পঞ্চম ভাগ – প্রথম অধ্যায়
কন্যা ও পুনর্ভূর সহিত নায়কের সমাগমোপায় বিশেষভাবে কথিত হইয়াছে। তারপর, এখন বেশ্যা অপেক্ষা পরদারের কাম, অর্থ ও কামকর। এইজন্য তাহার সমাগমের উপায় প্রদর্শন করা বৈশিক অধিকরণের পরেই উচিত। অতএব পারদারিক অধিকরণ আরম্ভ করা যাইতেছে। তারমধ্যে প্রথমে স্ত্রীপুরুষের শীল ব্যবস্থাপিত না হইলে, উত্তর ব্যাপার প্রদর্শন করা অসমম্ভব বলিয়া, প্রথমে স্ত্রীপুরুষশীলাবস্থাপননামক প্রকরণের প্রারম্ভ করা যাইতেছে—
‘পরপরিগ্রহগমন
যে যে কারণে কর্তব্য,
তাহা পূর্বেই
কথিত হইয়াছে।।’১।।
–সুখ
ও পুত্র ব্যতিরেকে যে যে কারণ
থাকিলে পরদারগমন করিতে পারা
যায়, তাহা
বিশুদ্ধভাবে নায়িকাবিমর্শপ্রকরণে
ব্যাখ্যাত হইয়াছে। এখানে
তাহার স্মরণ করাইয়া দিতেছেন।।১।।
‘পরদারে গমন করিতে হইলে প্রথম এইগুলির পরীক্ষা করিবে—সাধনের যোগ্য কিনা, নিরাপদ কিনা, সেটি আয়তিকর কিনা এবং তাহাদ্বারা বৃত্তিলাভ সম্ভবপর কিনা।।’২।।
পরদারগমনের
মূখ্যকারণ আত্মরক্ষা। যদি
দেখিতে পায় যে, তাহার
গমনে নিজেকে বাঁচাইতে পারিবে;
তবে নিশ্চয়ই
গন্তব্য—
‘যখন
কোন একটি স্ত্রীকে দেখিয়া
কাম উৎপন্ন হইয়াছে, ক্রমেই
এক অবস্থা হইতে অন্য অবস্থান্তরকে
প্রাপ্ত হইতেছে দেখিবে;
তখন নিজ শরীরকে
উপঘাত হইতে রক্ষার জন্য,
সেই পরদারে
অভিগমন করিবে।।’৩।।
কামের অবস্থা
কয়টি?
‘কামের
অবস্থা দশটি।।’৪।।
‘পরস্ত্রীদর্শনের পর, সংযোগেচ্ছারূপে কামোদয়ের পর তাহার নয়নদ্বয় স্নিগ্ধভাব ধারণ করে। ইহাকে চক্ষুপ্রীতি কহে। তারপর, বিষয়প্রাপ্তি না হইলে, মনঃসঙ্গ—মনে মনে আসক্তি জন্মে। তাহার পর ‘কি করিয়া পাইব’ এইরূপ ভাবেও পাইলে এইরূপ করিতে হইবে,–এই প্রকারে সঙ্কল্পোৎপত্তি হয়। সেই সঙ্কল্পে নিদ্রাচ্ছেদ হইতে থাকে। নিদ্রাচ্ছেদ হওয়ার ক্রমশঃ শরীরের কৃশতা হইতে আরম্ভ হয়। তার পর, আর বিষয় ব্যবহার ভালই লাগে না; সুতরাং বিষয়ব্যাবৃত্তি হয়, অর্থাৎ সর্বদা তদ্গতচিত্ত হইয়া কামিনীবিষয় ভাবিতে ভাবিতে অন্য বিষয় বিতৃষ্ণাকর হইয়া যায়। বিষয়ে ব্যাবৃত্তি হইলে, ক্রমশঃ লজ্জাপ্রণাশ উপস্থিত হয়। তখন এই ব্যক্তি নির্লজ্জ হইয়া পড়ে; পরে সে আর গুরুজনের ভয়মাত্রও করে না। লজ্জা ও ভয় না থাকায়, ক্রমশ উন্মাদবস্থা আসিয়া উপস্থিত হয়। তারপর, অস্বাস্থ্যরূপে মূর্ছাভাব হইতে থাকে। ইহার পরেই প্রাণত্যাগ পর্যন্ত ঘটিয়া উঠে। এই গুলি তাহার চিহ্নস্বরূপ জানিবে।।’৫।।*
‘আচার্যগণ বলিয়া থাকেন,–রাগ বশতঃ অভিগমনবিষয়ে যুবতীর আকৃতি ও লক্ষণানুসারে শীল, সত্য (যথার্থবাদিতা), শৌচ (চরিত্রবিশুদ্ধি) এবং সাধ্যতা ও চণ্ডবেগতা লক্ষ্য করিবে।।’৬।।
‘বাৎস্যায়ন বলেন,–আকৃতি ও লক্ষণের কদাচিৎ ব্যভিচারও দেখিতে পাওয়া যায়; সুতরাং যুবতীর ইঙ্গিত ও আকার দ্বারাই প্রবৃত্তি বুঝিতে পারা যায়। অতএব তদ্দ্বারাই বুঝিবে।।’৭।।
কাহার কি
শীল?—
‘গোণিকাপুত্র
বলেন—বর্ণ ও বেশ দ্বারা যে-কোন
স্বকীয় বা পরকীয় পুরুষ দেখিয়া
স্ত্রী কামনা করে। সেইরূপ
আবার স্ত্রীকে দেখিয়া পুরুষও
কামনা করে; কিন্তু
কোন কার্যের অপেক্ষায় প্রবর্তিত
হয় না।।’৮।।
‘তাহার মধ্যে স্ত্রীর কিছু বিশেষত্ব আছে।।’৯।।
‘স্ত্রী ধর্ম ও অধর্মের অপেক্ষা রাখে না, কেবল প্রবর্তিতই হয়। কোন কার্যের অপেক্ষায় অভিযোগ করে না। স্বভাবতই পুরুষ দ্বারা অভিযুজ্যমান হইয়া সম্প্রয়োগের ইচ্ছা করিয়াও নায়কের অভিযোগ হইতে ব্যাবর্তিত হয়। বারংবার অভিযুক্ত হইয়া কার্যে সিদ্ধ হয়। কিন্তু পুরুষ কাময়মান হইলে ধর্মের মর্যাদা ও আর্যাচারের অপেক্ষা করিয়া ব্যাবর্তিত হয়। যাহার তাদৃশ বৃদ্ধি; সে অভিযুজ্যমান হইলেও কার্যে সিদ্ধ হয় না। নিষ্কারণে অভিযোগ করে। একবার অভিযোগ করিয়া আবার অভিযোগ করে না। স্ত্রী তাহাতে সিদ্ধা হইলে মধ্যস্থতা অবলম্বন করে। ইহা প্রায়শঃ বলিতে ও শুনিতে পাওয়া যায়।।’১০।।
ইতি স্ত্রীপুরুষশীলাবস্থপননামক প্রকরণ।
ব্যাবর্তনকারণনামক প্রকরণ।
‘তাহার মধ্যে ব্যাবর্তনের কারণ গুলি কীর্তন করা যাইতেছে—স্বামীতে অনুরাগ; স্তন্যপায়ী শিশুর অপেক্ষা; বয়সের অতিক্রম; দুঃখের অভাব; বিরহে অনুপলব্ধি; অনাদরপূর্বক অভিযোগ করিতেছে, এই ভাবিয়া যদি তাহার ক্রোধের উদয় হয়; দুঃখগ্রস্ত চিত্ত বলিয়া সঙ্কল্পবর্জন, সত্বরই চলিয়া যাইবে, ভবিষ্যত কালের আশা করিতে পারা যায় না; তৎকালে অন্যত্র বিষয়ে মনের আসক্তি থাকাল আকার সম্বরণ করিতে না পারিয়া লোকের নিকট আমার গান করিয়া বেড়াইবে, এই জন্যে উদ্বেগ; মিত্রবর্গের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করিয়া তাহাদিগের অপেক্ষা প্রত্যেক বিষয়েই রাখা; ইহার অভিযোগ শুষ্ক, এই ভাবিয়া আশঙ্কা করা; স্বামী তেজস্বী, জানিতে পারিলে ভয়ঙ্কর অনর্থ করিবে, এই ভাবিয়া ভয় করা; মৃদুবেগা মৃগীর ভয় যে, পাছে এ চণ্ডবেগ বা সমর্থ অশ্বজাতীয়ই হইবে, এব্যক্তি নাগরক কলায় বিচক্ষণ, এই ভাবিয়া নায়িকার লজ্জা হয়, সে লজ্জা অথবা সখীরূপে এ পূর্বে উপচার দিয়াছে, এই জন্য লজ্জা; এ ব্যক্তি দেশ বা কাল বুঝে না, এজন্য নায়কের গুণ থাকিলেও দোষ দর্শন; নীচজাতীয় নায়কের সহবাসে সখীগণের নিকট গৌরবের হানি; আকারপ্রদর্শন করিলেও বুঝিতে পারে না, এজন্য অবজ্ঞা, হস্তিনীর পক্ষে মন্দবেশ শশ, আমার জন্য ইহার শারীরিক বা আর্থিক ক্ষতি না হয়, এই ভাবিয়া অনুকম্পা; নিজ শরীরে দৌর্গন্ধ্যাদি দর্শনে বৈরাগ্য; জানিতে পারিলে স্বজনেরা আমাকে বহিস্কৃত করিয়া দিবে, এই ভয়; এ ব্যক্তি পলিত বৃদ্ধ, এইজন্য অনাদর, স্ত্রী পতিব্রতা কিনা পরীক্ষার জন্য পতিকর্তৃক নিযুক্ত হইয়াছে বোধ হয়, এই সন্দেহ; এবং ধর্মের অপেক্ষা।–এই সকল কারণে স্ত্রী পুরুষকে ব্যাবর্তিত করিয়া থাকে। ইহা বিশেষ করিয়া জ্ঞাতব্য।।’১১।।
প্রতিবিধান
বলিতেছেন—
‘সেই
সকল কারণের মধ্যে যে কারণ
নিজের উপর লক্ষ্য করিবে,
তাহা অগ্রে
পরিবর্জন করিবে।।’১২।।
–নিজের উপর
কোন কারণ লক্ষ্য করিতে পারিলে,
বা স্ত্রীর
উপর কোন তাদৃশ কারণ লক্ষ্য
করিতে পারিলে, উপায়
দ্বারা তাহার বর্জন করিবার
চেষ্টা করিবে—
‘স্বামীতে
অনুরাগ, অপত্যের
অপেক্ষা, অতিক্রান্তবয়স্ত্ব,
দুঃখাভিভব,
ধর্মাপেক্ষা,
এই সকল স্ত্রীগত
আর্য্যত্বপ্রযুক্ত কারণের
পরিহারার্থ অনুরাগবৃদ্ধির
চেষ্টা করিবে—অর্থাত যাহাতে
নায়িকার অনুরাগ বৃদ্ধি হয়,
তাহার উপায়
কর্তব্য। অশক্তিজনিত কারণ
গুলির উপায় প্রদর্শন দ্বারা
শক্তিপ্রকাশ করিয়া উচ্ছেদের
চেষ্টা করিবে। গৌরবকৃত যে
সকল কারণ, তাহার
উচ্ছেদ অত্যন্তপরিচয়প্রদর্শন
করিয়া করিবে। অতি পরিচয় কমিলে
তাহার উপর মান গলিয়া যাইতে
থাকে। নায়িকার পরিভবকৃত
কারণ—শুষ্কাভিযোগী,
আদেশকালজ্ঞ,
পরিভবস্থান,
আকারিত হইলেও
বুঝিতে পারে না এবং পলিত,
এই প্রকার যাহা
আত্মনিষ্ঠ কারণ, পরিভব
প্রক্ষালন দ্বারা তাহার
ব্যত্যয় করিতে চেষ্টিত হইবে।
আর তজ্জন্য শাস্ত্রকলার
প্রকাশও করা উচিত। অবজ্ঞা
করিয়া অভিযোগ করিতেছে,
অসম্বৃতাকার
ও মিত্রাবিসৃষ্টভাব,
এই সকল আত্মগত
কারণ প্রণতি দ্বারা,
নিজের
কোমলত্বপ্রখ্যাপন দ্বারা
খণ্ডিত করিবার চেষ্টা করিবে।
তেজস্বী, চণ্ডবেগ,
সমর্থ,
শশ, মন্দবেগ,
বিদিত হইলে
বহিষ্কৃত হইব, ইত্যাদি
আত্মগত ভয়প্রযুক্ত কারণ গুলিতে
আশ্বাস দিয়া খণ্ডনের জন্য
প্রযত্ন করিবে—অর্থাৎ যাহা
হইলে আর নায়িকার ভয় না হয়,
তাহার প্রতিধান
করিবার জন্য সচেষ্ট হইবে।।’১৩।।
ইতি ব্যাবৃত্তিকারণনামক প্রকরণ।
স্ত্রীর নিকট সিদ্ধপুরুষনির্দেশ প্রকরণ।
এইরূপে শীলের অবধারণ করিয়া নিজের সিদ্ধতার বিষয়ে চিন্তা করিবে। তদ্ভিন্ন অভিযোগের সম্ভাবনা নাই। এই জন্য স্ত্রীর নিকট সিদ্ধপুরুষ কে কে, তাহার নির্ণয় করিবার জন্য স্ত্রীর নিকট সিদ্ধপুরুষনির্দেশপ্রকরণ আরম্ভ করা যাইতেছে—
‘এই পুরুষগুলি প্রায়শই স্ত্রীর নিকট সিদ্ধ বলিয়া পরিচিত।–কামসূত্রজ্ঞ, কথাখ্যানকুশল, বাল্যকাল হইতেই সংসৃষ্ট, প্রবৃদ্ধযৌবন, ক্রীড়ন কর্মাদি দ্বারা প্রাপ্তবিশ্বাস, যে যাহার কথা ভৃত্যের ন্যায় পরিপালন করিয়া থাকে, উচিতসম্ভাষণ, (যাহার সহিত হাস্য পরিহাস আদি অনায়াসে করিতে পারা যায়), যে যাহার অভিলাষসম্পাদন করে, অন্যের ভূতপূর্ব দূত, মর্মজ্ঞ, উত্তমা স্ত্রীকর্তৃক প্রার্থিত, প্রচ্ছন্নভাবে সখীর সহিত যে সংসৃষ্ট, সৌভাগ্য ও খ্যাতির বিনাশ না করিয়া যে ব্যবহার পরিচালন করিতে সক্ষম, যে যাহার সহিত একযোগে লালিত ও পালিত হইয়াছে, যে প্রতিবেশী কামশীল, যে পরিচারক কামশীল হইবে, ধাত্রেয়িকা যাহাকে পতিরূপে পরিগ্রহ করিয়াছে, যে গৃহে জামাতা নূতন হইয়াছে, যে ব্যক্তি বৃষ বলিয়া সিদ্ধপ্রতাপ ও ব্যবায়ী (লম্পট) বলিয়াও লব্ধপ্রতাপ, যে সাহসিক, যে শূর অকুতোভয়, যে গণিকার ভর্তা অপেক্ষা বিদ্যা, রূপ ও গুণে অতিশায়িত এবং যাহার বেশ ও উপাচার (ভোগ্যদ্রব্যাদি) মহার্হ, সে যদি কামশীল হয়, তবে যে কোন স্ত্রীর নিকট সিদ্ধ বলিয়া আখ্যাত হয় ও অতি অল্পসময়েই স্ত্রীকে করায়ত্ত করিতে পারে।।’১৪।।
ইতি স্ত্রীর নিকট সিদ্ধপুরুষনির্দেশ প্রকরণ।।
অযত্নসাধ্যস্ত্রীপ্রকরণ।।
‘যেমন নিজের
সিদ্ধতা দর্শন করিবে,
সেইরূপ কাহিনীর
সিদ্ধতাও দর্শন করিবে।
(ক)
অর্থাৎ
কোন্ স্ত্রী কি ভাবে অযত্নসাধ্যা,
তাহাও বিলক্ষণ
পর্য্যবেক্ষণ করিয়া স্থির
করিবে। (ক)
‘যে
সকল স্ত্রী অভিযোগেই সিদ্ধ
হয়, তাহাদিগকে
অযত্নসাধ্যা স্ত্রী কহে।
তাহাদিগের ভাবভঙ্গি কীর্তন
করা যাইতেছে;
যে
স্ত্রী দ্বারদেশে অবস্থান
করে, যে
প্রাসাদে আরোহন করিয়া
পুরুষদিদৃক্ষার বশবর্তিনী
হইয়া রাজমার্গে অবলোকন করে,
সতরুণ পুরুষগণ
যে প্রতিবেশ্যার গৃহে গোষ্টী
করিয়া থাকে, সেই
স্থানস্থ স্ত্রীগণের গোষ্ঠীযোগ
করিতে যে ভালবাসে, যে
স্ত্রী বাবাকে সততই পিতৃজ্ঞ
প্রেক্ষণ করে, নায়ক
কর্তৃক দীক্ষিতা হইলে,
যে স্ত্রী
পার্শ্বে বিকোলন করে,
অর্থাৎ আর কেহ
দেখিতে পাইয়াছে কি না,
এই ভাবিয়া
পার্শ্ব বিলোকন করে, যে
স্ত্রী দৌঃশীল্যাদি দোষ না
থাকিলেও সপত্নী আসিয়া উপস্থিত
হয়, যে
স্ত্রী ভর্ত্তা গুণবান্
হইলেও তাহার সহবাস ইচ্ছা করে
না, যে
স্ত্রী ভর্তাকে দেখিলেই দ্বেষ
প্রকাশ করে, পরিহার্য্য
বিষয়ে পরিহার যে করিতে ভালবাসে
না ও করে না, অপত্যহীনা
যে, যে
সর্বদা জ্ঞাতিগৃহে অবস্থান
করে, যাহার
অপত্য হইয়া বিপন্ন হয়,
যে নিজগৃহে যা
সখীগৃহে গোষ্ঠীতে যোগদান
করে, ও
স্ত্রী যাহার সহিত প্রীতি
সংস্থাপন করে, নটনর্তকাদির
ভার্য্যা, যে
বালিকার পতি বিয়োগ ঘটিয়াছে,
সেই বালবিধবা;
দরিদ্রা যদি
বহু উপভোগ পায়, জ্যেষ্ঠা
ভার্য্যার বহু দেবর থাকে,
যে নিজেকে
গৌরবান্বিত মনে করে, এবং
স্বামীকে হীনগৌরব বলিয়া মনে
করে, নিজেকে
কলাবতী বলিয়া অভিমান করে;
কিন্তু ভর্ত্তার
কলাবিষয়ে মূর্খতার জন্য সর্বদা
উদ্বিগ্ন থাকে সে তৎকুশল
পুরুষেরই অম্বেষণ করিতে থাকে।
যে নিজে অলুব্ধা; কিন্তু
স্বামী অতিরিক্ত লোভশীল বলিয়া
অন্যের আয়ত্তীকৃত হইতে ইচ্ছা
করে, (বাস্তবিক
ভাষ্যকার এইটি ভুলই করিয়াছেন।
এখানে বলা যাইতেছে—যাহার
ভর্ত্তা ও প্রার্থী উভয়ই
একগুণাবলম্বী হইলেও প্রার্থীজন
বিশেষ লোভ দেখাইতেছে,
অথচ সে স্ত্রীও
লোভের বশবর্ত্তিনী, সে
ক্ষেত্রে সে স্ত্রী, সে
প্রার্থীর অঙ্কশায়িনী অতি
অল্প আয়াসেই হইবে, ইহাতে
আর সন্দেহ কি?) যে
স্ত্রী কন্যাকালে যে নায়ক
কর্তৃক যত্নপূর্বক বৃতি
হইয়াছিল; কিন্তু
কোনও অলক্ষিত কারণে অন্যের
বিবাহিতা হইয়াছে; এখন
যদি সে স্ত্রী, সে
নায়কের অভিযোগ প্রাপ্ত হয়,
তবে সে বুদ্ধি,
শীল, মেধা,
প্রতিপত্তি
ও আচার ব্যবহার আদি সমান থাকায়
নিশ্চয়ই অল্পায়াসে সে নায়কের
অঙ্ক শায়িনী হইবে। স্বভাবতই
যে নায়কের প্রতি যাহার পক্ষপাত
পরিদৃষ্ট হয়, বিনা
অপরাধে যে স্ত্রী ভর্ত্তার
নিকট অবমানিত হয়, তুল্যরূপ
পত্নী দ্বারা যে ধিক্কৃতা,
যাহার পতি
চিরপ্রবাসী, যে
অকারণে স্ত্রীকে ঈর্ষ্যা
করিয়া থাকে, যাহার
শরীরের সংস্করণ কখনই সাধিত
হয় না—তাহার স্ত্রী,
চোক্ষ নামক
জাতিবিশেষের ভার্য্যা,
নপুংসক পত্নী,
দীর্ঘসূত্রের
(আলস্যপরায়ণের)
স্ত্রী,
কাপুরুষের
ভার্য্যা, কুব্জের
স্ত্রী, বামনের
পত্নী, বিরূপাকারের
স্ত্রী, মণিকারের
পত্নী, গ্রাম্য
স্ত্রী, যাহার
দেহে উৎকট দুর্গন্ধ তাহার
ভার্য্যা, যে
চিররোগী, তাহার
পত্নী এবং যে বৃদ্ধ, তাহার
স্ত্রী; এই
সকল স্ত্রীরা সামান্য অভিযোগেই
নায়কের অঙ্কশায়িনী হইতে পারে;
সুতরাং ইহারা
অযত্নসাধ্যা।।’১৫।।
‘এ বিষয়ে দুইটি
শ্লোক আছে—
স্বভাবতঃ
যে কোন উজ্জ্বল পুরুষকে দেখিলেই
স্ত্রীর ইচ্ছা আপনা হইতে
জন্মিয়া থাকে। সে ইচ্ছাকে
ক্রিয়া দ্বারা পরিবর্ধিত
করিতে হইবে। সেই বর্ধিত ইচ্ছাকে
আবার প্রজ্ঞাদ্বারা সংশোধিত
করিয়া সম্প্রয়োগের উপায়গুলির
আদর্শে উদ্বেগের সহিত (সাঙ্কেতিক
বুদ্ধি) মিলাইয়া
দিতে হইবে। তাহা হইলে,
সে ইচ্ছার
পূরণার্থে উপায় দেখাইয়া দিলে,
তখন স্থিরভাব
প্রাপ্ত সে ইচ্ছা কিছুতেই
বিনাশমুখে ধাবিত হইবে না।
তারপর, নিজের
সিদ্ধতা (আমি
ইহার পক্ষে সিদ্ধ কিনা)
এবং কামিনীর
ইচ্ছাসূচক ইঙ্গিতাকার চিহ্ন
সকল জানিয়া ও উন্নয়ন বা অনুমান
করিয়া যে রাগবর্দ্ধনাদি দ্বারা
ব্যাবৃত্তিকারণের অর্থাৎ
বাধাবিঘ্নের উচ্ছেদসাধন
করিতে পারে; সে
ব্যক্তি কামিনীগণের নিকট
সিদ্ধ আখ্যাত ও পরিগৃহীত
হয়।।’১৬।।
ইতি অযত্নাসাধ্যা
স্ত্রী নামক প্রকরণ।
ইতি
বাৎস্যায়নীয় কামসূত্রে
পারদারিকনামক পঞ্চম অধিকারণে
স্ত্রীপুরুষশীলাবস্থাপন,
ব্যাবর্তনকারণ,
স্ত্রীর নিকট
সিদ্ধপুরুষনির্দেশ ও অযত্নাসাধ্যা
স্ত্রী নামক প্রকরণের প্রথম
অধ্যায় সমাপ্ত।।১।।
———————————–
*প্রায়শঃ
দেখিতে পাওয়া যায় যে,
কোন বিশেষ
প্রতিবন্ধক কারণ প্রযুক্ত
বিবাহিত স্ত্রীর অপ্রাপ্তিতে
এই দশা গুলি পতিরও ঘটিয়া থাকে।