১.১ শাস্ত্রসংগ্রহম্‌ (গ্রন্থের উপাদান সংক্রান্ত অধ্যায়সমূহ)

সাধারণাধিকরম্‌
শাস্ত্রসংগ্রহোনাম প্রথমোহধ্যায়ঃ

এই কর্মক্ষেত্রে ব্রাহ্মণাদি বর্ণ চারটি,–ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র। আশ্রম চারটি,–ব্রহ্মচারী, গৃহস্থ, বৈখানস বা বানপ্রস্থ ও ভিক্ষু বা সন্যাস। তার মধ্যে ব্রাহ্মণাদি গৃহস্থের পক্ষে মোক্ষ অভিপ্রেত নয় বলে ত্রিবর্গই পুরুষার্থ বা পুরুষের প্রয়োজন। ধর্ম, অর্থ ও কাম এই তিনটিই ত্রিবর্গ নামে অভিহিত হয়। তার মধ্যে আবার ধর্ম ও অর্থ, এই দুইটির ফল বলে কামই প্রধান পুরুষার্থ, কামবাদীরা এ কথাই বলে থাকেন। উপায় ছাড়া সে কামের লাভ হয় না; এজন্য সেই উপায় বলতে ইচ্ছা করে আচার্য মল্লনাগ পূর্বাচার্যদের (নন্দীশ্বর প্রভৃতির) মতানুসারে এই শাস্ত্র প্রণয়ন করেছেন!

যখন ধর্ম ও অর্থ কামলাভের হেতু; তখন উপায়ান্তরের আশ্রয় ছাড়া কামলাভ হতে পারে না। ধর্ম ও অর্থ দ্বারা কামলাভের পথ পরিষ্কার হয় মাত্র, কিন্তু কামভোগ করতে হলে যে উপায়ের আবশ্যক হয়, তা ত ধর্ম ও অর্থ দ্বারা উপার্জিত হয় না; সুতরাং ব্যবহারাধীন-কামকে ভোগ করতে হলে অনেকগুলি উপায়ের পরিজ্ঞান থাকা আবশ্যক। সে সকল উপায় জানতে হলে এই 'কামসূত্র' পাঠ একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তা ধর্মশাস্ত্র পাঠ দ্বারা জানতে পারা যায় না। প্রয়োজন-নির্ণয়কালে সূত্রকারই এর পরে বলবেন, "স্ত্রী-পুরুষের পরস্পর কামলাভ পরস্পরের ব্যবহারের অধীন"; সুতরাং সেই ব্যবহার নিষ্পাদনার্থ যে উপায় জানা আবশ্যক, তা এই 'কামসূত্র' হতেই হবে।

সেই উপায়গুলি এই কামশাস্ত্রের অভিধেয় বা প্রতিপাদ্য বিষয়। এই কামশাস্ত্র দ্বারা সেই উপায়গুলির যাহাতে সম্যক জ্ঞান হয়, তাই এই শাস্ত্রের মূখ্য কার্য।

অবিসম্বাদে কামলাভ করাই এই কামশাস্ত্রের প্রয়োজন, অর্থাৎ যা হলে নির্বিবাদে কামলাভ করা যেতে পারে, এই শাস্ত্রদ্বারা তা নির্ণয় করাই মূখ্য উদ্দেশ্য বা ফল।

অন্যথা, কি করে কেবল শাস্ত্র হতে কামলাভ হতে পারে? যারা এ শাস্ত্রের অধ্যয়ন করেন নাই তাদের কিছু আপনা-আপনি শাস্ত্রোক্ত সে সকল উপায়-পরিজ্ঞান সম্ভবপর নয়। তবে অন্যের নিকট উপদেশ পেলে উপায়-পরিজ্ঞান কিছুটা হতে পারে বটে; কিন্তু তারও তো শাস্ত্রের জ্ঞান থাকা আবশ্যক। নতুবা তিনি সেই উপদেশ প্রদান কি করে করবেন? সুতরাং কামশাস্ত্র একেবারে উপেক্ষণীয় হতে পারে না।

কখন কখন এমনও দেখা যায় যে শাস্ত্রাধ্যয়নাদি করেন নাই; কিন্তু ঘুণাক্ষরের ন্যায় হঠাত উপায়-পরিজ্ঞান জন্মেছে। সে স্থলে অবশ্যই স্বীকার্য যে, যখন ঘুণাক্ষরের ন্যায় আপাতত কতগুলি উপায় তার পরিজ্ঞাত হয়েছে, তখন নিশ্চয় বলতে হবে যে, তার মধ্যে কোনগুলো করণীয় ও কোনগুলো পরবির্জনীয়, তা সে সম্যক জানে না এবং তার জন্যই সে কখন কখনও বড় ভুল করে। হয়ত সেজন্যই তার পরিনাম একেবারে বিষময় হয়ে যায়। এই কথাই পরে কথিত হবে,–'যে ব্যক্তি শাস্ত্রপাঠ করে নাই, সে কদাচিত কামসাধন করতে পারে, কিন্তু তা অবশ্য কখনই প্রশংসনীয় নয়। ঘুণেও তো অক্ষর-বিন্যাস কদাচিত করতে পারে, তা বলে কি লোকে ঘুণকে গুরুমহাশয় বলে শিক্ষা করতে ব্যস্ত হয়ে থাকে।' সেইরূপ বিলাশের বাহুল্য বশত উপায়জ্ঞানের বাহুলতা জন্মে বলে নাগরিকেরা (রসজ্ঞব্যক্তি) অনাগরিককেও (অরসিককেও) নাগরিক (রসিক) করে তুলতে পারে, কিন্তু সে স্থলে বিশুদ্ধ উপায় জ্ঞানের আশা করা ধৃষ্টতা মাত্র।

তারপর এর বিপরীতও দেখতে পাওয়া যায়,–হয়ত কোন ব্যক্তি কামশাস্ত্রে অধ্যয়ন করিয়াও স্ত্রী-ব্যবহারে অকুশল। সেস্থলে কার দোষ বলতে হবে, ব্যবহার কর্তার, না শাস্ত্রের?–অবশ্য শাস্ত্রের দোষ বলতে পারা যায় না। দেখতে পাওয়া যায়–একই শাস্ত্রের উপায়াবলম্বী দুই ব্যক্তির মধ্যে এক ব্যক্তির অতি সহজে ফললাভ হয়, অন্য ব্যক্তি একেবারে বিপরীত করে বসে থাকে। এখন যদি শাস্ত্রের দোষেইতার বিপরীত ফল হয়ে থাকে তবে অন্যেরও তো বিপরীত ফল ফলা উচিত ছিল, কিন্তু তা না হয়ে যখন একের শুভ ফল হয়েছে, তখন নিশ্চয় বলতে হবে যে, আরোগ্যলাভের জন্য চিকিৎসা-শাস্ত্রের প্রয়োজন। যারা এই চিকিৎসা-শাস্ত্র অধ্যয়ন করে পাণ্ডিত্য লাভ করেছেন, তাদের মধ্যেও কি সকলেই সুপথ্য আহারের সেবা করে থাকেন? সুতরাং যারা যথ্যশাস্ত্র ফললাভপ্রার্থী হয়ে ভক্তি ও শ্রদ্ধাসহকারে শাস্ত্রার্থের ব্যবহার করেন, তারাই যথার্থ ফললাভ করতে সক্ষম হন; প্রগল্‌ভ বা দাম্ভিক ব্যক্তি তা পারেন না।

প্রারিপ্সিত শাস্ত্রে ইষ্টদেবতার নমস্কার পূর্বক উত্তরোত্তর বিষয়োদ্ভাবনা করলে শাস্ত্র নির্বিঘ্নে পরিসমাপ্ত হয়। অতএব এই প্রারিপ্সিত (আরব্ধেষ্ট কার্য) কামশাস্ত্রে,–

'ধর্ম, অর্থ ও কামের উদ্দেশ্যে নমস্কার'।।১।।

–এই সূরে ধর্ম শব্দটি অন্যান্য অর্থ ও কাম শব্দ হতে অভ্যর্হিত (পুজনীয়) বলে, অর্থ শব্দটি অজাদ্যদন্ত (আদিতে অকার আছে এবং শেষেও অকার আছে, অর্থাৎ অকারাদি ও অকারান্ত অর্থ শব্দ) হলেও পূর্বনিপাত হলো না, (অর্থাৎ, 'অর্থধর্ম্মকামেভ্যঃ'–এইরূপ হলো না)। এর পর বলবেন 'পূর্ব্ব–পূর্ব্বটি গুরুতর বা গৌরবাম্বিত।–কাম হতে অর্থ ও অর্থ হতে ধর্ম গরীয়ান্‌'।।১।।

অন্যান্য বহু দেবতা থাকা সত্ত্বেও ধর্মার্থকামের নমস্কার করা হলো;–এ কি?–
'সেই সকল দেবতার অধিকারেই এই শাস্ত্রের প্রবৃত্তি হচ্ছে'।।২।।

–একটি ন্যায় বা যুক্তি আছে,–অধিকৃত ও অনধিকৃতের একত্র সমাবেশ হলে অধিকৃতের প্রাপ্তি বলপূর্বকই হয়ে থাকে।–এই ন্যায় দ্বারা এ শাস্ত্রের প্রারম্ভে যদ্যপি মার্ত্তণ্ড, তিলকস্বামী, বাগদবী ও বিঘ্নবিনায়কাদি দেবগণের নমস্কার শাস্ত্রানুসারে প্রায় হয়েছিল, তথাপি সে সকল দেবতার অধিকারে এ শাস্ত্র অধিকৃত নয় বলে সে সকল দেবতাও এ শাস্ত্রে অধিকৃত নন, অনধিকৃত; কিন্তু এ শাস্ত্রে ত্রিবর্গের অধিকার থাকায় ত্রিবর্গের অভিমানী ধর্ম, অর্থ ও কামই এ শাস্ত্রে অধিকৃত; সুতরাং মার্ত্তণ্ডাদি দেবতার নমস্কার না করে ধর্মাদির নমস্কার করাই ন্যায়সঙ্গত।

যদ্যপি এ শাস্ত্রে প্রধান পুরুষার্থ বলে কামই অধিকৃত, তথাপি কাম দ্বারা ধর্মার্থও অধিকৃত হয়েছে। এই শাস্ত্রের উপদেশানুসারে যথাযথ উপায় অবলম্বঙ্করে সংসারে যে পুরুষ প্রবর্ত্তিত হবে, তার পক্ষে ধর্ম, অর্থ ও কাম, এই ত্রিবর্গ সুসিদ্ধ হবে। এর পর আচার্য বলবেন,–'পরস্পরের সাহায্যে সম্পাদ্য যে ত্রিবর্গ, তার সেবা করবে।' সেইরূপ 'শাস্ত্রানুসারে অধিগত (প্রাপ্ত) অন্যের অনুচ্ছিষ্ট সবর্ণা স্ত্রীতেই ধর্ম, অর্থ, পুত্র, সম্বন্ধ পক্ষবৃদ্ধি ও বিমল রতি লাভ করবে।'–সুতরাং এ শাস্ত্রে সেই ত্রিবর্গের অধিকার দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বলে সেই তিনটি অধিষ্ঠাত্রী দেবতাই এ শাস্ত্রে অধিকৃত। আর শব্দত ঐ তিনটিও অধিকৃত বটে।–যদি ধর্মাদি ত্রিবর্গের অধিকার না বলা যায়, তবে এর পরে, যখন ঐ ধর্মাদির লক্ষণ করা যাবে, তখন দেখা যাবে যে, ধর্ম, অর্থ ও কাম দেবতা নহে; সুতরাং তাদের নমস্কার কি করে উৎপন্ন হবে? তবে ধর্মাদির যে এক একটি পুরূরবা ইন্দ্রকে দেখার জন্য ইহলোক হতে স্বর্গে গিয়ে মূর্ত্তিমান ধর্মাদিকে দেখে ইতর ইতর দুটিকে (অর্থ ও কামকে) অনাদর করে ধর্মের নিকটে গিয়ে প্রদক্ষিণ করেছিলেন। তারপর, সেই অর্থ ও কাম পুরূরবা কর্তৃক অবজ্ঞাত হয়ে ক্রোধে পুরূরবাকে অভিশপ্ত করেছিলেন। উর্বশীর সহিত পুরূরবার বিরহ সেই কামের অভিসম্পাতের ফলেই হয়েছিল। তারপর, সেই বিরহোৎপত্তি কথঞ্চিত উপশান্ত বা নিবৃত্ত হলে অর্থের অভিশাপবশত অত্যন্ত লোভের বশবর্তী হয়ে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় প্রভৃতি চতুর্বিধ বর্ণেরই অর্থাপহরণে মনোনিবেশ করেছিলেন। তারপর প্রজাগণের শোণিতসম অর্থের অপহরণ করতে থাকায়, যাজ্ঞিক ব্রাহ্মণগণ যজ্ঞক্রিয়ার অর্থসাধ্য অনুষ্ঠানে অসমর্থ হয়ে এতই উদবিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন যে, যজ্ঞানুষ্ঠানের জন্য দর্ভচয় (কুশমুষ্টি) হস্তে ধারণ করেছিলেন, সেই দর্ভচয় খুলে রাখার অবকাশ প্রাপ্ত হন নাই; সেই সময়েই ব্রাহ্মণগণ দ্বারা রাজা পুরূরবা আহত হয়ে বিনাশ প্রাপ্ত হয়েছিলেন।'–ঐতিহাসিকগণ এই কথাই বলে থাকেন।।২।।

'যে সকল আচার্য ধর্মাদির আচার নিজে করেছেন, পরকে ব্যবহার করিয়েছেন এবং তার সঞ্চয় করে গ্রন্থাগারে আমাদের জন্য রেখে গেছেন, সেই সকল আচার্যকে নমস্কার'।।৩।।

কেন?–

'এই শাস্ত্রে তাদের সম্বন্ধ আছে,–এইজন্য।।'৪।।

–এই শাস্ত্রে তাদের সম্বন্ধ আছে বলে ইহার প্রারম্ভে তাদের নমস্কার করা উচিত। এ শাস্ত্র তো তাদের প্রণীত শাস্ত্রের সংক্ষেপমাত্র।–তাদের প্রণীত শাস্ত্রের সারসংকলন করেই এই শাস্ত্র প্রণয়ন হচ্ছে; সুতরাং তারাই নমস্য।।৪।।

যাদের প্রণীত শাস্ত্রের সারসংকলন করে এ শাস্ত্র প্রণনয় হচ্ছে তাদের নাম ও তারা কি কি শাস্ত্র কে কে প্রণয়ন করেছিলেন, তা জানিয়ে নিজ প্রণীত শাস্ত্রের গৌরব রক্ষার্থে তাদের এবং তাদের প্রণীত শাস্ত্রের স্পষ্টত নাম গ্রহণ করা হচ্ছে,–

'আগাম প্রসিদ্ধি এইরূপ যে, প্রজাপতি আদিকবি ব্রহ্মা প্রজাসকল সৃষ্টি করে তাদের স্থিতির (সম্যক পালনের) জন্য প্রথমে লক্ষ অধ্যায়াত্মক ত্রিবর্গ সাধন বিশদভাবে বলেছিলেন।।'৫।।

–হি শব্দ 'যেহেতু' এই অর্থে ব্যবহার্য। এই আগম (বেদাদি শাস্ত্র) অবিপরীত বলে গুরুপরাম্পরাক্রমে অদ্যাপিও পঠনপাঠনাদি চলে আসছে। সেহেতুএটি সম্যক পালনের জন্য কথিত হয়েছিল। প্রজাগণের তিনটি অবস্থা;–সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়। তার মধ্যে প্রথমে সৃষ্টি হয়ে থাকে। তার পর বেশ মিলে মিলে যে অবস্থান, তাকে স্থিতি বলা যায়। সে স্থিতি দুই প্রকার,–শুভকরী ও অশুভকরী। ত্রিবর্গও দ্বিবিধ;–গ্রাহ্য ও অগ্রাহ্য। তার মধ্যে ধর্ম, অর্থ ও কাম, এই তিনিটি গ্রাহ্য ও দ্বিতীয় অধর্ম, অনর্থ ও দ্বেষ অগ্রাহ্য। তার মধ্যে, ধর্ম দ্বারা পরলোকে শুভগতি হয়; কিন্তু অধর্মে অশুভ গতি হয়ে থাকে। অর্থ দ্বারা ইহলোকেই পরিভোগ (দিব্য সুখ প্রাপ্তি) ও ধর্ম প্রবর্তন এবং অনর্থে ক্লেশে জীবন ধারণ ও অধর্ম প্রবর্তন হয়। কামদ্বারা সুখলাভ ও প্রজোৎপত্তি। দ্বেষত উভয়ই নষ্ট হয়। যে অত্যন্ত দ্বেষ-পরায়ণ, তার না সুখ না প্রজা, কিছুই হয় না; তৃণের ন্যায় অবস্থিতি হয় মাত্র।–সে না থাকার মধ্যেই।–এইরূপে ত্রিবর্গই স্থিতির হেতু বা নিবন্ধন বা নিমিত্ত। সেই গ্রাহ্য ত্রিবর্গের প্রাপ্তি ও অগ্রাহ্য ত্রিবর্গের পরিহার, উপায় বিনা করতে পারা যায় না বলে, সেই উপায়ের শাসন (যথানিয়মে পূর্বাপর দেখে ব্যবস্থাপনা) কারী শাস্ত্রও ত্রিবর্গের নিবন্ধন বা উপায় বা নিমিত্ত। ইহা অবশ্য উপচার করেই বলা হলো। (যে যা নয় তাতে তার আরোপ করাকে উপচার বলে।) শত সহস্র অর্থাৎ লক্ষ অধ্যায়সমম্বিত আগম শাস্ত্র। আগে বিশদভাবে বলেছিলেন,–অর্থাত সে সময়ে তো আর শাস্ত্রান্তর ছিল না,–সুতরাং এই শাস্ত্রই অগ্রিম শাস্ত্র বা অগ্র শাস্ত্র বলা হয়। সকল প্রজাকেই উদ্দেশ্য করে শ্রুতির আবির্ভাব হয়েছিল বলে, মনে মনে তার অনুক্ষণ চিন্তা করে সাধারণের উদ্দেশেই স্মার্ত্তশাস্ত্র (ধর্মশাস্ত্র) প্রকৃষ্টরূপে বলেছিলেন।।৫।।

'তাহার ঐকদেশিক ধর্মাধিকারিক স্বায়ম্ভুব মনু পৃথক করেছিলেন।।'৬।।

–প্রজাপতি-প্রোক্ত সেই ত্রিবর্গ-সাধনের একদেশ বা ভাগ তিনটি। তার মধ্যে যে একদেশ ধর্ম অধিকৃত হয়েছিল, মনু তার পৃথক-করণ করেছিলেন, যাতে অর্থ–তা বৃহস্পতি, রবং যাতে কাম–তা নন্দী পৃথক করে বলেছিলেন। স্বায়ম্ভব (প্রথম মনু) বিশেষণ দেবার তাৎপর্য এই যে, বৈবসবত মনু (সপ্তম মনু) নহেন। ধর্মাধিকারিক, অর্থাৎ যাতে ধর্মের প্রস্তাব আছে। অর্থাৎ ধর্মশাস্ত্র।।৬।।

'বৃহস্পতি অর্থাধিকারিক শাস্ত্রকে পৃথক করেছিলেন'।।৭।।

–অর্থাধিকারিক–অর্থাৎ অর্থশাস্ত্র করেছিলেন। এই দুইটিই প্রস্তুত (প্রস্তাবিত) বিষয় নয় বলে এদের অধ্যায়-সংখ্যা দেখান নাই।।৭।।

'মহাদেবের অনুচর নন্দী সহস্র অধ্যায়াত্মক কামসূত্রকে পৃথক করে বিশদভাবে বলেছিলেন।।'৮।।

–যে প্রত্যেক বিষয়ের অনুচরণ=সহগমন বা সহব্যবহার করে, সেই অনুচর। মহাদেবের প্রত্যেক বিষয়ের অনুগমনকারী নন্দী, তিনি সাধারণ ভূতপ্রেতের একজন মণ্ডল (সর্দার) মাত্র নন। শ্রুতিতে দেখতে পাওয়া যায়,–মহাদেব দিব্য পরিমাণে সহস্র বর্ষ পর্যন্ত উমাদেবীর সহিত সরতক্রিড়ায় সমাসক্ত হয়ে সুখানুভব করতে প্রবৃত্ত হলে, নন্দী বাসগৃহের দ্বারদেশে অবস্থান করে কামসূত্রগুলির প্রতিপাদ্য বিষয়ের সত্যাসত্যতা নির্ণয়ার্থা আমূল বলেছিলেন।–সূত্রে ইহার অধ্যায় সংখ্যা কথিত হয়েছে; কারণ, কামশাস্ত্র অধিকৃত ।।৮।।

'ঔদ্দালিকি শ্বেতকেতু তাই-ই পাঁচশত অধ্যায় দ্বারা সংক্ষেপে করে বলেছিলেন। (সংগ্রহ করেছিলেন)।।'৯।।

–নন্দীপ্রোক্ত সেই ত্রিবর্গসাধনের একদেশ কামসূত্র বা কামশাস্ত্রকে তৎশব্দে বুঝতে হবে। তু বিশেষণার্থে,–নন্দিকথিক পূর্বোক্ত কামসূত্রেরই বিশেষ করে দিচ্ছে। 'এব-ব্যাবৃত্তিলক্ষণ অর্থ'–ত্রিবর্গের মধ্যস্থিত ধর্ম ও অর্থের ব্যাবৃত্তি করে কেবলমাত্র কামশাস্ত্রকেই বুঝিয়ে দিচ্ছে। সংক্ষেপ যে করেছিলেন, তার ইতিহাস যথেষ্ট আছে; যেমন একটা দিয়ে দেখানো যাচ্ছেঃ–পূর্বে ইহলোকে পরদারাভিগমন প্রসিদ্ধ ছিল; কিন্তু কামসুখলাভের উপায়গুলো বিপ্রকীর্ণ (ছত্রভঙ্গ) ও পরস্পর সঙ্কীর্ণ হয়ে এতই উৎসন্ন গিয়েছিল যে, তার সংস্কার না করলে লোকে (সাধারণের নিকটে) তা অত্যন্ত অশ্রদ্ধার ও অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়াত,–(উদ্দালকের পুত্র শ্বেতকেতু) এটা দেখে কামসূত্রের বা বহুল প্রচারিত কামশাস্ত্রের সংক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।–পূর্বের প্রচলিত বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয়ের আভাস দেয়া যাচ্ছেম–'হে রাজেন্দ্র! সর্বসাধারণ স্ত্রীই পক্কান্ন সদৃশ (উত্তম খাদ্য মধ্য পরিগণিত, অর্থাৎ 'পাকামাল'); সুতরাং তাদের উপর কোপ করা বা বিরক্ত হওয়া উচিত নয়। তাই বলে অত্যন্ত আসক্ত হওয়াও উচিত নয়।–কিন্তু তারা রমণের যোগ্য বলে রমণ করবে।'–কামশাস্ত্রের এই ব্যবস্থা ঔদ্দালক ঋষি নিবর্ত্তিত করে দিয়েছিলেন–এটাও একস্থানে কথিত হয়েছে। যথা–'স্বীয় গুরু (পিতা এবং ব্রহ্মোপদেষ্টা) (ধৌম শিষ্য) ঔদ্দালক রাজ্যে অভিষিক্ত হলে, তার আদেশে ব্রাহ্মণগন মদ্যপান হতে নিবর্ত্তিত হয়েছিল)। আর তৎপুত্র ঋষিপদবীতে আরূঢ় ও অলঙ্কৃত ঔদ্দালক যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হয়েই রাজশাসনদ্বারা লোকগণকে পরদারাভিগমন হতে নিবর্ত্তিত করেছিলেন। তপোনিষ্ঠ শ্বেতকেতু তারপর পিতার অনুজ্ঞায় গম্যাগম্য ব্যবস্থা সুখকর শাস্ত্রনিবন্ধ প্রণয়ন করেছিলেন'।।৯।।

'তাই-ই আবার পঞ্চালদেশীয় বভ্রুপুত্র বাভ্রব্য একশত পঞ্চাশ অধ্যায়ে সাধারণ। কন্যাসম্প্রযুক্তক, ভার্যাধিকারিক, বৈশিল, পারদারিক সাম্প্রয়োগিক ও ঔপনিষদিক,–এই সাত অধিকরণে বিভগপূর্বক সংক্ষেপে একখানি সংগ্রহ গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন'।।১০।।

–তাই-ই যা ঔদ্দালকি শ্বেতকেতু সংক্ষেপ করেছিলেন। সেই সংক্ষেপের আবার অর্থত ও গ্রন্থত বাভ্রব্য সংক্ষেপ করেছিলেন। শ্বেতকেতু পূর্বে পরদারাভিগমন সামান্যত প্রতিষেধ করেছিলেন মাত্র। কিন্তু বাভ্রব্য স্বকীয় সংক্ষেপ গ্রন্থে সেই পরদারগমন বিশেষ করেই নিষেধ করেছিলেন। এইজন্য আবার পারদারিক অধিকরণটি প্রতিপাদ্য বিষয়রূপে কথিত হয়েছে। অধ্যর্দ্ধ পঞ্চাশদধিক। ঐ সকল অধিকরণ মধ্যে সাধারণ অধিকরণটি সাধারণ ভাবে আছে।–এইজন্য ঐ অধিকরণের নাম সাধারণ করা হয়েছে। কন্যার–কুমারীর, সম্প্রযুক্ত–সম্প্রয়োগ (বিবাহান্তর নির্জনকেলি) যে অধিকরণে উপায়ের সহিত নির্ণীত হয়েছে, তাকে 'কন্যাসম্প্রযুক্তক অধিকরণ' বলা হয়। বেশ্যাগনের সমাচার (কল্পিত স্বভাব বা যা অবলম্বন করে বেশ্যাগন ব্যবসায় করে থাকে) হচ্ছে বেশভূষাদি করা; সুতরাং সেই বেশ্যাবৃত্ত ব্যুৎপাদনের জন্য যে অধিকরণ কল্পিত হয়েছে, তাকে 'পারদারিক' বলা যায়। সম্প্রয়োগ–স্ত্রী-পুরুষের পরস্পর ব্যবহার এর প্রয়োজন, এই বাক্যে 'সাম্পয়োগিক' পদ সিদ্ধ হয়েছে, সুতরাং উক্তাধিকরণে স্ত্রী-পুরুষের পরস্পর রহো–(নির্জন) ব্যবহার করার উপায় সকল নির্ধারিত হয়েছে। 'ঔপনিষদিক'–উপনিষদ্‌ রহস্য যাতে সংগৃহীত হয়েছে। 'সাধারণ' প্রভৃতি নাম ধরে সাতটি অধিকরণের উল্লেখ করে আবার সপ্তশব্দের গ্রহণ যে করেছেন, তাতে বুঝতে হবে যে, বাভ্রব্যের গ্রন্থে মাত্র এই কয়টি বিষয়ের সন্নিবেশ আছে, এবং সে শাস্ত্র আচার্য বহুপরিমানে ব্যবহার করেছেন; কামশাস্ত্রের অপরিহার্য বিষয়ও সাকুল্যে এই সাতটি মাত্রই। সপ্তশব্দ দ্বারা বিষয়ের অধিক ও ন্যূনসংখ্যার ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে;–অর্থাত বিষয় সাতটির অধিকও ননে, ন্যূনও নহে; সাতটি মাত্রই। প্রকরণপ্রতিপাদ্য বিষয়ের অধিকার যাতে করা যায়, তাই-ই অধিকরণ নামে খ্যাত। বভ্রুর পুত্র–বাভ্রব্য। 'মধুবভ্র্বোঃ' এই দূত্রানুসারে বভ্রু x যঞ্‌ করে বাভ্রব্য পদ সিদ্ধ হয়েছে। পঞ্চালদেশে জাত, বা পঞ্চালরাজপুত্র–পাঞ্চাল।।১০।।

'পাটালিপুত্রনগরের বেশ্যাগণের নিয়োগে দত্তকাচার্য তারই চতুর্থ বৈশিক অধিকরণ পৃথক ভাবে গ্রন্থাকারে পরিণত করে ব্যবহার করেছিলেন'।।১১।।

তারই,–বাভ্রব্য যে সংক্ষেপ করেছিলেন, তারই। এইরূপ আনুপূর্বীই আবলম্বন করে যে চতুর্থ সংখ্যার পূরণ করে, সেই;–অন্যরূপ আনুপূর্বীকে অবলম্বন করে নহে,–ইহা দেখাবার জন্য চতুর্থশব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যদি তাই হবে, তবে পাঠক্রমের অনুসারেতে সংখ্যা পাওয়া যেত, আবার চতুর্থ শব্দ দেয়ার অর্থ কি?–সে আনুপূর্বী যে কি, তা এর পরে বর্ণনা করা যাবে। পাটলিপুত্রিকাদিগের,–মগধদেশে পাটলিপুত্র (পাটনা) নামে একটি নগর আছে, সে স্থানে যারা হয়েছে, তারা পাটলিপুত্রিক। –'রোপধেতোঃ প্রাচাং' ইতি সূত্র অনুসারে পাটলিপুত্র x বুঞ্‌। নিয়োগবশত,–ঐ নগরবাসিগনের মধ্যে একজন ব্রাহ্মণ, প্রসিদ্ধ লোক, মথুরা হতে এসে পাটলিপুত্রনগরে বসতি করেছিলেন। তার শেষ বয়সে একটি পুত্র জন্মে। সে জন্মিলে পরই তার মা মারা যায়। তার পিতাও সেই নগরের অধিবাসী অন্য আর এক ব্রাহ্মণীকে, তার পুত্ররূপে দিয়া কালে লোকান্তর গমন করে। ব্রাহ্মণীও 'এ আমার দত্তক পুত্র' এই বলে আদর পূর্বক ডাকতে ডাকতে বালকটির সেই অনুগতার্থ 'দত্তক' নামেই নামকরণ করে ফেলে। বালক তৎকর্তৃক লালিত ও পালিত হয়ে অল্পকাল মধ্যে সমস্ত বিদ্যা ও সমস্ত (চৌষট্টি) কলাই অধ্যয়ন করল। দত্তক নানাবিধ শাস্ত্রের ব্যাখ্যাকার ছিলেন বলে দত্তকাচার্য নামে প্রসিদ্ধ হলেন। এক দিন, তার মনে এই ভাব উদয় হলো যে, লোকযাত্রা–অর্থাত সংসারযাত্রা নির্বাহ করার বিধি বাস্তবিকই ভালো করে জানা আবশ্যক। কিন্তু তাতো আর অন্য স্থানে জানার উপায় নাই, তবে প্রায়শ দেখতে পাওয়া যায়,–বেশ্যাগনের মধ্যেই এখন লোকযাত্রা সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে; কারণ, তারা সাধারণের উপভোগ্য বলে অনেক স্থানে অনেক বিষয় শিখতে পেরেছে। এজন্য কোন এক বেশ্যাজনের নিকট প্রত্যহ অনুগমনপূর্বক পরিচিত হয়ে এরূপ ভাবে সেই লোকযাত্রা শিক্ষা করতে হবে যা, সেই বেশ্যাই যেন আবার আমাকে প্রার্থনা করে।–এইরূপে বীরসেনা প্রভৃতি খ্যাতাপন্না বারাঙ্গনাগনের নিকট প্রত্যহ যাতায়াত করে লোকযাত্রার পরাকাষ্ঠা জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছিলেন। তারপর, এক সময় একে সেই বীরসেনা প্রভৃতি বারাঙ্গনাই বলেছিলেন,–আচার্যবর! আমরা যাতে পুরুষের অনুরাগ বর্ধন করতে পারি, এরূপ উপদেশ প্রদান করুন।–এই নিয়োগ বশতই কামসূত্রের বৈশিক অধিকরণ পৃথক করে সংগৃহীত হয়েছিল।–এইরূপ ইতিহাস পাওয়া যায় এবং তাইই লিপিবদ্ধ আছে।

অন্যে চত্তকাচার্যের উপর শ্রদ্ধাপ্রকাশ করে ভক্তিদ্বারা বিবেকসত্ত্বেও অন্ধ হয়ে বেশ একটু যুক্তিযুক্ত ইতিহাস বলে থাকে।–কোন সময়, লোকাশিক্ষার্থ শিবের অংশাবতার দত্তাত্রেয় এক শিবমন্দিরে শিবলিঙ্গের নিকট 'ধম্বা' দিয়েছিলেন। ঠিক সেই সময় দত্তক নামে কোন এক ব্যক্তি নিশীথকালে সেই ভগ্ন শিবমন্দিরেরই কোন নায়িকার উদ্দেশে সঙ্কেত স্থান নির্ণয় করে দিয়েছিলেন এবং সে নায়িকার সে সময়ে পুষ্পকাল উপস্থিত থাকায় দত্তক গর্ভাধানার্থ পরিহাসচ্ছলে তৎকর্তৃক সঙ্কেতিতও হয়েছিলেন। এখন দৈব-দুর্বিপাকে অভিসারিণী তার স্বামীকে প্রবঞ্চিত করতে না পারায়, বাধ্য হয়ে সেই সঙ্কেত স্থানে যাতে পারে নাই; কিন্তু দত্তক তার বিন্দুবিসর্গও জানতে না পারায় এবং গর্ভাধানার্থ পরিহসিত হওয়ায় একেবারে সংজ্ঞাহীনের ন্যায় সেই সঙ্কেত স্থানে উপস্থিত হয়ে দেখলেন,–শিবলিঙ্গের অদূরেই অন্ধকার-লিপ্ত-রক্ত-বসনে আপাদ মস্তক আবৃত করে তার প্রেয়সী যেন কপট নিদ্রায় অভিভূত হয়েছে। তা দেখে তার হস্তধারণ পূর্বক (প্রণয়িণী-জ্ঞানে) বিশ্রম্ভালাপের সহিত 'এখনই তোমার গার্ভাধান করছি' বলে জাগরিত করলেন। দত্তাত্রেয়াবধূত লম্পটপামরের তাদৃশ ব্যবহারে ক্রোধে একেবারে অধীর হয়ে–'যেমন স্ত্রীর অম্বেষণ করছিস, আমি কে, তা জানার প্রয়াসও করছিস না, তেমনি তুই স্ত্রী হয়ে যা।'–এই কথা বলায় দত্তক তৎক্ষণাত স্ত্রীমূর্তি ধারণ করতে বাধ্য হলেন। কিছু দিন পরে দত্তক, আত্রেয়কে প্রসন্ন করে পুরুষ হবার বর লাভ করলেন ও তৎক্ষণাত পুরুষ দেহ প্রাপ্ত হলেন; সুতরাং তিনি স্ত্রী হয়ে স্ত্রী-রস ও পুরুষ হয়ে পুরুষ-রস উপভোগ করে বিশদরূপে জ্ঞান লাভ করেছিলেন এবং সেই জ্ঞান-প্রভাবেই 'বৈশিক অধিকরণ' কামসূত্র হতে পৃথক করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

–ভায, যফি বাভ্রব্যোক্ত সূত্রেরই কেবলমাত্র 'বৈশিক অধিকরণ' পৃথক করেই থাকেন,–করেছেন; তাতে নিজের সঙ্কলিত সূত্র এমন কি অপূর্ব ভা প্রকাশ করেছেন যে, তদ্দ্বারা তিনি উভণরসজ্ঞ ছিলেন বলে কল্পনা করতে হবে?–আর যদিই বা দত্তকাচার্য এতাদৃশ লোকই থাকতেন, তবে শাস্ত্রকার বাৎস্যায়নাচার্যও-তো 'নিয়োগে উভয়রসজ্ঞ দত্তক' এইরূপ বলতে পারতেন? তা না বলে, কেবল 'নিয়োগ দত্তক' একথা বলার কারণ কি?–আর বৃথা বৃথা অপ্রসাঙ্গিক ইতিহাসেরই বা উল্লেখ না করে সামান্যত দত্তক বলে উল্লেখ করার যে কি উদ্দেশ্য, তা বুঝতে আমরা অক্ষম।।১১।।

'সেই প্রসঙ্গে চারায়ণ নামক আচার্য 'সাধারন অধিকরণ পৃথক করে নিজের মতের সহিত সংগ্রহ করেছিলেন। ঘোটক্মুখ,–কন্যাসম্প্রযুক্তক অধিকরণ; গোনর্দীয়,–ভার্যাধিকারিক অধুকরণ; গোণিকাপুত্র,–পারদারিক অধিকরণ; সুবর্ণনাভ,–সাম্প্রয়োগিক অধিকরণ এবং কুচুমার নামক আচার্য ঔপনিষদিক অধিকরণ পৃথক করে নিজ নিজ মতের সহিত সংগ্রহ করেছিলেন। এইরূপভাবে বহু আচার্য সে বাভ্রব্যো সংগৃহীত শাস্ত্রের কিছু কিছু করে অল্পে অল্পে ধীরে ধীরে প্রায় উৎসন্ন হয়েছিল। তার মধ্যে, দত্তকাদি প্রণীত গ্রন্থ সেই শাস্ত্রের এক একটি অবয়ব বলে একদেশ বিধায় এবং বাভ্রবীয় শাস্ত্র অতীব বিশাল আয়তন বলে অধ্যয়নের দুঃখকরত্ব বিধায়, সংক্ষেপে সমস্ত বিষয় অল্পগ্রন্থ দ্বারা এই কামসূত্র আমি প্রণয়ন করেছি'।।১২।।

–সেই প্রসঙ্গে, দত্তক বৈশিক অধিকরণটি যখন পৃথক করে সংগ্রহ করেছিলেন, তখন সেই প্রসঙ্গ অবলম্বন করে চারায়ণাদিও নিজ নিজ মতের সহিত পৃথক করতে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। প্রকর্ষ–গ্রন্থ মধ্যে অন্যান্য মত প্রদর্শন করে নিজের মতের প্রদর্শন করান। আচার্য স্থানে স্থানে এই শাস্ত্রে সেই সকল মত দেখাবেন। 'এবং'–ইত্যাদি-গ্রন্থ-দ্বারা এ শাস্ত্র আবার সংগ্রহ করার বিশেষ কারণ দেখিয়েছেন। সেই শাস্ত্র,–যা বাভ্রব্যের কথিত বা সংগৃহীত। খণ্ডশ–খণ্ড খণ্ড করে উৎসন্নকল্প,–অল্প উৎসন্ন প্রায়; কারণ, কোন কোন স্থানে কদাচিৎ এক-আধখানি দেখতে পাওয়া যায়,–প্রায়শই লোপ পেতে যেন বসেছে। নন্দি প্রভৃতির কথিত শাস্ত্র একেবারে বিলুপ্ত হয়েছে,–ইহা অর্থত বলা হলো। তার মধ্যে সেই শাস্ত্র প্রস্থানের মধ্যে, একদেশ বা ভাগ বলে কামশাস্ত্রে অঙ্গীভূত সমস্ত বিষয়ের পরিজ্ঞান তা দ্বারা হতে পারে না; কারণ, শাস্ত্রপ্রতিপাদ্য তাবত বিষয়ের মধ্যে কোন একটি বা দুইটি বিষয় লয়ে যে কেবল তারই নির্ণয় করা যায়, সেই নির্ণায়ক গ্রন্থকে মূলগ্রন্থের একদেশ বা প্রকরণগ্রন্থ বলা যায়। বাভ্রব্যপ্রোক্ত সম্পূর্ণ শাস্ত্রের কোন প্রয়োজন নাই; কারণ, তা অতি বিশালকায়। তাইই, সাতটি অধিকরণে সপ্তসহস্রেরও অধিক শ্লোকে সংক্ষেপ করে স্বীয় গ্রন্থের সম্পূর্ণতা অ সুখে অধ্যয়ন করার যোগ্যতা সকল বিষয়–'অল্পগ্রন্থে' এই দুটি কথা দ্বারা দেখিয়েছেন। এই শাস্ত্র–জ্ঞানে যা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, প্রণীত করেছেন;–সমাপ্ত হবার আশা করেছেন।।১২-১৯।।

এখানে স্ব-প্রণীত শাস্ত্রের বিশেষ বিশেষ প্রতিপাদ্য বিষয়গুলির একটি আমূল সংক্ষিপ্ত তালিকা দিচ্ছেন।–

(প্রাচীন আচার্যদিগের এই রীতিকে 'উদ্দেশ' করা বলা হয়। ন্যায়শাস্ত্রে বাৎস্যায়ন দেখিয়েছেন,–শাস্ত্রের প্রবৃত্তি তিন প্রকারে করা হয়। যথা, –প্রথমত বিষয়টির নামোল্লেখ বা উদ্দেশ করা, দ্বিতীয়ত সেই উদ্দিষ্ট বা উল্লেখিত বিষয়ের লক্ষণ বা সংজ্ঞা নিরূপণ করা এবং তৃতীয়ত তার পরীক্ষা করা,–সে বিষয়টি সেরূপে না নির্ণীত হয়ে অন্যরূপে কেন নির্ণীত হবে না, তার কারণ প্রদর্শন করা। এ দ্বারা প্রতিপাদ্য বিষয়ের সুন্দর মীমাংসা করে নির্ণয় করা যেতে পারে; সুতরাং বাৎস্যায়ন স্ব-প্রণীত শাস্ত্রেও যে সেই প্রণালীর অবলম্বন করবেন, তাতে সন্দেহ কি?)

'সেই কামসূত্রের প্রথম অধিকরণস্থা প্রকরণের উদ্দেশ বা তলিকা এই;–
শাস্ত্র-সংগ্রহ, ত্রিবর্গপ্রতিপত্তি, বিধ্যার গ্রাহ্যতা নির্ণয় ও নামত উল্লেখ, নাগরিকবৃত্ত বা সুরসিক চরিত্র এবং নায়কের সহায়কারিণী দূতির কর্তব্যকর্মের ন্যায্যানায্যত্ব বিবেচনা। এই সাধারণ প্রথম অধিকরণ। এই অধিকরণে পাঁচটি অধ্যায় ও পাঁচটি প্রকরণ আছে'।।১৩।।

'তারপর কন্যাসম্প্রযুক্তক দ্বিতীয় অধিকরণ। তাতে বরণবিধান, সম্বন্ধ নির্ণয়, কন্যাবিস্রম্ভণ, বালায়া উপক্রম, ইঙ্গিতাকার সূচন, এক পুরুষাবভিযোগ, প্রযোজ্যের উপাবর্তন, অভিযোগত কন্যার প্রতিপত্তি ও বিবাহ যোগ নামক প্রকরণ ইয়ক্ত হয়েছে। এ দ্বারাই কন্যাসম্পযুক্তক অধিকরণ পর্য্যবসন্ন। তাতে অধ্যায় পাঁচটি ও প্রকরণ নয়টি'।।১৪।।

'তারপর ভার্যাধিকারিক অধিকরণ। তাতে একচারিণীবৃত্ত, প্রবাসচর্যা, সপত্নীর মধ্য জ্যেষ্ঠাবৃত্ত, পুনর্ভূবৃত্ত, দুর্ভগাবৃত্ত, আন্তঃপুরিক ও পুরুষের বহু স্ত্রীতে প্রতিপত্তি নামক প্রকরণ কথিত হয়েছে। তদ্দ্বারাই ভার্যাধিকারিক নামক তৃতীয় অধিকরণ সমাপ্ত হয়েছে। তাতে অধ্যায় দুইটি এবং প্রকরণ আটটি'।।১৫।।

'তারপর, বৈশিক নামক চতুর্থ অধিকরণ। তাতে গম্যচিন্তা, গমনাকারণ, উপাবর্ত্তন বিধি, কান্তানুবর্ত্তন, অর্থাগমোপায়, বিরক্তলিঙ্গ, বিরক্তপ্রতিপত্তি, নিষ্কাসন প্রকার, বিশীর্ণপ্রতিসন্ধান, লাভবিশেষ, অর্থানর্থানুবদ্ধ, সংশয়বিচার ও বেশ্যাবিশেষ নামক প্রকরণ কথিত হয়েছে। তদ্দ্বারাই অধিকরণার্থ পর্যবসন্ন হয়েছে। তাতে অধ্যায় ছয়টি ও প্রকরণ দ্বাদশটি মাত্র'।।১৬।।

'তৎপরে, পারদারিক নামক পঞ্চম অধিকরণ। তাতে স্ত্রী-পুরুষ লীলাবস্থাপন, ব্যাবর্তন কারণ, স্ত্রীর নিকট সিদ্ধপুরুষ, অযত্নসাধ্য স্ত্রী, পরিচয় কারণ, অভিযোগ, ভাবপরীক্ষা, দূতীকর্ম, ঈশ্বরকামিত ও আন্তপুরিক দাররক্ষিতক নামক প্রকরণ কীর্তিত হয়েছে। তদ্দ্বারাই পারদারিক অধিকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। তাতে অধ্যায় ছয়টি ও প্রকরণ দশটি মাত্র আছে'।।১৭।।

'ষষ্ঠ অধিকরণে প্রমাণ, কাল ও ভাব দেখে রতাবস্থাপন, প্রীতি বিশেষ, আলিঙ্গন বিচার, চুম্বনবিকল্প, নখরদনজাতি, দশনচ্ছেদ্যবিধি, বেশ্য উপচার, সম্বেশনপ্রকার, চিত্ররত প্রহণন যোগ, তদ্‌যুক্ত সীৎকৃতোপক্রম, পুরুষায়িতা পুরুষোপস্‌প্ত, ঔপরিষ্টক, সাম্প্রয়োগিক অধিকরণ পর্যাবসন্ন। তন্মধ্যে অধ্যায় দশটি ও প্রকরণ সপ্তদশটি'।।১৮।।

তারপরে, ঔপনিষদিক নামক সপ্তম অধিকরণ। তাতে সুভঙ্গকরণ, বশীকরণ, বৃষ্যযোগ, নষ্টরাগ-প্রত্যনয়ন, বৃদ্ধিবিধি ও চিত্তযোগ নামক প্রকরণ কথিত হয়েছে। তদ্দ্বারাই অধিকরণার্থ সম্পূর্ণ হয়েছে। তাতে অধ্যায় দুইটি ও প্রকরণ ছয়টি মাত্র আছে'।।১৯।।

'এইরূপে সম্পূর্ণ কামসূত্রে ষটত্রিংশৎটি অধ্যায়, চতুঃষষ্টিটি প্রকরণ, অধিকরণ সাতটি ও সমুদয় শ্লোক-সংখ্যা সপাদ এক সহস্র মাত্র'।।২০।।

–'সেই কামসূত্রে'র ইত্যাদি গ্রন্থদ্বারা স্বকীয় শাস্ত্রের অবয়বার্থ বলেছেন। এই'–শব্দের অর্থ, পরে যে গ্রন্থ বলা যাচ্ছে। প্রক্রান্ত করা যায়,–অর্থাত বিষয়গুলি যাতে প্রস্তাব করা যায়,–এই অর্থে প্রকরণ-পদটি নিষ্পন্ন হয়েছে;–সুতরাং কতকগুলি বিষয়ের প্রস্তাব যাতে করা যায়, তাকে প্রকরণ বলে। পূর্বে বলা হয়েছে,–অনেক-প্রকরণ-প্রতিপাদ্য বিষয় যাতে অধিকৃত হয়, তাকে অধিকরণ বলা যায়। সেই সকল অধিকরণের সমুদ্দেশ, অর্থাৎ সংক্ষেপে করে অভিধান বা নাম করা। যেমন–শাস্ত্রের সংগ্রহ, ত্রিবর্গ প্রতিপত্তি ইত্যাদি, সেই সকল প্রকরণের বিষয়; সুতরাং সেই সকল বিষয় প্রস্তাবিত হয়েছে বলে প্রকরণগুলিরও সেই সেই নাম হয়েছে। যেমন, কংসবধের প্রস্তাব যে গ্রন্থে আছে,–সেই গ্রন্থই কংসবধ কাব্য। সেইরূপ যে গ্রন্থে শাস্ত্রসংগ্রহের প্রস্তাব হয়েছে, সেই গ্রন্থকেও শাস্ত্রসংগ্রহ প্রকরণ নামে নামকরণ করা গেছে,–ইত্যাদি। এই শাস্ত্র দুইভাগে বিভক্ত,–তন্ত্র ও আবাপ। তার মধ্যে, যা দ্বারা রতিকে তন্ত্রিত করা যায়,–অর্থাত উদ্ধোধিত করা যাত, তাকে তন্ত্র বলে,–যেমন আলিঙ্গনাদি। সেই আলিঙ্গনাদি যে গ্রন্থভাগে উপবিষ্ট হয়েছে তাকেও তন্ত্র শব্দে অভিধান করা যায়; সুতরাং 'সাম্প্রয়োগিক' অধিকরণ তন্ত্র গ্রন্থ। আর যদ্দ্বারা সম্যকরূপে রতির জন্য স্ত্রী ও পুরুষকে প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাকে আবাপ বলে। আবাপ শব্দে সমাগমের বা সঙ্গমের উপায় বুঝায়। সেই আবাব যে গ্রন্থে ভাগে ব্যাখ্যাত হয়েছে, তাকেও আবাব বলা যায় –যেমন 'কন্যাসম্প্রযুক্তকাদি' অধিকরণ চতুষ্টয়,–আবার গ্রন্থ। এইক্ষণ দেখা যাচ্ছে যে, সাধারণ অনুষ্ঠান ব্যতীত তন্ত্র ও আবাবের অনুষ্ঠান ঘটে উঠে না, এইজন্য প্রথমেই সাধারণ অধিকরণ কথিত হয়েছে। আরও এক কথা, শাত্রের যা কিছু সংগৃহীতব্য বিষয় তাও সেই সাধারণ নামক অধিকরণে কথিত হয়েছে,–যেমন,–নায়ক, নায়িকা, কলাবিদ্যা ও দূতীকর্ম ইত্যাদি। এগুলি ছেড়ে তন্ত্র বা আবাব কোন গ্রন্থভাগই স্বাধীনভাবে প্রচারিত হতে পারে না। অতএব সাধারণ অধিকরণকে প্রথমেই নির্ণেয় বলে স্থিত করতে হয়েছে। তন্ত্র ও আবার দ্বারা বিষয়টি অসিদ্ধ, সেই বিষয়টি পাবার জন্য ঔপনিষদিক উপায়ের শরনাপন্ন হতে হয়; সুতরাং ঔপনিষদিক অধিকরণ পরে বলবেন। আবার সেই সাধারণ ও ঔপনিষদিক অধিকরণ ঐ তন্ত্র ও আবাপেরই অন্তর্গত; কারণ, কামশাস্ত্রে কামই প্রধান বলে অন্যগুলি তার অঙ্গীভূত। অতএব সাধারণ ও ঔপনিষদিক অধিকরণে কথিত উপায় ও উপেয়গুলি তন্ত্র ও আবাপেরই অন্তর্গত বলতে হবে। অন্মধ্যে সাধারণ অধিকরণের প্রথমেই যে 'শাস্ত্র সংগ্রহ' নামক প্রকরণ কথিত হয়েছে, তার কারণ এই যে,–শাস্ত্রেরে সমস্ত বিষয়গুলি একস্থানে সংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রথমে সংক্ষিপ্ত বিষয়গুলি পাঠ করলে, পরে সেই সংক্ষিপ্ত বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ পাঠ করদ্টবোধ হয়না।

–'এইরূপ সম্পূর্ণ কামসূত্র ষট্‌ত্রিংশৎটি অধ্যায়' ইত্যাদি গ্রন্থদ্বারা স্বকীয় শাস্ত্রের অবয়ব ও সমূদয় শাস্ত্রের প্রতিপাদ্য বিষয়ের সংখ্যা নির্দেশ করেছেন। তন্মধ্যে অধ্যায়সংখ্যা বলার উদ্দেশ্য এই যে, পূর্ব-শাস্ত্র অপেক্ষা এই গ্রন্থ অতীব অল্প,–ইহাই দেখানো হয়েছে। শিষ্যের চিত্তাকর্ষক করে দেয়ার উদ্দেশ্য স্বাধীনভাবেই প্রকরণ সংখ্যা ও অধিকরণ সংখ্যা দেখিয়েছেন,–এই গ্রন্থে অন্যের যোগ, অর্থাৎ অন্য বিষয় যোগ বা ইহার কিয়ংদশের বিয়োগও কেহ করতে পার;–সেই জন্য শ্লোক সংখ্যা স্থির করে দিয়েছেন; সুতরাং গণনা করলেই ধরা পড়তে পারবে যে, এতে কিছু যুক্ত, কিংবা এর কিয়ংদশ বিযুক্ত করা হয়েছে কি না?' ১৩-২০

ইতি শাস্ত্র সংগ্রহ প্রকরণ।।১।।

'এইরূপে শাস্ত্রের অর্থনিচয় বলে পরে ইহার বিস্তার বলব। কারণ, লোকে পাণ্ডিত্যের নিকট সংক্ষেপে ও বিস্তারে বলাই অধিকতর প্রিয় হয়'।।২১।।

ইতি শ্রীমদ্‌-বাৎস্যায়নীয় কামসূত্রে সাধারণ প্রথমাধিকরণে শাস্ত্রসংগ্রহ নামক প্রথম অধ্যায় সম্পূর্ণ।।১।।


 ঘুণ কাঠ কেটে আহার করার সময় কাঠে অক্ষর কাটব বলে চেষ্টা করে না; কিন্তু কোন কোন স্থানে হঠাত অক্ষরের মত হয়ে যায়, সেরূপ মনস্থ না করলেও যা হঠাত ঘটে যায় তাকে 'ঘুণাক্ষর' বলে।

 তিলকপ্রিয় স্বামী–তিলকস্বামী = কার্তিকেয়।

 বিবাহের পর শ্বশুর-শ্যালকাদি স্ত্রীপক্ষীয়দের বৃদ্ধি হয়, অর্থাৎ বর ঐ নুতন একটি পক্ষ প্রাপ্ত হয়।

 হরিবংশপর্ব–২৬শ অধ্যায়। বিষ্ণুপুরাণ–৪ অং, ৬অং, ২০-২৪৬ শ্লোক দ্রষ্টব্য।

 মনুষের এক বছরে দেবতাদের একদিন ও একরাত্রি হয়। তার ৩৬৫ দিনে একবর্ষ হয়ে থাকে। তার সহস্রবর্ষ।

 মহাভারতে প্রথমেই এবং ছান্দোগ্যোপনিষদেও এর পরিচয় পাওয়া যায়।

 প্রস্থান–অর্থে পথ বুঝায়। কামশাস্ত্রে আরোহণ বা অভিনিবেশ করতে হলে, কামশাস্ত্রের যা পথ, সেই পথ অবলম্বন করে উঠতে হবে। কামশাস্ত্রের পথ–সাতটি; কারণ ইহার বিষয়ও প্রতিপাদ্যরূপে সাতটি অধিকরণ কথিত হয়েছে। সেই সাতটি প্রতিপাদ্য বিষয়ের অবলম্বন বা ধারণা করতে পারলে, অনায়াসেই কামশাস্ত্রে উঠতে পারা যাবে, অর্থাৎ কামশাস্ত্র-বিশারদ হতে পারা যায়।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2