১.৫ দূতী ও দূত কর্ম

কামসাধানায় নারী-পুরুষের বিভিন্ন ধারা
শাস্ত্রমতে কামচর্চার জন্য কোনও নারী লাভ করতে গেলে, স্ব-বর্ণীয় বা স্বজাতির কোন অবিবাহিতা কিশোরীকে শাস্ত্র ও সমাজ সম্মতভাবে বিবাহ করে তার সঙ্গে সহবাস করা উচিত।
কিন্তু কোনও উচ্চবংশীয় নারী বা নীচ বংশীয়া মেয়েমানুষ অথবা অন্য কোনও লোকের বিবাহিতা পত্নীর সঙ্গে সহবাস নিষিদ্ধ।
উপরের শাস্তসম্মতবাবে বিবাহিত নারীর সঙ্গে সহবাস করলে যে সন্তান বা সন্ততি জন্মায় তারাই হলো কুল প্রদীপ।
এছাড়া কোনও বারাঙ্গনা বা বিধবার সঙ্গে সহবাসে যে সন্তান হয় তারা পূর্বপুরুষের বংশধারার স্থান পায় না। তাদের সঙ্গে সহবাসে পুরুষ বেশি সুখ উপভোগ করতে পারে, কিন্তু সন্তান বংশের ধারায় স্বীকৃত হয় না।

সহবাসের অনুমোদিত নারী
তিন প্রকার সাধারণতঃ বাৎস্যায়নের মতে দৈহিক সহবাসের জন্য অনুমোদিত-
১। সমাজসম্মতভাবে বিবাহিতা স্ত্রী।
২। বারাঙ্গনা বা পতিতা নারী
৩। বিধবা নারী।
আচার্য গণিকাপুত্র যোনিসুখের জন্য আর একশ্রেণীর নারী কথা লিখেছেন। তিনি () অন্যের স্ত্রী উপভোগ করা যায়; সম্পত্তি বা ধনলাভের সম্ভাবনা থাকলে।
() আত্বারক্ষার্থে বা জীবন বাঁচাবার জন্য।
() বন্ধুত্ব দৃঢ় করার জন্যে।
অন্যের বিবাহিতা স্ত্রীর সঙ্গে যৌনসুখ লাভ করা সাধারণতঃ পাপকার্য।
কিন্তু যদি জানা যায় ঐ নারী স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষের সঙ্গে এর আগে যৌন সহবাস করেছে বা করে তাহলে সে স্ত্রীলোক উচ্চবংশীয় হলেও সহবাসের পক্ষে সে উপযুক্ত বলে বিবেচিত। এতে ধর্মনাশের কোন প্রশ্ন ওঠে না।

নরনারী উপভোগের বিধিসম্মত ব্যবস্থা
গণিকাপুত্রের মতে নিুলিখিত অবস্থায় নরনারী উপভোগ বিধিসম্মত।
() যদি কোনও লোক প্রতাপসম্পন্ন ও ধনবান হয় কিন্তু যদি কোন ব্যক্তির শত্রুর সঙ্গে যোগদান করে থাকে, তা হলে পূর্বোক্ত ধন ও প্রতাপসম্পন্ন ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে সুুবিধা হলে সহবাস করা সংগত।
কেননা, তার নারীর সঙ্গে সহবাসে, সে ব্যক্তি শত্রুর দল ছেড়ে উপপতির দলে আসতে পারে-বা স্ত্রী তাকে আসতে প্রলুব্ধ করতে পারে।
() ঠিক সেই নারীর সঙ্গে অবৈধ প্রণয় করা যেতে পারে, যার স্বামী বহু কালের পরম শত্রু বা শত্রুতা করে আসছে। এরূপ ধর্ষিতা স্ত্রী স্বামীকে বন্ধু পদে আনতে পারে।
() সে নারী তার স্বামীকে ভবিষ্যৎ উপপতির বন্ধর দলে আনতে পারে এবং উপপতির শত্রু নাশ করেত প্রলুব্ধ করতে পারে।
() কোনও নারীর স্বামী যদি কাও ঘরবাড়ী, সম্পত্তি বা ধনদৌলত কেড়ে নিতে থাকে, তা হলে সঙ্গে শেষোক্ত লোক প্রণয়স্থাপন বা যৌন সহবাস করতে পারে। ফলে হয়তো ঐ ব্যক্তির স্ত্রীর সাহায্যে সে ঘরবাড়ী বা ধনদৌলত ফিরে পেতে পারে।
() যে নারীর সাহায্যে কোনও পুরুষ বিপদ ছাড়া কোনও অর্থ উপার্জন করতে পারে ঐ নারীর সঙ্গে যৌন সংসর্গ সে নিঃসন্দেহে করতে পারে।
() যে নারী অত্যন্ত কামুক এবং তার কাম পরিতৃপ্তি না হলে উপপতির বিশেষ নিন্দা প্রচার করতে পারে। এরূপ নারীর সঙ্গে ব্যভিচার করতে পারে।
() যে নারী তার ঈপ্সিত পর পুরুষের বিশেষ ক্ষতি এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে, সে নারীকে উপভোগ করে জীবন ধন বাঁচানো যেতে পারে।
() যে নারী স্বামীকে শত্রুর সঙ্গে যোগদান করিয়েছে, এমন কি নিজেকে শত্রুর দলে মিশিয়েছে, সুযোগ ঘটলে সে নারীর সঙ্গে কাম সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।
() যদি কোনও পুরুষ অন্য পুরষের পত্নীর সঙ্গে কাম সম্পর্ক স্থান করে তাকে-তাহলে শেষোক্ত পুরুষ প্রতিশোধ নেবার জন্যে প্রথমোক্ত পুরুষের স্ত্রীর সঙ্গে ইচ্ছামত ব্যভিচার করতে পারে।
(১০) রাজ-অন্তঃপুর লুক্কায়িত শত্রুর অনুসন্ধান করতে পারে বলে কোন লোক রাজার অনুগৃহীতা পরস্ত্রীর সঙ্গে কাম সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।
(১১) কোন অভীপ্সতা কুমারীকে বিবাহ করতে হলে যে নারী এ বিবাহ সফল করে দিতে পারে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক চলতে পারে।
(১২) যে নারীর স্বামী কারও পত্নী বা উপপত্নীকে প্রলুব্ধ করে কেড়ে নেয়, তা হলে শেশোক্ত ব্যক্তিও ঐ নারীকে শয্যাশায়িনী করতে পারে।
(১৩) শত্রুতা থাকলে যে কোনও লোক শত্রুর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করতে পারে।
(১৪) চারায়ণ (কামশাস্ত্রের একজন লেখক), আরও বেশী সাহশী! তিনি বলেন, রাজার ভার্য্যা অথবা অন্যান্য রাজকর্মচারীদের নারী বা বিধবাগণ অর্থ উপার্জন সহায়তায় পথের দিক দর্শন করে। তাই তারাও উপভোগ্যা।
(১৫) সুর্বণাভ বলেন্তবিধবা সন্ন্যাসীনীরাও উপভোগ্র।

পুরুষের শ্রেণীবিভাগ
যে কুমারী নারী কখনও কোনও পুরুষের সঙ্গে কামক্রিয়া করেনি, সে কুমারীর নাম অনাঘ্রাত কুমারী। কিন্তু যতোই কোনও নারী বা নারীদের সঙ্গে যৌনক্রিয়া করে থাকুক সে চিরদিন যৌনশক্তি সম্পন্ন ও নারীদের কাম্য।

নিষিদ্ধা নারী
বাৎস্যায়নের মতে নিম্নলিখিত নারীরা চিরদিন পুরুষের সঙ্গে সঙ্গমে নিষিদ্ধ।
১। কুষ্ঠ রোগ সংক্রান্ত নারী।
২। যক্ষ্মা রোগগ্রস্তা নারী।
৩। উন্মাদ রোগ আক্রান্তা নারী।
৪। জাতি বা সমাজ পরিত্যাগী নারী।
৫। যে নারী প্রেমের গোপন সংবাদ রক্ষণে অসমর্থা।
৬। যে নারী এত কামুকী যে সাধারণের দৃষ্টির সামনেও যৌন সহবাস করতে প্রস্থত।
৭। বয়স্থা নারী।
৮। যে নারীর চোখ পাটকিলে রং কিন্তু অতি শুভ্র চর্ম।
৯। যে নারী অত্যন্ত কালো।
১০। যার মুখে বা যোনিতে অত্যান্ত দুর্গন্থ বের হয়।
১১। নিকটাত্নীয় (যেমন বোন পিসতুতো বোন প্রভৃতি)
১২। নিজের স্ত্রীর কোনও বান্ধবী।
১৩। সন্ন্যাসিনী বা ব্রহ্মচারিণী নারী।
১৪। কোনও আত্নীয়ের স্ত্রী।
১৫। কোনও বন্ধুর স্ত্রী।
১৬। কোন পণ্ডিত বা গুরু পত্নী।
১৭। রাজপত্নী।
বাভ্রব্য বলেন, যে নারী তার পতি ছাড়া আও পাঁচজন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক রয়েছে তার সঙ্গে অবাধে মিলন চলতে পারে।

দূতী নির্বাচন
প্রেম সম্পর্ক স্থাপন করতে দূতীর প্রয়োজন হয়ে থাকে।
এই দূতীর মাধ্যমে অন্য নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। এই দৌত্য করার জন্য নিুলিখিত ধরণের নারী খুব প্রশস্ত।
১। বাল্যের বান্ধবী।
২। যে লোকের কোন উপকার করা হয়েছে এমন লোক বা তার স্ত্রী।
৩। সম ব্রবসায়ী কোন লোক বা তার স্ত্রী।
৪। সগোত্র বা সহপাঠী বা পাঠিনী।
৫। মনের সব গোপন কথা জানে এমন বন্ধু বা তার স্ত্রী।
৭। যাকে সব কথা বলা চলে এমন বন্ধু বা তার স্ত্রী।
৮। যদি সমবয়সী ধাত্রীপুত্‌ বা ধাত্রী কণ্যা থাকে।
৯। সমবয়সী লোক একসঙ্গে বাস করে বা তার স্ত্রী।

দৌত্য কার্য্যে গুণ
প্রথম দূত বা দূতীর কতকগুলি গুণ থাকা একান্ত প্রয়োজন। তা হচ্ছে-
১। এরা উচ্চবংশীয় হওয়া উচিত।
২। এরা প্রতারণা পরায়ণ হবে না।
৩। এদের মনসি’র হবে।
৪। এরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হবে।
৫। এরা লোভী বা দূর্নীতি পরায়ণ হবে না।
৬। এরা স্বদেশে থাকবে।
৭। অপরিচিত লোককে গুপ্ত উদ্দেশ্য প্রকাশ করবে না কখনও।

নিম্নজাতির দূতী
চারায়ণ বলেন, নীচজাতীয় লোকের সঙ্গেও বন্ধুত্ব স্থাপন করা যায়-দূত নির্বাচনও করা যায়। তা হলো-
১। রজক বা ধোপা।
২। নাপিত।
৩। বাগানের মালী!
৪। গন্ধ বা আতর ব্যবসায়ী।
৫। মদ্য বিক্রেতা।
৬। স্বর্ণকার।
৭। পীঠ মর্দ (বিলাস শিক্ষক)
৮। বিট (যে নায়িকা বেশ্যার বিশ্বস্ত)
৯। বিদূষক (ভাঁড় জাতীয় লোক)
এই নয় ধরনের লোকেরা প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে যেতে পারে, তাই সফল হয়। অবশ্য বুদ্ধিমান লোক হওয়া উচিত, এদের পত্নীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা।
এর কারণ হলো নারীই পুরুষদের দোষগুণ সম্পর্কে সংবাদ সহজে সংগ্রহ করে দিতে পারে।

বিশেষ দূতীর গূণ
যে লোক অতি সহজে বারাঙ্গনাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে আবার বিলাসী লোকদেরও বন্ধু হয়, সেই লোকই সহজে প্রণয়িনী জোগাড় করতে পারে।
কিন্তু এ কাজটি খুব সহজ নয়।
এর জন্যে যে গুণগুলি অবশ্যই থাকা দরকার তা এখানে বলা হচ্ছে-
১। যে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে।
২। সে বিশেষ ভাবে সাহসী ও সব কাজে অগ্রসর হবার মত মনের বল রাখবে।
৩। সে লোকদের এমন গুণ থাকবে, যে কোনও লোকের মুখ দেখেই তার মনের ভাব বুঝতে পারবে।
৪। সহজে তার মন দমবে না।
৫। অপরের মনের গোপন কথা না বললেও, বুঝতে পারবে।
৬। স্থান ও কাল বুঝে উচিত মত পরিবর্তনের পারদর্শিতা থাকবে।

দৌত্যের প্রয়োজন কেন হয় তা বলা হচ্ছে।
যখন কোন নারীর সঙ্গে সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারা যায়, তখন বাধ্য হয়ে এই দৌতের কার্যের সহায়তা নেওয়া উচিত।
কিন্তু সব গুন না থাকলে দৌত্য কাজে কখন সফল হবে না- বরং তাতে সুফলের বদলে কু-ফলই ফলতে পারে।



Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2