কামশাস্ত্রে
আছে প্রকৃত যৌন মিলনের আগে
কতকগুলি কাজ করা একান্ত প্রয়োজন।
তার মধ্যে সর্ব প্রধান হলো
আলিঙ্গন। তাই আলিঙ্গনকে একটি
শিল্প হিসাবে বর্ণনা করা
হয়েছে।
কামশাস্ত্রবিদরা
বলেন- সাধারণতঃ
আট রকমের আলিঙ্গন পুরুষ ও নারী
পরস্পরের প্রতি হতে পারে। এই
আটভাবে নারী ও পুরুষ প্রাথমিক
সুখ পায়। প্রত্যেকটি আলিঙ্গন
আবার আট রকমের হয়- তাহলে
মোট ৬৪ প্রকার আলিঙ্গন হতে
পারে।
বাৎস্যায়ন
বলেন- আলিঙ্গন
ঠিক ৬৪ রকম। ইহাতে এক রকমের
সঙ্গে অন্য রকমের কিছুটা মিল
হতে পারে। তবুও কিছু না কিছু
তফাৎ থাকবেই।
যেমন
ছাতিম ফুল ভিন্ন ভিন্ন ধরনের
হলেও প্রত্যেক ফুলে সাতটি
করে পূর্ণ থাকবেই- আলিঙ্গনও
ঠিক তাই।
রতিক্রিয়ার
প্রথম কাজ হলো আলিঙ্গন। একে
অনেকে শৃঙ্গারও বলে থাকেন।
মোটামুটি
আলিঙ্গন দুই ভাগে বিভক্ত-
(১)
যে নারী কখনো
রতিক্রিয়া করেনি তার সঙ্গে
আলিঙ্গন।
(২)
যে নারী রতিক্রিয়ায়
অভিজ্ঞ তার সঙ্গে আলিঙ্গন।
প্রথম প্রকার
আলিঙ্গন একটু চর্চা বা অভ্যাস
করে সুসম্পন্ন করা হয়ে
থাকে।
দুইভাবেই
দুজনের মধ্যে ভালবাসা হতে
পারে। কিন্তু দ্বিতীয় ভাবে
ভালবাসা হতে দেরী হয়। প্রথম
প্রকার আলিঙ্গন চার প্রকার-
(১)
স্পৃষ্টক (মৃদু
স্পর্শ)
(২)
বিদ্ধক (স্তনাগ্র
দ্বারা খোঁচা দেওয়া)
(৩)
উদ্ঘৃষ্টক
(আস্তে
ঘর্ষণ পূর্বক)
(৪)
অবপীড়িতক (সজোরে
ঘর্ষণ পূর্বক)
স্পৃষ্টক
আলিঙ্গন
এতে
নারী ও পুরুষের অঙ্গ পরষ্পরকে
সমান স্পর্শ করতে পারে। কোনও
নায়কা ঘটনাক্রমে কোনও লোকের
সঙ্গে থাকতে পারে।
তখন
নায়ক নায়িকাকে সামান্য স্পর্শ
করে উঠে যায়। এই যে স্পর্শ
আলিঙ্গন হয় তাকেই বলে স্পৃষ্টক
আলিঙ্গন। এতে শুধু বোঝা যায়
দু’জনের মধ্যে কোন আকর্ষন
আছে কি-না।
বিদ্ধক
বা বক্ষচাপ আলিঙ্গন
এই
আলিঙ্গন সাধারণতঃ নারীর প্রথমে
হয়ে থাকে। পুরুষকে নারী প্রথমে
কোন নির্জন জায়গায় দেখতে পায়।
যে কোন অছিলায় নায়িকা সেখানে
যায়। সেখান থেকে কোন কোন জিনিস
মাটি থেকে কুড়িয়ে নেবার সময়
সে পুরুষের সঙ্গে তার স্তন
ঘর্ষণ করে- এতে
তার আলিঙ্গনের সুখ অনুভব করে।
এটি সামনের বা পেছনের দিক
থেকেও হতে পারে।
ঘর্ষণ বা
উদ্ঘৃষ্টক আলিঙ্গন
এই
আলিঙ্গণে নারী ও পুরুষ পরস্পর
পরস্পরের সঙ্গে ঘর্ষণ করতে
পারে। এই ঘর্ষণ আস্তে আস্তে
কিন্তু অনেকক্ষণ হ’তে পারে।
যখন
এটি দুই পক্ষেই খুব জোরে চলে
তখনই একে বলা হয় উদ্ঘৃষ্টক
আলিঙ্গন। যখন শুধু একজন চালায়
তখন তাকে বলা হয় ঘৃষ্টক।
দৃঢ় ঘর্ষণ
বা অবপীড়িতক আলিঙ্গন
যখন
পুরুষ বা নারী কোনও দেওয়াল
বা স্তম্ভে হেরান দিয়ে দাঁড়ান
এবং জোরে জোরে পরস্পরকে ঘর্ষণ
করে তাকে বলা হয় অবপীড়িতক
আলিঙ্গন। এত দু’জনেই বেশ
ভালভাবে অংশ গ্রহণ করে থাকে।
দু’জনে পরস্পরকে জাপটে ধরলেও
পূর্ণ আনন্দ হয়।
এই
তৃতীয় ও চতুর্থ প্রকার আলিঙ্গন
হয়, তখন
দু’জনের মধ্যে প্রেম ভাব
হয়েছে- এমতাবস্থায়
একজন অন্যজনকে ডেকে আনে বা
তাকে বশে আনতে পারে।
কিন্তু প্রেমিক প্রেমিকা সাক্ষাৎ যৌন ক্রিয়ায় যে যে আলিঙ্গন ক’রে থাকে তাহা হলো নিম্নোক্ত চার প্রকার।
লতাবেষ্টিত
আলিঙ্গন
এতে
পুরুষ দাঁড়িয়ে থাকে এবং নারী
লতার মত তাকে জড়িয়ে ধরে থাকে।
নায়িকা নায়ককে গলা জড়িয়ে ধরে
থাকে। তার মুখ তুলে পুরুষের
চোখের দিকে প্রেমাতুর ভাবে
তাকায়। চুমু খাবার জন্যে
পুরুষের মুখ নিচু করে ধরে।
সে নিজের স্তন তখন তুলে ধ’রে
পুরুষের বাসনা বৃদ্ধি করে।
বৃক্ষাধিরূঢ়
আলিঙ্গন
পুরুষ
দাঁড়িয়ে থাকে প্রেমিকা তার
পায়ের উপর উঠে অন্য পা দিয়ে
উরুদেশ জড়িয়ে ধরে।
এই
অবস্থায় নারী নিজের যোনি
পুরুষের লিঙ্গ মুণ্ডের কাছে
ঘর্ষণ করার চেষ্টা করে। অথবা
সে পুরুষের কোমর জড়িয়ে ধরে
মুখে ভালবাসার গুঞ্জন করতে
থাকে। এই সময় নায়িকা তার শরীর
তুলে পুরুষকে চুম্বন করতে
থাকে।
তিলতন্ডুল
আলিঙ্গন
এই
আলিঙ্গন নায়ক নায়িকা বিছানায়
শুয়ে শুয়ে সম্পন্ন করে থাকে।
পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ে উভয়ের
দিকে ফিরে থাকে। নারী বা-হাত
পুরুষের ডানদিকে গলিয়ে দেয়-
ডান হাত পুরুষের
বাঁ অঙ্গের উপরে রেখে দুই
উরুদেশ পরস্পর সংযুক্ত করে।
তাতেও নারী ও পুরুষ তাদের যোনি
ও পরুষাঙ্গ পরস্পরের সান্নিধ্যে
এনে ঘর্ষণ করতে পারে। এতে
প্রচুর আনন্দ হয়।
ক্ষীর
নীরক
দুধ
আর জল যেমন একসঙ্গে মিশলে
আলাদা করা যায় না- পুরুষ
ও নারী এমনভাবে সংযুক্ত হবে
যেন একজনে অন্যের অঙ্গ থেকে
পৃথক করা না যায়। এতে নারী
পুরুষটির কোলের উপর এসে এবং
নারী পুরুষের উপর শুয়ে নিজেকে
তার দেহের মধ্যে মিশিয়ে নেয়।
পুরুষ ও নারী রতিক্রিয়া আরম্ভ করার পর তৃতীয় ও চতুর্থ প্রক্রিয়া শুরু করে। এই সময়ে পুরুষের রুরুসাঙ্গ দৃঢ় ও আকারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং নারীর যোনিদেশ তখন রসস্রাব হতে থাকে। যাতে লিঙ্গমুন্ড বেশ আরামে যোনিরন্ধ্রে প্রবশ করতে পারে।
সুবর্ণাভ নামক লেখক আরও চার প্রকার আলিঙ্গনের কথা বলেছেন তাঁর প্রন্থে। তা হলো-
ঊরুপগৃহণ
আলিঙ্গন
নারী
পুরুষ পাশাপাশি শুয়ে থাকে।
একজন অন্যের উরুদেশ বেশ
আরামদায়কভাবে আঁকড়ে জড়িয়ে
ধরে। যার উরু বেশী মাংসল সেই
বেশী জোর দিয়ে জড়াতো পারে।
জগনোপগূহন
আলিঙ্গন
এতে
পুরুষ বিছানার উপরে চিৎ হয়ে
শয়ন করে থাকে। নারী তার বুকের
উপরে শুয়ে তার পদদ্বয় ও নিতম্ব
বেশ কোর করে আঁকড়ে ধরে-
তার যোনি পুরুষের
পুরুষাঙ্গের উপর ঘর্ষণ করতে
থাকে। এই সময় প্রেমিকা পুরুষকে
চুম্বন, নখাঘাত
ও অধর দংশন ক’রে উল্লাস অনুভব
করে থাকে।
স্তন
আলিঙ্গন
এই
সুরত ক্রিয়ায়, নারী
পুরুষের বুকের ওপর শুয়ে তার
স্তনদ্বয় দ্বারা জোরে জোরে
চাপ দেয়, পুরুষের
বুকের ওপর নিজের দেহভার ন্যস্ত
করে। কোমল স্তন মর্দনের জন্য
পুরুষের বেশ আরামবোধ হয়ে থাকে।
এরূপ রতিক্রিয়া দু’জনে সম্পাদন
করতে পারে। পাশাপাশি শুয়ে
এরূপ করা যায়।
ললাটিকা
আলিঙ্গন
এরূপ
রতিক্রিয়াতে নারী পুরুষের
বুকের ওপর শয়ন করে অথবা পাশাপাশি
শয়ন করে। চোখে চোখে মিলন হয়
নারীর ওষ্ঠাধর চুম্বন করে
পুরুষ আংটির মত জড়িয়ে ধরে।
দু’জনের
কপালে কপালে ঘর্ষণ হয়। তাই
এর নাম হয়েছে ললাটিকা।
পুরুষ
ও নারী তাদের সমস্ত শরীর অপরের
সঙ্গে মিশিয়ে যথেষ্ট আনন্দ
উপভোগ করে।
এইসব
নানা বিধ আলিঙ্গন ইত্যাদি
দ্বারা নরনারীর কামেচ্ছা
চূড়ান্ত জাগ্রত হ’য়ে থাকে-
এতে রতি কাজের
সুখ অনেক বেশী বৃদ্ধি পায়।