ব তাহাকে নারীর উপর যে প্ৰাধান্য দান করিয়াছে, সেই প্ৰাধান্যবোধ ও সহজলভ্য ও নিত্যব্যাবহার্য দ্রব্যের প্রতি মানবমনের স্বাভাবিক উপেক্ষা এবং অবজ্ঞা —এই দুইটি মনোবৃত্তি পুরুষকে নিত্য নূতন নারীভোগে উদ্ধৃদ্ধ করিয়া থাকে। পুরুষের এই নিত্যনূতন ভোগস্পৃহা বহুপত্নীত্ব ও গণিকাবৃত্তি প্রভৃতি বহু সামাজিক অকল্যাণের মূলীভূত কারণ। পত্নীপ্ৰেম, অপত্যস্নেহ প্ৰভৃতি প্ৰকৃতিদত্ত কোমল বৃত্তি এবং দুর্নাম ও রোগের ভয় পুরুষের এই বহু ভোগের বাসনাকে কতকটা সংযত রাখে। আত্মসংযম সাধনার দ্বারাও পুরুষ তাহার এই বৃত্তিকে নিয়ন্ত্রিত করিতে পারে। এই দিক হইতে নারীমনোবৃত্তি পুরুষ মনোবৃত্তি হইতে সম্পূর্ণ পৃথক। নারী সাধারণত এক পতিতেই তৃপ্ত।

) নারী অকৰ্মক–মিলনে নারীর অংশ অল্পবিস্তুর অকৰ্মক তবে উত্তেজিত হইবার পারে উহারও সকর্মকতা প্রকাশ পায়, তবে পাছে স্বামী কামুকী বা বেহায়া মনে করেন এই ভয়ে কেহ কেহ তাহা চাপিয়া রাখে। নারীর যৌনবোধ পুরুষের যৌন-উত্তেজনার ন্যায় ক্ষণস্থায়ী এবং তীব্র নহে। তাহার কামকেন্দ্রগুলি বিস্তৃত ও ব্যাপক। পুরুষের যৌনবোধ যেমন তাহার যৌন-অঙ্গে সীমাবদ্ধ, নারীর যৌনবোধ তেমন নহে। সত্য বটে পুরুষের লিঙ্গের ন্যায় নারীর ভগাঙ্কুর ও স্তনবৃন্ত বাসনায় উত্তেজিত হয়, সত্য বটে তাহার স্তনাগ্র তাহার বিশেষ উল্লেখযোগ্য কামকেন্দ্ৰ, তথাপি তাহার কাম-বাসনাকে পুরুষের ন্যায় বিশেষাঙ্গিক বলা যাইতে পারে না।

() পার্থক্যের দৈহিক কারণ–পুরুষের যৌনবাসনা হইতে নারীর যৌনবাসনা্র এই পার্থক্যের কতকগুলি দৈহিক কারণ আছে-() নারীর শুক্রকোষ নাই সুতরাং, শুক্রসঞ্চয়জাত যে উত্তেজনা পুরুষের হয়, নারীর তাহা হয় না। এইজন্য নারীর বাসনা উত্তেজনার কারণ ঘটার পর কিছু বিলম্বে জাগ্রত হয় এবং ধীরে ধীরে বাড়ে। শুক্র না থাকায় কোনও বিশেষ মুহূর্তে পুরুষের শুক্ৰশ্বলনের ন্যায় নারীর কোনও পুলকপ্ৰদ রসক্ষরণ হয় না, সুতরাং নারীর উত্তেজিত বাসনা অন্তর্হিত হয়ও ধীরে ধীরে। সেইজন্য মিলনের গোড়াতে নারীকে সাধারণতঃ যেমন অনুচ্চত্তেজিত, উদাসীন, এমন কি অনিচ্ছুক বোধ হয়, উহার উপসংহারে তাহাকে তেমনি অতৃপ্ত ও অসন্তুষ্ট দেখা যাইতে পারে। পুরুষ সংযম, নানা প্ৰকার প্ৰেমক্রীড়া ও আসন কৌশল অবলম্বন করিয়া অতি সহজেই যে এই অসামঞ্জস্য দূর করিতে পারে, এই পুস্তকের দ্বিতীয় খণ্ডে আমরা তাহা আলোচনা করিয়াছি। () নারী ডিম্ব স্বয়ং অকর্মক, পক্ষান্তরে পুরুষের শুক্রকীট অতিশয় সকৰ্মক ও গতিশীল। তাই ডিম্বের আধার নারীদেহে ও শুক্ৰকীটের আধার নরদেহে যথাক্রমে নিষ্ক্রয়তা ও চঞ্চলতা দেখা যায়।

() নারীর যৌনবাসনার বৈচিত্র্য--রতিক্রিয়ায় নারীর এই অকৰ্ম-অকর্মকতাহেতু তাহার বাসনা একটু বৈচিত্র। মিলনে দৃশ্যতঃ তাহাকে অনিচ্ছুক অথবা উদাসীন দেখা গেলেও, এ কাৰ্যে পুরুষের নিকট সে খানিকটা জবরদস্তি আকাঙ্ক্ষা করিয়া থাকে। অধ্যাপক বাবার্ট মিচেলসি নারীর এই যৌনভাবকে দ্বৈত মনোভাব নাম দিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, নারীর বাসনার এটা দ্বৈতভাব কল্যাণ ও অকল্যাণ উভয়েরই আকর। অকল্যাণের হেতু এইজন্য যে রতিক্রিয়ায় নারী বাহ্যত এমন দৃঢ় অসম্মতি প্ৰদৰ্শন করিয়া থাকে যে, সুবিবেচক প্রেমিক পুরুষ ঐ অসম্মতি উপেক্ষা করিতে পারে না, কারণ স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিলনকে সে পাশবিকতা বলিয়া মনে করে। অথচ নারীর কৃত্রিম অনিচ্ছা ঠেলিয়া স্বামী যদি তাহার সঙ্গে মিলিত না হয়, তবে স্ত্রী তাহাকে অসন্তুষ্ট হইয়া থাকে। এই অসন্তোষের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হইতে পারে। হ্যাভলকি এলিস এ বিষয়ে একটি সত্য ঘটনার উল্লেখ করিয়াছেন। ডাঃ জ্যানেট একদা তাহার এক রোগিণীকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, ‘আপনি আপনার স্বামীকে পছন্দ করেন না কেন?” তালাককামী স্বামী উত্তর দিয়াছিলেন—“পছন্দ কবিব কি, তিনি বিন্দুমাত্র বলপ্রয়োগ জানেন না।” আবার রতিক্রিয়ায় নারীজাতি যে খানিকটা কৃত্ৰিম অনিচ্ছা প্ৰকাশ করিয়া থাকে, একথা জানিয়াও নিস্তার নাই। অনেক সময় স্ত্রী হয়ত সত্য-সত্যই শরীর বা মনের বৈকল্যহেতু অনিচ্ছুক হইতে পারে। বিবেচক প্ৰেমিক স্বামী কৃত্রিম ও অকৃত্ৰিম অনিচ্ছাব পার্থক্য বুঝিতে না পারিয়া সংশয়ে পতিত হয় এবং অনেক সময়ে সেইজন্য দাম্পত্য অপ্রীতির সৃষ্টি হইয়া থাকে।

() ধৰ্ষিত হওয়ার বাসনা–কিন্তু নারীর এই কৃত্ৰিম অনিচ্ছা পুরুষের কল্যাণও করিয়া থাকে। নারীর এই কৃত্রিম অনিচ্ছা—যাহাকে গ্রাম্য ভাষায় ‘ছিনালী’ বলা হইয়া থাক্–শৃঙ্গার কার্যের (প্ৰেমত্রীড়ার) বিশেষ আবশ্যক অংশ। পরিণামে ধরা দিবার জন্যই এই পলায়ন–পুরুষের আগ্রহ বৃদ্ধির জন্যই এই অসম্মতি। ইহা নারীর প্ৰস্তুতির একটা উপাদেয় বিশেষত্ব। নারীর এই গুণই পুরুষের আগ্রহ বুদ্ধি করিয়া থাকে। নারী স্বভারতই পুরুষের দ্বারা আক্রান্ত ও বিজিত হইতে চায়। অধ্যাপক মিচেলসি একজন সুশিক্ষিত অভিজাত বংশের মহিলার কথা বলিতে গিয়া লিখিয়াছেন যে, উক্ত মহিলা তাহার নিকট বলিয়াছেন, ‘যে পুরুষকে ভালবাসি তাহার দ্বারা ধৰ্ষিত হওয়ার ন্যায় আনন্দ আর কিছুতেই নাই।’ বস্তুত ইহা নারীর যৌনবোধের গূঢ় কথা। মিচেলসি বলিয়াছেন, ধর্ষণেই নারীর রতি-তন্ময়তা অধিক হইয়া থাকে।

(১০) নারীর দায়িত্ব–গর্ভধারণা, সন্তানপালন, স্তন্যদান ইত্যাদি দৈহিক কারণেই নারীর বাসনা কোন বিশেষ অঙ্গে সীমাবদ্ধ থাকিতে পারে না। গর্ভধারণের ভয়ে নারীর রতিবাসনা কতকটা সংযত হইয়া থাকে।

(১১) নারী সংস্কার ও অভ্যাসের দাস–অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় যৌন-ব্যাপারেও নারী পুরুষ অপেক্ষা বেশী পরিমাণে সংস্কার ও অভ্যাসের দাস। নারীজাতি পুরুষের মধ্যে বীরত্ব, সাহসিকতা ও গোয়ার্তুমি পছন্দ করিয়া থাকে এবং ভীরুতা কাপুরুষতা ও অতিবিবেচকতা (‘মেনিমুখো’ ও ‘ল্যাবা’ পুরুষকে) ঘৃণা করিয়া থাকে। এই প্ৰকৃতি নারীর সংস্কারপ্রিয়তার পরিচায়ক। নারীর উপর অভ্যাসের প্রভাবের একটা উদাহরণ এই যে, যে নারী স্বভারত এক স্বামীতে সন্তুষ্ট, লজ্জা যে নারীর প্রকৃতিগত, সেই নারীই রূপোপজীবিনী হইলে অভ্যাসের চরম নির্লজ্জতা আয়ত্ত করিতে পারে।

(১২) সৃষ্টিবাসনা–নারীর যৌনবোধে সন্তান কামনা পুরুষের অপেক্ষা তীব্র। কিন্তু উভয়ের সৃষ্টিবাসনার মধ্যে অনেকখানি পার্থক্য আছে। পুরুষের সৃষ্টিবাসনা অবচেতন মনে আত্মবিস্তারের ক্ষুধা মাত্র; কিন্তু নারীর সৃষ্টিকামনায় ঘনিষ্ঠতর দৈহিক সম্পর্কহেতু সৃষ্টিতে নারীর বেশী মমত্ববোধ আছে।*

————-

* ‘She experiences an inclination towards Sexual life only to utilize the man as a detour towards a maternel end.’-Maranon
———–

(১৩) পারস্পরিক দৈহিক আকর্ষণ–নারী ও পুরুষের যৌনবোধে এই সমস্ত বড় বড় পার্থক্য ছাড়াও আরও অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পার্থক্য আছে। নারীদেহ, বিশেষত সুগঠিত যৌবনদীপ্ত নারীদেহ দর্শনে যেমন পুরুষের বাসনা উদ্দীপ্ত হয়, পুরুষের ঐরূপ দেহদর্শনে নারীর ততটা হয় না। নারী সংস্কারবশে পুরুষকে ভোক্তা ও নিজেকে ভোগ্য মনে করিয়া থাকে বলিয়া পুরুষের দৈহিক রূপ তাহার তত বড় একটা বিবেচনার বিষয় নহে।

(১৪) নারী নিষ্ঠাবতী–দাম্পত্যজীবনে নারী সাধারণতঃ নিষ্ঠাবতী। সে নিরুদ্বেগে অনায়াসে এক স্বামী লইয়া ঘর করিতে পারে; জননীত্ব তাহার জীবনে প্ৰধান পরিচালক বৃত্তি বলিয়া সে একাধিক পুরুষেরা প্ৰযোজনই বোধ করে না। আজীবন কুমারী থাকিয়া যাওয়াও নারীর পক্ষে কম কষ্টদায়ক। অথচ পুরুষ এ বিষয়ে নারীর সম্পূর্ণ বিপরীত। ডাঃ ফোবেলের মতে “সাধারণ পুরুষ প্ৰত্যহ যতজন অ-কুশ্রী ও অ-বৃদ্ধা নারী দর্শন করে, তাহাদের প্রত্যেকের সহিতই তাহার মিলনের ইচ্ছা হয়।”

(১৫) নারী সমমৈথুনক—নারী-পুরুষের উভয়েই খানিকটা সম-মৈথুনক বটে। কিন্তু নারীর সমমৈথুন স্বাভাবিক ও পুরুষের যৌন-বিকল্প। কারণ, পুরুষের সমমৈথুন ব্যক্তিবিশেষের বিশেষ বয়সের একটা বৃত্তি এবং স্বাভাবিক ক্রিয়ার নিতান্ত দীন অনুকল্প মাত্র। কিন্তু নারীর সমমৈথুন সাৰ্বজনীন–বিশেষ বয়সের ক্রিয়া নহে, স্বাভাবিক ক্রিয়ার স্থলবর্তীও নহে; কারণ ইহার দৈহিক কোনও পরিণতি নাই। দুইটি যুবতী নারী একত্ৰে শয়ন বরিয়া পরস্পরকে চুম্বন করিয়া এবং মা সন্তানকে কোলে জড়াইয়া যে আনন্দ পাইবে, ঐ আনন্দ যৌবনবোধজাত, কিন্তু নারীর পক্ষে উহা যৌনবিকল্প নহে; কারণ, এ বোধ মূলতঃ শারীরিক নহে–মানসিক।

(১৬) পুরুষের যৌন দ্বৈতভাব–আমরা নারীর যৌনবোধের দ্বৈতভাবের কথা উল্লেখ করিয়াছি। কিন্তু পুরুষেরও একপ্রকার যৌন দ্বৈতভাব আছে, যাহা নারীর চক্ষে নিতান্ত অমার্জনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে। সে দ্বৈতভাব এই যে, পুরুষ তাহার স্ত্রীকে প্ৰাণ দিয়া ভালবাসা এবং তাহার সাহিত মিলনে পরম তৃপ্তি লাভ করা সত্ত্বেও অনায়াসে এবং স্ত্রীর প্রতি অবিচার করিতেছে ইহা অনুভব না করিয়া, পরনারী কিংবা বেশ্যাগমন করিতে পারে। নারীর পক্ষে সাধারণতঃ ইহা সম্ভব নহে। নারী যাহাকে ভালবাসে না, সাধারণতঃ তাহার সহিত স্বেচ্ছায় সহবাস করিতে পারে না। অবশ্য বেশ্যাদের কথা স্বতন্ত্র, তাঁহারা শুধু অর্থের জন্যই দেহদান করিয়া থাকে।

নরনারীর যৌন-সাড়ার পার্থক্য

ডঃ কিন্‌যে প্রমুখ যৌনতত্ত্ববিদদের গবেষণা অনুযায়ী নানা প্ৰকার মানসিক উত্তেজনায় নারী ও পুরুষের যৌন-সাড়ার পার্থক্য সম্পর্কে মোটামুটি আলোচনা করিতেছি।

যৌন-সাড়া ও আচরণ-বিস্তর প্রমাণের উপর নির্ভর করিয়া বলা যায় যে, মোটের উপর গড়পড়তা পুরুষের যৌন-সাড়া ও আচরণ নারীর অপেক্ষা অধিক পরিমাণে নিয়ন্ত্রিত হয় এই সব মানসিক ব্যাপার দ্বারা : () তাহার পূররব যৌন-অভিজ্ঞতা, () সেই পূর্ব অভিজ্ঞতাগুলির সহিত যে সমস্ত বস্তর সংযোগ ছিল তাহাদের স্মরণ বা দর্শন, () অপরের যৌন-অভিজ্ঞতা দেখিয়া বা শুনিয়া তাহার আনন্দের অংশ গ্রহণ, () অপরের যৌন-সাড়ার প্রতি সহানুভূতিসূচক মনোভাব প্রভৃতি।

স্বমোহনের সময় রতিসুখের বা প্ৰণয়পাত্রের কল্পনা–প্ৰায় সমস্ত পুরুষই এইরূপ কল্পনা করে, কিন্তু বিস্তর নারী করে না।

কামস্বপ্ন দেখা–প্ৰায় সমস্ত পুরুষই এইরূপ স্বপ্ন দেখে, বিস্তর নারী দেখে না।

মানসিক উত্তেজনায় সাড়া দিবার বিষয়ে বৈচিত্র—পুরুষদের অপেক্ষা মেয়েদের অনেক অধিক।

উপরোক্ত সত্যগুলির দৃষ্টান্ত নিম্নোক্ত পরিসংখ্যানগুলিতে পাওয়া যাইবে–
() অপর শ্রেণীর ব্যক্তিকে দেখিয়া যৌনভাব জাগা–মোট ৫৭৭২ জন নারী ও ৪২২৬ জন পুরুষ গবেষণার পাত্রের মধ্যে স্পষ্টভাবে কিংবা প্রায়ই সাড়া জাগিয়াছে–নারী ১৭%, পুরুষ ৩২%; সামান্য জাগিয়াছে–নারী ৪১%, পুরুষ ৪০%, মোটেই জাগে নাই–নারী ৪২%, পুরুষ ২৮%

নারীদের দেখিয়া এই সকল পুরুষদের যৌন-সাড়ায় তাহাদের অঙ্গের দৃঢ়তা ও উত্থান প্রভৃতি শারীরিক পবিবর্তন প্রায়ই হয় এবং তাহারা শারীরিক সংযোগের জন্য নারীদের নিকটবর্তী হয়। কতক নারীদের মধ্যে পুরুষদের অনুরূপ সাড়া (অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঋতুকালে) জাগিয়াছিল, কিন্তু অধিকাংশ নারীদেরই স্পষ্টভাবে কোনও শারীরিক পরিবর্তন দেখা যায় নাই।

() স্বশ্রেণীর ব্যক্তিদের দেখিয়া যৌন সাড়া–মোট ৫৭৫৪ জন নারী ও ৪২২০ জন পুরুষের মধ্যে স্পষ্টভাবে সাড়া জাগিয়াছে।–নারী ৩%, পুরুষ ৭%; সামান্য জাগিয়াছে–নারী ৯%, পুরুষ ৯%; আদৌ জাগে নাই–নারী ৮৮%, পুরুষ ৮৪%

() অপর শ্রেণীর বিবস্ত্ৰ চিত্র দর্শনে যৌন সাড়া–৫৬৯৮ জন নারী ও ৪১৯১ জন পুরুষ গবেষণার পাত্রেব মধ্যে স্পষ্টভাবে সাড়া জাগিয়াছে –নারী ৩%, পুরুষ ১৮%; সামান্য জাগিয়াছে-নারী ৯%, পুরুষ ৩৬%; আদৌ জাগে নাই—নারী ৮৮%, পুরুষ ৪৬%

কোনও পুরুষ যখন দেখে যে তাহার স্ত্রী বা প্রণয়িনীর মনে তাহার বিবস্ত্র চিত্র দর্শনে সাড়া জাগে না তখন মনে করে যে, সে আর তাহাকে ভালবাসে না। এ ধারণা ভ্রান্ত।

 () নগ্ন ও উত্তেজক চিত্রের শিল্পী–বিবস্ত্র চিত্রে যদি কোন যৌনাঙ্গ অথবা যৌনক্রিয়ার আভাস নাও দেখানো হয় তথাপি তাহা এমনভাবে অঙ্কিত হইতে পারে যাহা শিল্পীর নিজের এবং অধিকাংশ পুরুষ দর্শকের পক্ষে চিত্ত-চাঞ্চল্যকারী হইবে। মিকেল আঞ্জেলো, লেওনার্দো দা ভিঞ্চি, রাফায়েল প্রভৃতি জগদ্বিখ্যাত পুরুষ চিত্রকর, রুবা, রোদ্যা, মেইঅল প্রভৃতি পুরুষ ভাস্কর কদাচিৎ এমন বিবস্ত্ৰ নরনারী সৃষ্টি করিয়াছেন যাহাদের মধ্যে পুষ্পধনুর শরসন্ধান (erotic element) নাই। সমালোচকদের মতে ইউরোপ আমেরিকায় আধা ডজনেরও কম প্ৰতিভাশালী পুরুষ শিল্পী আছেন যাহারা কামোত্তেজনাকারী নয় এরূপ বিবস্ত্ৰ চিত্র বা মূর্তি সৃষ্টি করিয়াছেন। পক্ষান্তরে কয়েক শত নারী শিল্পীর মধ্যে আট জন মাত্র দেখা গিয়াছে যাহাদের চিত্র বা মূর্তি মদনধর্মী (erotic)

() অপর শ্রেণীর যৌনাঙ্গ দর্শনে যৌনভাব জাগা–৬১৭ জন নারীর মধ্যে স্পষ্টভাবে সাড়া জাগিয়াছে মাত্র ২১%, কতক পরিমাণে ২৭%, একেবারে জাগে নাই ৫২%, কিন্তু পুরুষদের বেলা ইহার বিপরীত।

() নিজের যৌনাঙ্গ দর্শনে যৌন সাড়া–স্পষ্টভাবে সাড়া জাগিয়াছে–নারী ১% পুরুষ ২৫%, কতক পরিমাণে জাগিযাছে–নারী ৮%, পুরুষ ৩১%; আদৌ জাগে নাই–নারী ৯১% পুরুষ ৪৪%। গবেষণা-পাত্রের সংখ্যা নারী ও পুরুষ যথাক্রমে ৫৭২৫ ও ৩৩৩২ জন।

() যৌনাঙ্গে কামক্রীড়া ভাল লাগা–অধিকাংশ পুরুষ রতিক্রিয়ার পূর্বে নারীর যৌনাঙ্গ দেখিতে ও নিজের অঙ্গ দেখাইতে ভালবাসে। কিন্তু, অধিকাংশ নারী যৌনাঙ্গ ঘাটাঘাটিব পূর্বে তাহাদের শরীরের নানা স্থানে স্পৰ্শন, ঘর্ষণ, চাপন, চুম্বন প্রভৃতি কামনা করে।

অধিকাংশ সমকামী পুরুষদের যৌনক্রিয়া আরম্ভ করিবার পূর্বে পুরুষাঙ্গ দৰ্শন-প্ৰদৰ্শন ও ঘাটাঘাটি হয়। সমকামী নারীদের মধ্যে বহুদিন ধরিয়া শরীরের নানা স্থানে উত্তেজনার আদান-প্ৰদান শুধু চলিতে থাকে।

() আদি রসাত্মক সিনেমা দর্শনে যৌন সাড়া–মোট ৫৪১১ জন নারী ও ৩২৩১ জন পুরুষের মধ্যে স্পষ্টভাবে সাড়া জাগিয়াছে–নারী ৯%, পুরুষ ৬%, কতক পরিমাণে জাগিয়াছে নারী ৩৯%, পুরুষ ৩০%, আদৌ জাগে নাই—নারী ৫৩%, পুরুষ ৬৪%

যে সকল মানসিক উত্তেজনার ক্ষেত্রে পুরুষদের অপেক্ষা নারীদের নিকট অধিক ফলপ্ৰসূ, ইহা তাহার মধ্যে একটি।

() সুরতক্রিয়া দর্শনে—অধিকাংশ পুরুষের চিত্তচাঞ্চল্য হয়, কিন্তু নারীদের কদাচিৎ। তাহাদের মধ্যে অধিকাংশই এই দৃশ্যে উদাসীন থাকে।

(১০) যৌনক্রিয়ার চিত্র দর্শনে যৌন সাড়া–সকল দেশেই এইরূপ বিস্তর ছবি তৈরী হয়। ইহাদের ক্রেতা ও দর্শক প্রধানত পুরুষরাই।

২২৪২ জন নারী ও ৩৮৬৮ জন পুরুষের মধ্যে উক্ত চিত্র দর্শনে স্পষ্টভাবে সাড়া জাগিয়াছে–নারী ১৪% পুরুষ ৪২%, অল্পমাত্রায় জাগিয়াছে—নারী ১৮%, পুরুষ ৩৫%, আদৌ জাগে নাই—নারী ৬৮%, পুরুষ ২৩%

অধিকাংশ পুরুষেরা তাহাদের স্ত্রীদের অথবা প্রণয়ীদের এরূপ চিত্র এই আশায় দেখায় যে, তাঁহারাও তাহাদের মত উহা দর্শনে আনন্দিত ও উত্তেজিত হুইবে। কিন্তু যখন দেখে যে তাহা হইল না, তখন তাহার কারণ বুঝিতে পারে না। পক্ষান্তরে স্ত্রীরাও বুঝিতে পারে না যে, স্বামী তাহার সহিত যৌন-সম্পর্কে তৃপ্ত, তিনি আবার কেন এরূপ চিত্রদর্শন দ্বারা আরও উত্তেজনা লাভের চেষ্টা করেন। কতক স্ত্রী স্বামীর এরূপ চিত্র রাখা ও দেখাকে অবিশ্বাসের কার্য মনে করেন। কেহ কেহ এই জন্য বিবাহ বিচ্ছেদের নালিশ পৰ্যন্ত করিয়াছে।

(১১) জন্তুদের মদনলীলা দর্শনে–স্পষ্টভাবে যৌন-সাড়া জাগিয়াছে –নারী ৫%, পুরুষ ১১%, কতক পরিমাণে জাগিয়াছে–নারী ১১%, পুরুষ ২১%, জাগে নাই –নারী ৮৪%, পুরুষ ৬৮%। গবেষণার পাত্রেব সংখ্যা যথাক্রমে ৫২৫০ জন ও ৪০৮৩ জন নারী ও পুরুষ।

(২২) আলোতে সম্ভোগ পছন্দ করা–২০৪২ জন নারী ও ৭৯৮ পুরুষের মধ্যে আলোতে পছন্দ করেন–নারী ৮%, পুরুষ ২১%, কতকটা আলো পছন্দ করেন–নারী ১১%, পুরুষ ১৯%, অন্ধকারই পছন্দ করেন–নারী ৫৫%, পুরুষ ৩৫%, পছন্দ-অপছন্দ নাই-নারী ২৬% পুরুষ ২৫%

এই পার্থক্যের কারণ–পুরুষেরা পারস্পবিক যৌনাঙ্গ ও কামক্রিয়ার দৃশ্য দর্শনে-প্রদর্শনে তৃপ্তি লাভ করে এবং আলোতেই তাহা সম্ভব। অধিকাংশ নারী-চরিত্র ইহার বিপরীত।

(১৩) অপর শ্রেণী সম্বন্ধে চিন্তায় উত্তেজনা–যে সমস্ত পুরুষ সম্পূর্ণভাবে সমকামী নয় তাঁহারা প্ৰায় সকলেই কোন বিশেষ নারী অথবা সাধারণভাবে নারীজাতির সম্বন্ধে চিন্তা দ্বারা উত্তেজিত হয়। কিন্তু প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী কোন পুরুষ সম্বন্ধে চিন্তায়, এমন কি, তাঁহাদের স্বামী বা প্রণয়ীর চিন্তাতেও উত্তেজিতা হয় নাই।

৫৭৭২ জন নারী ও ৪২১৪ জন পুরুষের মধ্যে স্পষ্টভাবে যৌন-সাড়া জাগিয়াছে–নারী ২২%, পুরুষ ৩৭%, কতক পরিমাণে সাড়া জাগিয়াছে – নারী ৪৭%, পুরুষ ৪৭%, আদৌ জাগে নাই– নারী ৩১%, পুরুষ ১৬%,

এই পার্থক্যের কারণ এই যে, নারীগণ অপেক্ষা পুরুষেরা অধিক প্ৰত্যক্ষ ও স্পষ্ট যৌন অভিজ্ঞতা কামনা করে। এই জন্যই পুরুষেরা সুরতেব পূর্বেই (তাহার প্ৰত্যাশা, কল্পনা ও চিন্তায়) তীব্ৰভাবে উত্তেজিত হয়।

(১৪) কাব্য ও উপন্যাসাদি পাঠে উত্তেজনা–ইহা পাঠ্যবিষয়, ভাষা, আদি ও শৃঙ্গার রসাত্মক বর্ণনা ও দৃশ্যের উপর নির্ভর করে। পাঠকপাঠিকা অনুকল্পভাবে নায়ক-নায়িকার মনোভাব ও উপভোগের অংশ গ্রহণ করে। উত্তেজনা লাভের ক্ষমতার মাত্ৰা অনুসারে তাহাদের মনে এই লেখার বিভিন্ন প্ৰকার প্রতিক্রিয়া হয়। গবেষণায় দেখা যায়-৫৬৯৯ জন নারী ও ৩৯৬২ জন পুরুষের মধ্যে স্পষ্ট সাড়া-নারী ১৬% পুরুষ ২১%, আংশিক সাড়া–নারী ৪৪% পুরুষ ৩৮%, আদৌ সাড়া জাগে নাই–নারী ৪০%, পুরুষ ৪১%। এক্ষেত্রে প্রায় সমান সংখ্যক নারী ও পুরুষ উত্তেজনা লাভ করিয়াছে।

(১৫) কেবলমাত্র কামোদ্দীপনার জন্য লেখা গল্প, কবিতা প্রভৃতি এবং অঙ্কিত চিত্ৰ–ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রকাশিত অসংখ্য এই ধরনের লেখার মধ্যে সম্ভবত ২-৩টির অধিক নারীর লেখা নাই! পুরুষেরাই নিজ নামে বা নারীর বেনামীতে এ ধবনের লেখা লিখিয়া থাকে। এই সমস্ত লেখার মধ্যে পুরুষের যৌনাঙ্গের ক্রিয়ার বর্ণনা এবং নারীর যৌনসাড়ার তীব্রতা ও অপূরণীয় বাসনার উজ্জল চিত্র থাকে। পুরুষ লেখক ও পাঠক এতাদৃশ লেখায় যৌনানন্দ লাভ করে।

(১৬) দেওয়ালে লেখা–অপেক্ষাকৃত অনেক কম স্ত্রীলোক শৌচাগার প্রভৃতি জনসাধারণের অধিগম্য স্থানের দেওয়ালে লিখে এবং তাহার মধ্যে আদি রসাত্মক ও কামোদ্দীপক লেখা খুব কম। আমরা এরূপ কয়েক শত লেখা সংগ্ৰহ করিয়াছি। পুরুষদের শৌচাগারে ৮৬% লেখাই যৌন-বিষয়ক। তাহাদের বিষয়বস্তু প্ৰধানত () নারীর যৌনাঙ্গ () যৌনাঙ্গের ক্রিয়া () যৌন-উদ্দীপক অশ্লীল শব্দাবলী। পক্ষান্তরে, নারীদের শৌচাগারে অধিকাংশ লেখা প্ৰেম বিষয়ক, প্ৰণয়ী-যুগলের নাম অথবা হৃৎপিণ্ডের চিত্র।

(১৭) কামকল্পনায় চরমানন্দলাভ–কতক নারী যেমন অধিকাংশ পুরুষের মত পাণিমেহনের সময় প্রণয়ীর মূর্তি চিত্তপটে আঁকে ও কল্পনায় তাহার অঙ্গসুখ ভোগ করে, তেমনি দিবাভাগে শৃঙ্গার রসাত্মক কল্পনায় এতদূর মগ্ন হইতে পারে যে, শরীরের কোন স্থানে উত্তেজনা প্ৰদান ব্যতীতই তাঁহারা চরম তৃপ্তিলাভ করে। পক্ষান্তরে হাজারে একজন পুরুষ শুধু কামচিন্তার ফলেই রেতঃশ্বলন করিতে পারে।

(১৮) যৌন-ব্যাপারের আলোচনা–করিয়া অধিকাংশ পুরুষ আনন্দ ও উত্তেজনা লাভ করে, কিন্তু গড়পড়তা রমণীদের সেরূপ কিছুই হয় না। এইজন্য পুরুষদের মধ্যে কাম-বিষষক আলোচনা করিবার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু নারীর ঐরূপ ইচ্ছা বা আগ্ৰহ দেখা যায় না।

(১৯) নিৰ্যাতনের কাহিনী শুনিয়া উত্তেজনা–কতক লোক নিষ্ঠুরতা, চাবুক মারা, যন্ত্রণা দেওয়া প্ৰভৃতির কথা শুনিয়া বা চিন্তা করিয়া যৌন-উত্তেজনা লাভ করে। গবেষণায় প্রকাশ, ২৮৮০ জন নারী ও ১০১৬ জন পুরুষের মধ্যে নিষ্ঠুরতার কাহিনী শুনিষা স্পষ্টভাবে যৌন-সাড়া লাভ করিয়াছে—নারী ৩%, পুরুষ ১০%, কতকতা সাড়া লাভ করিয়াছে—নারী ৯%, পুরুষ ১২%, মোটেই সাড়া জাগে নাই—নারী ৮৮%, পুরুষ ৭৮%। এই পার্থক্যের কারণ–ঐরূপ কাহিনী শুনিবার ফলে যে মনোভাব হয় তাহা শ্রোতার কল্পনা ও উক্তরূপ ঘটনার সহিত জড়িত থাকার উপর নির্ভর করে।

(২০) দংশিত হওয়ায় মনের সাড়া–দংশন ও নিৰ্যাতনে যে সাড়া জাগে তাহার মধ্যে কতকটা শারীরিক, কতকটা মানসিক, কতকটা নিৰ্যাতন ও যৌনতার সম্পর্কের মানসিক যোগসূত্র এবং কতকটা যৌনসাথীর কাছে নতি স্বীকারে সন্তোষ। কামকেলি এবং সু্রতেব সময়ে এবং সমকামমূলক আচরণের মধ্যে নির্যাতনের সাড়ার সর্বাপেক্ষা অধিক প্ৰকাশ যৌনসাখীর নানাস্থানে মৃদু অথবা সজোর দংশনে। প্ৰায় সমস্ত স্তন্যপায়ী জীবদেব মধ্যে ইহা দেখা যায়। মনুষ্যের মধ্যেও অধিকাংশ ব্যক্তি যতটা মনে করে তাহা অপেক্ষা অনেক অধিক ব্যাপক।

গবেষণায় দেখা যায় ২২০৭ নারী ও ৫৬৭ পুরুষের মধ্যে স্পষ্টভাবে সাড়া জাগিয়াছে—নারী ২৬%, পুরুষ ২৬%; সামান্য সাড়া জাগিয়াছে—নারী ২৯%, পুরুষ ২৪%; মোটেই সাড়া জাগে নাই–নারী ৪৫% পুরুষ ৫০%

যত পুরুষ ও নারী নির্যাতনের কাহিনী শুনিয়া যৌন-সাড়া দিয়াছিল তাহার দ্বিগুণ পুরুষ ও চতুর্গুণাধিক নারী দংশিত হওয়ায় যৌন-উত্তেজনা অনুভব করিয়াছে। ইহাতে প্রমাণিত হয় যে, পুরুষেরা শারীরিক ও মানসিক উভয় প্রকার দীপক দ্বারা যৌনভাবে সাড়া দেয়। কিন্তু অধিকাংশ নারী শুধু শারীরিক দীপকেই সাড়া দেয়।

(২১) যৌন-আচরণের ধারাবাহিকতা—নারীর যৌন-আচরণ প্ৰায়শঃ ধারাবাহিকতা বিহীন। এই কথা আত্মরতি, চরমানন্দ আনয়নকারী কামস্বপ্ন, বিবাহ-পূর্ণ কামকেলি, বিবাহপূর্ণ সহবাস, বিবাহোত্তর সঙ্গম এবং সমকামী আচরণ সম্বন্ধে খাটে। কতক নারী যাহাদের কোনও কোনও সময় সমগ্র যৌন-আচরণের পবিমাণ ও সংখ্যা অধিক ছিল তাহাদের হয়ত আবার কয়েক সপ্তাহ, কয়েক মাস, অথবা কয়েক বৎসর যাবৎ খুব কম ছিল অথবা কিছুই ছিল না। কিন্তু এরূপ যৌনকর্মহীন সময়ের পরে আবার হয়ত তাদৃশ্য আচরণ পূর্ববৎ অধিকতর হইতে পারে। পক্ষান্তরে সমন্ত প্রকার যৌনক্রিয়ার ধাবাবাহিকতা বিচ্ছিন্ন হওয়া পুরুষদের কদাচিৎ হয়।

(২২) যৌন-যথেচ্ছাচার বা অজাচার (Promisculiaty)। সকলেই মনে করে যে পুরুষ নারী অপেক্ষা বহুকামী ও বহুগামী। ইহার কারণ () একনিষ্ঠ থাকিবার ক্ষমতা নারীর সমধিক, () সে পুরুষ অপেক্ষা ঘর বাঁধিবার এবং সন্তানদের যত্ন করিবার জন্য অধিক দায়ী, এবং () সে সাধারণত তাহার যৌন-আচরণ নীতিসম্মত কিনা এ সম্বন্ধে অধিক বিবেচনাশীল।

পুরুষের অজাচারের ও নারীর অপেক্ষাকৃত সতীত্বের প্রকৃত কারণ () পুরুষ তাহার সম্ভাব্য যৌন-অংশীদাবকে (অর্থাৎ শয্যাসঙ্গিনীকে) দেখিয়া উত্তেজিত হয়, কিন্তু অধিকাংশ নারী এরূপ হয় না। () পুরুষ স্বীয় পূর্ব অভিজ্ঞতার ফলে, অভ্যাসবশতঃ, পূর্বঘটনার সহিত সম্পর্কিত অবস্থা ও বস্তুসমূহ স্বাবা প্রভাবিত হয় বলিয়া তৎসমূহ দ্বারা উত্তেজিত হয়, অধিকাংশ নারী এরূপ হয় না। () পুরুষ () নূতন ধরনের অভিজ্ঞতার, () নূতন ধরনের যৌন-অংশীদার লাভের, () নূতন নারীর সহিত সম্পর্কে নূতন স্তরের তৃপ্তিলাভের, () সম্ভোগের নূতন নূতন কলাকৌশল পরীক্ষা করিবার সুযোগের () ইতিপূর্বে যেরূপ তৃপ্তিলাভ করা হইয়াছে তাহা অপেক্ষা উচ্চ পর্যায়ের তৃপ্তি লাভের আশায় উত্তেজিত হয়। () বিপরীত কাম ও সমকাম এই উভয়বিধ সম্পর্কেই পুরুষ বহু ক্ষেত্রে বিভিন্ন যৌন-অংশীদারের উপভোগ্য অঙ্গের গঠন বৈচিত্র্যের, () মিলনের বিভিন্ন কলাকৌশলের, () বিভিন্ন অংশীদারদের বিভিন্ন প্রকার শারীরিক ক্রিয়ার এবং () নূতন নূতন নায়িকাকে নিজ চেষ্টায় জয় করিবার আনন্দের প্রত্যাশায় বহুগামী ও বহুভোগী হয়। কিন্তু গড়পড়তা নারীর কাছে ইহাদের মধ্যে কোনও বিষয়ই তাদৃশ গুরুত্বপূর্ণ নহে। অধিকাংশ পুরুষ যে অজাচারী তাহার প্রমাণ এই যে, সে অধিকসংখ্যক প্ৰণয়িনীর সহিত বিবাহের পূর্বে ও পরে কামকেলি ও সহবাস এবং সমকামী ক্রিয়া করিয়া থাকে। নীচের তালিকা হইতে তাহা দেখা যাইবে।

(২৩) বিবাহে কামতৃপ্তি সন্ধান–অধিকাংশ নারী বিবাহ করে ঘর বাঁধিবার জন্য, একজনের সহিত দীর্ঘকাল প্ৰণয় সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এবং সন্তান লাভ করিয়া যথাসাধ্য তাহাদের সুখ-সুবিধা বিধান করিবার জন্য। অধিকাংশ পুরুষ বিবাহ করে স্ত্রীর সহিত নিয়মিত রমণ-সুখ ভোগ করিবার প্রত্যাশায়।

অংশীদারের সংখ্যা

বিবাহপূর্ব শৃঙ্গার

বিবাহপূর্ব সঙ্গম

সমকামী সংযোগ

বিবাহেতর সঙ্গম

নারী%

নর%

নারী%

নর%

নারী%

নর%

নারী%

নর%

১০

৫৩

২৭

৫১

৩৫

৪১

২২

-

৩২

২০

৩৪

৩৩

৩৮

৩৫

৪০

৩৪

-১০

২৩

১৬

১৭

১১

২৩

১১-২০

১৬

২১

১১

১৪

২১-৩০

১০

৩১-৫০

১১

৫১-১০০

১০০এর বেশী

গবেষণার পাত্র সংখ্যা

২৪১৫

১২৩৭

১২২০

৯০৬

৫৯১

১৪০২

৫১৪

৮১৭

 বিবাহের মূল্য সম্বন্ধে নরনারীর আদর্শের এই পার্থক্যের কারণ এই যে, নারীর অপেক্ষা পুরুষের নিয়মিত ও ঘন ঘন কামতৃপ্তির আবশ্যকতা।

সারমর্ম ও নরনারীর তুলনা() নারী অপেক্ষা পুরুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রভাবিত হয়। () সে নারী অপেক্ষা অধিক ক্ষেত্রে অনুকম্পে অপরদের যৌন-অভিজ্ঞতার ভাগ গ্রহণ করে। () তাহার মন অপরদের যৌন-ক্রিয়াকলাপ দেখিলে নারী অপেক্ষা অধিকতর সহানুভূতিসূচক সাড়া দেয়। () কোনও বিশেষ ধরনের কামমূলক আচরণের প্রতি তাহার পক্ষপাতিত্ব নারী অপেক্ষা অধিক। () নিজেদের পূর্ব মদনলীলার সম্পৃক্ত বস্তু দেখিয়া, শুনিয়া, ঘ্রাণ বা আস্বাদন করিয়া নারী অপেক্ষা পুরুষ অধিকতর উদ্দীপিত হয়।

পূর্বোল্লিখিত ব্যাপারগুলির মধ্যে কেবলমাত্র তিনটি ব্যাপারের দ্বারা নারী পুরুষের সমান সংখ্যক বা পুরুষ অপেক্ষা কিছু অধিক প্রভাবিত হয়। সেগুলি হইল সিনেমার ছবি দেখা, প্রণয়সাহিত্য পাঠ এবং দংশিত হওয়া। কতকগুলি মানসিক ব্যাপারে প্রভাবিত নারীর অনুপাত পুরুষদের প্ৰায় কাছাকাছি।

পার্থক্যের কারণ-() নরনারীর মানস প্রকৃতিও যৌন-আচরণের এই সকল পার্থক্যের মধ্যে অনেকগুলি প্ৰাচীন কাল হইতেই লোক-সমাজে বিদিত আছে। তাহাদের নানারূপ কারণ অনুমান করা হইয়াছে। যথা () নরনারীর দেহের স্নায়ুবিক সংস্থানের প্রাচুর্য বা অবস্থানের বিস্তৃতির পার্থক্য। () সুরত ক্রিয়ায় নরনারীর বিভিন্ন অংশ। () নরনারীর রতিবাসনার তীব্রতায় পার্থক্য। () তাহাদের প্ৰকৃতিগত নৈতিক আদর্শ ও ক্ষমতা। () তাহাদের চরমানন্দ লাভ করিবার শারীরিক ব্যবস্থায় মূলগত পার্থক্য।

() কিন্‌যেদের গবেষণার ফল-() নবনারীর যৌন-সাড়া ও তৃপ্তি সম্বন্ধে শারীরিক ব্যবস্থায় এমন কোনও পার্থক্য নাই যাহা তাহাদের বিভিন্ন প্রকার যৌন-সাড়ার কারণ হইতে পারে। () স্পৰ্শজনিত দীপক দ্বারা উদ্দীপিত হইবার এবং তাহার ফলে চরম তৃপ্তি লাভ করিবার ক্ষমতা উভয়েরই সমান। () পুরুষ অপেক্ষা নারীর যৌন-সাড়া মন্দগতি নয়। যদি যথেষ্টভাবে ক্ৰমাগত অবিচ্ছিন্নভাবে স্পৰ্শজনিত দীপক প্রয়োগ করা হয়। () সাধারণ নারীর চরমানন্দের শারীরিক ধরণ এবং তাহা হইতে সে যেরূপ শারীরিক ও মানসিক তৃপ্তি লাভ করে তাহা সাধারণ পুরুষের অপেক্ষা বিভিন্ন প্রকার নহে। () কিন্তু, সাধারণ নারীর যৌন-ভাব উদ্দীপক ব্যাপারে সাড়া দিবার ক্ষমতা পুরুষ হইতে ভিন্নরূপ।



Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2