৬.০৯ ঔপরিষ্টক (মৌখিক যৌনাচার)

ষষ্ঠ ভাগ – নবম অধ্যায়

পূর্বে চারিপ্রকার নায়িকার কথা বলিয়া, তদ্বিষয়ে আলিঙ্গনাদি-পুরুষায়িতান্ত সমস্ত ব্যাপার কথিত হইল। সেই স্থলেই কথিত হইয়াছে—তৃতীয়া প্রকৃতি পঞ্চমী নায়িকা, ইহা কেহ কেহ বলেন; সুতরাং তদ্বিষয়ে এখন ঔপরিষ্টক-নামক প্রকরণ আরম্ভ করা যাইতেছে।

তৃতীয়া প্রকৃতি দ্বিবিধ—স্ত্রীরূপিণী এবং পুরুষরূপিণী।।’১।।
স্ত্রীসংস্থান—স্তনাদির উদ্গম হয় বলিয়া, সেই ক্লীবকে স্ত্রীরূপিণা এবং পুরুষসংস্থান—শ্মশ্রুলোমাদি জন্মে বলিয়া, সেই ক্লীবকে পুরুষরূপিণী তৃতীয়া বলা হইয়াছে; কারণ, ঐ উভয়কে অবলম্বন করিয়া, এই ঔপরিষ্টক প্রকরণ আরম্ভ করা হইয়াছে।।১।।

তাহার মধ্যে স্ত্রীরূপিণী স্ত্রীর বেশ, আলাপ, লীলামন্থরাদি গমন, হাবাদি ভাব, কোমলতা, ভীরুত্ব, মুগ্ধতা—ঋজুতা বা সরলতা, অসহিষ্ণুতা—প্রহণনবাতাতপাদি সহিতে অক্ষমতা এবং লজ্জার অনুকরণ করিবে।।’২।।

তাহার মুখে ক্রিয়মাণ জঘনকর্মকে ঔপরিষ্টক বলিয়া থাকে।।’৩।।
সাধনদ্বারা সম্বাধে যে কর্ম করিতে হয়, তৃতীয়া প্রকৃতির মুখে সেই কর্ম করিবে, তাহাকে সেই ঔপরিষ্টক নামে আচার্যগণ বলিয়া থাকেন।।৩।।

তাহার ফল কি, তাহা বলিতেছেন—

সেই স্ত্রীরূপিণী, সেই রত ব্যাপার হইতেই আভিমানিক প্রীতি ও বৃত্তির (জীবিকার) লাভ করিবে এবং বেশ্যার ন্যায় চরিত প্রকাশ করিবে। ইহা স্ত্রীরূপিণীর পক্ষে বিহিত।।’৪।।

পুরুষরূপিণীকে অধিকার করিয়া বলিতেছেন—

পুরুষরূপিণি তৃতীয়া প্রকৃতি নিজের আভিমানিক প্রীতিকে প্রচ্ছন্ন রাখিয়া, পুরুষকে লাভ করিবার জন্য সম্বাহকভাবে অঙ্গমর্দনকর্ম দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করিবে। সম্বাহনকালে নিজগাত্র দ্বারা নায়কের ঊরুদেশ আলিঙ্গন করিয়াই যেন মর্দন করে। ক্রমশ পরিচয় দীর্ঘ করিয়া লইয়া, জঘনের সিহিত ঊরুমূল পর্যন্ত স্পর্শ করিবে। ক্রমশ ক্রমশ যখন নায়কের সাধনে রাগসঞ্চার হইয়াছে—বুঝিবে, তখন পাণিমন্থন দ্বারা সাধনকে পরিঘট্টিত করিবে। তারপর বলিবে, তোমার মত চপল তো আর একবারে দেখি না, তোমার ঊরু স্পর্শ করিয়াছি, আর স্তব্ধলিঙ্গ হইয়াছ। এই কথা বলিয়াই হাসিবে। ক্রোধ প্রকাশ করিবে না। রাগোৎপাদন করিয়া দিলে এবং বিকারভাব প্রত্যক্ষত উপলব্ধ হইলেও সে ব্যক্তি যদি কর্মাথ প্রেরিত না করে, এই যদি হয়, তবে স্বয়ংই উপক্রম করিবে। পুরুষ যদি কর্মার্থ প্রেরিত করে, তবে—‘আমি ইহা পারিব না’—এইরূপে সহসা সেই সেকথা স্বীকার না করিবার জন্য কৃত্রিম বিবাদ বাধাইয়া দিবে। পরে অতি কষ্টেই স্বীকার করিবে।।’৫।।

তাহাতে কর্ম আট প্রকার, ক্রমশ মিলাইয়া-মিলাইয়া প্রয়োগ করিবে। নিমিত, পার্শ্বতোদষ্ট, বহিঃসন্দংশ, অন্তঃসন্দংশ, চুম্বিতক, পরিমৃষ্টক, আম্রচুম্বিতক এবং সঙ্গর।।’৬।।

তাহারও নিজের অভিপ্রায়ে নহে—এই কথা বলিতেছেন—

তাহার মধ্যে এক একটি প্রয়োগ করিয়া, বিরামের ইচ্ছা দর্শিত করিবে। (কৌতুহল বৃদ্ধিই তাহার ফল)।।’৭।।

নায়কও পূর্বকর্ম সমাচরিত হইলে, তারপর অপর কর্ম করিবার জন্য নির্দেশ করিবে। সেটি সিদ্ধ হইলে পরে, তার পরটি—এইরূপে নির্দেশ করিতে থাকিবে।।’৮।।
নিজে যদি উপক্রম করিয়া থাকে, তবে স্বীয় অভিপ্রায়ানুসারে কর্মসম্পাদন করিবে।।৮।।

তাহা দুই প্রকার, বাহ্য ও আভ্যন্তর। তাহার মধ্যে বাহ্য কি, তাহা বলিতেছেন—

অবনমনবারণার্থ হস্ত দ্বারা গৃহীত, উভয় ওষ্ঠের উপরি বিন্যস্ত, বর্তুলীকৃত ওষ্ঠ দ্বারা চাপিয়া ধরিয়া মুখ কাঁপাইবে, তাহাকে নিমিত কহে।।’৯।।

সাধনের অগ্রভাগ মুষ্টিগ্রহণে ধরিয়া ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা চাপিয়া পার্শ্বভাগে দন্তব্যতীত কামড়াইবে এবং বলিবে, ‘এই হইল’ এই বলিয়া নায়কবরের সান্ত্বনা করিবে। ইহাকে পার্শ্বতো-দষ্ট বলা যায়।।’১০।।

পুনর্বার কর্মার্থ প্রেরিত হইলে, ওষ্ঠদ্বয় সম্মীলিত করিয়া, সাধনের অগ্র মধ্যে প্রবেশ করিয়া, সেই সম্মীলিত ওষ্ঠ দ্বারা চাপিয়া ধরিয়া আকর্ষণ করিয়া চুম্বন করিবে। ইহাকে বহিঃসন্দংশ কহে।।’১১।।

সেইরূপ প্রার্থনায় সাধনাগ্র কিঞ্চিৎ অধিক পরিমাণে অন্তরে প্রবেশ করাইবে দিবে। নায়কাও ওষ্ঠ দ্বারা অগ্রভাগকে নিষ্পীড়িত করিয়া নিষ্ঠীবন (বহিষ্করণ) করিবে। ইহাকে অন্তঃ-সন্দংশ বলা যায়।।’১২।।

করাবলম্বিত সাধনের অগ্রভাগ অধরৌষ্ঠ চুম্বনের ন্যায় গ্রহণ করিবে। ইহাকে চুম্বিতক কহে।। ’১৩।।

সেইরূপ করিয়া জিহ্বাগ্র দ্বারা চারদিকে ঘট্টন এবং অগ্রভাগে স্রোতঃস্থানে জিহ্বাগ্র দ্বারা তাড়ন করাকেই পরিমৃষ্টক কহে।।’১৪।।

তথাভূত অর্ধপ্রবিষ্ট সাধনাগ্রকে নায়কের রাগবশত ওষ্ঠ ও জিহ্বাগ্র দ্বারা নির্দয়ভাবে অত্যন্ত অবপীড়ন করিয়া মধ্যেই ছাড়িবে, আবার সেইরূপ করিবে। ইহাকেই আম্রচুষিতক কহে।।’১৫।।

ইহার রতি প্রত্যাসন্ন, ইহা বুঝিয়া বিসৃষ্টিকালপর্যন্ত জিহ্বাব্যাপার দ্বারা পীড়ন করিয়া ছাড়িয়ে দিবে, আবার সেইরূপ পীড়ন করিয়া ছাড়িয়ে দিবে। ইহাকে সঙ্গর বলে।।’১৬।।

অনুরাগের মৃদুমধ্যাধিমাত্রতাভেদে স্তনন ও প্রহণ্নের প্রয়োগ হইতে পারে। ইহাকে ঔপরিষ্টক ব্যাপার কহে। ঔরিষ্টক ব্যাপার এই পর্যন্তই।।’১৭।।

দেশের প্রকৃতি অনুসারে, যথায় ঔপরিষ্টক ব্যবহারের কিছুই প্রয়োজন নাই—তথায়ও তাহার প্রয়োগ হইতে দেখা যায়, সুতরাং তাহাও বক্তব্য—

কুলটা, স্বৈরিণী, পরিচারিকা এবং সম্বাহিকারা ইহার প্রয়োগ করিয়া থাকে।।’১৮।।

আচার্যগণ বলিয়া থাকেন—ইহা কর্তব্যই নহে; কারণ, ইহা ধর্মশাস্ত্রে নিষিদ্ধ হইয়াছে বেওং সদ্ব্যক্তিরা ইহার ভুয়সী নিন্দা করিয়া থাকেন। তদ্ভিন্ন আবার যখন ইহাদিগের মুখসংস্পর্শ করিতে হইবে, তখন নিজেরই ঘৃণা উপস্থিত হইবে।।’১৯।।

বাৎস্যায়ন বলেন—যাহারা বেশ্যাকে কামনা করে, তাহাদিগের পক্ষে এটি দোষের নহে; কিন্তু পাণিগৃহীতার সংসর্গে ইহা নিশ্চয়ই পরিহার্য—কারণ উক্ত দোষ হইতে পারে।।’২০।।
বশিষ্ঠ বলিয়াছেন—পাণিগৃহীতার মুখে মেহন করিতে নাই। কুলটা প্রভৃতি স্বাধীনারা বেশ্যাই। তাহাদের সংসর্গ যে করিবে, তাহার আবার দোষ কি হইতে পারে?২০।।

অতএব যাহারা ঔপরিষ্টক কর্মের আচরণ করে, তাহাদিগের (সেই সকল স্ত্রীদিগের) সহিত প্রাচ্যগণ সংসর্গমাত্রই করেন না।।’২১।।
প্রাচ্য—অঙ্গদেশের পূর্ববর্তীদেশবাসী। ভাগলপুর ও ত্তসন্নিহিত প্রদেশের নাম অঙ্গ। চম্পানগর উহার রাজধানী। কর্ণ এই অঙ্গদেশের অধীশ্বর ছিলেন।।২১।।

অহিচ্ছত্র-দেশোদ্ভূত জনগণ বেশ্যাদিগের সংসর্গই করেন না। উৎকট রাগবশত তাহাদিগের সহিত সংসর্গ করিলেও তাহাদিগের মুখকর্ম চুম্বনাদি করেন না।।’২২।।
আর্যাবর্তের অন্তঃপাতী পাঞ্চালরাজ্যের উত্তর অর্ধাংশের নাম অহিচ্ছত্র। পঞ্চালরাজ্য প্রথমে দিল্লীনগরীর উত্তর ও পশ্চিম দিকে হিমালয়পর্বত অবধি চম্বলনদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পরে দ্রোণাচার্য, অর্জুনের সহায়তায় পঞ্চালের রাজা দ্রুপদকে পরাজিত করিয়া ঐ রাজ্য দুই অংশে বিভক্ত করেন। গঙ্গার উত্তরকুলবর্তী অর্ধাংশ স্বীয় অধীনে রাখিয়া গঙ্গার দক্ষিণের অর্ধাংশ চম্বলনদী পর্যন্ত, দ্রুপদরাজকে প্রত্যর্পণ করেন। ঐ উত্তর অর্ধাংশের নাম অহিচ্ছত্র। অহি = খল, তাহার ছত্র = রাজচ্ছত্র যথায় বিরাজ করে, তাহাকে অহিচ্ছত্র বলে। এটি যৌগিক নাম, কারণ, খলতা প্রকাশ করিয়াই দ্রোণাচার্য তথায় ছত্রগ্রহণ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। অহিচ্ছত্রা নাম্নী কান্যকুব্জপ্রসিদ্ধাও একটি পুরী আছে; কিন্তু তথায় তাদৃশ ব্যবহার গর্হিত বলিয়া বিখ্যাত নহে; সুতরাং ঐ পূর্বোক্ত প্রদেশই আচার্যের অভিপ্রেত বলিয়া বোধ হয়।।২২।।

সাকেত-দেশবাসীরা নিরপেক্ষভাবে সংসর্গ করে।।’২৩।।
বেশ্যার সম্প্রয়োগ ও মুখকর্মে তাহাদিগের শৌচাশৌচবিকল্পজ্ঞান কিছুই নাই। যেমন পায়, তেমনই করে। বিচার-আচার কিছুই করে না। অযোধ্যার অপর নাম সাকেত। সেই অযোধ্যাদেশবাসীরাই সাকেতিক নামে অভিহিত হয়।।২৩।।

নাগরকগণ স্বয়ং ঔপরিষ্টক কর্মের আচরণ করেন না; (কিন্তু বেশ্যাদিগের কর্তৃক প্রযোজিত হইলে, তাহার আচার করেন, তবে আর কখন তাহারা বদনকর্ম-চুম্বন করেন না, ইহা প্রতীত বিষয়)।।’২৪।।

সুরসেনদেশবাসীরা নিঃশঙ্কচিত্রে সমস্তই প্রয়োগ করিয়া থাকেন।।’২৫।।
শূরসেন—মথুরা। কৌশাম্বী নগরীর দক্ষিণকূলে বিস্তৃত যে ভূভাগ, তাহাকে শূরসেন দেশ কহে। কৌশাম্বী = বৎসরাজনগরী, প্রয়াগ বা মগধের অন্তর্বর্তী নগরবিশেষ। তাহারই দক্ষিণ দিকে অবস্থিত দেশ শূরসেন।–এই কথা ভাষ্যকার বলেন।।২৫।।

তাঁহারা এই কথা বলেন—স্ত্রীগণের স্বভাব, শৌচ, আচার, চরিত্র, বিশ্বাস এবং বাক্যে কে শ্রদ্ধা করিতে পারে? বাস্তবিক ইহাদিগকে কেহই বিশ্বাস, বা প্রত্যয় করিতে পারে না। স্বভাবতই ইহারা মলিনবুদ্ধিসম্পন্না হইয়া থাকে, তথাপি পরিত্যাজ্যা নহে। অতএব ইহাদিগের শৌচের বিষয় অনুসন্ধান করিতে হইলে, স্মৃতিকারগণের অভিপ্রায়ানুসারেই অম্বেষণ করিয়া দেখিতে হইবে।–স্মৃতিকার বলেন—‘গাভীদোহনকালে বৎসের মুখ শুচি। মূগগ্রহণকালে কুক্কুরের মুখ শুচি।–সুতরাং ইহাই শেষ নিষ্কর্ষ যে, রতিসঙ্গমকালে স্ত্রীমুখে কোনরূপ অশৌচের আরোপ করিতে পারা যাইবে না। সেইজন্য সমস্তই প্রয়োগ করিতে পারা যায়।।’২৬।।

বাৎস্যায়ন বলেন—এ বিষয়ে সকলেই এক মত হইতে পারেন নাই। দেখিতে পাওয়া যাইতেছে, সমস্ত স্ত্রীমুখই যে শুচি, একথা শিষ্টগণ স্বীকার করেন না। আর ঐ স্মৃতিবাক্য কেবল পত্মীমুখের শৌচবিধায়ী; একথা স্বীকার করিলেও ঐ বাক্যের সম্মান নষ্ট হয় না; বরং উদ্দেশ্য পালিতই হয়। অতএব বেশ্যামুখও শুচি, ইহা স্বীকার করা যায় না। তবে দেশ ও নিজের প্রবৃত্তি এবং বিশ্বাস অনুসারে শৌচাশৌচ বিচার করিয়া, যেমনটি ভালো বোধ হইবে, তদনুরূপ প্রবর্তিত হইবে।।’২৭।।

এই স্ত্রীবিষয়ক অসাধারণ ঔপরিষ্টক, যাহা কথিত হইল, ইহাতে স্ত্রীরই কর্তৃত্ব অধিক। এখন পুরুষবিষয়ক ঔপরিষ্টকের কথা বলিতেছেন—

এ বিষয়ে কতকগুলি শ্লোক আছে—

উজ্বলকুন্তধারী পরিচারক যুবকগণ কোন কোন মানবের ঔপরিষ্টক সাধন করিয়া থাকে।।’২৮।।
এ বিষয়ে কথিত হইয়াছে যে, যাহাদিগের শ্মশ্রু ও গুম্ফ উঠে নাই, বিশ্বাসযোগ্য ও অলঙ্কারধারী এরূপ চেটগণকে ঔপরিষ্টক কর্মে নিয়োগ করিবে। কাহারা? যাহাদিগের রাগ মন্দ, বয়স গত হইয়াছে, অত্যন্ত ব্যায়ত এবং স্ত্রীর নিকটে অলব্ধবৃত্তি—তাহারাই প্রয়োগ করিবে।।২৮।।

ইহারো অসাধারণ; কারণ, একজনই কর্তা। যেখানে দুইজনই কর্তা সেখানেই সাধারণ; ইহাই বলিতেছেন—

সেইরূপ কোন কোন নাগরক পরস্পর পরস্পরের সুখবাঞ্ছা করিয়া মিত্রতাবশত পরস্পর পরিগ্রহ করে।।’২৯।।

এই ঔপরিষ্টক দুই প্রকার, ক্রমিক ও যুগপৎ। এক একের করিয়া দিলে, সে অপরের করিয়া দেয়, ইহা ক্রমিক। আর একই কালে উভয় উভয়ের করিলে, তাহাকে যুগপৎ বলে। স্ত্রীগণও এইরূপ ঔপরিষ্টক করিয়া থাকে।–এ বিষয়ে কথিত হইয়াছে—

অন্তঃপুরগত কোন কোন স্ত্রীগণ পরপুরুষ না পাইয়া, পরস্পর পরস্পরের সম্বাধে ‘মুখচাপল’ বা ঔপরিষ্টক করিয়া থাকে।।’২৭।।

সেইরূপ পুরুষেরাও স্ত্রীতে এই কর্ম করিয়া থাকে। তাহার প্রকারের বিধান মুখচুম্বনের ন্যায় জানিবে।।’৩০।।
কন্যাচুম্বনে নিমিতাদি দ্বারা, অন্যত্র সমাঙ্গগ্রহণ দ্বারা।।৩০।।

পার্শ্বসম্পুটে শায়িত হইয়া ঊরুমধ্যে পরস্পরের মস্তক রাখিয়া যে একই কালে স্ত্রী ও পুরুষ, উভয়ের মুখ দ্বারা সম্প্রযুক্ত হয়, সেই কামকে কাকিলনামে অভিহিত করা যায়।।’৩১।।
ইহাতে পরিচারক কর্তা হইলে অসাধারণ; কিন্তু নায়ক কর্তা হইলে সাধারণও সম্ভব।।৩১।।

পার্শ্বসম্পুটে অবস্থিত স্ত্রীপুরুষের ঔপরিষ্টক ব্যাখ্যাত হইল। তাহার সাধারণ ও অসাধারণমধ্যে অসাধারণই শ্রেয়ঃ। তাহাতেও আবার পরিচারকবিষয়ক খলসংসর্গাদিই পরিশুদ্ধ, ইহা দেখাইতেছেন—

অতএব নায়কগুণযুক্ত, লোকযাত্রাকুশল, দানশূর ও অভিজনাদিসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে পরিত্যাগ করিয়া বেশ্যাগণ নীচদাস-হস্তিপকাদিতেই অধিক অনুরাগ প্রকাশ করে।।’৩২।।

বেশ্যাদিগের সহিত মিলিত হইয়া কোন ব্রাহ্মণ, বা যে মন্ত্রী রাজ্যভার ধারণ করিয়া আছেন, কিংবা যিনি লোকে বিশ্বাসী, তিনি এই ঔপরিষ্টক করাইবেন না।।’৩৩।।

ঔপরিষ্টকবিষয়ে শাস্ত্র আছে বলিয়াই যে তাহার প্রয়োগ করিতে হইবে, তাহা নহে; কারণ, শাস্ত্র পাত্রানুসারে কর্তব্যবিষয়ক সমস্ত বিষয়েরই উপদেশ করিয়াছেন; কিন্তু প্রয়োগ কদাচিৎ কেহ করিয়া থাকে; সুতরাং শাস্ত্র ব্যাপী ও প্রয়োগ একদেশী—ইহা জানিয়া কার্য করিবে।।’৩৪।।
শাস্ত্রার্থ ব্যাপী।–শাস্ত্রার্থ ব্যাখ্যা করিতে হইলেই তাহার মধ্যে বিহিত, অবিহিত, প্রতিষিদ্ধ এবং অপ্রতিষিদ্ধ—সকল বিষয়েরই বিবেচনা করিতে হইবে, এরূপ সিদ্ধান্ত করা যুক্তিসঙ্গত নহে। সেইরূপ যাহা অন্যের পক্ষে বিহিত, অথচ আর কাহারও পক্ষে প্রতিষিদ্ধ; তাহার অনুষ্ঠানও শাস্ত্রে কথিত হইয়াছে বলিয়া, যাহার পক্ষে প্রতিষিদ্ধ, তাহারও যে তাহার অনুষ্ঠান করিতে হইবে, ইহা কিরূপে প্রমাণীকৃত হইবে? তাই কথিত হইয়াছে, শাস্ত্রার্থ ব্যাপী, অর্থাৎ কামশাস্ত্র ব্যাখ্যাকালে, যাহা কিছু তাহার অঙ্গ বলিয়া যথায় প্রসিদ্ধ পাওয়া গিয়াছে, তাহার প্রয়োগপরিশুদ্ধির জন্য বিবেচনা করা হইয়াছে। সেই সমস্ত প্রয়োগের যে অংশটুকু শিষ্টেরা পরিগৃহীত করিয়াছেন, তাহা নির্বিসম্বাদে পরিগ্রহ করিতে পারে; কিন্তু যাহা কোনও একটি দেশবিশেষের মধ্যে প্রচলিত দেখিয়া প্রয়োগপরিশুদ্ধ্যর্থ গৃহীত হইয়াছে, তাহার গ্রহণ ত সকলেই করিতে পারে না। তাহা হইলে দেশবিশেষের উল্লেখের কোনই আবশ্যক থাকে না। অতএব যাহা শিষ্টপরিগৃহীত ও শাস্ত্রানুমোদিত, তাহারই পরিগ্রহ করিতে হইবে। আর যাহা বিশেষভাবে কথিত হইয়াছে, তাহার পরিগ্রহ সেই সেই স্থলেই জানিতে হইবে। এই জন্য বলা হইয়াছে—প্রয়োগ নিতান্তই অল্পমাত্র থাকায়, প্রয়োগ অল্পই; কিন্তু সেই প্রয়োগের পরিশুদ্ধার্থ প্রস্তাবিত হওয়ায়, সমস্ত প্রয়োগ-ব্যাপার।।৩৪।।

এইরূপ ন্যায় অন্যত্রও দেখিতে পাওয়া যায়—

বৈদ্যকশাস্ত্রে কুক্কুরমাংসের রস, বীর্য ও বিপাক কথিত হইয়াছে বটে; কিন্তু তাই বলিয়া কি সেই কুক্কুরমাংস বিচক্ষণ পণ্ডিতের ভক্ষণীয়?।।’৩৫।।
যদি তাহাই হয়, তবে যাহা শিষ্টপরিগৃহীত নহে, তাহার আবার শাস্ত্রে পরিগ্রহ কি জন্য?

কেহ কেহ তাদৃশ পুরুষও আছে, তাদৃশ কোন কোন দেশও আছে এবং কালও তাদৃশ আছে, যাহাতে প্রয়োগগুলি নিরর্থক না হয়।।’৩৬।।
তাদৃশ পুরুষ, তাদৃশ দেশে, তাদৃশ কালে সিএ সকল প্রয়োগের ব্যবহার করিতে পারিবে। তদ্দ্বারাই শাস্ত্রের এই আয়াসস্বীকার সফল হইবে। শূচি ও অশূচিতে নির্বিকল্প শুরসেনাদিদেশের পুরুষ, লাট ও সিন্ধু প্রদেশ দেশ এবং ঔপরিষ্টকস্বভাব কালও আছে, যখন স্ত্রীর অধীনে থাকিয়া জীবিকাযাত্রা নির্বাহ করিতে হয়; সুতরাং সেই অবস্থায় তখন তাহার মুখচাপক কর্ম মুখচুম্বনবৎ বিধেয়, অন্যাবস্থায় নহে।।’৩৬।।

অতএব দেশ, কাল, প্রয়োগ, শাস্ত্র এবং নিজের যোগ্য কি না; তাহা নিজেকে ভাল করিয়া দেখিয়া, প্রয়োগব্যবহার করিবে।।’৩৭।।
যেহেতু এইরূপ—সেইজন্য সাধারণ বা অসাধারণ সেই ব্যাপারের যথাযোগ্য দেশ ও কাল দেখিয়া প্রয়োগ ও উপায়, এতদুভয়ের ব্যবহার করিবে।।৩৭।।

অতএব, পুরুষের পক্ষে ইহা নিয়ম নহে, ইহা বলিতেছেন—

এই মুখচাপলটি অত্যন্ত নির্জনপ্রদেশসাধ্য ব্যাপার। সকলেরই মন অত্যন্ত চঞ্চল। বিশেষত বয়সযুক্ত মন আরও চঞ্চল। অতএব কে কোন্‌ সময়ে কোথায় কি করিবে, তাহা কে জানিতে সক্ষম হইবে?’৩৮।।

ইতি শ্রীমদ্‌-বাৎস্যায়নীয়কামসূত্রে সাম্প্রয়োগিকনামক ষষ্ঠ-অধিকরণে ঔপরিষ্টকনামক নবম অধ্যায় সমাপ্ত।।৯।।



Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2