৫.৬ আন্তঃপুরিকম্‌ ও দাররক্ষিতকম্‌ (অন্দরমহল)

পঞ্চম ভাগ – ষষ্ঠ অধ্যায়

যেমন ঈশ্বরের পরভবনে প্রবেশ নাই, সেইরূপ অন্তপুরিকাগণের ও নাগরকগণেরও পরের অন্তঃপুরের প্রবেশ নাই; সুতরাং উভয়কেই অন্তঃপুরিকাবৃত্ত বলা অবশ্যক।–এই জন্য অন্তঃপুরিকাবৃত্ত নামক প্রকরণ আরম্ভ করা যাইতেছে—

অন্তঃপুরের রক্ষণযোগ থাকায় পরপুরুষ সন্দর্শন ঘটিয়া উঠে না। তারপর, পতিও একটি, অথচ অনেক সাধারণ; সুতরাং তৃপ্তি আর কি করিয়া হইতে পারে? ফলতঃ অন্তপুরিকাগণের তৃপ্তিই হয় না। অতএব তাহাদিগকে প্রয়োগানুসারে পরস্পর অনুরঞ্জিত করিবে।।’১।।

প্রয়োগ কি?—

ধাত্রেয়িকাকে, সখীকে বা দাসীকে পুরুষের ন্যায় অখঙ্কৃত করিয়া, আকৃতি-সংযুক্ত কন্দ (আলুক-কদলী আদির), মূল (তাল-কেতকী আদির), ফল (অলাবু-কাঁকুড় আদি, অবশ্য সংশোধিত করিয়া গ্রহণ করিবে) প্রভৃতির অবয়ব দ্বারা বা অপদ্রব্য দ্বারা নিজের অভিপ্রায় নিবর্তিত করিবে।।’২।।

এবং অব্যক্তলিঙ্গ (অর্থাৎ শ্মশ্রুগুম্ফাদি জন্মায় নাই বলিয়া প্রায় স্ত্রী, তবে কালে পুরুষ হইবে সেসকল বালক) পুরুষপ্রতিম ব্যক্তিকে অবলম্বন করিয়া শয়ন করিয়া থাকিবে।।’৩।।

 

রাজারা কামার্তা স্ত্রীর উপর দয়াপরবশ হইয়া রাগ-যোগ না থাকিলেও একটি অপদ্রব্য যথাস্থানে বাঁধিয়া যতক্ষণ স্ত্রীর তৃপ্তি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত একরাত্রিতে বহুস্ত্রীর সহিত (আভিমানিক রূপে) সম্প্রয়োগ করিতে পারেন। যেখানে প্রীতি বা বাসক যাহার বা ঋতুকাল যাহার উপস্থিত, সেখানে ইচ্ছানুসারে প্রকৃত অভিগমন করিতেও পারে। প্রাচ্যদেশে এইপ্রকার প্রচলন আছে।।’৪।।

যাহারা স্ত্রীতে বৃত্তিলাভ করিতে অসমর্থ হইয়াছে, সেই সমস্ত পুরুষের পক্ষে স্ত্রীযোগ কল্পনা দ্বারা নিযোনিতে (চলোরুকরব্যাদি) বিজাতি এড়ী বা বড়বাদিযোনিতে কিংবা সমুৎকীর্ণস্ত্রীলিঙ্গাদি স্ত্রীপ্রতিমাদিতে অথবা সিংহাক্রান্ত কর দ্বারা সাধনের কেবলোপমর্দ দ্বারা অভিপ্রায় নিবৃত্তি করাও ব্যাখ্যাত হইল।।’৫।।

পৃথিবীতে সমানভাবে উভয় হস্ততল স্থাপন করিয়া উৎকটাসনে উপবেশনপূর্বক বাহুযুগল মধ্যে সাধনের বিমর্দন করিবে, এই প্রকার সিংহাক্রান্ত নামে কথিত হইয়াছে।।৫।।

অন্তঃপুরিকাগণ নাগরকবর্গকে স্ত্রীবেশ ধারণ করাইয়া পরিচারিকাদিগের সহিত অন্তঃপুরে প্রবেশ করাইয়া থাকে। সেই সকল নাগরকবর্গের সহিত অন্তঃপুরিকাদিগের সুখসংসর্গ করিয়া দিবার জন্য অভ্যন্তরসংসৃষ্টা, ধাত্রেরিকাবর্গই আগামী ফলের দর্শন করাইবার জন্য প্রযত্ন করিবে। সুখে প্রবেশ করা যায়, অনায়াসে নিষ্ক্রমন করা যায়, যে গৃহে রতিকলার পরিচয় করিবে, সে গৃহের বিশালতা, রক্ষিগন কখন কখন অসাবধান হইয়া থাকে, রাজপরিজনবর্গ কোন্‌ কোন্‌ সময়ে অনুপস্থিত থাকে, তাহা নাগরকগণের নিকট বর্ণনা করিবে। অন্তঃপুরিকাবর্গ যদি ভাবখ্যাপন না করে, অথবা প্রথমতই চরিত্রখণ্ডনে প্রবৃত্ত হইয়া থাকে, তবে কোন নাগরককে অন্তঃপুরে প্রবেশ করাইতে সাহস করিবে না; কারণ, তাহাতে মহান্‌ দোষ আছে।।’৬।।

বাৎস্যায়ন বলেন—নাগরক কিন্তু সুপ্রাপ্য হইলেও নানাবিধ বিনাশকারণের সন্নিধানবশতঃ অন্তঃপুরে প্রবেশ করিবে না।।’৭।।

যদি নিষ্ক্রমণমার্গবিশিষ্ট প্রমদবনগহন (ক্রীড়াবমগহন) অনেকগুলি দীর্ঘ দীর্ঘ কক্ষা থাকে, তথায় অল্পমাত্র রক্ষী সর্বদাই অসাবধানভাবে প্রহরীর কার্য করে এবং রাজাও প্রবাসে থাকেন, তবে অভগমনের কারণগুলি পরীক্ষা করিয়া নানাপ্রকারে বারংবার আহূয়মান হইলে, কক্ষাপ্রবেশ দেখিয়া যে আমি এই মার্গ দিয়া প্রবেশ করিতে পারিব, এই বেশে এই সময়ে এই দ্রব্য লইয়া এইরূপে অমূক স্থানে যাইবে, এইরূপ তাহারা বলিয়া দিলে, তবে প্রবেশ করিবে। যোগ্যতা থাকিলে প্রত্যহই প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণ করিতে পারে।।’৮।।

বাহ্যরক্ষীগণের সহিত ধর্মসম্বন্ধ পাতাইয়া সেই স্থলে তাহাদিগের সহিত সংসর্গ করিবে। অন্তশ্চারিণী পরিচারিকাসকলের মনে ‘আমার উপর এ-ব্যক্তি অনুরক্ত হইয়াছে’ এইরূপ ধারণা জন্মিলে আরও আসক্তি রূপিত করিবে। যদি সেরূপ লাভ করিতে না পারে, তবে শোকপ্রকাশের সহিত বাহ্যা অন্তপুরপ্রবেশশীলা স্ত্রীগণের সহিত যথোক্ত দূতীবিধির অনুষ্ঠান করিবে। রাজার নিযুক্ত চারের গতিবিধি লক্ষ্য রাখিবে। যদি রক্ষীর পদ-সঞ্চার না হয়, তবে যে স্থানে থাকিলে গৃহীতাকারা প্রযোজ্যার দর্শন করিতে পারে, সে স্থানে অবস্থান করিবে। যদি সে প্রদেশেও রক্ষীর উপস্থিতি হয়, তবে ‘পরিচারিকার নিকট অত্যন্ত আবশ্যক আছে, তাই বসিয়া আছি; বাহিরে আসিলেই সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইবে’—এইরূপ ছল প্রকাশ করিবে। প্রযোজ্যার বারংবার দর্শণ করিতে থাকিলে ইঙ্গিত ও আকারের নিবেদন করিবে। প্রযোজ্যার যেস্থানে সম্পাত হয়, সে স্থানে তাহার রাগোদ্দীপক চিত্রকর্মের, দ্ব্যর্থঘটিত গীতপদাদির, চিহ্ন করিয়া ক্রীড়াপুত্তলিকাদির, নখদশনপদচিহ্নিত আপীনকবর্গের ও অঙ্গুলীয়কের স্থাপন করিবে। প্রযোজ্যা প্রত্যুত্তর দিলে, তাহা ভাল করিয়া দেখিবে। তারপর, প্রবেশে যত্ন করিবে।।’৯।।

যে স্থানে প্রযোজ্যা প্রত্যহ গমন করিয়া থাকে, তাহা জানিলে পূর্বেই সেখানে যাইয়া অবস্থান করিবে। তাহার অনুজ্ঞা যদি থাকে, তবে রক্ষীপুরুষ বেশে প্রবেশ করিবে। অথবা আস্তরণ ও প্রাবরণ বেষ্টিত হইয়া প্রবেশ ও নিষ্ক্রমণ করিবে। পুটাপুট-যোগদ্বারা বা নষ্টছায়ারূপে প্রবেশ করিবে। তাহার প্রয়োগ এইরূপ—নকুলহৃদয়, চোরক, তুম্বীফল, সর্পাক্ষিকে অন্তর্ধুমে পাক করিবে। তারপর সমভাগ অঞ্জনের সহিত পেষণ করিবে। ইহাদ্বারা অভ্যক্তনয়ণ হইয়া নষ্টচ্ছায়ারূপে বিচরণ করিতে পারিবে। (অথবা অন্যবিধ জলব্রহ্ম ও ক্ষেমশিরঃপ্রণীত বাহ্যপানকদ্বারা ঐরূপে প্রবেশ করিবে।) কিংবা কৌমুদীরাত্রিতে গৃহীতদীপিকাগণের দলে মিশিয়া সেই বেশে বা অন্তপুরোদ্ভিন্নসুরঙ্গদ্বারা প্রবেশ ও নির্গম করিবে।।’১০।।

সালদারু ও পানকাদিদ্রব্যের প্রবেশ ও নির্গমকালে তাহার মধ্যে অবস্থিতি করিয়া প্রবেশ ও নির্গম করিবে। আপানক উৎসবের জন্য চেটিকাগণ ইতস্তত গমনাগমন করিলে, তাহাদিগের সহিত মিশিয়া, চেটিকাদিগের বা রক্ষিগণের গুহব্যাত্যাস ও তাহাদিগের বিপর্যয়ে, উদ্যানযাত্রাগমনে ও যাত্রা হইতে প্রবেশনে, দীর্ঘকাল ধরিয়া যে যাত্রা হয় ও বহুযান ও বহুপাত্র সাধ্য হয়, তাহাতে, প্রবেশ ও নিষ্ক্রম হইতে পারে। অথবা রাজা প্রবাসগত হইলে যুবকগণের প্রায়শঃ প্রবেশ হইতে পারে। সকলে কার্য জানিয়া-শুনিয়া অন্তঃপুরিকা স্ত্রীগণকে মিলাইয়া যাহা একের কার্য, তাহা আমরা মিলিয়া করিব বা করা উচিত, এরূপ বুঝাইয়া সকলকেই একমতাবলম্বী করিবে। যাহারা তাহাতে অসম্মত হইবে, তাহাদিগের পরস্পর ভেদ করিয়া দিবে। পরে এক এক করিয়া সকলেরই চারিত্রখণ্ডনরূপ একই কার্যে স্থিতি করিয়া সকলকে দূষিত করিয়া অভেদ্যতালাভ করিবে ও অতিশীঘ্রই যথেষ্ট ফললাভ করিবে।।’১১।।

 ইতি প্রচ্ছন্ন অন্তপুরিকাবৃত্ত এইরূপ।

 

আপরান্তক-দেশবাসীদিগের মধ্যে এইরূপ প্রচলিত আছে যে রাজকুলচারিণীগণ অন্তঃপুর অত্যন্ত সুরক্ষিত নহে বলিয়া, লক্ষণসম্পন্ন পুরুষগনকে অন্তঃপুরে প্রবেশ করায়। আভীরকদেশবাসীদিগের মধ্যে দেখা যায়—ক্ষত্রিয়সংজ্ঞক অন্তঃপুররক্ষীদিগের সহিত মিলিত হইয়া অন্তপুরিকারা ইষ্টসিদ্ধি করিয়া থাকে। বাৎস্যা-গুল্মকদেশে দেখিতে পাওয়া যায়—প্রেষ্যা-(যাহারা কেবল প্রেষিত হইয়া ভিতরের ও বাহিরের কার্য সম্পন্ন করিয়া থাকে)দিগের সহিত সেই বেশধারী নাগরকপুত্রগণকে অন্তঃপুর মধ্যে প্রবেশ করাইয়া থাকে। বিদর্ভদেশে প্রচলিত আছে—কামচর নিজপুত্রগনই মুখ্যমাতাকে বর্জন করিয়া অন্তঃপুরমহিলা মাত্রেরই অভিগমন করিয়া থাকে। স্ত্রীরাজ্যে দেখিতে পাওয়া যায়—প্রবেশ করিতে সক্ষম জ্ঞাতিসম্বন্ধীদিগের সহিত অন্তঃপুরিকাগণ অভিগত হয়, কিন্তু অন্যের সহিত নহে। গৌড়দেশবাসী (কামরূপ ভাঃ) দিগের মধ্যে দেখিতে পাওয়া যায়—ব্রাহ্মণ, মিত্র, ভৃত্য, দাস ও চেটগনের সহিত অন্তপুরিকারা সম্প্রযুক্ত হইয়া থাকে। সিন্ধুদেশোদ্ভুত ব্যক্তিগত্রের মধ্যে দেখা যায়—প্রতীহার ও কর্মকরগণের সহিত এবং অন্য যাহারা তদ্রুপ, তাহাদিগের সহিত সম্প্রয়োগ করিয়া থাকে। হিমবদ্‌দ্রোণীদেশে প্রচলিত আছে, অর্থদ্বারা রক্ষিপুরুষকে হস্তগত করিয়া সাহসিক এক এক ব্যক্তি অন্তঃপুরে প্রবেশ করিয়া থাকে। লৌহিত্য (ব্রহ্মপুত্র) নদের পূর্বভাগ বা লৌহিত্যনদ পর্যন্ত পূর্বভাগস্থ প্রদেশকে অঙ্গদেশ বলে। মহানদীর (রূপনারায়ণ) পূর্বপ্রদেশ কলিঙ্গনামে বিখ্যাত ও গৌড়ের দক্ষিণে যে প্রদেশ, তাহাকে বঙ্গ বলা হয়। সেই অঙ্গ, বঙ্গ ও কলিঙ্গদেশে দেখিতে পাওয়া যায়—সেই নগরে যেসকল ব্রাহ্মণ বাস করেন, তাঁহারা পুষ্পদান করিতে অন্তঃপুরে প্রবেশ করিয়া থাকেন। অবশ্য রাজার প্রজ্ঞাতভাবেই তাহারা অন্তঃপুরমধ্যে যাইয়া থাকেন। রাজাদারাগণের সহিত তাঁহাদিগের সাক্ষাৎরূপে আলাপ হয় না; কিন্তু পটান্তরিতভাবে আলাপ হইয়া থাকে। সেই পুষ্পদানপ্রসঙ্গেই রাজদারার সহিত ব্রাহ্মণগণের সম্প্রয়োগ হইতে দেখা যায়। প্রাচ্যদেশে দেখিতে পাওয়া যায়—অন্তঃপুরিকা স্ত্রীগণ নয়দশটি যুবককে মিলিত করে একএকটি ব্যাবায়ক্ষম যুবককে প্রচ্ছন্ন করে ও তাহার সহিত ক্রীড়া করিয়া বিদায় দেয়।

এই প্রকার নানাদেশে নানাপ্রকার আচার-ব্যবহার দেখা যায়; সুতরাং কামসূত্রজ্ঞ ব্যক্তি এই সকল জানিয়া-শুনিয়া এই পারদারিকবিধানানুসারে অভিগমন করিবে।।’১২।।

 ইতি অন্তঃপুরিকাবৃত্তনামক প্রকরণ।

 

যেমন নাগরক পরদারকে অভিগমনদোষে দূষিত করিবে, সেইরূপ আবার দারাকে-ত অন্যেও দূষিত করিতে পারে; সুতরাং দাররক্ষিতকপ্রকরণের আরম্ভ করা যাইতেছে–

এই সকল কারণ হইতেই স্বদারাকে রক্ষিত করিবে।।’১৩।।

কামপরীক্ষায় শুদ্ধ রক্ষিগনকে অন্তঃপুরে স্থাপন করিবে, এই কথা আচার্যগণ বলিয়া থাকেন। রক্ষীবর্গই ভয়ে বা অর্থে অন্যকে প্রযুক্ত করিতে পারে; সুতরাং কাম ও ভয় পরীক্ষায় শুদ্ধ রক্ষিগনকে অন্তঃপুরে নিয়োগ করিবে।–এই কথা গোণিকাপুত্র বলিয়াছেন। ধর্মপরীক্ষায় শুদ্ধব্যক্তি পরদারের অভিগমন করে না, অর্থলোভে স্বামীরও দ্রোহ করে না; কিন্তু ভয়ে ধর্মকে বিসর্জন দেয়। অতএব ধর্ম ও ভয়ের পরীক্ষায় শুদ্ধ ব্যক্তির অন্তঃপুররক্ষায় নিয়োগ দেয়া উচিত।–বাৎস্যায়ন এইরূপ মনে করেন।।’১৪।।

স্বদারের পরীক্ষণও রক্ষণের একটি উপায়।–

অমুক তোমাতে বড়ই অনুরক্ত। সে বলে, যদি পার একবার দেখা করাইয়া দাও।’ এইরূপ পরবাক্যাভিধায়িনী, সে যেন জানিতে না পারে যে, এ তাহার পতিদ্বারা প্রযুক্ত হইয়াছে; সুতরাং আকার অন্যন্ত গূঢ় রাখিতে হইবে। তাদৃশ গূঢ়াকারা প্রমদা দ্বারা শৌচাশৌচ পরিজ্ঞানার্থ পরীক্ষা করিবে। বিনাশকারণসকল যুবতীদিগের নিকট সিদ্ধ, এইজন্যই পরীক্ষা বিধেয়; কিন্তু অকস্মাত পরীক্ষা করিতে যাইবে না; কারণ, তাহাতে অদুষ্টেরও দূষণ হইতে পারে—অর্থাৎ তাহার স্ত্রী শুচি থাকিলেও মন চঞ্চল বলিয়া হয়ত লোভ সম্বরণ করিতে না পারিয়া স্বীকার করিতেও পারে; কিন্তু তাদৃশ প্রলোভন উপস্থিত না হইলে, অথবা তাদৃশ সময়ানুসারে দূতীনিয়োগ না হইলে, তাহার কোন প্রকার চাঞ্চল্যপ্রকাশ আর এ জীবনে হইতে পারিত না। সেই সময়ে সেইরূপ লোভকর বিষয়ের উপস্থাপন করিয়া তাহার চারিত্রখণ্ডনের সহায়তা করিয়া দেওয়া হইল। ইহা কোনমতেই যুক্তিসঙ্গত হইতে পারে না। অতএব যে দুষ্ট বলিয়া সন্দেহের বিষয় নহে, পরীক্ষাব্যাজে তাহার দূষন করা কর্ত্তব্য নহে।–বাৎস্যায়ন এই কথা বলেন।।’১৫।।

অতিরিক্ত মাত্রায় গোষ্টীতে নৃত্য করিয়া বেড়ান। অঙ্কুশ মারিবার কেহ না থাকা। স্বাধীনরূপে ভর্ত্তার ব্যবহার। কোনও পুরুষের সহিত নিয়ন্ত্রণাদি (তাহার কথা শ্রবণ করা, তাহার মুখদর্শন করা, তাহার বিষয় চিন্তা করা, তাহার রূপগুণাদির প্রশংসা করা ও তাহার প্রভুত্ব থাকিতে দেওয়া ইত্যাদি) সম্বন্ধ না থাকা। প্রবাসে অবস্থান। বিদেশে নিবাস। শরীর রক্ষার উপযোগী বৃত্তি উপঘাত। স্বৈরিশীর (পুংশ্চলী, খণ্ডিতচরিত্রার) সংসর্গ এবং পতির উপর ঈর্ষ্যা উৎপন্ন হওয়া।–এইগুলি চরিত্রের বিনাশ-কারণ জানিবে।।’১৬।।

এইসকল থাকিলেই পরদারের সংযোগলাভ সম্ভব হয়।।১৬।।

অধিকরণার্থের উপসংহার করা হইতেছে–
পরদারিক অধিকরণে লক্ষণদ্বারা নির্ণীত যোগসকলকে যথাশাস্ত্রানুসারে সন্দর্শন করিয়া কোনও শাস্ত্রবিৎ স্বকীয় দারের নিকট ছলনাপ্রাপ্ত হয় না। প্রয়োগগুলি পাক্ষিক* বলিয়া, তাহাতে বিনাশও দেখিতে পাওয়া যায় বলিয়া এবং ধর্ম্ম ও অর্থের প্রতিকূল বলিয়া পারদারিক আচরণ করিবে না। এই পারদারিক অধিকরণ মনুষ্যগণের মঙ্গলের জন্য ও দাররক্ষার জন্যই আরম্ভ করা হইয়াছে। প্রজার দোষ উপস্থাপিত করিবার জন্য, এই পারদারিকসংবিধানের প্রচার নহে, ইহা নিশ্চয়ই জানিবে।।’১৭।।

 ইতি দাররক্ষিতকনামক প্রকরণ।

ইতি শ্রীমদ্‌বাৎস্যায়নীয়কামসূত্রে পারদারিকনামক পঞ্চম অধিকরণে আন্তঃপুরিক ও দাররক্ষিতকনামক প্রকরণে ষষ্ঠ অধ্যায় সমাপ্ত।।৫।।

পঞ্চম পারদারিক অধিকরণ সমাপ্ত।।৫।।

 

—————————–

* কদাচিৎ কোন ব্যক্তি পরদারে আসক্ত হয়, সকলেই অবশ্য পরদারাসক্ত হয় না; সুতরাং পারদারিক ব্যাপারটি পারদারিকের পক্ষেই প্রাপ্ত; যে পারদারিক নহে, তাহার পক্ষে প্রাপ্ত নহে;–এই জন্যই পারদারিক প্রয়োগগুলি পাক্ষিক মাত্র।



Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2