বালিকা
বয়স থেকে প্রেমালাপ
কখনও
কখনও এমন ঘটে থাকে যে,
কোন তরুণ যুবক,
বহু চেষ্ট করে
অতিপ্রেত তরুণীকে বিয়ে করে
উঠতে পারে না। নিম্নলিখিত
ক্ষেত্রগুলিতে এরূপ হতে
পারে।
(১)
যখন কোন লোক
গুণবান হয়েও নির্ধন।
(২)
যখন কোন লোক
দেখতে সুন্দর বা গুণবান হয়েও
প্রতিপত্তিশালী বন্ধু বা
আত্নীয়ের অভাবে বিবাহ স্থির
করতে পারে না।
(৩)
যখন কোন লোক
ধনশালী হয়েও অত্যন্ত কলহ পরায়ণ
হয়।
(৪)
যখন কোন যুবক
তার পিতামাতা বা ভাইদের উপর
নির্ভরশীল থাকে।
(৫)
যখন কোন লোক
দেখতে স্ত্রীলোকের মত। অন্য
লোকের অন্তঃপুরে গিয়ে মিলতে
পারে।-কিন্তু
কেউ বর বলে গ্রাহ্য করে না।
এরূপ
ক্ষেত্রে সেই যুবক যাকে বিয়ে
করতে চায়, বালিকা
বয়স থেকেই সে বিষয়ে চেষ্টা
করা উচিত।
দক্ষিণ
ভারতে দেখা গেছে, কোন
পিতৃমাতৃহীন বালক অন্য মানুষের
ঘরে মানুষ হয়েও, এমন
কন্যা বিবাহ করেছে, যে
সে তা সাধারণভাবে করতে পারত
না। কিন্তু তা ঘটেছে শুধু
প্রেম-নিবেদন
কৌশলে।
কোনও
কোনও বালক প্রেমালাপ করেও
বালিকার মাকে মাতৃ সম্বোধনের
কৌশলেও উচ্চস্তরের মেয়ে বিয়ে
করতে পারে। যা অনেক ধরনবান
ব্যক্তিও পারে না।
অবশ্য
এই বালক ও বালিকারা ছেলেবেলা
থেকেই সাথী হওয়া চাই।
তারপর
দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব বেশ
দৃঢ় হওয়া চাই, বাল্যকাল
থেকে।
দু’জনে
একসঙ্গে নানা খেলা করবে-ফুল
তুলবে, পুতুল
তৈরি করে খেলবে, নানা
ফুলের মালা গাঁথবে,
মেয়েটা-ছেলেটাকে
ফুল তুলে দিয়ে সাহায্য করবে।
তা
ছাড়া চোর চোর খেলা, বিচি
নিয়ে খেলা, পাখি
ওড়ানো ইত্যাদি নানা প্রকার
খেলা আছে।
এবারে
এগুলি বিষয়ে বলা হচ্ছে।
বাৎস্যায়ন
নিম্নোক্ত খেলাগুলির কথা
অনুমোদন করেছেন।
(১)
চোর চোর খেলা-
এই খেলায় একজন
অন্যজনের চোখ বেঁধে দেয়। সহচর
সহচরিরা কোন গুপ্ত স্থানের
ভেতর লুকিয়ে পড়ে। তারপর তার
চোখ খুলে দেওয়া হয়। তখন সে
তাদের খুঁজতে আরম্ভ করে
দেয়।
একজনকে
খুঁজে বের করে তাকে ছুঁয়ে
দিলেই সে চোর হবে।
সাধারণতঃ
প্রেমিক প্রেমিকা পরস্পরকে
খুঁজে বের করতে চেষ্টা করে-
(২)
বিচি নিয়ে খেলা-
বিভিন্ন ফলের
বিচি নিয়ে এই খেলা হয়।
একজন
হাতে কিছু বিচি নিয়ে প্রশ্ন
করে, জোড়
না বেজোড় তারপর সে হয়ত উত্তরে
বলল জোড়। তখন খুলে গুণে দেখা
হয়।
কথা
মিলে গেলে সে জিতল-অন্যথায়
হেরে গেল।
(৩)
পাখি ওড়ান-
সব খেলোয়াড়
হাতে হাত দিয়ে দাঁড়ায়-একজন
ঝাপটা দিয়ে দৌড়াতে শুরু করে
দেয়।
(৪)
লবণ বীথিকা-
বাৎস্যায়নের
সময়ও খেলা ছিল-বর্তমানে
আছে কিনা জানা নেই।
একদল
ছেলেমেয়ে একটি লবণের ছোট স্তূপ
তৈরি করে।
অন্য
দল তাদের ধরবার চেষ্টা করে
লবণের স্তূপটি জয় করতে চায়।
তারা
কিছু লবণ চুরি করে পালায়-আগের
দল তাদের ধরবার চেষ্টা করে।
(৫)
গম নিয়ে খেলা-
গম ও চাল একত্র
মিশিয়ে দেয়। তারপর তা পৃথক
পৃথক করার চেষ্টা।
(৬)
কানামাছি খেলা-
এই খেলার বর্তমান
নাম কানামাছি খেলা।
খেলোয়াড়দের
একজনের চোখ বেঁধে দেওয়া হয়ে
থাকে। তারপর তার মাথায় সকলে
থাবড়া মারতে থাকে।
সে
যদি চোঁখ বাঁধা অবস্থায় একজনকে
ধরতে পারে বা তার নাম বলতে
পারে তখন সে আবার কাণাষাঁড়
হবে। তখন আবার তার চোখ বেঁধে
এইভাবে খেলা চলবে।
কৈশোর
প্রেম
এইভাবে
নানা খেলা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে
তরুণ প্রেমিকের উচিত প্রেমাস্পদকে
লাভ করার চেষ্টা করা।
তাছাড়া
যারা একটু বয়সে বেড়েছে তারা
তাদের অভিপ্সীতার সখা বা
বাল্যবন্ধুর সঙ্গে আলাপ পরিচয়
করবে।
যদি
অভিস্পীতার কোন ধাত্রী কন্যা
থাকে, তার
সাহায্যে তার দেখা পেতে হবে।
বা কোনও নারীর সাহায্যে ঐ
নারীর সঙ্গে দেখা করবে।
আর
যদি কোন বাধা না থাকে স্বাভাবিক
ভাবে দেখা করবে।
কৈশোর
প্রেমের কাজ
প্রেমিকের
কাজ প্রেমিকাকে সর্বদা সুখী
করে রাখা। তরুণী বা কিশোরী
যা চায় তাকে তাই জোগাড় করে এনে
দিতে হবে।
যে
সব খেলার জিনিস প্রেমিকা কোথাও
পায় না, তা
জোগাড় করে দিতে হবে।
নানাবিধ
খেলনা জোগাড়ে খুব সাবধান্তকোন
পুরুষ বন্ধুর সাহায্য না নেওয়া
হয় যেন। তা হলে সে পরে উক্ত
প্রেমিকার প্রতি আকৃষ্ট হ’তে
পারে।
স্থান
বা কাল অনুযায়ী প্রসাধন দ্রব্য,
গন্ধদ্রব্য,কুমকুম্,চন্দন
ইত্যাদিও জোগাড় করে দেওয়া
উচিত।
ওসব
কিন্তু করতে হবে খুব নিভৃতে,
যাতে আর পাঁচজন
জানাতে না পারে।
প্রেমাস্পদকে
চুপি চুপি বলতে হবে-তোমাকে
যা দিচ্ছি তা যেন কাউকে বলো
না।
যদি
প্রেমিকা বলে-কেন?
তার
উত্তরে বলতে হবে-তোমাকে
আমার ভাল লাগে-তাই
বলে তা কি সকলকে বলা উচিত?
যখন
তরুণীর মন আরও জয় হয়েছে দেখবে,
তখন নানা ম্যাজিক
যাদুবিদ্যা ইত্যাদি দেখাবে।
যদি
গান বা আবৃত্তি জান, গোপনে
তাকে বা তার সখীদের সহ তাকে
গান বা আবৃত্তি ধীরে ধীরে
শোনাবে।
যখন
শরৎ বা বসন্ত কালে আসে,
পৃথিবী যখন
চাঁদের আলো আর মন্দ মধুর বাতাসে
ভেসে আসে, তখন
নিরালায় প্রেমিকাকে ফুলের
মালা গন্ধদ্রব্য উপহার দিবে।
তার
সঙ্গে মিষ্ট সুরে নানা কথা
বলবে।
এইভাবে
নানা কাজের মাধ্যমে বুঝতে
হবে যে নায়িকার মন টলেছে কি
না।
নায়িকার
প্রেমের লক্ষণ
নারীর
কাম্য পুরুষের সঙ্গে দেখা
হলে সে মুখের দিকে তাকায় না।
যদি হঠাৎ কখনো দেখা হয় তাহলেও
সে মাথা নামিয়ে নিয়ে চলে যায়
বা আড়চোখে তাকায়। তবে মনের
প্রেম জানাবার জন্য সে হয়ত
কাপড় ঘুরিয়ে পরার অছিলায় দেহের
অংশ যেমন স্তন, কাঁধ
বা বগল নায়ককে দেখাতে পারে।
এটি তাকে আকর্ষণের জন্যে।
যদি
নারী দেখে যে তার প্রেমের
মানুষটি তাকে ঠিক দেখতে না
পেয়ে অন্যমনস্কভাবে চলে
যাচ্ছে, তখন
নারী দূর থেকে তার দিকে অজ্ঞাতে
দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
যদি
প্রেমিক কোনও কিছু জিজ্ঞাসা
করে, নারী
ধীরভাবে কিন্তু সংক্ষেপে তার
জবাব দেয়। নায়িকা কেবলই তার
কাছে কাছে থাকতে চায়-যদি
নায়ক কোনও সময় একটু দূরে থাকে
তা হ’লে নায়িকা তার আত্নীয়ের
সঙ্গে কথা বলে -কিন্তু
আড়চোখে নায়কের দিকে তাকায়।
সে
নায়কের কাছ থেকে সরতে চায়
না-কোন
সামান্য বিষয়ের অজুহাতে বা
কোনও অছিলা ধরে নায়কের সঙ্গে
কথা বলতে সে আগ্রান্বিত হয়।
হয়তো
সখীদের চুল নিয়ে তা গোছাতে
গোছাতে প্রেমাস্পদের কাছে
সময় কাটায়।
যে
প্রেমিকের বন্ধুদের ওপর
বিশ্বাস রাখে-তাদের
প্রতি সম্মানসূচকভাবে কথা
বলে। প্রেমিকের পরিচারকের
কথা মন দিয়ে শোনে-তার
সঙ্গে নিজের পরিচারকের মত
ব্যবহার করে থাকে। নায়কের
সঙ্গে নানা খেলা করতে চায়-যেমন
তাস, পাশা
ইত্যাদি- অবশ্য
একটু পরিচয় হলে এটি হয়।
নায়ক
কোনও বস্তু নায়িকার কাছে
গচ্ছিত রাখতে দিরে সে তা বেশ
যত্ন সহকারে রেখে দেয়।
বেশভূষা
করলেই নারী চায় তার প্রেমাস্পদকে
সেই সব বেশভূষা দেখাতে।
ঐ
নায়ক যদি তার বেশভূষার প্রশংসা
করে, তাতে
সে মহাখুশী হয়।
যদি
নায়ক বেশভূষার প্রশংসা না
করে-তবে
সে মনে করে তা মোটেই ভাল হয়নি।
সে পরে সেই বেশ পরতে চায় না।
নায়কের প্রতি বিরূপ মনোভাবও
আসতে পারে।
নায়ক
যদি তাকে কোনও বেশ বা অলংকার
উপহার দেয়, নায়িকা
সেগুলি পরিধান করে বাইরে বা
কোনও উৎসবে যেতে খুব ভালবাসে।
যদি
তার নিজের বাড়িতে অপর কোনও
ভদ্রলোকের সঙ্গে তার বিয়ের
কথাবার্তা হয়, তখন
সে ভারি বিষণ্ন হয়ে ওঠে যাতে
ও বিয়ে না হয় বা ভেঙ্গে যায়।
আর এ বিয়ে যাতে না হয় সেই চেষ্টা
করে। এছাড়া নায়ককে দূর থেকে
দেখলে, তার
কন্ঠস্বর শুনলে বা গান শুনলে
সে খুব খুশী হ’য়ে ওঠে।
এ
সময় সে বেশ হাসিখুশী থাকে।
অন্য
সময়ে দূরে থাকলে সে কি যেন
চিন্তা করতে থাকে।
যদি
কোনও লোক নায়কের কোনও গুণের
প্রশংসা করে, তবে
নায়িকা খুশী হয়।
নায়ক
কোন বড় পরীক্ষায় পাশ করলে বা
কোন উচ্চ সম্মান লাভ করেছে
শুনতে পেলে নায়িকা খুবই খুশী
হয়ে ওঠে।
নায়ক
কোনও অন্যায় কাজ করেছে শুনলে,
সে তা প্রায়
বিশ্বাস করে না-তবু
সে মনে মনে বিষন্ন ও দুঃখিত
হয়ে ওঠে।
নায়িকার
মনোভাব বুঝে চালচলন ও কাজকর্ম
করা নায়কের উচিত। তার ভালবাসার
নায়িকাকে বিয়ে করার জন্যে
সর্ব প্রকারে চেষ্ট ও যত্ন
করবে।
বাৎস্যায়ন
আরও বলেন্তবাল্যের বন্ধুকে
বাল্যের খেলার মাধ্যমে বিয়ে
করা উচিত। যুবকদের উচিত,
যৌবন সুলভ কাম
ক্রিয়ার সব চিহ্ন দেখলে সেই
যুবতীকে লাভ করার জন্যে সর্ব
প্রকার চেষ্টা করে। আর বর্ষীয়সীদের
উচিত তাদের বিশ্বস্ত সখীদের
মাধ্যমে পুরুষকে লাভ করা।