অধ্যায় ২ – পত্নীলাভ
আদর্শ বধূ
নির্বাচন আমাদের দেশে একটি
প্রকৃত সমস্যা হিসাবে
রয়েছে।
পৃথিবীর
বিভিন্ন দেশে এটি একটি সমস্যা
নয়-কিন্তু
আমাদের দেশে যেখানে ঠিক ছেলেমেয়ে
পরস্পর পছন্দ করে বিয়ে করে
না। বিয়ে হয় অনেকটা ভাগ্যকে
অবলম্বন করে। তাই আমাদের দেশে
প্রাচীন শাস্ত্রে সুলক্ষণযুক্ত
নর-নারীর
বিচারে এত ঘটা ছিল।
শাস্ত্রে
আছে পুরুষের ভাগ্য এবং স্ত্রীলোকের
চরিত্র দেবতারাও বুঝতে পারেন
না। তাই কথার ভিত্তিতেই আমাদের
শাস্ত্রে নরনারী নির্বাচন
সমস্যাকে এত গুরুত্ব দেওয়া
হতো।
আদর্শ
বধূ নির্বাচন সমস্যার ব্যাপারে
যে যে বিষয়গুলি দেখা হতো তা
হলোঃ-
১।
ভাবী বধূর রূপ ও তাহার চেহারার
কথা।
২।
বধূর গায়ের রং- সন্তানের
দেহে মায়ের রং আসতে পারে,
তাই ফর্সা নারীর
কদর।
৩।
শরীর সুগঠিত কিনা।
৪।
হাঁটা চলা ভাল কিনা।
৫।
চুল কত লম্বা- মাথা
ঠিক আছে কিনা।
৬।
বধূর স্বভাব চরিত্র কেমন-
ঝগড়াটে কিনা।
৭।
বধূর কর্মকুশলতা।
৮।
বিদ্যাচর্চা।
৯।
অন্যান্য চর্চা-সেলাই,
বাদ্য,
সঙ্গীত ইত্যাদি।
বধূ নির্বাচন
সমস্যা
বধূ
নির্বাচন প্রাচীন যুগেই একটি
সমস্যা বলে পরিগণিত হতো।
শাস্ত্রে বধূ নির্বাচন সমস্যা
সমাধানের জন্য যে যে কথা বলা
হয়েছে তা নিম্নে প্রদত্ত
হলো।
১।
বধূ স্বামীর সঙ্গে একই জাতির
ও ধর্মের হবে। প্রাচীন যুগে
একশ্রেণীর সঙ্গে অন্য শ্রেণীর
বিবাহ প্রচলিত ছিল না।
২।
বধূ যে উঁচু বংশের মেয়ে হবে
এটা সর্বদাই কাম্য।
৩।
মেয়ের চরিত্র বেশ উন্নত হবে।
৪।
স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর বয়স
অন্ততঃ পাঁচ বছরের ছোট হেব।
স্ত্রীর চেয়ে স্বামীর বিদ্যা
কিছু বেশী থাকা উচিত।
৫।
কোষ্ঠীতে উপযুক্ত যোটক বিচার
আমাদের শাস্ত্রমতে করা হ’য়ে
থাকে।
এ
ছাড়া নারীর অন্যান্য গুণের
কথা ত আগেই বলা হয়েছে। কিন্তু
এই সব গুণগুলি একত্রে কাম্য
হলেও একই নারীর মধ্যে তা অনেক
সময় দেখা যায় না বা মনোমত পাত্রী
মেলে না।
এ
ছাড়া কন্যা নির্বাচনের সময়
অন্য যে সব দিকে নজর রাখা হয়ে
থাকে তাও বলা হচ্ছে-
আমাদের
শাস্ত্রে চেহারা ও গণাগুণ
অনুযায়ী নারীকে তিনটি ভাগে
বিভক্ত করা হয়-
১।
উত্তমা কুমারী।
২।
মধ্যমা কুমারী।
৩।
অধমা কুমারী।
উত্তমা
কুমারীর লক্ষণ
যে
কন্যা শ্যামাঙ্গী, যার
কেশ মনোহর, দেহে
অল্প অল্প লোম বিরাজমান সে
কন্যা মনোহারিনী। মনোহর
ভ্রূ-যুক্তা,
সুশীলা,
মৃদু গতিশালিনী।
সুদন্তা, পঙ্কজ
নয়না। যার কটি ক্ষীণ,
যার কথা অতি
উত্তম ও মিষ্টভাষী বলে মনে
করবে। যে কন্যা কুলের কল্যাণ
কারিণী। যার দেহ নাতিদীর্ঘ,
নাতিহ্রাস।
যার বর্ণ শ্যাম, দেহ
ক্ষীণ, গতি
হংসিনীর মত। করতল রক্তপদ্মের
মত, স্তন
নাতিউচ্চ, নাতি
ক্ষুদ্র, যোনিপৃষ্ঠ
কচ্ছপাকৃতি, ধর্মপরায়ণ,
পতিব্রতা,
তাকেই উত্তমা
রমনী বলে মনে করা চলে।
মধ্যমা
কুমারীর লক্ষণ
যার
শরীর মধ্যবিত্ত, কেশ
দীর্ঘ। যে রমনী সর্বদা আলস্য
পরিত্যাগ করে।
কি
সুখ কি দুঃখ উভয় যার সমজ্ঞান।
যে সর্বদা হাসি মুখে কথা বলে,
যার নাভিদেশ
গভীর, যে
রমনী সকলের প্রতি মিষ্ট বাক্য
প্রয়োগ করে, যে
সদাচার পরায়ণ, যার
মতি সর্বদা ধর্মে প্রতিষ্ঠিত।
অল্পমাত্র আহারেই যার তৃপ্তিবোধ
হয়, সর্বজীবে
যার আত্নজ্ঞান, যে
রমণী গুরুভক্তি পরায়ণ,
দেবপূজায়
নিযুক্ত ও দ্বিজ সেবায় রত এবং
যে রমণী সাধ্বী, তাকেই
মধ্যমা রমনী বলে।
অধমা কুমারীর
লক্ষণ
অধমা
কুমারী হস্ত ও পদ ক্ষীণ,
চক্ষু পিঙ্গলবর্ণ,
দন্ত সুদীর্ঘ
ও বিরল (ফাঁকা
ফাঁকা) এবং
উদর বৃহৎ হয়ে থাকে। এর শরীর
অধিক লোমে পরিপূর্ণ। এই রমনী
অতি উচ্চৈঃস্বরে হাস্য করে
এবং বেশি কথা বলে। এই রমণী অতি
নির্লজ্জ, সদা
ক্রোধর্পূর্ণ এবং চিত্ত সদা
বিকল।
অধমা
কুমারীর হস্ত ও পদে দীর্ঘ এবং
কেশ খর্ব হয়ে থাকে। এদের সমস্তই
কুলক্ষণে পরিপূর্ণ। অধমা
রমণী কদাচ স্বধর্মবিহিত
সদাচারের অনুষ্ঠান করে না।
সুতরাং রমণীকে পরিত্যাগ করা
কর্তব্য।
যেখানে
অধমা রমণী বাস করে, লক্ষ্মী
কখনও সেখানে বিরাজ করেন না।
যে-লোক
এহেন কন্যাকে বিবাহ করে,
তাকে আজীবন
মহাদুঃখ ভোজ করতে হয় এতে সন্দেহ
নাই। অতএব সব সময় এরূপ নারীর
সংসর্গ ত্যাগ করা উচিত।
যার
সর্বাঙ্গ লোমে পরিপূর্ণ সেরূপ
কন্যা কূলে উঁচু হলেও বিবাহযোগ্যা
নহে। সে কন্যা কুলক্ষণাযুক্তা।
যে
কন্যা শুভ্রবর্ণা,
অধিকাঙ্গী,
রোগিণী,
লোমশূন্য অধিক
রোমান্বিত, বাচাল,
পিঙ্গলবর্ণা,
নক্ষত্র নাসিকা,
বৃক্ষনাসিকা,
নদীনাম্নী,
পক্ষীনাম্নী,
সর্পনাম্মী,
ভীষণনাম্মী,
সেরূপ কন্যাকে
বিবাহ করা কর্তব্য নহে। সেরূপ
লক্ষণযুক্ত কন্যা শাস্ত্রে
কুলক্ষণা বলে কথিত হয়ে
থাকে।
নদীনাম্নী,
বৃক্ষনাম্নী
ও নক্ষত্রনাম্নী কন্যাকে
বিয়ে করা উচিত নয় পূর্বে একথা
বলা হয়েছে বটে, কিন্তু
গঙ্গা, যমুনা,
গোমতী,
স্বরস্বতী এই
সব নদীর নাম। তুলসী ও মালতী
এই দুই বৃক্ষের নাম এবং রেবতী,
অশ্বিনী ও
রোহিনী এই তিন নক্ষত্রের বেলায়
কোন দোষ নয়।
যে
কন্যার চক্ষুদ্বয় ট্যারা ও
চপল, যে
কণ্যা দুঃশীলা ও পিঙ্গলবর্ণ
এবং হাস্যকালে যার গণ্ডস্থলে
কূপাকার চিহ্ন দৃষ্ট হয় তাকে
কামুকী বলে জানবে।
বিবাহের
বিচার্য বিষয়
এবারে
বিবাহের আগে কি কি বিষয়ের
বিচার করা উচিত সে সম্বন্ধে
বলছি।
(ক)
যোগ্য বর কনে
পছন্দ করা।
(খ)
কন্যার উপযুক্ত
শিক্ষা-দীক্ষা।
(গ)
বরের উপযুক্ত
উপার্জন ক্ষমতা ও জীবনে
প্রতিষ্ঠা।
(ঘ)
দু’জনের শরীর
গঠনে ঠিকমত মিল।
(ঙ)
সম্ভব হলে
ডাক্তার দ্বারা স্বাস্থ্য
পরীক্ষা করানো।
(চ)
দুজনের পূর্ণ
বয়স। আমাদের দেশে পুরুষের
বয়স ২২-৩০
আর নারীর বয়স ১৮-২৫
হলে ভাল হয়।
(ছ)
ছেলে ও মেয়ের
মধ্যে অন্ততঃ সাত আট বছরের
পার্থক্য থাকা উচিত।
(জ)
দু’জনেরই মনের
গঠন ও চিন্তাধারার প্রতি
লক্ষ্য রাখা উচিত।
(ঝ)
বিবাহের আগে
দুজনের কামশাস্ত্র বিষয়ে
পূর্ণ জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়।
(ঞ)
বিবাহের আগে
যেন কারও চারিত্রিক দোষ না
থাকে।
(ট)
দু’জনের প্রকৃতি
এক প্রকার কিনা সে বিষয়েও
বিচার করা।
(ঠ)
দু’জনের আর্থিক
অবস্থায় যেন বিরাট পার্থক্য
না হয়।
অত্যধিক
নারী পুরুষের সঙ্গে খুব গরীব
ঘরের নারী বা খুব ধনী ঘরের
মেয়ের সঙ্গে খুব গরীব পুরুষের
বিয়ে হ’লে তাদের পারিবারিক
জীবন প্রায়ই সুখের হয় না।
প্রধানতঃ
এইগুলি বিচর করে দেখে,
বিয়ে দিরে
প্রায়ই তারা সুখী দম্পতি
হয়।
কোকো
পণ্ডিতের মত হলো সাধারণ মানুষ
পুরুষ বা নারীর রূপ, তাদের
বংশ ও তাদের দেহের উচ্চতা দেখে
বিয়ের বিষয় বিচার করেন-
কিন্তু এটা যে
কত বড় ভ্রান্তি তা একটু চিন্তা
করলে বুঝতে পারা যায়।
পুরুষ
বা নারীর ভেতরটা অর্থাৎ তাদের
অন্তরের কথা বুঝতে বা হৃদয়
দখল করতে পারে খুব কম সংখ্যক
মানুষ। তাই তাদের দু’টি প্রকৃত
সুখমণ্ডিত হবে কিনা, তা
সঠিক বিচার না করে বিয়ে দিলে
সুখের চেয়ে দুঃখই দেখা দেবার
আশঙ্কা থাকে অনেক বেশী।
যখন
বর-কনে
পরস্পরকে দেখতে পায় না বিয়ের
আগে, তখন
বিচারকদের হাতে সবে সার্থক
ও উপযুক্ত দম্পতি নির্বাচন।
বিভিন্ন
শুভাশুভ বিচার
যখন
বরপক্ষরা কন্যা দেখতে যাবেন,
তখন নিম্নলিখিত
চিহ্নগুলি তাদের অবশ্য দেখা
উচিত।
১।
কন্যাটি এই সময় ঘুমোচ্ছে বা
কাঁদছে কিনা, কিংবা
বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে কিনা।
২।
কন্যার নাম সহজে এবং প্রকৃতপক্ষে
উচ্চরণ করা যায় কিনা,
তার নাম অকল্যাণ
সূচক কিনা।
৩।
খবর নেওয়া উচিত, ঐ
কন্যার আগে অপর কারও সাথে
বিয়ের কথা পাকা হয়েছিল কিনা।
৪।
কন্যার গাযের রং পিঙ্গলবর্ণ
কিনা। তার মুখে সাদা সাদা দাগ
আছে কিনা।
৫।
কন্যার মুখ দেখতে পুরুষের মত
যেন না হয়।
৬।
তার মুখে চুল আছে কিনা।
৭।
তাঁর কাঁধ নিচে ঝুলে পড়া
কিনা।
৮।
পা দুটি বাঁকা কিনা।
৯।
কপাল বাইরে ঠেলে বের হয়েছে
কিনা, অথবা
খুব উঁচু কিনা।
১০।
তার স্তন দু’টি অনুদ্ভিন্ন
কিনা।
১১।
যদি কন্যা তার পিতার শবদাহ
করে থাকে।
১২।
যদি কোনও পুরুষের সঙ্গে আগে
যৌন মিলন করে থাকে এবং তা জানা
যায়।
১৩।
যদি তার বিয়ের বয়স পার হ’য়ে
গিয়ে থাকে।
১৪।
যদি কন্যা রুগ্না বা বোবা
হয়।
১৫।
কন্যার সঙ্গে যদি কোনও সম্পর্ক
যেমন খুড়তুতো কি মামাতুতো
বোন ইত্যাদি থাকে।
১৬।
যদি কন্যা বরের চেয়ে খুব ছোট
বা বড় হয় (বয়সে)।
কন্যার
এইসব লক্ষণ থাকলে বিবাহ করা
কখনও উচিত নয়।