'পুরুষ ধর্মবিদ্যা, অর্থবিদ্যা ও অঙ্গবিদ্যার কাল ক্ষেপণ না করে কামসূত্র ও তার অঙ্গবিদ্যার অধ্যয়ন করবে'।।১।।
'স্ত্রী যৌবনের পূর্বে কামশাস্ত্রের গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু বিবাহিত যদি হয়, তবে স্বামীর অভিপ্রায় অনুসারে। যোষিদগণের শাস্ত্রগ্রহণে অধিকার নাই বলে এ-শাস্ত্রে স্ত্রী-শাসন অনর্থক, এই কথা আচার্যগণ বলে থাকেন'।।২।।
'প্রয়োগ গ্রহন তো এদের আছে। প্রয়োগ জানতে হলে, শাস্ত্রের আবশ্যক-–বাৎস্যায়ন এই রূপ মনে করেন'।।৩।।
'প্রয়োগ গ্রহণ যে কেবল এই শাস্ত্রেই, তা নয়। ইহলোকে সর্বত্রই শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তি কতিপয় মাত্র, প্রয়োগ তো সর্বজন-বিদিত বিষয়'।।৪।।
'শাস্ত্র, বহু দূরস্থ হলেও প্রয়োগ-জ্ঞানের প্রতি হেতু'।।৫।।
'ব্যাকরণ আছে, এই জন্য যারা ব্যাকরণ পাঠ না করেছে, অথচ যজ্ঞানুষ্ঠান করে, তারা যজ্ঞেতে তো ঊহ করে থাকে'।।৬।।
–'জ্যোতিশাস্ত্র আছে, তন্মতে এদিন অতিশয় পবিত্র, ইহা জেনে যারা অজ্যোতিষিক, তারা সেই দিনে কর্ম করে থাকে'।।৭।।
'সেইরূপ শাস্ত্রপাঠ না করেও অশ্বারোহ (অশ্বারোহী) ও গজারোহ ব্যক্তি অশ্ব ও গজের শিক্ষা বিধান করে থাকে'।।৮।।
'সেইরূপ রাজা আছেন, এইজন্য দূরস্থ হলেও শাসনমর্যাদাকে অতিক্রম করতে পারে না। সেইরূপই ইহা'।।৯।।
অথবা শাস্ত্রগ্রহণ কারো কারো আছে, এই কথা বলছেন–
'আছেই তো, শাস্ত্র দ্বারা বিশুদ্ধ-বুদ্ধি গণিকাগণ,১ রাজপুত্রীগণ এবং মহামাত্রকন্যাগণ'।।১০।।
'অতএব স্ত্রী নির্জন প্রদেশে বিশ্বাসের যোগ্য ব্যক্তির নিকটে প্রয়োগ ও শাস্ত্র বা তার একদেশে গ্রহণ করবে'।।১১।।
'অভ্যাস ও প্রয়োগের যোগ্য চাতুঃষষ্টিকযোগ কন্যা নির্জন প্রদেশে একাকিনী বসে নিজে নিজেই অভ্যাস করবে'।।১২।।
'কন্যাগণের আচার্য হবে, যে স্ত্রী পুরুষসম্প্রয়োগে প্রবৃত্ত হয়েছে এবং যার সহিত একত্র সে বর্ধিত হয়েছে, সেই ধাত্রী কন্যা প্রথমা। অথবা যে পূর্বে পুরুষসম্প্রোয়োগে প্রবৃত্ত হয়েছে এবং যার সহিত নির্দোষ সম্ভাষণ করা যায়, তাদৃশ সখী দ্বিতীয়া। পূর্বে পুরুষসম্প্রয়োগে প্রবৃত্ত তুল্য বয়স্কা মাতৃষ্বসা (মাসী) তৃতীয়া। মাসী স্থানীয়া বিশ্বস্তা বৃদ্ধদাসী চতুর্থী। পূর্বে যার সহিত প্রীতি জন্মিয়াছে, তাদৃশ ভিক্ষুকী পঞ্চমী। বিশ্বাসের আস্পদ বলে ভগিনীও ষষ্ঠী'।।১৩।।
তারমধ্যে আবার উপায়লভ্য চতুঃষষ্টি (৬৪) প্রকার কলার কথা বলেছেন—
'গীত, বাদ্য, নৃত্য, আলেখ্য বিশেষকচ্ছেদ্য, তণ্ডুলকুসুমবলিবিকার, পুষ্পাস্তরণ, দশন, বসন ও অঙ্গরাগ, মণিভূমিকাকর্ম, শয়নবচন, উদকবাদ্য, উদকাঘাত, চিত্রযোগ, যোজন, ইন্দ্রজাল, কৌচুমারযোগ, হস্তলাঘব, বিচিত্রশাকযুভক্ষ্যবিকারক্রিয়া, পানকরস, রসাসবযোজন, সূচীবানকর্ম, সূত্রক্রীড়া, বীণাডমরুবাদ্য, প্রহেলিকা, প্রতিমালা, দুর্বাচকযোগ, পুস্তকবাচন, নাটকাখ্যায়িকাদর্শন, কাব্যসমস্যাপূরণ, পট্টিকাবেত্রবাণবিকল্প, তক্ষকর্ম (তর্কুকর্ম), তক্ষণ, বাস্তুবিদ্যা, রূপ্যরত্নপরীক্ষা, ধাতুবাদ, মণিরাগাকরজ্ঞান, বৃক্ষায়ুর্বেদযোগ, মেষকুক্কুট-লাবকযুদ্ধবিধি, শুকসারিকাপ্রলাপন, উৎসাদনে পুষ্পশকটিকা, নিমিত্তজ্ঞান, যন্ত্রমাতৃকা, ধারণমাতৃকা, সংপাঠ্য, মানসী, কাব্যক্রিয়া, অভিধানকোষ, ছন্দোজ্ঞান, ক্রিয়াকল্প, ছলিতকযোগ, বস্ত্রগোপন, দ্যুতিবিশেষ, আকর্ষক্রিয়া, বালক্রীড়নক, বৈনয়িকী, বৈজয়িকী ও বৈয়ামিকী বিদ্যাবিজ্ঞান, এই চতুঃষষ্টিপ্রকার অঙ্গবিদ্যা কামসূত্রের অবয়বী'।।১৪।।
'অন্য চতুঃষষ্টিপ্রকার পাঞ্চালিকীকলা আছে। তার প্রয়োগ অম্ববেক্ষণ করে সাম্প্রয়োগিক অধ্যায় বলব। যেহেতু, কামও সেই চতুঃষষ্টি প্রকার'।।১৫।।
কলাগ্রহণের ফল কি, তা বলছেন—
'বেশ্যা এই সকল কলার ব্যবহার উচ্চসম্মান প্রাপ্ত হয়ে সুন্দরস্বভাব, সুন্দররূপ ও গুণ-যুক্ত হলে গণিকানাম এবং গুণগ্রাহি জনগনের সভায় স্থানলাভ করতে সমর্থ হয়। রাজা তার পূজা করেন। গুণবানগণ তার গুণের অশেষ প্রকারে ব্যাখ্যা করেন। সে সকলের প্রার্থণীয়া, অভিগম্যা ও লক্ষ্যবস্তু হয়। গীতাদির প্রয়োগজ্ঞানসম্পন্না রাজপুত্রী বা মহামাত্রের কন্যা সহস্রস্ত্রীর মধ্যে অভিরমণকারী পতিকে নিজের বশে আনতে পারে। পতিবিয়োগ হলে, দারুণব্যসন প্রাপ্ত হলে বা দেশান্তরে পতি থাকলে অথবা ঘটনাক্রমে নিজেই দেশান্তরস্থ হলে কিংবা স্বকীয় দ"শেই দুর্ভিক্ষাদি দ্বারা ব্যসনপ্রাপ্ত হলে এই বিদ্যার সাহায্যে সে স্ত্রী-সুখে জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে পারে'।।১৬।।
পুরুষের সম্বন্ধে কথিত হয়েছে—
'নর কলাপ্রয়োগে কুশল হলে বক্তা, চাটুকথায় পটু বা প্রিয়কারী হয়ে নারীগণের অপরিচিত হলেও অতিসত্বর তাদের চিত্তহরণ করতে পারে। কলাগ্রহণ করলেই সৌভাগ্য জন্মায়; কিন্তু কাল ও দেশের অপেক্ষা করে কলার প্রয়োগ কশ্চিৎ নাও সম্ভব হতে পারে'।।১৭।।
ইতি শ্রীমদ্-বাৎস্যায়নীয় কামসূত্রে সাধারণনামক প্রথমাধিকারণে বিদ্যাসমুদ্দেশনামক তৃতীয় অধ্যায় সম্পূর্ণ।।৩।।
——————————————————————————–
১ 'গণিকা'-–মেধাতিথি বলেন, যে কামিনীগণ কেবল সম্ভোগ লিপ্সায় বহুপুরুষে অনুরক্তা হয়, তাদেরকে পুংশ্চলী বলে এবং যারা সাজ-পোশাক করে হাব-ভাবে যুবক মাতিয়ে বেশ্যাবেশে বাস করে। বাস্তবিক তাদের হৃদয়ে সম্ভোগ-লিপ্সা বা প্রেম কখনও স্থান পায় না, অর্থ দিতে পারলে সকলের প্রতিই অনুরাগ প্রকাশ করে থাকে। সেই বেশ্যাদের গণিকা বলে। (মনু ৪।২১১ মেধাতিথি।) মনুর মতে এদের অন্ন খেলে কোনরূপ সদ্গতি হতে পারে না।