৬.০৪ নখরদনজাতি

ষষ্ঠ ভাগ – চতুর্থ অধ্যায়

পুর্বকথিতানুরূপ চুম্বনদ্বারা নায়িকা নায়কের রাগদীপন হইবে। সেই বর্ধিত অনুরাগকে আরও দ্বিগুণ বর্ধিত করিবার জন্য নখরদনচ্ছেদ্য প্রয়োগ করা উচিত। সেই জন্য নখরদনচ্ছেদ্যজাতি নামক চতুর্থ অধ্যায় আরম্ভ করা যাইতেছে।–নখরদনচ্ছেদ্যজাতি শব্দের অর্থ নখবিলেখনপ্রকার।

অর্থাৎ কি প্রকারে কোথায় নখবিলেখন করিলে রাগের বৃদ্ধি হইবে তাহাই এই অধ্যায়ে বলা যাইতেছে—

নখবিলেখন কি?
রাগের বৃদ্ধি হইলে, নখদ্বারা যে সংঘর্ষণ-ব্যাপার করা যায়, তাহাকে নখবিলেখন বলে।।’১।।

তাহার প্রয়োগ কোন অস্ময়ে এবং কাহার উপর কর্তব্য, তাহা নির্ণয় করিতেছেন–
প্রথম সমাগমকালে প্রবাস হইতে প্রত্যাগমন করিলে, প্রবাসে গমনকালে, ক্রুদ্ধ-নায়িকা প্রসন্ন হইলে এবং মদ্যপানাদিদ্বারা মত্ত নায়িকার উপরেই তাহার প্রয়োগ কর্তব্য। যাহারা চণ্ডবেগ নহে, অর্থাৎ মন্দবেগ ও মধ্যবেগ, তাহাদিগের উপর তাহার প্রয়োগ নিত্য নহে; কদাচিৎ কর্তব্য।।’২।।
মন্দবেগ ও মধ্যবেগ নায়ক-নায়িকার পক্ষে নখবিলেখনের প্রয়োগ নিত্য কর্তব্য নহে; কিন্তু প্রথমসমাগমাদিকালে ও ক্রুদ্ধপ্রসন্না, মত্তা নায়িকার এবং ক্রুদ্ধপ্রসন্ন ও মত্ত নায়কের অঙ্গে কর্তব্য। চণ্ডবেগনায়ক-নায়িকার নিত্য প্রয়োজন।।২।।

সেইরূপ দশনচ্ছেদ্যেরও প্রকৃতি-যোগ্যানুসারে প্রয়োগ কর্তব্য।।’৩।।
রাগবৃদ্ধি হইলে যে সংঘর্ষণ-ব্যাপার দশনদ্বারা সম্পাদিত হয়, তাহাকে দশনচ্ছেদ্য কহে। রাগের মন্দতা থাকিলে দশনগ্রহণ মাত্র কর্তব্য। প্রকৃতিস্বরূপানুসারে যদি সেই নায়ক ও নায়িকা অচণ্ডবেগ হয় ও সহ্য করিতে না পারে, তবে তাহার প্রয়োগ অকর্তব্য।।৩।।

নখবিলেখন রূপতঃ অষ্টবিধ। যথা—আচ্ছুরিতক, অর্ধচন্দ্র, মণ্ডল, রেখা, ব্যাঘ্রনখ, ময়ূরপদক, শশপ্লুতক এবং উৎপলপত্রক।।’৪।।
রূপতঃ—আকৃতি অনুসারে। নখবিলেখন দ্বিবিধ—রূপবৎ ও অরূপবৎ। তাহার মধ্যে যে কাহারও আকারের অনুকরণ করে, তাহাকে রূপবৎ বলে। যেমন আচ্ছুরিতকাদির আকার দেখিতে পাওয়া যায়। তাহার লক্ষণ পরে বলিবেন। আর তাহা কাহারও আকারের অনুকরণ করে না, তাহা অরূপবৎ। উহা ত্রিবিধ—মৃদু, মধ্য ও অতিমাত্র।।৪।।

কক্ষদ্বয়, স্তনদয়, গলদেশ, পৃষ্ঠদেশ, জঘনস্থল (ঊরুস্থলের উপরিভাগ), ঊরুযুগল—নখবিলেখনের স্থান।।’৫।।
এই মতটিই আচার্যের। জঘনশব্দ দ্বারা কটি, তদেকদেশ, তৎপুরোভাগ এবং নিতম্বস্থলও বুঝিতে হইবে।।৫।।

সুবর্ণনাভ বলেন—যে নায়ক-নায়িকার রতিচক্র প্রবর্তিত হইয়াছে, তাহাদিগের পক্ষে আর স্থান-অস্থান কিছুই নাই।।’৬।।
যদ্যপি সুবর্ণনাভ প্রবৃদ্ধরতিচক্রের পখে স্থানাস্থান নির্ণয় করিতে নিজের পরাঙ্মুখতা সাধারণ্যে প্রকাশ করিয়া ফেলিলেন, তথাপি যে শাস্ত্রকার রূপবৎ নখদশনচ্ছেদ্যের স্থান নির্ণয় করিয়াছেন, তাহার গূঢ় কারণ আছে। দেখা যাক, নায়ক-নায়িকার সমবস্কা বা সমবয়স্কেরা প্রায়ই অঙ্গে কোন রেখাঙ্কিত চিহ্ন দেখিলে রজনিজ-কেলির কথা তুলিয়া নায়ক ও নায়িকার রাগদীপন করিয়া থাকে; সুতরাং সুবর্ণ্নাভের ন্যায় তত্ত্ববিচারপরায়ণ হইয়া এতাদৃশ মহাভীষ্টসিদ্ধিকর একটি বিশেষ ব্যাপারের প্রকৃতথ্যনির্ণয়-পক্ষে বৈরাগ্য প্রদর্শন করা একান্ত যুক্তিবিরুদ্ধ।।৬।।

ছেদ্যবিধান নখরাধীন; সুতরাং তাহার আশ্রয়, কল্পনা, গুণ ও প্রমাণ অনুসারে অনুষ্ঠানবিধির প্রদর্শন করিতেছেন–
চণ্ডবেগ নায়ক-নায়িকার বামহস্তের নখগুলি নবীনাগ্রসম্পন্ন ও দুই-তিন শিখর (করাতের দাঁতের ন্যায়)-বিশিষ্ট হইবে।।’৭।।
ইহার বিপরীত হইবে মন্দবেগ ও মধ্যবেগ নায়ক-নায়িকার। তন্মধ্যে ঈষৎপ্রমৃষ্টাগ্র ও শূকাকৃতি (শস্যাদির সূক্ষ্মাগ্রকার) মধ্যবেগ নায়ক-নায়িকার এবং প্রমৃষ্টাগ্র ও অর্ধচন্দ্রাকৃতি হইবে মন্দবেগ নায়ক-নায়িকার। এইরূপে তিনপ্রকার নখর-কল্পনা অবশ্য কর্তব্য।।৭।।

নখের মধ্যে বিবিধবর্ণীয় রেখা থাকিবে। তাহার পৃষ্ঠ সমান—নখের পৃষ্ঠ নিম্ন ও উন্নত হইবে না, উজ্জ্বল থাকিবে—বিষ্ফুটিত হইবে না (চটা-ওঠা না হয়), বর্দ্ধনশীল, মৃদু, অর্থাৎ কোমল ও স্নিগ্ধদর্শন।–এইগুলি নখের গুণ হইবে।।’৮।।

গৌড়বাসীদিগের নখ দীর্ঘ, হস্তশোভী এবং দর্শনে স্ত্রীগণের চিত্তাগ্রাহী হইয়া থাকে।।’৯।।
নখচ্ছেদ্য করিতে অক্ষম বলিয়া কেবল হস্তশোভাসম্পাদন করিয়া থাকে। গৌড়বাসীদিগের এই দুইটি মাত্র গুণ; কারণ, গৌড়বাসীগণ প্রায়শঃ স্পর্শসুখকারী কোমলপ্রকৃতি নখচ্ছেদ্যে অপটু।।৯।।

দাক্ষিণাত্যগণের নখ হ্রস্ব, কর্মসহিষ্ণু এবং সেসকল অর্ধচন্দ্রাদি বিকল্প কথিত হইয়াছে, উহার প্রয়োগবিষয়ে প্রয়োক্তার ইচ্ছানুসারে রেখাপাত করিতে সক্ষম।।’১০।।
হ্রস্র বলিয়া রেখাঙ্কনাদি সহিতে পারে, কিন্তু ভাঙিয়া যায় না। দাক্ষিণাত্যগণ খররাগসম্পন্ন ও কঠোরপ্রকৃতি নখচ্ছেদ্য পরিপটু।।১০।।

মহারাষ্ট্রকগণের নখর মধ্যম, নাতিদীর্ঘ ও নাতিহ্রস্ব এবং দীর্ঘনখগুণ ও হ্রস্রনখগুনযুক্ত।।’১১।।
মহারাষ্ট্রকগণ বিচক্ষণ, তাহারা কোমল-প্রকৃতি ও কঠোর-প্রকৃতি-সম্পন্ন। তাহাদিগের রাগও কোমল ও খরবেগসম্পন্ন। এজন্য তাহারা নখচ্ছেদ্যে বিচক্ষণ।।১১।।

আচ্ছুরিতকাদির লক্ষণ ও পরভাগার্থ তাহাদিগের প্রয়োগস্থান কীর্তন করিতেছেন—
সেই মধ্যামাকৃতি নখপঞ্চক পরস্পর অসংশ্লিষ্টভাবে হনুদেশে (চোয়াল), স্তনোপরি ও অধরপ্রান্তে সন্নিবেশিত করিবে, তারপর শনৈঃ শনৈঃ আকর্ষণ করিয়া সুসংযমিত করিতে হইবে। পরে যাহা হইলে রেখাপাত না হয়, এমন ভাবে লঘুক্রিয়া করিবে। তাহার কেবল স্পর্শমাত্রই ফল। তদ্দ্বারা শেষে রোমাঞ্চ হইবে। যখন আকুঞ্চিত নখপঞ্চক পরস্পর পরস্পরে ঘর্ষিত হইয়া সবেগে অল্পমাত্র চর্মস্পর্শ করিয়া আচ্ছুরিত হইবে, তখন এপ্রকার চট্‌চট্‌ শব্দ করিবে। সেই ক্রিয়াকেই আচ্ছুরিতক বলা যায়।।’১২।।

অন্যান্য স্থান-বিশেষে বিশেষ বিশেষ অবস্থানুসারে সেই আচ্ছুরিতক প্রযুক্ত হইতে পারে—
প্রযোজ্যা নায়িকার অঙ্গসম্বাহন যে যে স্থানে করিতে পারা যায়, শিরঃকণ্ডূয়ঙ্কালে মস্তকে, যে স্থানের পিটকভেদন (স্ফোটক-গলন, ফুস্‌কুড়ি-গালা) করা যায়, কিংবা কিহচু করতে না দিলে ভয় দেখাইবার জন্য সেই আচ্ছুরিতকের সেই সেই স্থলে প্রয়োগ করিতে পারা যায়।।’১৩।।
এই আচ্ছুরিতক আবস্থিক (অবস্থানুসারে ইহার প্রয়োগ কার্য) বলিয়া সকল সমাননায়িকাতেই ইহার প্রয়োগ হইতে পারে। আবস্থিক কার্যবশে ইহার প্রয়োগ নায়িকাও করিতে পারে।।১৩।।

গ্রীবায় ও স্তনপৃষ্ঠে বক্রভাবে যে নখপদনিবেশ (নখ বসাইয়া দেওয়া) তাহাকে অর্ধচন্দ্রক বলা যায়।।’১৪।।
গ্রীবাপার্শ্বে বহির্মুখ ও স্তনপৃষ্ঠে ঊর্ধ্বমুখ হইবে। সূচ্যগ্র, কনিষ্ঠাগ্র বা মধ্যমাগ্র দ্বারা অর্ধচন্দ্রাকার নিষ্পাদ্য।।১৪।।

দুইটি অর্ধচন্দ্র পরস্পর অভিমুখভাবে নিষ্পাদিত হইলে যে রেখা বর্তুলাকার হয়, তাহাকে মণ্ডল কহে।।’১৫।।

নাভিমূলে (সম্বাধোপরিভাবে), ককুন্দরে (নিতম্বদ্বয়ের উপরিস্থ আবর্তবৎ কূপকদ্বয়ে) এবং বঙ্‌ক্ষণপ্রদেশে (উচ্চসন্ধিস্থানে, কুঁচকিতে) তাহার প্রয়োগ কর্তব্য।।’১৬।।

অনতিদীর্ঘভাবে লেখা সর্বস্থানেই প্রযোজ্য।।’১৭।।

স্তনমণ্ডল হইতে উত্থাপিত করিয়া, স্তনযুগলের আকণ্ঠ রেখা বক্রভাবে প্রয়োগ করিলে, তাহার নাম ব্যাঘ্রনখক হইবে।।’১৮।।

অভিমুখীকৃত নখপঞ্চক দ্বারা স্তনযুগলের চূচুকাভিমুখী যে রেখা করা যায়, তাহাকে ময়ুরপদক কহে।।’১৯।।
স্তনমুখের নিম্নে অঙ্গুষ্ঠ স্থাপন করিয়া স্তনতটে অঙ্গুলিগুলি সংশ্লিষ্টভাবে রাখিয়া চূচুকের (বোঁটার) অভিমুখে আকর্ষণ করিবে। ইহাতে যে রেখাপাত হইবে তাহাকে ময়ূরপদক—ময়ূরপদাকৃতি বলিয়া, সেই নামেই অভিহিত করা হয়। ।১৯।।

যে নায়িকা নায়কের সম্প্রয়োগকে শ্লাঘার বিষয় বলিয়া মনে করে, তাহার স্তনচূচুকে নখপঞ্চক সম্মিলিতভাবে স্থাপিত করিয়া বলপূর্বক ছুপিয়া ধরিবে; তাহাতে যে রেখা হইবে, তাহাকে শশপ্লুতক বলা যায়।।’২০।।

স্তনপৃষ্ঠে ও মেখলাপথে (যে স্থানে মেখলা রেট্‌, চন্দ্রাহার ধারণ করে, অর্থাৎ স্ত্রীকটিদেশ) পদ্মপত্রাকৃতি রেখাপাতনকে উৎপলপত্রক বলা যায়।।’২১।।
স্তনপৃষ্ঠে একটি পত্রাকৃতি ও মেখলাপথে মাল্যবৎ বহুপত্রাকৃতি কর্তব্য।।২১।।

প্রবাসগামী বা প্রচ্ছন্ন নায়কের স্মারণীয়ক, প্রযোজ্যা-নায়িকার ঊরুযুগলে এবং স্তনপৃষ্ঠে পরস্পর মিলিত তিন-চারটি রেখা কর্তব্য। এইরূপ নখকর্ম সম্পাদনীয়।।’২২।।
এই নখচ্ছেদ্য প্রবাসগামী বা প্রচ্ছন্ন নায়ককে—জার বা উপপতিকে স্মরণ করাইয়া দেয় বলিয়, ইহার নাম স্মারণীয়ক। বহুদিন প্রবাসকালে থাকিয়া চিরবিপ্রয়োগ না ঘটায়—এই উদ্দেশ্যে চারটি রেখা, দীর্ঘপ্রবাসে তিনটি রেখা ও হ্রস্বপ্রবাশে ২/১টি রেখা দিনসংখ্যানুসারে সম্পাতনীয়। ইহার প্রয়োগকর্ত্রী নায়িকাও হইতে পারিবে।।২২।।

এইরূপে অন্যান্য আকৃতিযুক্ত চিহ্নও করিবে।।’২৩।।
পক্ষী, কুসুম, কলস, পত্র ও লতা প্রভৃতির আকারের ন্যায় আকারও সেই সেই স্থানে প্রয়োগ করা যাইতে পারে।।২৩।।

আচার্যেরা এইরূপ মনে করেন যে, ছেদ্যের আকার-প্রকার অনেক, কৌশল-বিধি অনন্ত এবং অভ্যাসও সকলেরই থাকিতে পারে। এ অবস্থায় রাগাত্মক চ্ছেদ্যের প্রকারসংখ্যা করিতে সে সমর্থ?।।’২৪।।
ছেদ্য অষ্টপ্রকারই নহে, অনন্তপ্রকার; সুতরাং তাহার নির্ণয় করিয়া সংখ্যানির্দেশ করা অসম্ভব। যে তাহার নির্ণয়ার্থ অগ্রসর হইবে, তাহাকে প্রথমতঃ কৌশলকরণ শিক্ষা করিতে হইবে। কৌশলকরণ অবশ্য অভ্যাস ব্যতীত হইতে পারে না; সুতরাং অভ্যাসের অপেক্ষাও করিতে হইবে। তারপর, যদিই একই বিষয় অভ্যাস করা যায়, তবে সে অভ্যাস অন্যবিধ কৌশলকরণের সাহায্য করে না; সুতরাং সকল কৌশলকরণেই অভ্যাস করিতে হয়। অতএব একই ব্যক্তি দ্বারা চ্ছেদ্যের প্রকার-ভেদ নির্ণয় অসম্ভব। তবে আপাততঃ এই অষ্টপ্রকার কথিত হইয়াছে মাত্র। এতদ্ভিন্ন আরও অনেক আছে, তাহাও জ্ঞাতব্য। তাহার পর, ছেদ্যটি রাগাত্মক, অর্থাৎ রাগবৃদ্ধি হইলেও ছেদ্যের প্রয়োগ হইয়া থাকে; সুতরাং তখন নায়ক বা নায়িকা কোন্‌ রূপ ছেদ্য প্রয়োগ করিবে, সরূপ কি অরূপ, তাহার নির্ণয় নিতান্তই অসম্ভব। অতএব তৎকালে অষ্টবিধ বিকল্পমাত্র ছেদ্য, এ কথা বলাও চলিতে পারে না। ফলকথা, উক্ত অষ্টবিধ ছেদ্যের অভ্যাসে পরিপটু হইলে তাহার ছেদ্যবিষয়ে হাত আসিবে। তখন সে ইচ্ছানুসারে ও বুদ্ধি অনুসারে বা কল্পনার সাহায্যে, যাদৃশ ইচ্ছা করিবে, তাদৃশ ছেদ্যই প্রয়োগ করিতে পারিবে। ইহাই আচার্যগণের অভিপ্রায়।।২৪।।

যদ্যপি ছেদ্যের আনন্ত্য-অনন্তপ্রকারতা আছে সত্য, তথাপি দেখা যায়, রাগকালও ছেদ্যের বৈচিত্রকে অপেক্ষা করিয়া থাকে। ছেদ্যের বৈচিত্রকে অবলম্বন করিয়া, পরস্পর অনুরাগ জন্মাইয়া থাকে; আর বৈচিত্র্যজ্ঞান থাকিলে, বিচক্ষণতাযুক্ত গণিকা ও বৈচক্ষণ্যযুক্ত তৎকামী নায়ক, ইহারা পরস্পর পরস্পরের প্রার্থনীয় হইয়া থাকে। তদ্ভিন্ন দেখা যায়,–ধনুর্বেদাঙ্গ শস্ত্রকর্মশাস্ত্রও বৈচিত্র্যের অপেক্ষা করিয়া থাকে; সুতরাং কামশাস্ত্রের মুখ্য অভিপ্রায় বৈচিত্র্যাভ্যাস বলিয়া, ইহাতে যে বৈচিত্র্যের আদর করিতে হইবে, সে সম্বন্ধে আর সন্দেহ কি হইতে পারে?।।’২৫।।

বিদ্যা দ্বিবিধ—জ্ঞানবিদ্যা ও কর্মবিদ্যা। ধনুর্বেদে দেখা যায়, আগমনকারী অপর শরের সন্ধান করিয়া স্বীয় শরদ্বারা ছেদন এবং এক সন্ধানে অনেক শরমোচন—ইত্যাদি কর্মবৈচিত্র্য আছে। এই হইল কর্মবিদ্যা। তাহার শিক্ষা শাস্ত্রানুসারে হইলেই তাহাকে জ্ঞানবিদ্যা বলা যায়; সুতরাং নাগর ও অনাগর এতদুভয়ের ভেদরক্ষার জন্য কামশাস্ত্রীয় বৈচিত্র্যাভ্যাস করা অবশ্য কর্তব্য।।২৫।।

এই প্রকারের বৈচিত্র্যচ্ছেদ পরপরিগৃহীত বৈচক্ষণ্যযুক্ত-নায়িকার প্রযোজ্য নহে; সুতরাং ইহার প্রয়োগ সেই নায়িকায় করিবে না। তবে তাহাদিগের অনুস্মরণ ও রাগবর্ধনার্থ প্রচ্ছন্ন-প্রদেশে—অর্থাৎ ঊরু-জঘন-বঙ্ক্ষণাদি স্থানে নখচ্ছেদ্যবিশেষ প্রয়োগ করিবে। তাহা দেখিয়া স্মরণ করিবে ও অনুরক্ত হইবে।।’২৬।।

গূঢ়স্থানে নখক্ষত-দর্শনকারিণী কামিনীর অতীব প্রাচীনতম প্রীতি আবার অকৃত্রিমভাবে নূতন আকারের হইয়া থাকে।।’২৭।।

অনুরাগ চিরপরিত্যক্ত হইলে প্রীতি বিনাশপ্রাপ্ত হয়, যদি রাগের আয়তন—রূপ, যৌবন ও গুণ, এতত্রিতয়ের স্মরণকারী নখক্ষত না থাকে।।’২৮।।

নখোচ্ছিষ্টপয়োধরা যুবতীকে যে দূর হইতেও দর্শন করে, সে ব্যক্তি নিতান্ত অপরিচিত পর হইলেও তাহার প্রতি তার অনুরাগ—অত্যান্ত গৌরবের সহিত অভ্যুদিত হয়।।’২৯।।

পুরুষেরও প্রদেশবিশেষে নখচিহ্ন প্রদর্শিত হইলে, তাহা দেখিয়া রমণীগণ মনকে স্থির রাখিতে পারে না। তপস্যাদি দ্বারা মন সংযমিত হইলেও প্রকৃতিত; চঞ্চল হইয়া উঠে।।’৩০।।

নখ ও দন্ত হইতে অভ্যুত্থিত ছেদ্যচিহ্নাদি-প্রবৃত্তি যেমন রাগবর্দ্ধন, সেরূপ রাগবর্দ্ধন অন্যকিছু আর তত পটুতর নহে।।’৩১।।

ইতি শ্রীমদ্‌-বাৎস্যায়নীয়কামসূত্রে সাম্প্রয়োগিকনামক ষষ্ঠ-অধিকরণে নখরদনজাতি নামক চতুর্থ অধ্যায় সমাপ্ত।।৪।।



Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2