৭.২ নষ্টরাগপ্রত্যানয়নম্‌, বৃদ্ধিযোগাঃ ও চিত্রযোগাঃ (হ্রাসপ্রাপ্ত যৌনক্ষমতা পুনরায় বৃদ্ধিকরণ)

সপ্তম ভাগ – দ্বিতীয় অধ্যায়

দ্বিতীয় অধ্যায় এই কয়টি যোগ কীর্তিত হইয়াছে—

১। রাগপ্রত্যানয়ন। (অপ্রাপ্তসুখ স্ত্রীর সুখপ্রাপ্তির উপায় এই যোগে বলা হইয়াছে।)

২। নষ্টরাগপ্রত্যানয়ন। (ইহা মন্দ বেগ, অতীব যৌবন, অতি বিশাল ও শ্রান্তাপহত ক্ষীণজীবীর পক্ষে অবলম্বনীয়। অন্যথা স্ত্রীকে আয়ত্ব করিয়া রাখিতে পারিবে না। এজন্য প্রয়োগ বলিতে হইয়াছে।)

৩। সাধনবৃদ্ধি। (অসমানসম্বন্ধা স্ত্রীর সুখার্থ এই যোগ কীর্তন করা হইয়াছে। এটি কথঞ্চিৎ উপকারী হইলেও বিষম অপকারী। ইহার প্রথমে যে শূকযোগ বলা হইয়াছে, তাহার অজ্ঞানকৃত প্রয়োগের ফলে ১৮ প্রকার উৎকট রোগ জন্মিয়া থাকে। সর্ষপিকা, অষ্ঠীলিকা, গ্রথিত, কূম্ভিকা, অজলী, মৃদিত, অবমন্থ, পুষ্পরিকা, স্পর্শহানি, শতযোনক, ত্বকৃপাক, শোণিতার্বুদ, মাংসার্বুদ, মাংসপাক, বিদ্রধি ও তিলকালক। ইহার মধ্যে মাংসার্বুদ, মাংসপাক, বিদ্রধি ও তিলকালক অসাধ্যব্যাধি। এইজন্য এই বর্ধনযোগটি গ্রহণীয় নহে; কিন্তু তাই বলিয়া অন্য যে সকল যোগ বৃদ্ধিকারক, তদ্দ্বারা স্ত্রীর অভিলষিত সিদ্ধ করা যাইতে পারে। অবশ্য সমাজেও তাহা গ্রহণ করিয়া থাকে।)

৪। এবং চিত্রযোগ। (ইহার মধ্যে সম্বাধের ও হ্রাস করিবার উপায় কীর্তিত হইয়াছে। তদ্ভিন্ন অন্য সকল আশ্চার্যযোগও গৃহীত হইয়াছে। তদ্দ্বারা যে সমাজের কোনই উপকার নাই, বা না থাকিলে ক্ষতি হয় না, তাহা বলিতে পার যায় না; কারণ, যে ব্যক্তি কুলশীলসম্পন্ন হইয়াও নিজস্ত্রীর অভিষ্ট সিদ্ধ করিতে অক্ষম, তাহার পক্ষে এযোগ যে ভগবানের অতুলনীয় আশীর্বাদের ন্যায় প্রিয়, তাহা সেই ব্যক্তি ভিন্ন অন্য আর কেহই বুঝিতে সক্ষম নহে; সুতরাং সেই সকল ব্যক্তির উপকারার্থ মহর্ষি বাৎস্যায়ন এই সকল যোগের কীর্তন করিয়া গিয়াছেন। তবে ইহা দ্বারা বেশ্যা ও লম্পটের ক্রীড়াক্ষেত্র যে প্রসারিত হয়, তাহা নিশ্চয় স্বীকার করিতে হইবে। তাই বলিয়া একেবারে উপক্ষেণীয় নহে; সুতরাং এযোগগুলিও গ্রহণীয়।

সমগ্র কামসূত্র গ্রন্থের উপসংহার করিতেছেন—

পূর্বশাস্ত্রের সংগ্রহ ও প্রয়োগের অনুসরণ করিয়া যত্নপূর্বক সংক্ষেপে আমি এই কামসূত্র রচনা করিলাম।।’২১।।

এই শাস্ত্রের স্বরূপতত্ত্বজ ব্যক্তি ধর্ম, অর্থ, কাম ও লোকের বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া কার্য করিবে; কিন্তু রাগবশে প্রবর্তিত হইবে না।।’২২।

অধিকারবশে রাগবর্ধন যে সকল চিত্রযোগ কথিত হইয়াছে, তাহার পরক্ষণেই আবার যত্নপূর্বক তাহার প্রচুর ব্যবহার করিতে নিবারণও করা হইয়াছে। তাহা লক্ষ্য করা উচিত।।’২৩।।

প্রয়োগ ও তাহার অনুশাসন শাস্ত্র আছে বলিয়াই যে, সে প্রয়োগের আচরণ করিতে হইবে, তাহার কোনই হেতু নাই; কারণ, শাস্ত্র ব্যাপক; তাহাতে সকল বিষয়েরই মীমাংসা থাকা উচিত, কিন্তু প্রয়োগ ব্যাপক নহে বলিয়া যথোপযুক্ত প্রয়োগেরই আচরণ করিতে হইবে, বিরুদ্ধ প্রয়োগের নহে।।’২৪।।

-শব্দে বায়ু; তাহার সংখ্যা ১৫। অভ্র-শব্দে ০। ব-শব্দে বরুম; তাহার সংখ্যা ২৪। তাহা হইলে সমুদায় সংখ্যাকে ক্রমে স্থাপন করিলে—(১৫০২৪) এই হয়। এই ক্ষণ ‘অঙ্কের বামা গতি’—এই নিয়মানুসারে (৪২০৫১) এই হয়। ইহার উপরে, অর্থ-শব্দে দ্বিতীয়বর্গ; তাহার সংখ্যা ২ সূত্রিত করিতে হইবে। তাহা হইলে (৪২০৫১২) অঙ্কসমষ্টি হইল। এত অঙ্ক কল্যব্দের আগামী অঙ্ক হইবে। তাহা হইলে ৪২০৫১২ অঙ্কের মধ্য হইতে কল্যব্দ ৪৩২০০ অন্তর করিলে, থাকিল অবশিষ্ট ১১৪৮৮ অঙ্ক।

এইক্ষণ ‘আগং অং সুবিমৃষ্য চ’ দেখা যাউক। অ-শব্দে বিষ্ণু; তাহার সংখ্যা ২২। অগ-শব্দে আগ, তাহার সংখ্যা ৮। তদুভয়ের সমাহারে ৩০ হইবে। আর তাহার পরে অ-র ২২ সংখ্যা বসিবে। তাহা হইলে ৩০২২ অঙ্ক হইল। পৃথক করিয়া বলায় এখানে আর বাগাগতির মর্যাদা নাই।

এখন ঐ অবশিষ্ট ১১৪৮৮ অঙ্ককে ৩০২২ দিয়া সুচারুরূপে বিয়োগ করিতে হইবে। অর্থাৎ ১১৪৮৮ অঙ্কের মধ্য হইতে ঐ ৩০২২ অঙ্ক যতক্ষণ বাদ যায়, ততক্ষণ বাদ দিতে হইবে।

১১৪৮৮
-৩০২২
——–
৮৪৬৬
৩০২২
——–
৫৪৪৪
৩০২২
——–
২৪২২

অবশিষ্ট ২৪ শত, ২২সের মধ্য হইতে আর ৩০২২ বাদ যায় না; সুতরাং কল্যব্দের ২৪২২ বৎসরে বাৎস্যায়ন এই কামসূত্র রচনা করিয়াছিলেন। তাহা হইলে, এক্ষণে কল্যব্দ ৫০০৭ বৎসরের অঙ্ক হইতে ২৪২২ বাদ দিলে ২৫৮৫ অঙ্ক অবশিষ্ট থাকে, অতএব এই কামসূত্র বর্তমান কল্যব্দ সংখ্যার ঐ ২৫৮৮ বৎসর পূর্বে বিরচিত হইয়াছিল।

(অনেকে হয়তো ইহাকে কষ্টকল্পনা মনে করিতে পারেন; কিন্তু তাঁহাদিগের সে চিন্তাখণ্ডনার্থ চতুঃষষ্টিকলার ‘ম্লেচ্ছিতকবিকল্প’ কলার পর্যালোচনা করিতে অনুরোধ করি। যিনি চতুঃষষ্টিকলার সূত্র প্রবর্তন করিয়াছিলেন, তিনি যে নিজেই সেই কলাবিত্তার পরিচয় দিতে কুন্ঠিত হইবেন, ইহা আমরা স্বীকার করিতে অক্ষম।

তারপর, উপসংহার-শ্লোকরাজির প্রথম শ্লোকেই বলিয়াছেন—‘পূর্বশাস্ত্রের সংগ্রহ ও প্রয়োগের অনুসরণ করিয়া যত্নপূর্বক সংক্ষেপে আমি এই কামসূত্র রচনা করিলাম।’ ইহা বলিয়া আবার যদি পঞ্চম শ্লোকে বলেন—‘বাভ্রব্যের সূত্রার্থ ও কামাগম সূচারূরূপে পর্যালোচনা করিয়া বাৎস্যায়ন এই কামসূত্র যথাবিধি রচনা করিয়াছেন’ তাহা হইলে কি বাৎস্যায়নের পুনরক্তি করার অপরাধ দুষ্পরিহার্য হইতে পারে? সুতরাং এই পঞ্চম শ্লোক, গ্রন্থরচনার বর্তমানকালপ্রদর্শনপরই বলিতে হইবে। ইহা ম্লেচ্ছিতকবিকল্পকলানুসারে গ্রথিত হইয়াছে, ইহা স্বীকার করিতে একটু কষ্টকল্পনা করিতেই হইবে। রক্ষণহীন অবস্থায় নিরাবরণ অমৃতভাণ্ড পাইবার আশা বোধ হয় বিচক্ষণেরা কখনই করিয়া থাকেন না। তবে অন্যের সম্বন্ধে ভিন্ন কথা)।।’২৫।।

এই শাস্ত্র লোকযাত্রার সুচারু নির্বাহের জন্য ব্রহ্মচর্য ও পরমসমাধি অবলম্বন করিয়া বিহিত হইয়াছে; সুতরাং ইহার অনুষ্ঠান রাগের জন্য কখনই হইতে পারে না।।’২৬।।

এই শাস্ত্রের জ্ঞানসম্পন্ন বিদ্বান্‌ কুশল হইলে, ধর্ম ও অর্থের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া যদি অতিরিক্ত রাগবান্‌ না হয় ও কামসম্পন্ন হইয়া যথাবিধি প্রয়োগের অনুষ্ঠান করে, তবে সে নিশ্চয়ই প্রসিদ্ধি লাভ করিতে পারে।।’২৮।।

ইতি শ্রীমদ্‌গঙ্গাচরণবেদান্তবিদ্যাসাগরকৃতবঙ্গানুবাদে বাৎস্যায়নীয়কামসূত্রভাষ্যে ঔপনিষদিকনামক সপ্তম অধিকরণে নষ্টরাগপ্রত্যানয়ন, বৃদ্ধিবিধি ও চিত্রযোগপ্রকরণ-প্রপঞ্চে দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত।।২।।

ঔপনিষদিক-নামক সপ্তম অধিকরণ সমাপ্ত।।৭।।

শ্রীমদ্‌বাৎস্যায়নমুনিপ্রনীত কামসূত্র সম্পূর্ণ।

।।ওঁ তৎসৎ ওঁ।।



Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2