কমের
চৌষট্টি কলা
বাৎস্যায়নের
মতে কামের পথে প্রকৃতই অগ্রসর
হতে হলে নারী বা পুরুষ উভয়ের
কতকগুলি কলাবিদ্যা শিক্ষা
করা উচিত।
কলাবিদ্যা
একটি নয়-একাধিক।
মোট
৬৪টি কলা বাৎস্যায়ন দেখিয়ে
গেছেন। এই সব কলায় একজন লোক
হয়ত শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে
পারে না-তবে
কয়েকটি কলায় সে ব্যুৎপত্তি
লাভ করতে পারে।
আর
কলা ছাড়া জীবন ও কাম কিছুই
মধুময় হতে পারে না।
নারী ও
কলা
নারী
যে শুধু সুন্দরী হলেই পুরুষের
মন জয় করতে পারে বা তাকে আকর্ষণ
করতে পারে, একথা
ঠিক নয়।
এমন
অনেক সময় দেখা যায় যে নারীর
যথেষ্ট গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল
না হলেও বা যথেষ্ট সুগঠন না
থাকলেও যদি তার কণ্ঠস্বর মিষ্ট
হয়, ব্যবহার
খুব সনে-াষজনক
হয়, নানাপ্রকার
কলা বিদ্যা তার আয়ত্তে থাকে,
তা হলেও সে
জীবনে উন্নতি করতে পারে।
অনেক
গুনগ্রাহী, বিদগ্ধ
পুরুষ হয়ত সেই নারীকে পাবার
জন্যে আকুল হতে পারে।
তাই
বাৎস্যায়নের চৌষট্টি কলা
বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা নারীদেরও
অবশ্য উচিত।
চৌষট্টি
কলার প্রয়োজনীয়তা
নিুলিখিত
কলাগুলি চৌষট্টি কলার মধ্যে
গণ্য। তাদের প্রত্যেকটির কথা
বলা হচ্ছেঃ
১।
কণ্ঠ সংঙ্গীত চর্চা।
২।
যন্ত্র সংঙ্গীত পারদর্শিতা।
৩।
নৃত্য-কলা
বা নাচ।
৪।
অঙ্কন বিদ্যা বা ছবি আঁকা।
৫।
নিজ সীমন্ত বা চুলকে সুসজ্জিত
করা।
৬।
নানাবিধ পুষ্পে শয্যা সুশোভিত
করা।
৭।
নানাবিধ বর্ণে গৃহ সুসজ্জিত
করা।
৮।
আপন দন্ত, পোষাক-পরিচ্ছদ,
কেশ নখ প্রত্যক্ষ
বর্ণের দ্বারা সুসজ্জিত
করা।
৯।
বর্ণাঠ্য প্রস্তরে ও ধাতব
পদার্থে ঘর ও শয্যা সুশোভিত
করা।
১০।
ভিন্ন ভিন্ন উৎসবে বা আনন্দে
শয্যা নানাভাবে আস্তরণ
দেওয়া।
১১।
সাঁতার ও জলকেলি।
১২।
প্রিয় লোককে আকর্ষণ করার জন্য
মন্ত্রতন্ত্র অনুশীলন।
১৩।
ফুল নিয়ে মালা গাঁথা ও অঙ্গাদি
সুশোভিত করা।
১৪।
ফুল নিয়ে মালার মুকুট ও
বেষ্টন।
১৫।
নিজের শোভন বেশভুষা করা-এক
উৎসবে এক প্রকার, অন্য
উৎসবে অন্য প্রকার।
১৬।
চিত্তহারী প্রথায় কানের দুল
পরিধান করা।
১৭।
সুগন্ধি দ্রব্য তৈরী করা।
তৈজস পত্রাদি তৈরী সম্বন্ধে
শিক্ষা করা।
১৮।
নূতন ভূষণ তৈরী বা পুরানো
বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার নতুন
করে গড়া।
১৯।
অতিথিবর্গের সন্থষ্ট করবার
বিদ্যা।
২০।
পরিচ্ছদ রচনার সুচারুতা।
২১।
হস্ত কৌলশ।
২২।
রান্না করার পারদর্শিতা।
২৩।
পানীয় দ্রব্য তৈরী করা,
বিভন্ন মিষ্টান্ন
তৈরী করা, অম্ল,
চাটনি,
প্রভৃতি তৈরীতে
পারদশিতা।
২৪।
সেলাই ও দেহের বস্ত্রাবরণ
করতে সুদক্ষতা।
২৫।
বস্ত্রখণ্ড ও সুতা দিয়ে পাখি,
পাতা, ফুল
ইত্যাদি তৈরী করা।
২৬।
বীণা ও ডমরুর শব্দ অনুকরণ।
২৭।
নানাবিধ হেঁয়ালী রচনা।
২৮।
সঙ্গে সঙ্গে না ভেবে চিনে-
কবিতা রচনা
করা বা কবিতার পাদপূরণ করা।
২৯।
কঠিন অর্থপূর্ণ দুরূহ শব্দের
অর্থ নিরূপণ করা।
৩০।
সুমধুর কণ্ঠে শাস্ত্রীয় শ্লোক
পাঠ করা।
৩১।
নাটক অভিনয় দর্শন ও নাটকের
বিভিন্ন চরিত্রের প্রকৃত
সমালোচনা।
৩২।
কোনও কবিতার হারানো পংক্তির
পুনরুদ্ধার করা বা তা পুনরায়
নতুন করে লেখা।
৩৩।
বেত বা তৃণ থেকে নানাবিধ নতুন
নতুন আসবাবপত্র রচনা বা
বোনা।
৩৪।
কাঠ থেকে কুঁদে ছবি বা দৃশ্য
রচনা।
৩৫।
ছুতারের কাজ এবং বাড়ি ঘর
তৈরী।
৩৬।
সোনা বা রূপা ও দামী পাথর বসিয়ে
নানা কাজ করা।
৩৭।
রসায়ন বা ধাতব শাস্ত্র অধ্যয়ন।
৩৮।
উজ্জ্বল পাথর ও দামী ধাতুর
বস্তু রচনা।
৩৯।
বাগানের কাজ করা।
৪০।
ভেড়া, মোরগ
এবং পায়রাদের নিয়ে কৌতুকপূর্ণ
খেলা করার উৎসাহ দান।
৪১।
শুক, ময়না
প্রভৃতি পাকিকে কথা শেখানো
ও তাদের দিয়ে নানা কৌতুককার্য
করানো।
৪২।
গাত্র মর্দন করতে শেখা,
বেশভূষা রচনা
করা, কাজের
শিল্প শিক্ষা করা।
৪৩।
সংবাদ প্রাপ্তির নমুনা স্বরূপ
আঙ্গুলের দাগ বোঝা।
৪৪।
গুপ্ত সংবাদ বোঝার জন্যে ভাষা
শিক্ষা।
৪৫।
বিভিন্ন দেশের লিখিত ভাষা ও
কথাবার্তা বোঝা।
৪৬।
ঘোড়া হাতী ও যানবাহন সুসজ্জিত
করা।
৪৭।
সংকেত চিহ্ন বা গুপ্ত বার্তা
বোঝা।
৪৮।
নানা ধরণের যন্ত্রে জ্ঞানলাভ
করা।
৪৯।
স্মৃতিশক্তি বা স্মরণশক্তি
বৃদিধ করার অভ্যাস বা কি করতে
পারলে বেশি কথা মনে রাখা
যায়।
৫০।
নানাবিধ পুস্তক পাঠ।
৫১।
নানাবিধ পুস্তক রচনা।
৫২।
অভিধান ও বিশ্বকোষ সংগ্রহ।
৫৩।
ছন্দের নিয়ম এবং বক্তৃতা শিল্প
শিক্ষা।
৫৪।
লুকাবার শিল্প, তুলা
রচিত দ্রব্যকে পশমরূপে রূপদান,
সাধারণ দ্রব্যকে
চিত্তাকর্ষক করে তোলা। নানা
বস্ত্র পরিধান করা।
৫৫।
দাবা খেলা ও পাশা খেলায়
দক্ষতা।
৫৬।
বস্ত্র পরিচ্ছদ পরিধান করে
নিজেকে অন্যের চোখে আকর্শণীয়
করে তোলা।
৫৭।
শিশুদের মত পুতুল ও গোলাকার
সব বস্তু নিয়ে খেলা করা।
৫৮।
নানা প্রকার শারীরিক ব্যায়াম
ও কলাকৌশল শিক্ষা করা।
৫৯।
রাজনীতি শিক্ষা করা।
৬০।
সামরিক রীতিনীতি সম্পর্কে
জ্ঞান।
৬১।
মুখ দেখে মানুষের চরিত্র
বোঝা।
৬২।
কৃত্রিম পুষ্প রচনা শিক্ষা
করা।
৬৩।
কর্দম বা নরম মাটি দ্বারা নানা
ধরণের সুন্দর মূর্তি রচনা
করা।
৬৪।
গণিত বিষয়ে জ্ঞান লাভ।
চৌষট্টি
কলার প্রয়োজনীয়তা
এই
চৌষট্টি কলা ছাড়া বাভ্রব্য
আরও চৌষট্টি ধরনের শিল্পকাজের
কথা বলেছেন।
বাভ্রব্য
ছিলেন পঞ্চাল দেশের লোক।
তাই
তিনি এই কথাগুলিকে পাঞ্চালী
কথা বলে অভিহিত করেছেন।
যে
বারাঙ্গনা এই চৌষট্টি কলায়
পারদর্শিনী হতে পারতেন তাঁদের
বলা হতো ‘রূপ-গণিকা’
সংক্ষিপ্ত ভাষায় গণিকা।
সাধারণ
মানুষ এই গণিকাকে সম্মান
করত-বর্তমানেও
গণিকারা পরম আদরণীয়।
রাজবংশীয়
বা অভিজাতবংশীয় মেয়েরাও এই
চৌষট্টি কলা শিক্ষা করলে তারা
যতাযথ আদর্শ স্থানীয় বলে গণ্য
হতেন ও উত্তম পুরুষকে লাভ করতে
পারতেন।