৭.১ সুভগঙ্করণম্‌, বশীকরণম্‌ ও বৃষ্যযোগাঃ (শারীরিক আকর্ষণের উন্নতি করণ)

সপ্তম ভাগ – প্রথম অধ্যায়

কামসূত্রের ব্যাখ্যা করা হইয়াছে। তাহাতে যে সকল বিধান করা হইয়াছে, যদি তদ্দ্বারা অভিপ্রেত বিষয় প্রাপ্ত না হয়, তবে ঔপনিষদিক-বিধানের অনুষ্ঠান করিবে।।’১।।

রূপ, গুণ, বয়স ও ত্যাগ, এইগুলি সুভগঙ্করণ।।’২।।

তন্মধ্যে রূপের বিষয় অবলম্বন করিয়া বলিতেছেন—

তগর (তগরপাদুকা, শিউলীর ছোপ ইতি ভাষা), কুষ্ঠ (কুড়), ও তালীসপত্র, এইগুলি একত্র জলদ্বারা পেষণ করিয়া অনুলেপন করিবে। ইহা সুভগঙ্করণ জানিবে।।’৩।।

এইগুলিকে সুপিষ্ট করিয়া বর্ত্তিতে (বাতিতে, পলিতায়) আলিপ্ত করিবে (মাখাইয়া শুকাইবে), পরে সেই বর্তি অক্ষতৈলের সাহায্যে (বয়ড়ার তৈল দিয়া) নরকপালে অঞ্জন পাড়াইয়া তাহা চক্ষুতে ধারণ করিবে।।’৪।।

পুনর্নবা, সহদেবী (নীল ঝিঁটি), সারিবা (অনন্তমূল), কুরণ্ট ও উৎপল পত্রের সহিত তিলতৈল সিদ্ধ করিয়া, সেই তৈলের অভ্যঞ্জন করিবে—অভ্যঙ্গ করিয়া মাখিবে। আর সেই তেলযুক্ত স্রক্‌ (মালা) ধারণ করিবে।।’৫।।

পদ্ম (পদ্মকাষ্ঠ), উৎপল (পদ্মফুল) ও নাগকেশর পুষ্প শোভিত করিয়া চূর্ণ করিবে। সেই চূর্ণ (অর্ধ তোলা পরিমাণে) মধু ও ঘৃতের সহিত মাখাইয়া অবলেহন করিবে। এইরূপ করিলে সুভগ (রূপলাবণ্যবৃদ্ধিমান্‌) হইবে।।’৬।।

ঐ তিনটি ও তগর, তালীসপত্র, তমালপত্রের সহিত মিলিট করিয়া জলের সাহায্যে সুন্দরভাবে পেষণ করিয়া অনুলেপন করিবে।।’৭।।

ময়ূরের বা তরক্ষুর (নেক্‌ড়ে বাঘের) চক্ষু, সুবর্ণগুটিকায় করিয়া দক্ষিণ হস্তে ধারণ করিবে।।’৮।।

এই পর্যন্ত সুভগঙ্করণ-যোগ ব্যাখ্যাত হইল।

এইক্ষণ পরিচারিকা বালিকা হইলে, কিরূপে তাহার সৌভাগ্যবর্ধন করিতে পারা যায় এবং তাহার পাণিগ্রহণ করাইতে হইবে, তাহার উপায়কীর্তন করিতেছেন—

সেইরূপ সুবর্ণগুটিকায় করিয়া বাদর (কার্পাস বীজাদি), মণি ও শঙ্খমণিও ধারণ করিবে। উক্ত মণিধারণ বিষয়ে অথর্ববেদোক্ত প্রকরণানুযায়ী যোগ সকল অনুষ্ঠান করিবে এবং তথায় সে সকল উপায় পরিকীর্তিত হইয়াছে, তাহাও গ্রহণ করিবে। তদ্দ্বারাও সুভগঙ্করণ হইয়া থাকে।।’১।।
এই সুভগঙ্করণযোগের মধ্যেই বলা উচিত ছিল; কিন্তু তাহা না বলিয়া, সৌভাগ্যবর্ধন যোগের মধ্যে বলায় বুঝিতে হইবে যে, এই যোগগুলির সৌভাগ্যবর্ধন করিবার শক্তিই বস্তুত অধিক; সুতরাং সৌভাগ্যবর্ধন যোগের মধ্যে বলাই উচিত। অথর্ববেদোক্ত যোগসকল তন্ত্রশাস্ত্রেও সঙ্কলিত হইয়াছে। অতএব তান্ত্রিক যোগসকলও গ্রহণীয়। এইস্থলে গৌরীকাঞ্চলিকাতন্ত্রাদি দ্রষ্টব্য।।১।।

উক্তরূপে বালিকা পরিচারিকাকে শিক্ষিত করিয়া কি কি করিবে, তাহা বলিতেছেন—

বিদ্যাতন্ত্র হইতে বিদ্যালাভ করিয়া পরিচারিকা যৌবনপ্রাপ্ত হইলে তাহার প্রভু, তাহাকে এক বৎসর যাবত অন্য কোনও প্রকাশ্য রক্ষিত স্থানে রাখিবে।।’২।।
যে শাস্ত্রে প্রত্যক্ষফলপ্রদ যোগসকল ও নানাবিধ দ্রব্যযোগ কীর্তিত হইয়াছে, তাহাকে বিদ্যাতন্ত্র কহে। যেমন অথর্ববেদের অন্তর্গত অথর্বণোপনিষদেরই সংগ্রহ গৌরীকাঞ্চলিকাতন্ত্র। তাহার যোগ সকল অবলম্বন করিলে বালিকা ত অকালে যৌবনপ্রাপ্ত হইয়া থাকে, বৃদ্ধাও লুপ্ত যৌবনের পুর্নর্লাভ করিতে সমর্থ হয়। এক বৎসর মাত্র, তাহার অধিক দিনও নহে, ন্যূন দিনও নহে; কারণ গমনীয় বহু যুবকের সহিত মিলিয়া, তাহাদিগের প্রকৃত পরিচয় লাভ করা আবশ্যক এবং পরীক্ষা স্বারা তাহার সত্যতা নির্ণয়ও প্রয়োজনীয়; সুতরাং এবং বৎসর যাবত একটি স্থানে রাখিবে, যেখানে প্রভু সময় সময় স্বয়ং যাইয়া তত্ত্বাবধান করিতে পারে এবং বালিকা কোন প্রবচঞ্চকের প্রবঞ্চনায় পড়িয়া বাহির হইয়া না যাইতে পারে।।২।।

তারপর সেই স্থানে সেই যুবতীকে দেখিয়া যে সকল যুবকেরা মনে করিবে যে, অতীব কমনীয়া এই যুবতীর সংহর্ষকারী আমিই হইতে পারিলে কৃতকৃতার্থ হই, তাহাদিগের মধ্যে যে ব্যক্তি আবার সেই যুবতীর সম্যক্‌ হর্ষের সহিত স্পর্ধা করিয়া বহু দান করিবে, প্রভূ তাহার হস্তে সেই যুবতীকে সমর্পণ করিবে।।’৩।।
যে স্থানে ঐ যুবতীকে রাখিবে, সে স্থানের অধিষ্ঠাত্রী সেই যুবতীর কৃতকমাতা হইবে এবং যে সকল যুবক ঐ যুবতীর সহিত পরিচিত হইতে আসিবে, তাহাদিগের উপর সেই কৃতকমাতা বিশেষ লক্ষ্য রাখিবে। যাহা কিছু দানের ব্যবহার হইবে, তাহা সেই কৃতকমাতার সমক্ষেই হইবে। যুবতী তাহার সন্ধান পাইলেও যেন তাহার কিছুই জানে না, এরূপ ভাব প্রকাশ করিবে। সেই সময়ে অপেক্ষাকৃত বহুদানকারীর গুণের পক্ষপাতী করিবার জন্য কৃতকমাতা চেষ্টা করিবে এবং প্রভূকেও জানাইবে।।৩।।

এই পর্যন্ত সৌভাগ্যবর্ধন যোগ।

এইক্ষণ বেশ্যার পাণিগ্রহণবিধি ও সৌভাগ্যবর্ধনযোগ ব্যাখ্যা করিতেছেন—

গণিকা, নিজের কন্যা যৌবনপ্রাপ্ত হইলে, সেই কন্যার বিজ্ঞান, শীল ও রূপের অনুরূপ কতকগুলি পাত্রকে আমন্ত্রিত করিয়া সকলের সাক্ষাতে বলিবে, যে ইহাকে সারবান্‌ বহুমূল্যের এই এই জিনিস দিবে, সে-ই ইহার পাণিগ্রহণ করিবে। এই বলিয়া সেই সকল যুবকের সহিত কন্যার পরিচয় করিয়া দিবে।।’১।।
কেবল পরিচয় করাইয়া দিবে যে, তাহা নহে, যাহাতে সেই পরিচয় সুরক্ষিত হয়, তাহাও করিবে।।১।।

সেই যুবতীও যেন মাতার অজ্ঞাতসারেই বাটি হইতে বহির্গত হইয়া ধনবান্‌ নাগরকপুত্রদিগের সহিত অত্যন্ত ‘মেলামেশা’ করিয়া তাহাদিগকে প্রীত করিবে এবং নিজেও প্রীতিলাভ করিবে।।’২।।

অকারণ যাইলে বেদগ্ধ্যহানি হইতে পারে; সুতরাং উপায়কীর্তন করিতেছেন—

তাহাদিগের নিকট কোন কোন কলায় শিক্ষা করিবার জন্য, গন্ধর্বশালায় সঙ্গীতাদির চর্চা করিয়ায় তাগাদিগের সহিত সভায় উপবেশন করিবার জন্য, ভিক্ষুকীর বাটিতে এবং সেই সেই স্থানে যাইবে, যে যে স্থানে যাইলে ধনী ও নাগরকপুত্রগণের সহিত মিলিত হইতে পারে। ইহাকে তাহার পক্ষে সন্দর্শনযোগ বলিয়া জানিবে।।’৩।।
ভিক্ষুকীর বাটিতে যাইবে, যদি তদ্দ্বারা কোন ধনবান্‌ নাগরকপুত্রের সহিত আলাপব্যবহারের সম্ভাবনা থাকে। তদ্ভিন্ন তদ্দ্বারা অনুসন্ধান করিয়া বিশেষজ্ঞ হইবার জন্যও বটে। সন্দর্শনযোগ—যদ্দ্বারা তাহার ও গম্য যুবকের পরস্পর বিশেষ দর্শন হইতে পারে। ভিক্ষুকীভবন নির্জন বলিয়া পরস্পর অনায়াসে তথায় যাওয়া আলাপ-পরিচয় করিতে পারে। তাহাতে গুরুজনেরা বিশেষ আপত্তি করেন না। ভিক্ষুকী—সন্নাসিনী। সাধারণ ভিক্ষুকী নহে; তথায় যাওয়া নিরাপত্তি ব্যাপার নহে।।৩।।

তাহার মাতা যখন দেখিবে, সকলের মধ্যে এই যুবকই আমি যাহা চাহিয়াছিলাম, তাহাই দিতেছে ও দিবেও, তখন সেই যুবকের সহিত কন্যার পাণিগ্রহণব্যাপার সম্পন্ন করাইবে।।’৪।।

পাইবার সম্ভবনা করিয়া পাণিগ্রহণ করাইয়াছে, কিন্তু প্রার্থিত সে সমস্তই যদি না পায়, তবে সেই যুবককে নিজের সেইরূপ যে কোন একটা দ্রব্য দেখাইয়া বলিবে, অমুক আমার মেয়েকে এই দেখ এইটা দিয়াছে।।’৫।।
দেখাইলে হয়ত হাতে রাখিবার জন্য দিতেও পারে। দিলেই ইষ্টসিদ্ধি।।৫।।

দেখাইলেও যদি উপযুক্ত সময়ের মধ্যে না দেয়, তবে সেখানে কি করিতে হইবে, তাহা বলিতেছেন—

পারে যদি, তবে প্রকাশ্যভাবেই অন্যের সহিত কন্যাকে সংযোজিত করিবে। অথবা গোপনে অন্য ধনবান্‌ নাগরিকদিগের সহিত সংযোজন করিয়া, নিজে যেন কিছুই জানে না, এরূপভাবে অবস্থান করিবে। তারপর তাহারা সমস্ত বিষয় জানিতে পারিয়া যদি ধর্মাধিকরণের আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করে, তবে তাহার মধ্যে যে কোন একজনের সহিত কন্যার কপোটপ্রণয় সংযোজন করিয়া তাহাকে হাতে করিবে এবং তাহাকে হাতে লইয়া ধর্মাধিকরণে যাইয়া বলিবে, ‘আমি ইঁহাদিগের নিকট এই পণে আমার কন্যার বিবাহ দিবার প্রস্তাব করিয়াছিলাম। ইঁহারা তাহাতে স্বীকৃতও হইয়াছিলেন; কিন্তু যথাকালে, ইঁহারা বা ইনি আমার কন্যাকে স্বীকৃত পণ দেন নাই, অথচ ‘যাওয়া-আসা’ করিতেছেন। সম্প্রতি ইঁনি (যাহাকে হাত করিয়াছে, তাহার নাম ধরিয়া) কিছু কিছু দিয়াছেন। এই দেখুন, এই সে দ্রব্য। এই জন্যই আমি উঁহাদিগকে আর আসিতে না দিয়া ইঁহারই সহিত আমার কন্যার পাণিগ্রহণ সাধিত করিয়াছি। এখন ধর্মাবতারের দয়া প্রার্থনা করি।।’৬।।
প্রকাশ্যভাবে করিবে না; কারণ, তাহারা বিরুদ্ধাচারণ করিয়া উৎখাত করিতে পারে; সুতরাং প্রচ্ছন্নভাবেই সংযোজিত করিবে। অভিযোগ উপস্থিত হইলে উপযুক্ত সাক্ষ্যের সংগ্রহে মাতা ও কন্যা উভয়েই যেন যত্নপর হয়; নতুবা বিড়ম্বনা ভোগ করিতে হয়।।৬।।

গণিকারা সখী বা দাসী দ্বারা কন্যাকে কামসূত্রোক্ত বিধানগুলি শিখাইয়া অসময়েই কন্যার কন্যাবস্থা পরিবর্তিত করায় এবং কন্যা আভ্যাসিক যোগ-(সন্দংশ ও ভ্রমরকাদি) সমূহে প্রতিষ্ঠালাভ করিয়া যৌবনবয়সে সৌভাগ্য লাভ করিলে, তাহাকে স্বেচ্ছাচারিণী করিয়া থাকে। এই ব্যাপারটি গণিকাদিগের পক্ষে ব্যবসায়োপযোগী আবশ্যকীয় উপচার পাইবার বিশেষ অনুকুল।।’৭।।

এইক্ষণ বিবাহের পর কণের কর্তব্য কি, তাহার কীর্তন করিতেছেন—

যে পাণিগ্রহণ করিয়াছে, এক বৎসর পর্যন্ত সেই পাণিগ্রাহের ব্যভিচার করিবে না। তবে বৎসর উত্তীর্ণ হইয়া গেলে, যাহাকে ইচ্ছা করিবে, তাহারই কামোপভোগযোগ্যা হইবে।।’৮।।

সম্বৎসরের পর কর্তব্যাদি বলিতেছেন—

সম্বৎসরের পরেও যদি পাণিগ্রাহ তাহাকে তাহার নিকট থাকিবার জন্য নিমন্ত্রণ করে এবং সে রাত্রে যদি সে অন্য কাহারও নিকট বিশেষ লাভ করিবার সম্ভাবনা করিয়া থাকে, তথাপি সে রাত্রের জন্য সে লাভের আশা পরিত্যাগ করিয়া পাণিগ্রাহের নিকটেই আগমন করিবে।।’৯।।

বেশ্যার পাণিগ্রহণবিধি এবং সৌভাগ্যবর্ধনবিধি এই পর্যন্তই।

এইরূপেই রঙ্গোপজীবীদিগের কন্যার পাণিগ্রহণবিধি ও সৌভাগ্যধর্ধনবিধির অনুষ্ঠান করিতে হইবে জানিবে। যে তাহাদিগের নৃত্য-গীত-বাদ্যের সহিত বিশেষ উপকার করিবে, তাহাকেই কন্যা দিবে।।’১০।।

এই পর্যন্তই সুভগঙ্করণনামক প্রকরণ।

অতঃপর বশীকরণপ্রকরণ আরম্ভ করা যাইতেছে—

ধূস্তরকবীজ, মরিচ ও পিপ্পলী বেশ চূর্ণ করিয়া মধুর সহিত মিশ্রিত করিয়া সাধনে লেপ দিবে এবং পরেই সম্প্রয়োগ করিবে। ইহা বশীকরণের প্রথম উপায়।।’১।।

বাতোদ্ভান্তপত্র, মৃতকনির্মাল্য ও ময়ূরাস্থিচূর্ণের অবচুর্ণ বশীকরণ।।’২।।

স্বয়ংমৃতা মণ্ডলকারিকার চূর্ণে মধু মাখাইয়া আমলকের সহিত স্নান বশীকরণ।।’৩।।

বজ্র (বালা), স্নুহী (সিজু), গণ্ডক (গণিয়ারি), খণ্ড খণ্ড করিয়া মনঃশিলা ও গন্ধপাষান (শোধিত গন্ধক) চূর্ণ মাখাইয়া সাতবার শুকাইবে। পরে চূর্ণ করিয়া মধুর সহিত সাধনে লেপ দিয়া সম্প্রয়োগ করিবে। ইহা বশীকরণ।।’৮।।

রাত্রে ইহার ধূম করিয়া সেই ধূমের মধ্যে সুবর্ণনির্মিত চন্দ্রমা দর্শন করাইবে।।’৫।।
ঐ ধূমের মধ্য দিয়া চন্দ্রকে দেখিলে চন্দ্রকে একখানি সুবর্ণনির্মিত চন্দ্র বলিয়া বোধ হইবে।।৫।।

এই চূর্ণের সহিত বানরের বিষ্ঠা মিশ্রিত করিয়া যে কন্যার গাত্রে দেওয়া যাইবে, সে কন্যাকে আর অন্যের সহিত বিবাহ দেওয়া যাইবে না।।’৬।।

শিংশপা (শিশু) বৃক্ষের স্কন্ধে (যেখান হইতে দুইটি ডাল উঠে) একটি গর্ত করিয়া তন্মধ্যে সহকারতৈল (আম্রের আঁটির তেল) দিয়া কতকগুলি বচার (বচের) খণ্ডগুলি বাহির করিয়া লইয়া তাহার অনুলেপন করিবে। এই অনুলেপনের নাম দেবকান্ত। ইহা দ্বারা বশীকরণও হয়, আচার্যেরা ইহা বলেন।।’৭।।
দেবতার ন্যায় কমনীয় দেহ হয় বলিয়া ইহার নাম দেবকান্ত।।৬।।

খদির বৃক্ষের সার খণ্ড খণ্ড করিয়া অত্যন্ত ক্ষীণক্ষণ্ড কতকগুলি, যে বৃক্ষের স্কন্ধদেশে গর্ত করিয়া স্থাপন করা যাইবে, ষন্মাস পরে তুলিয়া লইলে, সেই বৃক্ষের পুষ্পের গন্ধের ন্যায় গন্ধ সেই খদির কাষ্ঠখণ্ডে হইবে। পরে আবার তাহার অনুলেপন করিয়া মাখিবে। ইহার নাম গন্ধর্বকাণ্ড। ইহাও বশীকরণ, আচার্যেরা এই কথা বলেন।।’৮।।

তগরের সহিত মিশ্রিত করিয়া প্রিয়ঙ্গু-কাষ্ঠকে সহকারতৈললপ্ত করিয়া নাগকেশরবৃক্ষের স্কন্ধ গর্ত করিয়া ষন্মাস যাবত ঢাকিয়া রাখিবে। পরে তথা হইতে উঠাইয়া তাহার অনুলেপন করিবে। ইহার নাম নাগকান্ত। আচার্যগণ ইহাকেও বশীকরণ বলিয়া থাকেন।।’৯।।

উষ্ট্রের অস্থি ভৃঙ্গরাজের (ভীমরাজের) রসে মাড়িয়া শুকাইবে। পরে তাহা পোড়াইয়া অঞ্জন করিবে। সেই অঞ্জন ও স্রোতোহঞ্জন (অঞ্জন বিশেষ) একত্র করিয়া, উষ্ট্রের অস্থি অঞ্জনিকা (কজ্জললতা বা কাজোল্‌তা) করিয়া, তাহাতে প্রস্তুত করিবে এবং উষ্ট্রের অস্থি দ্বারাই শলাকা নির্মিত করিয়া তদ্দ্বারা চক্ষুতে ঐ অঞ্জন ধারণ করিবে। ইহা অতীব মনোরম এবং চক্ষুর অত্যন্ত হিতকর। আচার্যগণ ইহাকেও বশীকরণ বলিয়া থাকেন।।’১০।।

ইহা দ্বারা শ্যেন (বাজ পক্ষী, ভাস পক্ষী ও ময়ূরের অস্থিময় অঞ্জনের কথাও কথিত হইল।।’১১।।

এই পর্যন্ত বশীকরন নামক প্রকরণ।

অতঃপর বৃষ্যযোগ বলা যাইতেছে—

উচ্চটাকন্দ (নাগরমুতো) এবং যষ্ঠীমধু দুগ্ধে শর্করা দিয়া তাহার সহিত পান করিবে। ইহাতে বৃষ হওয়া যায়।।’১।।

দুগ্ধে মেষের বা ছাগের মুষ্ক (অণ্ডকোষ) সিদ্ধ করিয়া সেই দুগ্ধে শর্করা দিয়া পান করিবে।।’২।।

বিদারীর (ভূমি-কুষ্মাণ্ডের মূল) ক্ষীরিকার (পিণ্ডখর্জুর বা সোহারা খেজুরের) ফল এবং স্বয়ংগুপ্তার (আল্‌কুশীর) বীজ (আল্‌কুশীর বীজের খোসা ফেলিয়া বিচি মাত্র লইবে) দুগ্ধে সিদ্ধ করিয়া শর্করার সহিত সেই করিয়া শর্করার সহিত দুগ্ধ পান করিবে।।’৩।।

পিয়ালের বীজ, ক্ষীরমোরটার (মোরগকন্ঠ ফুল গাছের) ডাঁটা ও বিদারীর মূল দুগ্ধের সহিত সিদ্ধ করিয়া পান করিবে।।’৪।।

শৃঙ্গাটক (শিঙ্‌ড় বা পানিফল), কসেরু (কেশুর) ও যষ্ঠীমধু ক্ষীরকাকোলীর (অভাবে অশ্বগন্ধার) সহিত পেষণ করিয়া মন্দ অগ্নির জ্বালে শর্করা ও দুগ্ধের সাহায্যে ঘৃত দ্বারা উৎপকারিকা (হালুয়া বা মোহনভোগের ন্যায়) পাক করিয়া, যতটুকু প্রয়োজন হইবে ততটুকু খাইয়া বহুস্ত্রীর সম্প্রয়োগ করিতে পারে; এই কথা আচার্যেরা বলিয়াছেন।।’৫।।
এই স্থলে ভাবপ্রকাশোক্ত ‘মাংসশৃঙ্গাটক’ মাংসের শিঙেরা) খাইতেও পারে। তাহাও পরম বৃষ্য।।৫।।

মাষকলায়ের ডাউল উত্তমরূপে ধৌত করিয়া তপ্ত ঘৃতে মৃদুভাবে উৎকার (আম্‌সে নিয়ে) করিয়া তুলিয়া লইবে। পরে যে গোর বৎস বৃদ্ধ (বুড়ো বা বড়) হইয়াছে, তাহার দুগ্ধে সিদ্ধ করিয়া পায়স করিবে এবং শীতল হইলে মধু ও ঘৃতের সহিত প্লাবিতরূপে মাখাইয়া যতটুকু আবশ্যক সেই পায়স খাইলে, অনন্ত স্ত্রীর সম্প্রয়োগ করিতে সমর্থ হইবে, আচার্যগণ এই কথা বলিয়াছেন।।’৬।।

বিদারী, স্বয়ংগুপ্তা এবং শর্করা, মধু ও ঘৃতের সহিত গোধূমচূর্ণের সাহায্যে পোলিকা (পোলাও) করিয়া, যতটুকু আবশ্যক, ততটুকু খাইয়া অনন্ত স্ত্রীর সম্প্রয়োগ করিতে সমর্থ হয়, এই কথা আচার্যরা থাকেন।।’৭।।

চটকের (চড়াপাখীর) অণ্ডের (ডিমের) রসে ভাবিত (মাখাইয়া শুষ্ক) (অন্তত তিনবার ভাবনা দিবে) তণ্ডুল দুগ্ধে পাক করিয়া পায়স করিবে। পরে শীতল হইলে মধু ও ঘৃতের দ্বারা প্লাবিত করিয়া (মাখাইয়া), যতটা আবশ্যক ততটা খাইয়া অনন্ত স্ত্রীর সম্প্রয়োগ করিতে সমর্থ হইবে।।’৮।।

তিলের খোসা ফেলিয়া, তাহাতে চটকাণ্ডরস ভাবিত করিয়া, আর শৃঙ্গাটক, কশেরুক ও স্বয়ংগুপ্তার বীজ, গোধূম ও মাষকলাইচূর্ণের সহিত সশর্কর-দুগ্ধে পাক করিয়া ঘৃতে মন্দাগ্নির সাহায্যে পাক করিবে। পরে তাহাকে পায়স প্রস্তুত করিয়া আবশ্যক মত খাইবে। পরে বহু স্ত্রীর সম্প্রয়োগেও কাতর হইবে না।।’৯।।

ঘৃত, মধু, শর্করা ও যষ্টীমধুর ২ পল (১৬ তোলা) করিয়া, মধুরসার (দ্রাক্ষা বা আঙ্গুরের) এককর্ষ (২ তোলা) রস ও দুগ্ধের এক প্রস্থ (২ শরাতে এক প্রস্থ বা ৬৪ তোলায় সেরের, ১ সের) একত্রিত করিয়া খাইবে। ইহাকে ষড়ঙ্গ অমৃত বলে। এই ষড়ঙ্গ অমৃত মেধ্য (মেধাবৃদ্ধিকর, বা পুষ্টিকর) বৃষ্য (সম্প্রয়োগশক্তিবৃদ্ধিকারী) এবং আয়ুবৃদ্ধিকর ও লাবণ্যবৃদ্ধিকর, এই কথা আচার্যগণ বলিয়াছেন।।’১০।।

শতাবরী (শরমূলী), শ্বদংষ্ট্রা (গোক্ষুরবীজচূর্ণ) ও গুড়কষায় (ইক্ষুরস), গোক্ষীর ও ছাগঘৃতে পাক করিবে। যখন দেখিবে প্রায় জমিয়া আসিয়াছে, সেই সময়ে তাহাতে পিপ্পলী ও যষ্টীমধুচূর্ণ প্রক্ষেপ করিবে। যখন দেখিবে তদ্দ্বারা মোদক প্রস্তুত হইতে পারে, তখন তাহা নামাইয়া অর্দ্ধ তোলা হইতে ১ তোলা পর্যন্ত মোদক প্রস্তুত করিয়া রাখিবে এবং নায়িকার পুষ্পারম্ভের প্রথম দিন হইতে আরম্ভ করিয়া প্রত্যহ খাওয়াইবে। ইহা মেধ্য, বৃষ্য, আয়ুষ্য ও যুক্তরস, এই কথা আচার্যগণ বলেন।।’১১।।

শতাবরী, শ্বদংষ্ট্রা ও শীপর্ণীর (গণিয়াবির) ফল কুটিয়া লইয়া, প্রত্যেক সমভাবে যতটা হইবে তাহার চতুর্গুণ জল দিয়া মৃদু জ্বালে পাক করিবে। যখন বুঝিবে, উহার চতুর্থাংশ জল অবশিষ্ট আছে, তখন নামাইয়া ছাঁকিয়া লইবে, এবং পুষ্পারম্ভের প্রথম দিন হইতে প্রাতঃকালে স্ত্রীকে খাওয়াইবে। ইহা মেধ্য, বৃষ্য, আয়ুষ্য ও যুক্তরস, এই কথা আচার্যগণ বলেন।।’১২।।
প্রত্যক দ্রব্য ১১ আনা করিয়া ৩৩ আনা একত্র করিয়া ৩২ ভরি বা আধসের জলে পাক করিয়া, ৮ তোলা বা অর্দ্ধ পোয়া জল থাকিতে নামাইয়া ছাঁকিয়া লইবে এবং একেবারে খাইবে। খাইবার পর অবশ্যই কিহচু পুষ্টিকর খাদ্য খাইবে, ইহা প্রত্যহ নূতনরূপে সিদ্ধ করিয়া ব্যবহার করিবে।।১২।।

‘’শ্বদংষ্ট্রাচূর্ণসমম্বিত তৎসম যবচূর্ণ প্রত্যহ প্রাতঃকালে ২ পল করিয়া খাইবে। (২ পল, ১৬ তোলা বা এক পোয়া)। ইহা মেধ্য, বৃষ্য, আয়ুষ্য ও যুক্তরস, এই কথা আচার্যগণ বলেন।।’১৩।।
২ পল করিয়া খাইয়া যদি অতিশয় গরম বোধ করে, তবে ইচ্ছানুসারে কমাইয়া লইতেও পারে, কারণ পূর্বকাল অপেক্ষ একালের প্রকৃতি কিছু ক্ষীণ।।১৩।।

ইহাই বৃষ্যযোগ জানিবে।

এই স্থলে গূঢ় অভিসন্ধিমূলক দু’একটি উপদেশ করিবার জন্য শ্লোক উদ্ধার করিয়াছেন—

এই অধ্যায়ের যে সকল প্রীতিকারক যোগের কথা উক্ত হইল, তাহাতে বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভের জন্য আয়ুর্ব্বেদ, বেদ, বিদ্যাতন্ত্র (গৌরীকাঞ্চলিকা তন্ত্রাদি) এবং আপ্তদিগের নিকট হইতে যোগোক্ত দ্রব্য ও তাহার যোজনপ্রণালী প্রভৃতি জানিয়া লইবে।।’১৪।।

সন্দিগ্ধ দ্রব্যের যা তদ্‌যুক্ত যোগের প্রয়োগ করিবে না, যাহাতে শরীরের অত্যয় বা অতিরিক্ত ক্ষয় হয়, তাদৃশ যোগ প্রযোজ্য নহে, যে যোগে জীবনাশ করিতে হয় এবং যে যোগে অশুচি দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, সেই সকল যোগ ব্যবহার করিবে না।।’১৫।।

সেইরূপ যোগের প্রয়োগ করিবে, যাহাকে শিষ্টগণ নিন্দা না করেন এবং ব্রাহ্মণ ও সুহৃদ্‌গণের মঙ্গলকর বলিয়া যাহাকে অভিশব্দিত করেন।।’১৬।।

 

ইতি শ্রীমদ্‌বাৎস্যায়নীয়কামসূত্রে ঔপনিষদিকনামক সপ্তম অধিকরণে সুভগঙ্করণ, বশীকরণ, বৃষ্যযোগনামক প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত হইল।।১।।



Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2