হাইলাইটস
বছর দশেকের সৌরভ। কিছুতেই স্কুলে যেতে চাইত না। বাবা-মা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না এর কারণ।
অনেক পরে জানা গেল তার শারীরিক সমস্যাই আসলে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আট বছর বয়সের পর থেকে হঠাৎ করেই সৌরভের শরীরের উপরিভাগ অর্থাৎ স্তনের বৃদ্ধি আর পাঁচটা ছেলের চাইতে একটু বেশিই।
এমনিতেই স্বাস্থ্যবান ছেলে বলে মা-বাবা তেমন আমল দেননি। কিন্তু ‘ম্যান বুবস’ বলে স্কুলে তাকে বুলি করায় রীতিমতো সিঁটিয়ে যাচ্ছে সে।
এই সময়
ডিজিটাল ডেস্ক: বছর
দশেকের সৌরভ। কিছুতেই স্কুলে
যেতে চাইত না। বাবা-মা
কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না
এর কারণ। অনেক পরে জানা গেল
তার শারীরিক সমস্যাই আসলে
কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আট
বছর বয়সের পর থেকে হঠাৎ করেই
সৌরভের শরীরের উপরিভাগ অর্থাৎ
স্তনের বৃদ্ধি আর পাঁচটা ছেলের
চাইতে একটু বেশিই। এমনিতেই
স্বাস্থ্যবান ছেলে বলে মা-বাবা
তেমন আমল দেননি। কিন্তু ‘ম্যান
বুবস’ বলে স্কুলে তাকে বুলি
করায় রীতিমতো সিঁটিয়ে যাচ্ছে
সে। কিছুতেই আর বন্ধুদের সঙ্গে
মিশতে চাইছে না।
ছেলেদের
স্তন বৃদ্ধি খুব একটা অস্বাভাবিক
ঘটনা নয়। কিন্তু দরকার পড়লে
চিকিৎসককেও দেখাতে হয়। কারণ
এই বাড়বাড়ন্ত শুধুই মেদ
বৃদ্ধির কারণ না কি আদতে তা
গাইনোকোমাস্টিয়ার লক্ষণ,
তা জানা জরুরি
সবচেয়ে আগে। কিন্তু এই
গাইনোকোমাস্টিয়া কী?
এর লক্ষণ কেমন?
আদৌ কি কোনও
চিকিৎসা আছে এর?
গাইনোকোমাস্টিয়া
আদতে কী?
গাইনোকোমাস্টিয়া
এমন একটি অবস্থা যখন পুরুষদের
স্তনের টিস্যু ফুলে যায়।
এটা ঘটার মূল কারণ হল,
শরীরের দুটি
হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে
যাওয়া। তবে যদি শুধু মাত্র
চর্বি জমার কারণে স্তন বড়
হয়ে থাকে, তা
হলে তা কিন্তু গাইনোকোমাস্টিয়া
নয়। তখন তা পরিচিত
সিউডোগাইনোকোমাস্টিয়া নামে।
জেনে রাখা জরুরি
১) নারী এবং পুরুষ উভয়ের স্তনেই টিস্যু থাকে। যদিও নারীদের স্তনের টিস্যু বিকশিত হয় অনেক বেশি। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, সব ছেলেরাঅ অল্প পরিমাণে স্তনের টিস্যু নিয়ে জন্মায়।
২) ছেলেদের শরীরে টেস্টোস্টেরন নামক একটি হরমোন তৈরি হয়, যা বয়ঃসন্ধির সময় তাদের শরীরের যৌন বৃদ্ধি নির্দেশ করে। কিন্তু পুরুষদের শরীরেও কিছু পরিমাণে ইস্ট্রোজেন তৈরি হয়। ইস্ট্রোজেনের কারণে মেয়েদের যৌন বৃদ্ধি বাড়ে। কোনও পুরুষের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেশি হলে গাইনোকোমাস্টিয়া হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
৩) যখন একটি ছেলে বয়ঃসন্ধির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, অথবা যখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর কম টেস্টোস্টেরন তৈরি করে, তখন দুটি হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়।
গাইনোকোমাস্টিয়ার লক্ষণ
গাইনোকোমাস্টিয়ার প্রথম লক্ষণ হল স্তনবৃন্তের নীচে চর্বিযুক্ত টিস্যু জন্মাতে পারে। কখনও কখনও এই স্থানে ঘা বা ক্ষত হয়।
তবে সেই ঘা মানেই কিন্তু ব্রেস্ট ক্যানসার নয়। এমনিতেই ব্রেস্ট ক্যানসারের আধ্নগকা মেয়েদের মধ্যেই বেশি। তাই গাইনোকোমাস্টিয়া থেকে ক্যানসার হতে পারে, সেই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়।
স্তনের ফোলা অসমভাবে ঘটতে পারে। অর্থাৎ কখনও একটি স্তনের চেয়ে আর একটি স্তনের আকার বাড়তে পারে।
যদি কখনও বুঝতে পারেন যে, স্তন ফুলে গেছে, ব্যথা হচ্ছে অথবা স্তনবৃন্ত থেকে স্রাব নির্গত হচ্ছে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
গাইনোকোমাস্টিয়ার কারণ
গাইনোকোমাস্টিয়া কেন হয়, তার কোনও একটা কারণ নেই। অনেকগুলি সম্ভাব্য কারণের এক বা একাধিক আসলে গাইনোকোমাস্টিয়া ডেকে আনতে পারে। দেখে নেওয়া যাক সেগুলো কী কী।
এমন কোনও আঘাত বা রোগ যা আদতে অণ্ডকোষকে প্রভাবিত করে, তা থেকেও হতে পারে গাইনোকোমাস্টিয়া। কারণ এই কারণে সরাসরি প্রভাবিত হয় টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ।
থাইরয়েডের সমস্যা গ্রন্থির হরমোন বৃদ্ধি এবং যৌন বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে।
ফুসফুসের টিউমার, পিটুইটারি গ্রন্থি বা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি সমেত কিছু ক্যান্সার থাকলে গাইনোকোমাস্টিয়া হতে পারে।
শরীরের ওজন বেশি হলে ইস্ট্রোজেন বেশি ক্ষরণ হতে পারে। তা থেকেও সূচনা হতে পারে গাইনোকোমাস্টিয়ার।
কিছু বিশেষ স্টেরয়েড, গাঁজা এবং হেরোইন সহ অবৈধ ড্রাগ নিলে তা প্রভাব ফেলতে পারে।
কিডনির নানা রোগ থাকলে গাইনোকোমাস্টিয়া হতে পারে।
যকৃতের সমস্যা হলে তা পরোক্ষ ভাবে ডেকে আনতে পারে গাইনোকোমাস্টিয়া।
গাইনোকোমাস্টিয়ার চিকিৎসা
অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা ছাড়া গাইনোকোমাস্টিয়া ভাল হয়ে যায়। তবে তা বাড়তে থাকলে অবশ্যই কোনও ভাল এন্ডোক্রিনোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হরমোনের সমস্যা তাঁরাই সবচেয়ে ভাল চিকিৎসা করেন।
কী ভাবে গাইনোকোমাস্টিয়ার চিকিৎসা করা হয়, তা নির্ভর করে রোগীর বয়স, স্বাস্থ্য এবং কোন ওষুধের প্রতি রোগী কতটা সাড়া দেন, তার উপরে।
বয়ঃসন্ধির সময় যদি গাইনোকোমাস্টিয়া হয়, তবে এটি সাধারণত নিজেই চলে যায়। তবে ৬ মাস থেকে ৩ বছর লাগতে পারে এর নির্মূল হওয়া। যদি তা-ও না হয়, তবে অবধ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। এর মধ্যে চিকিৎসক রোগীর সমস্যা বুঝে যে কোনও সার্জারি করতে পারেন।
লিপোসাকশন (অতিরিক্ত স্তনের চর্বি অপসারণ)
মাসটেকটোমি (স্তন গ্রন্থি টিস্যু অপসারণ)
গাইনোকোমাস্টিয়া আটকাবেন কী ভাবে?
গাইনোকোমাস্টিয়ার আশঙ্কা কমানো কিন্তু আপনার হাতেই রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক কী কী না করলে বা কোথায় সংযত হলে এড়ানো যায় গাইনোকোমাস্টিয়া।
অবৈধ ওষুধ খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। যেমন অ্যানাবলিক স্টেরয়েড, এন্ড্রোজেন, অ্যাম্ফেটামিন, গাঁজা বা হেরোইন।
অপরিমিত অ্যালকোহল করা একেবারেই উচিত নয়।
স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা অত্যন্ত জরুরি।
এ ছাড়াও গাইনোকোমাস্টিয়া আসলে অনেক সময়ে মানসিক সমস্যার তৈরি করে। ঠিক এই লেখার শুরুতে যেমন ঘটনার কথা বলা হয়েছিল, তেমন ঘটনার শিকার হন অনেকেই। তাই মনকে শক্ত করুন। এবং প্রয়োজনে রুখে দাঁড়াতে হবে। এটি এক ধরনের অসুস্থতা। এবং তা কোনও ভাবেই ঠাট্টা মস্করার বিষয় নয়। প্রয়োজনে সে কথাও বোঝাতে হবে।
গাইনোকোমাস্টিয়া একটি রোগের নাম মাত্র। সময় বুঝে চিকিৎসা করলে তা সেরেও যায়। তাই পরিস্থিতি বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।