৫ম অধ্যায়
গার্হস্থধর্ম অবলম্বন করে, সহায়ের সহিত উপক্রম করবে, দূতের প্রেরণ করবে, ইত্যাদি কথা পূর্বে বলা হয়েছে। তার মধ্যে কোন্ নায়ক কীদৃশ নায়িকার সহিত গার্হস্থধর্ম অধিগত হয়ে নাগরবৃত্তের সদ্ব্যবহার করবে? তার সহায়ই বা কে হবে? আর যে দূত প্রেরণের কথা হয়েছে, তারই বা কর্ম কী? এই অধ্যায়ে এই সকলের নিরূপণ করা হবে; এই জন্য এই অধ্যায়ের নাম ‘নায়কসহায়দূতকর্ম্ম-বিমশ’। নায়ক ও নায়িকার, দূতী ও দূত কর্ম; এরূপ ব্যাখ্যা করতে হবে।
তারমধ্যে বহু বক্তব্য আছে বলে, প্রথমত নায়িকার বিষয় বিমর্শ করা যাচ্ছে; কারণ, এটি ফলভূত ও প্রথম এর নিরূপণে অন্যবিধ কারণও বর্তমান আছে–
‘চতুর্বিধ বর্ণের মধ্যে সমান বর্ণের অনন্যপূর্বা স্ত্রীতে শাস্ত্রানুসারে প্রবর্তমান সংযোগ ঔরস পুত্রের নিমিত্র ও যশের নিমিত্র হয়; ইহা লোক বহির্ভূত অসাধু ব্যবহার নহে, পরন্তু লৌকিক ‘।।১।।
–সমান বর্ণের
–ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণীতে,
শুদ্র শুদ্রায়।
শাস্ত্রানুসারে–বরণাদি বিধির
পালন পূর্বক। অনন্যপূর্বা,
যে ভার্যারূপে
অন্যের অধিগত নহে।
–সংযোগ
কামশব্দের বাচ্য না হলেও
স্ত্রীপুরুষের যোগ ব্যতীত
কামের আত্মলাভ হয় না বলে উপচার
করে কামনামে ব্যবহার করা
হয়েছে। এটিও নাম।
‘উত্তমবর্ণাতে প্রবর্তমান সংযোগ তার বিপরীত। সেই রূপে অন্যের বিবাহিতা সবর্ণাতেও প্রবর্তমান সংযোগ তার বিপরীত। সংযোগ পুত্রের নিমিত্ত ও যশের নিমিত্ত হয় না এবং তা লৌকিক ব্যবহার্য্যের বহির্ভূত হয়। ইহা সুখের জন্যও হয় না। তদ্রুপ অসবর্ণাতেও তন্মধ্যে যার পাতিত, সে সকল স্ত্রীতে সংযোগ একান্ত প্রতিষিদ্ধ। বেশ্যা ও পুনর্ভূ বিধবাতে সংযোগ শিষ্ট অনুশাসনবিধান ও প্রতিষেধের বিষয় নয়। তাতে সংযোগ সুখের নিমিত্তই হয়ে থাকে ‘।।২।।
‘তার মধ্যে নায়িকা তিনটি–কন্যা, পুনর্ভূ এবং বেশ্যা ‘।।৩।।
‘গোনিকাপুত্র বলেন— পুত্র ও সুখ এতদুভয়বিধ কারণ হতে অন্যবিধ কারণবশত পরপরগৃহীতা স্ত্রীও পক্ষে প্রাপ্ত চতুর্থী নায়িকা ‘।।৪।।
‘সে নায়ক যখন মনে করবে, তখনই তাতে রমন করতে পারবে। কারণ, এ স্বৈরিণী স্বাধীনা ‘।।৫।।
‘অন্যান্য পুরুষের নিকট বহুবার আপনার সত্যশীলতাকে খণ্ডিত করেছে, সুতরাং এ স্ত্রী উত্তমবর্ণা হলেও বেশ্যাতে অভিগমন যেমন ধর্মপীড়া করে না, সেইরূপ তাতে অভিগমন করাও ধর্মপীড়া উৎপাদন করবে না। কারণ, এ যে পুনর্ভূ স্ত্রী ‘।।৬।।
এ পুনর্ভূ কেন, তা বলছেন–
‘পূর্বে অন্য পুরুষ এর অধিগন্তা ছিল। এ স্ত্রী নায়কের অবরোধে আসলে যে পরস্পরের সংযোগ হবে, সে সংযোগের অধর্মার্জনের কিছু মাত্র আশঙ্কা নেই ‘।।৭।।
কারণ কি,
তা বলছেন–
‘এর
পতি একজন মহৎলোক ও ঐশ্বর্যশালী
বা আমার শত্রুর সাথে এর পতি
একজন মহৎলোক ও ঐশ্বর্যশালী
হয়েও মিলিত হয়েছে। এ স্ত্রীটি
প্রভূত্ব প্রকাশ করে এর পতিকে
দাবিয়ে রেখে ব্যবহার করছে।
এখন সে যদি আমার সংসর্গে আসে,
তবে আমার সংযোগে
তার স্নেহ বৃত্তি হবে ও সে
স্নেহ বশে সে তার পতিকে আমার
শত্রুর সহিত সম্বন্ধ ছিন্ন
করতে পারবে ‘।।৮।।
‘ আমার উপর বিরক্ত, অথচ আমি তার কিছুই প্রতিবিধান করতে পারিনা। সে কবে আমাকে অপমান করতে পারবে, সেজন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে আছে। তার স্ত্রী তাকে দাবিয়া ব্যবহার করে থাকে। সে যদি আমার সংসর্গে আসে, তবে সে আমার স্নেহে অভিপ্লুত হয়ে, সেই স্নেহ বশে তার স্বামীকে পূর্বাবস্থায় আনতে পারবে’।।৯।।
‘অথবা, সেই প্রভূত্বপ্রকাশকারিণী আমার সংসর্গে এসে স্নেহবশে তার পতিকে আমার মিত্র করে দেবে। তখন তা দ্বারা মিত্রের কাজ, অমিত শত্রুর প্রতিঘাত (শরীর রক্ষার্থ), আরও যা কিছু দুষ্প্রতিপাদক দুঃসাধক কাজ, তাও সাধিক করে নিতে পারব ‘।।১০।।
‘ আমরা, সেই প্রভূত্বপ্রকাশকারিণীর সাথে সংসর্গ করে তার পতিকে মেরে আমার প্রাপ্য ঐশ্বর্যজাত এভাবে অধিগত হতে পারব’।।১১।।
‘এর অধিগম্য দোষশূন্য ও অর্থানুবদ্ধ, কারণ, এ স্ত্রী ধনাঢ্যা। আমি নিঃসার বলে জীবিকার উপায় কৃষ্যাদি রহিত; সুতরাং আমি যখন এতাদৃশ্য, তখন আমি এই উপায়ে অতিমহৎ সেই ধন অনায়াসে অধিগত হতে পারব। অন্যথা সে নায়িকা আমার মর্ম বুঝে আমাকে দৃঢ়তরভাব অনুরক্ত হয়েও যদি তার সাধন করতে আমাকে অনিচ্ছুক দেখে, তবে আমাকে আমার দোষ লোকলোচনের সম্মুখে উপস্থাপিত করে আমাকে দূষিত করবে ‘।।১২।।
‘ মিথ্যাভূত পরের শ্রেদ্ধেয় আমার দূষ্পরিহার দোষ হতে আমাকে নিক্ষেপ করবে যা দিয়ে আমার বিনাশ নয়’।।১৩।।
‘অথবা প্রভাবশালী বশীভূত পতিকে আমার পক্ষ হতে বিচ্ছিন্ন করে শত্রুর পক্ষে যোগ দেয়াবে ‘।।১৪।।
‘অথবা নিজেই তাদের সাথে মিশে যাবে। অথবা, এর পতি আমার দারের দোষোৎপাদন করেছ; সুতরাং আমিও এর দারকে দূষিত করে প্রতিকার করব’।।১৫।।
‘ অথবা রাজার আদেশ বশতঃ লুকানো শত্রুকে বের করার জন্য এর স্ত্রীর সহিত সংসর্গ করতে হবে ‘।।১৬।।
‘ অথবা, আমি অন্য আর যাকে কামনা করি, সে এর বশগত। এর সাথে সংসর্গ করলে এ স্ত্রী স্নেহবশতঃ তাকে আমার সাথে মিলিয়ে দেবে। অথবা, আমাকে দিয়ে লাভের অযোগ্য অর্থ ও রূপবতী কন্যা এর অধীন হয়ে আছে। আমি এর সাথে সংসৃষ্ট হলে সে কন্যাকে আমার সাথে মিলিত করবে। অথবা, আমার শত্রু এর পতির সাথে একাকীভাবপ্রাপ্ত হয়েছে। আমি এর সাথে সংসৃষ্ট হতে পারলে, একে দিয়ে খাবারে কালান্তর প্রাণহারী বিষের প্রয়োগ করে দিতে পারব। — ইত্যাদি কারণে পরস্ত্রীতে অভিগমন কর্তব্য’।।১৭।।
‘ এর প্রকার সাহসিক কর্ম কেবল অনুরাগবশতঃ কর্তব্য নয়। এগুলি পরস্ত্রী গমনের কারণ’।।১৮।।
‘চারায়ণ বলেন— এই সকল কারণে মহামাত্র (সামন্ত) সম্বন্ধযুক্ত স্ত্রী বা রাজা কুলের একদেশচারিণী স্ত্রী, বা অন্য কোন রাজকার্যসম্পাদনকারিণী স্ত্রী এবং বিধবা স্ত্রী পঞ্চমী নায়িকা হতে পারে। সুবর্ণনাভ বলেন–এগুলি ও বিধবা সন্নাসিনীও ষষ্ঠী নায়িকা হবার উপযুক্ত। ঘোটকমুখ বলেন—গণিকারঙ্কন্যা বা অন্য পুরুষের অসংসৃষ্টা পরিচারিকা (চাকরাণী) সপ্তমী নায়িকা হতে পারে। গোনর্দীয় বলেন—তদ্ভিন্ন কুলকন্যাই বিবাহিত হয়ে কালে বালিকাভাব অতিক্রম করেছে যে কুলযুবতী, সে উপচারভেদে অষ্টমী নায়িকা হতে পারে, কিন্তু এদের যখন স্বতন্ত্র কাজ আর কিছু দেখতে পাওয়া যায় না, তখন পূর্বে কথিত চতুর্বিধ নায়িকার মধ্যেই এদের অন্তর্ভাব করতে পারা যায়। অতএব চার প্রকারি নায়িকা, এ কথা বাৎস্যায়ন বলেন। কেন কেহ বলেন, ভিন্ন প্রকৃতি বলে নপুংসকও পঞ্চমী নায়িকা হতে পারে, কিন্তু তা অসম্ভব ‘।।১৯।।
এইক্ষণে নায়ক নিরুপণ করছেন–
‘ নায়ক একই, এ সকলেই জানে। তদ্ভিন্ন প্রচ্ছন্ন নায়ক দ্বিতীয়। সে পরদার-গমনে সুখব্যতীত কার্যবিশেষ পাবার জন্য গোপনে প্রবর্তিত হয়। এদের গুণাগুণভেদে উত্তম, মধ্যম ও অধম রূপে তিন প্রকার বিভাগ আছে জানিবে। নায়ক ও নায়িকা উভয়েই গুণাগুণ বৈশিক অধিকরণে বলিব’।।২০।।
–কন্যাদির
বিশেষত্ব কিছুই বলা হলো না,
সুতরাং
গম্যাগম্য-ভেদে
গ্রাহ্যাগ্রাহ্যত্ব নিরূপণ
করছেন–
‘ এগুলি
অগম্যাই—কুষ্ঠরোগযুক্তা,
উন্মত্তা,
পতিতা,
গোপ্যপ্রকাশকারিণী,
যে যার-তার
সামনে সম্ভোগ প্রার্থনা করে,
যার যৌবন গতপ্রায়,
অত্যন্ত
শ্বেতবর্ণা, অত্যন্ত
কৃষ্ণবর্ণা, গুহ্যে
ও বক্ত্রে দুর্গন্ধবিশিষ্টা,
ভ্রাতার পুত্রের
বা ভগিনীর বৈবাহিক সম্বন্ধে
সম্বধিনী, ভার্যাবয়স্যা
সখী, সন্নাসিনী,
বিদ্যাসম্বন্ধে
বা রাজসম্বন্ধে যার সম্বন্ধ
তাদের স্ত্রী (শিষ্যভার্যা,
ভ্রাতৃভার্যা
ইত্যাদি ধর্মব্যতিকরকারিণী
স্ত্রী), সখিদার—মিত্রস্ত্রী,
শ্রোত্রিয়
ব্রাহ্মণস্ত্রী এবং রাজপত্নী
ও চতুর্বিধ আশ্রমের গুরুর
ভার্যা। এগুলি নিতান্তই অগম্যা
জানিবে’।।২১।।
–বাভ্রব্যের
মত বলছেন–
‘বাভ্রব্যের
মতানুসারীরা বলে থাকেন–নিজপতি
ভিন্ন যার নিকট পাঁচটি পুরুষকে
যেতে দেখা যায়, সে
কাহারও অগম্যা নয়’।।২২।।
–তার মধ্যে
গোণিকাপুত্র বিশেষ করে বলেছেন–
‘
সম্বন্ধি,
সখি,
শ্রোত্রিয় ও
রাজার দারা ব্যতীত সকলই
গম্যা’।।২৩।।
তিন প্রকারে
সহায় নিরূপণ হয়, স্নেহত,
গুণত এবং জাতিত।
তন্মধ্যে আদ্য সহায় বলছেন–
‘মিত্র
নয় প্রকার। সহপাংশুক্রীড়িত
(ধূলি
খেলার সাথী), উপকারসম্বন্ধ–অর্থ
বা জীবনরক্ষা দ্বারা,
সমানশীল ও সমান
ব্যসন, সহাধ্যায়ী,
তার মর্ম রহস্য
যে জানে, সে
যার মর্ম রহস্য জানে,
ধাত্রীর সন্তান
এবং একত্র একসঙ্গে সম্বর্দ্ধিত
ব্যক্তি মিত্র-পদবাচ্য
‘।।২৪।।
গুণত মিত্র
নিরূপণ করা যাচ্ছে–
‘পিতার
পিতামহ হতে যেখানে মিত্রতা
চলে আসছে, যার
বাক্য ও কর্ম যেমন শুনতে পাওয়া
যায়, তেমনি
দেখতে পাওয়া যায়, কুত্রাপি
বিসম্বাদ পাওয়া যায় না;
যার কোন কর্ম
কোন সময়ে বিকৃত দেখতে পাওয়া
যায় না, বশীভূত,
কখন পরিত্যাগ
করে না, লোভনীয়
নয়, পরে
বাধ্য করতে পারে না এবং কখনও
মন্ত্রণা প্রকাশ করে না। ইহাই
মিত্রসম্পত্তি। এই গুণেই
সকলে মিত্র হতে পারে। এর
ব্যভিচারে মিত্রও অমিত্রপদে
বসতে বাধ্য হন ‘।।২৫।।
–ধর্মদ্বারা
মিত্রগুণ কি কি তা বলা হল। এখন
জাতি অনুসারে কে কে মিত্র হতে
পারে, তা
নির্ণয় করছেন–
‘রজক,
নাপিত,
মালাকার,
গন্ধদ্রব্যবিক্রেতা,
সৌরিক (শুঁড়ী),
ভিক্ষুক,
গোপালক,
তাম্বুলিক
(তাম্লি
বা বারুই), সৌবর্ণিক
(সোনার
বেনে), পীঠমর্দ
(কুপিতা
স্ত্রীর প্রসন্নতা সম্পাদন-করার
ক্ষমতাশালী ব্যক্তি),
বিট (কামতন্ত্র-কলায়
জ্ঞানবান) এবং
বিদূষকাদিরাই মিত্র। নাগরকগণ
তাদের স্ত্রীদের সাথে মিত্রতা
স্থাপন করবে। তদ্দ্বারাই
নাগরক নিজের ইষ্টসিদ্ধি করতে
সক্ষম হবে। এ কথা বাৎস্যায়ন
বলেন ‘।।২৬।।
দূতের যা কর্ম,
তা করতে কথিত
হলেও, কোথায়
কিরূপ করতে হবে তা বলা হয় নাই;
এখন বলছেন–
‘
যে মিত্র নায়ক
ও নায়িকার নিকটে উভয়ত্রই
মিত্রকাজ করে সাধারণভাবে
নিজের কাজ দেখিয়ে এসেছে।
বিশেষত নায়িকার নিকটে অত্যন্ত
বিশ্বস্ত আছে। সেই মিত্রেই
দূতকর্ম করার ভার দিবে’।।২৭।।
–সে সব মিত্রের
মধ্যে যার দৌত্যকর্ম করার
উপযুক্ত গুণ আছে, তাকেই
দৌত্যকর্মে নিযুক্ত করতে
হবে। নতুবা কার্যসিদ্ধির
ব্যাঘাত ঘটিতে পারে। অতএব
দূতের যে যে গুণ থাকা আবশ্যক,
তা বলছেন–
‘
বাক-পটুতা
(বুদ্ধিপূর্বক
কথাবার্তা বলার উপযুক্ত
ক্ষমতা), ধৃষ্টতা
(প্রাগল্ভ্য)
অপরাধী হলেও
শঙ্কিত না হয়ে, তিরস্কৃত
হলেও লজ্জা বোধ না করা। এবং
দোষ দেখিয়ে দিলেও সে দোষ স্বীকার
না করা–অর্থাত্ কোন বিষয়ে
সঙ্কোচ না করা, ইঙ্গিত
ও আকার (বদন
ও নয়নগত বিকার) দেখে
তদনুরূপ অনুষ্ঠান করার যোগ্যতা,
প্রতারণা করার
উপযুক্ত অবসর জানা, সন্দেহ
স্থলে নির্ণয় করার উপযুক্ত
বুদ্ধি থাকা এবং কাজ নির্ণয়
করে উপায়াবলম্বন পূর্বক অতি
সত্বর তার অনুষ্ঠান করার
যোগ্যতা। এ গুলি দূতের গুণ।’।।২৮।।
–ঈদৃশ গুণযুক্ত দূতই কার্যসিদ্ধির পক্ষে একান্ত অনুকূল; সুতরাং দূত নিয়োগের পূর্বে একবার প্রত্যেক বিষয় পরীক্ষা করে দেখা উচিত ও সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে, তবে তাকে দৌত্যে প্রেরণ করা বিধেয়। অনুপযুক্ত-দূত-প্রেরণে কার্য-সিদ্ধি লাভের আশা করা যায় না। কথিত গুণের মধ্যে কোনটির অভাব থাকলে, তার জন্য নায়ককে পরিণামে তাপিত হতে হয় বলে পূর্বেই দূতের গুণসম্বন্ধে নিঃসন্দিগ্ধ হয়ে কাজে প্রেরণ করাই যুক্তিসঙ্গত।।২৮।।
এই
অধিকরণপ্রতিপাদ্যবিষয়ের
অনুষ্ঠানে যে ফললাভ করতে পারা
যায়, তা
বলছেন–
‘নিজের
নিজের মত করে মিত্রকে সহায়
পেলে, নাগরকবৃত্তানুসারে
নিজের কর্তব্য কর্মে আস্থাবান
থাকলে, নায়ক
ও নায়িকার নিরূপণ দ্বারা তাদের
স্বরূপ জানতে পারলে এবং দেশ
ও কাল বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকলে,
মানব লাভের
অযোগ্য স্ত্রীকেও বিনা আয়াসেই
লাভ করতে সমর্থ হয় ‘।।২৯।।
–এরকম
ব্যক্তিই স্ত্রীসাধনের যোগ্য;
সুতরাং এরকম
ব্যক্তির পক্ষেই স্ত্রীসাধনে
অগ্রসর হওয়া উচিত। নতুবা
জীবনহানি ও সৌভাগ্যবিলোপ
অবশ্যম্ভাবী। অতএব স্ত্রীসাধন
করতে অগ্রসর হওয়ার পূর্বে
প্রথমে আপনাকে একবার পরীক্ষা
করে দেখবে। নিজে নিজের নিকট
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে,
তারপর মিত্রকে
পরীক্ষা করে দেখবে। মিত্রকেও
সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে
দেখলে, তারপর
নায়িকার বিষয় পরীক্ষায় প্রবৃত্ত
হবে। এটি বড়ই গুরুতর বিষয়।
এস্থলে অনুমানেরই সাহায্য
নিতে হবে। নায়িকার হবা-ভাব
প্রভৃতি এবং চাল-চলন
প্রভৃতি দেখে তার স্বরূপ
নির্ণয় করবে। তারপর,
কালের ও দেশের
উপযুক্ত বিচার করে তবে
নিঃসংশয়চিত্তে সাধনায় প্রবৃত্ত
হবে। এবিষয়ে পদঙ্খলন নিতান্তই
অমার্জনীয় অপরাধ মনে রাখতে
হবে।।২৯।।
শ্রীমদ্-বাৎস্যায়নীয়
কামসূত্রে সাধারণ নামক
অধিকরণে
নায়কসহায়দুতকর্মবিমর্শঃ
পঞ্চম অধ্যায়
এবং
পঞ্চুম প্রকরণত্ত সমাপ্ত।।
৫।।
প্রথম
সাধারণ অধিকরণ সমাপ্ত ।।১।।