৩.২ সপত্মীষু জেষ্ঠাবৃত্তম্‌, কনিষ্ঠাবৃত্তম্‌, পুনর্ভূবৃত্তম্‌, দুর্ভগাবৃত্তম্‌, আন্তঃপুরিকম্‌ ও পুরুষস্যবহ্বীভি প্রতিপত্তিঃ (প্রধানা পত্নী ও অন্যান্য পত্নী সংক্রান্ত)

তৃতীয় ভাগ – দ্বিতীয় অধ্যায়

সেই নায়িকা যখন সপত্নীগণপরিবৃত হইবে, তখন কিরূপে আচরণ করিবে? এইজন্য সপত্নীগণমধ্যে জ্যেষ্ঠাবৃত্ত কীর্তন করিতেছেন।

কিরূপে সপত্নী হয়? তাহা বলিতেছেন;
জাড্য (শাঠ্য), দৌঃশীল্য (চরিত্রখণ্ডন), দৌর্ভাগ্য ও সন্তানের অনুৎপাদন (বন্ধ্যাত্ব), নিরবধি কন্যাজনন এবং নায়কের চপলতা-দোষে সপত্নীর অধিবেদন সম্ভব।।’১।।

সুতরাং প্রথম হইতেই ভক্তিদ্বারা জাড্য, শীলদ্বারা দৌঃশীল্য ও বৈগন্ধ্যখ্যাপনদ্বারা দৌর্ভাগ্য ও নায়কচপল পরিহার করিতে ইচ্ছা করিবে। যদি সন্তানোৎপত্তি না হয়, তবে নিজেই নায়ককে ‘বিবাহ কর’ বলিয়া প্রেরণ করিবে।।’২।।

নায়িকা সপত্নীযুক্ত হইলে নিজের যে পরিমান শক্তি, সেই অনুসারে সপত্নীগণের নিকট নিজের শ্রেষ্ঠতাখ্যাপন করিবার জন্য মার্যাদাব্যবস্থাপন করাইবে।।’৩।।

সপত্নী আসিলে তাহাকে ভগিনীর ন্যায় দর্শন করিবে। নায়ক যাহাতে জানিতে পারে, এরূপভাবে সপত্নীর রজনীকর্তব্য সংস্কারবিধি অত্যন্ত যত্নসহকারে পরিচারিকা দ্বারা করাইবে। তাহার সৌভাগ্যজনিক বিকার (সাহঙ্কার বাক্য) বা গর্বাদি চিত্তবিকারের আদর করিবে না।।’৪।।

যদি ভর্তার উপর কোনরূপ প্রমাদ করিয়া বসে, তবে তাহা উপেক্ষা করিবে না। তবে যখন বুঝিবে যে, এ স্বয়ংই প্রমাদ বুঝিতে পারিয়া সংশধন করিতে পারিবে, সেইখানেই আদর করিয়া শিক্ষা দিবে—দেখ! এরূপ আর করিও না।।’৫।।

নায়কের কর্ণগোচর হইলে, তখন নির্জন প্রদেশে নায়কের আদর্শিত কলাবিশেষ দেখাইবে।।’৬।।

তাহার পুত্র হইলে অবিশেষভাব প্রদর্শন করিবে। পরিজনবর্গে অধিক দয়া প্রকাশ করিবে। মিত্রবর্গে অধিক প্রীতিদর্শন করিবে। নিজ জ্ঞাতিবর্গে অত্যান্ত আদর করিবে না। নায়কের জ্ঞাতিবর্গে অতিরিক্ত সম্ভ্রম প্রদর্শন করিবে।।’৭।।

সপত্নী বহু হইলে, যে তাহার অব্যবহিত পরে বিবাহিত হইয়াছে, তাহারই সহিত সংসর্গ করিবে।।’৮।।

নায়ক যাহাকে অধিক ভালবাসিবে, তাহার সহিত ভূতপুর্বসুভগার প্রোৎসাহ দিয়া কলহ বাধাইয়া দিবে।।’৯।।

কলহিতা হইলে গোপনে (আরও কলহ বাধাইবার জন্য) সমাশ্বাসিত করিয়া দয়া করিবে।।’ ১০।।

তাহাদিগের মধ্যে নায়ক যাহাকে বড় ভালবাসে, অন্যাদিগের সহিত তাহার কলহ ঘটাইয়া দিয়া নিজে মধ্যস্থরূপে অবিষদমান থাকিয়া তাহাকে নায়ক সমীপে দুর্জন বলিয়া প্রখ্যাত করিবে।।’১১।।

কলহিতা সেই নায়িকা নায়ককর্তৃক পক্ষপাতালম্বন দ্বারা গুণে উপেক্ষণীয় হইলে, সমাশ্বস্ত করিয়া তদ্দ্বারা প্রত্যুত্তর দেওয়াইয়া কলহের বৃদ্ধিই করিবে।।’১২।।১৩।।
অবশ্য নায়কের সহিত নায়িকার কলহ যাহাতে বর্ধিত হয়, তাহাই করিবে; কারণ, যত্ন করা সেইজন্যই।।১৩।।

কলহটা মন্দ হইতেছে দেখিয়া, কলহ যাহাতে বর্ধিত হয়, নিজেই তাহার চেষ্টা করিবে।।’১৪।।

যদি নায়ক তথাপি তখনও তাহার উপর ভালবাসা অনুনয়ের সহিত অক্ষুণ্ণ রহিয়াছে মনে করে, তবে তখন নিজেই উভয়ের সন্ধি করিতে প্রযত্ন করিবে। এই পর্যন্ত জ্যোষ্ঠবৃত্তনামক প্রকরণ।।’১৫।।

ইতি জ্যোষ্ঠবৃত্তনামক প্রকরণ।।

অথ কনিষ্ঠাবৃত্ত প্রকরণ।।
কনিষ্ঠা নায়িকা কিরূপে আচরণ করিবে, তাহা বলিতেছেন—
১। ‘কনিষ্ঠা নায়িকা জ্যেষ্ঠা পত্নীকে মাতৃবৎ দর্শন করিবে।।’১৬।।
২। ‘বাপের বাড়ির ধন, অলঙ্কারাদি যাহাতে জ্যেষ্ঠার অনবগত না থাকে, সেইরূপে ব্যবহার করিবে।।’১৭।।
৩। ‘নিজের যাহা কিছু কর্তব্য ব্যবহার, তাহা জ্যেষ্ঠার অভিমত লইয়াই করিবে।।’১৮।।
৪। ‘জ্যেষ্ঠার অনুজ্ঞা লইয়া পতির নিকট শয়ন করিতে যাইবে।।’১৯।।
৫। ‘জ্যেষ্ঠার ভালো-মন্দ কথা অন্য কাহারও নিকট প্রকাশ করিবে না।।’২০।।
৬। ‘জ্যেষ্ঠার অপত্যদিগকে নিজের অপত্য অপেক্ষা অধিক ভালবাসিবে।।’২১।।
৭। ‘নির্জনে পতিকে অন্যা অপেক্ষা অধিক উপচারে পরিচর্যা করিবে।।’২২।।
৮। ‘নিজের সপত্নীবিকারজদুঃখ পতির নিকট একেবারেই উত্থাপন করিবে না।।’২৩।।
৯। ‘পতির নিকটে অন্যার অপেক্ষা অধিক অপকট মান লাভ করিতে ইচ্ছা করিবে।।’২৪।।
১০। ‘এই শম্বলভূত পথ্যদান—দানযোগ্য মূলধনস্বরূপ লইয়া আমি জীবন কাটাইব, এই কথাই বলিবে।।’২৫।।
সবিশেষ মানদানই শম্বল (পুঁজি) করিয়া।।২৫।।
১১। ‘সেই মানের কথা শ্লাঘার সহিত সপত্নীক্রোধে যে কোন লোকের নিকট প্রকাশ করিবে না।।’২৬।।
১২। ‘রহস্যপ্রকাশ করিলে ভর্তার অবজ্ঞার পাত্রী হইবে।।’২৭।।
১৩। ‘গোনর্দীয় বলেন, জ্যেষ্ঠার ভয়ে নিগুঢ় সম্মানার্থিনী হইবে। অন্যথা অনর্থ হইবে।।’২৮।।
১৪। ‘জ্যেষ্ঠা দুর্ভাগা বা অপত্যহীনা হইলে নিজে অনুকম্পা করিবে ও নায়কদ্বারা অনুকম্পা করাইবে।।’২৯।।
সম্ভাবনাদি—যাহাতে অনুগ্রহাদি করে, তাহাই করাইবে।।২৯।।
১৫। ‘সেই জ্যেষ্ঠাকে অতিক্রম করাইয়া পতিকে আত্মবশে লইয়া একাচারিণী-ব্রত অনুষ্ঠান করিবে।।’৩০।।

ইতি কনিষ্ঠাবৃত্তনামক প্রকরণ।।

অথপুনর্ভূবৃত্ত প্রকরণ।

যেমন কন্যা ভার্যা হইবে, সেইরূপ পুনর্ভূও ভার্যা হইতে পারে; সুতরাং পুনর্ভূবৃত্ত প্রকরণ আরম্ভ করা যাইতেছে। তার মধ্যে পুনর্ভূও দ্বিবিধ—ক্ষতযোনি ও অক্ষতযোনি। তন্মধ্যে অক্ষতযোনি সংস্কারার্হ বলিয়া কন্যার মধ্যেই অন্তর্ভূতা। এ সম্বন্ধে স্মৃতিকার ইহা বলিয়াছেন –অক্ষতযোনি বলিয়া সে আবার যথাবিধি বিবাহ করিতে পারে। দ্বিতীয়ার আর সংস্কার নাই, কেবল স্বাধীন। লোকে তাহাকে অপরুদ্ধিকা বলে। এবংবিধা সেই অপরুদ্ধিকা শাস্ত্রে অনুজ্ঞাতা হইয়াছে। বশিষ্ট বলিয়াছেন—‘মনোদত্তা, বচোদত্তা, কৃতকৌতূকমঙ্গলা (মাঙ্গল্য দ্রব্যাদি আদান-প্রদান দ্বারা নিষ্পাদিতা, উদরস্পর্শিকা, পাণিগৃহীতিকা এবং অগ্নিপরিগতা আর ক্ষতযোনি পচূমর্ভূ।’ ইহার পূর্ব ছয়টি অক্ষতযোনি এবং পুনর্ভূ ক্ষতযোনি। সেই ক্ষতযোনি পুনর্ভূকে অধিকার করিয়া তাহার কর্তব্য কি, তাহাই বলিতেছেন—

যে বিধবা ইন্দ্রিয়দৌর্বল্যবশত কামার্ত হইয়া ভোগী গুণসম্মন্ন পুরুষকে দ্বিতীয়বার পতিত্বে বরণ করে, তাহাকে পুনর্ভূ বলে।।’৩১।।

যখন বিধবা স্বেচ্ছাক্রমে ভর্তৃগৃহান্তর হইতে এ ব্যক্তি নায়কগুণসম্পন্ন নহে’—ইহা মনে করিয়া নিষ্ক্রামণ করিবে, তখন আবার অন্য ব্যক্তিকে পতিভাবে আকাঙ্খা করিবে। বাভ্রব্যের মতাবলম্বিগণ এই কথা বলেন।।’৩২।।

সৌখ্যার্থিনী সে নায়িকা আবার অন্যকে বিবাহ করিতে পারিবে।।’৩৩।।

সুরত পরিভোগের সহিত নায়কগুণ বিদ্যমান থাকিলে তবে সকল সুখলাভ সম্ভবপর হয়; সুতরাং নির্গুণভোগী অপেক্ষা গুণবান্‌ ভোগীই শ্রেষ্ঠ। গোনর্দীয় এই কথা বলেন।।’৩৪।।

বাৎস্যায়ন বলেন—নিজের চিত্তের আনুকূল্য অনুসারে নায়কের বিশেষত্ব নির্ধারিত হওয়াই যুক্তিসঙ্গত।।’৩৫।।

সেই পরিণয়েচ্ছু বিধবা নিজ বন্ধু-বান্ধবগণ কর্তৃক নায়কের নিকট আপানক (মদ্যগোষ্ঠী) উদ্যানক্রীড়া, শ্রদ্ধাদান ও মিত্রপূজা আদি ব্যয়সহনশীল কর্ম লাভ করিতে ইচ্ছা প্রকাশ করিবে।।’৩৬।।
কেবল গ্রাসাচ্ছদন মাত্র নহে। ইহা উত্তম প্রকৃতির লিপ্সা।।৩৬।।

অথবা নিজের ধনবত্তানুসারে পর্যাপ্তরূপে তদীয় ও আত্মীয়জনগণকে ভরণ করিবে।।’৩৭।।
মধ্যমা ও অধমা সাবধান হইয়া পোষণের ব্যবস্থা করিবে।।৩৭।।

প্রীতিপূর্বক যাহা তাহাকে দত্ত হইয়াছে, তাহা ব্যয় করিয়া ভরণপোষণ করিবার কিছুই নিয়ম হইতে পারে না।।’৩৮।।

নায়িকা স্বেচ্ছাক্রমে যখন গৃহ হইতে নির্গত হইবে, তখন তাহার প্রীতিদায় (প্রেমানুরাগ জন্য যৌতুকাদির ন্যায় দান) হইতে অন্য যাহা কিছু নায়কদত্ত, তাহাও দিতে হইবে; কিন্তু যদি নিকাস্যমানা—দূরীভূত করা হয়, তবে কিছুই দিবে না।।’৩৯।।

সেই জিগমুষু নায়িকা স্বামিনীর ন্যায় নায়কগৃহ স্বীকার করিবে।।’৪০।।

নায়কের ধর্মোঢ়াগণের সহিত স্নেহপূর্বক ব্যবহার করিলে কাল কাটাইবে।।’৪১।।

পরিজনবর্গে দয়া-দাক্ষিণ্য প্রকাশ, সকল মিত্রেই সপরিহাস ব্যবহার ও কলায় কৌশল বিধান এবং অধিক কলার জ্ঞান লাভ করিবে।।’৪২।।

উপচিতচ্ছেদ (সঞ্চিত বস্তুর অপব্যয়), স্বৈরিণীসংসর্গ, দ্বিরাত্রাগমন (দ্বিরাত্র অন্যত্রে যাপনের পরে আগমন) ও বাসক হইতে নিষ্ক্রমণ ইত্যাদি কলহস্থানে নায়ককে স্বয়ংই তিরস্কার করিবে।।’৪৩।।

নির্জন প্রদেশে চতুঃষষ্টি কলার অনুবর্তন করিবে। সপত্নীগণের উপকার স্বয়ংই করিবে। তাহাদিগের সন্তানগণকে আভরণ দিবে। তাহাদিগের উপর স্বামীর ন্যায় উপচার করিবে। পুষ্পানুলেপনাদি মণ্ডনক (ভূষণক) ও বেশধারণ আদরপূর্বক করিবে। পরিজন ও মিত্রবর্গে অধিক মাত্রায় দান করিবে। গোষ্ঠীশীলতা, আপানশীলতা, উদারবিহারশীলতা এবং যাত্রাশীলতার যত্ন করিবে। ইহাই পুনর্ভূবৃত্ত।।’৪৪।।

ইতি পুনর্ভূবৃত্তনামক প্রকরণ।।

অথ দুর্ভগাবৃত্তনামক প্রকরণ।।

ইহাদিগের মধ্যে অবশ্যই কেহ না কেহ দুর্ভগাও হইতে পারে; সুতরাং তাহার কিরূপ আচরণ করা কর্তব্য, তাহা বলা যাইতেছে—

যে দুর্ভগা সাপত্নকপীড়িতা হইবে, সে তাহাদিগের মধ্যে যে পতির নিকট অধিক মাত্রায় উপচার প্রদর্শন করিতে পারে, তাহার আশ্রিত হইবে। প্রকাশ্যভাবে কলার বিজ্ঞান পত্রচ্ছেদ্যাদি প্রদর্শন করিবে; কারণ, দৌর্ভাগ্যবশত রহস্যভাবে কলাপ্রদর্শন তাহার পক্ষে সম্ভবপর নহে।।’৪৫।।
বৈদগ্ধ্য (রসিকতা) প্রখ্যাপন দৌর্ভাগ্য নিবৃত্তির একমাত্র কারণ।।৪৫।।

নায়কের অপত্যগুলির ধাত্রেয়িককর্ম অভ্যঞ্জন (তৈলাদি দ্বারা অঙ্গ মর্দন), উদ্বর্তন (গন্ধাদি দ্বারা বিলেপন), স্নপনাদি (স্নানাদি) করিবে।।’৪৬।।

নায়কের মিত্রগণের প্রিয় ও হিতকর কর্ম করিয়া, তাহাদিগের দ্বারা নিজের ভক্তি প্রকাশ করিবে।।’৪৭।।

ধর্মকৃত শ্রাদ্ধাদিতে পুরশ্চারিণী প্রারম্ভিকা (প্রথমোদ্যোগিনী) হইবে এবং ব্রতউপবাসাদিতে তৎপরা হইবে।।’৪৮।।

নায়কের পরিজনবর্গে দয়া-দাক্ষিণ্য প্রকাশ করিবে। সপত্নী ও পরিজনের নিকট নিজের আধিক্য দর্শন করিবে না।।’৪৯।।

এগুলো বাহ্য উপায়। আভ্যন্তর উপায় বলিতেছেন—

শয়নে নায়কের আনু্কূল্য নিজের অনুরাগ প্রত্যানয়ন করিবে।।
নায়ক যেরূপ অভিযোগ করিবে, তাহা নিজের অনীপ্সিত হইলেও যাবত তৃপ্তি না হয়, তাবত অনুরাগ প্রদর্শন কর্তব্য।।’৫০।।

আমি তোমার অপ্রিয়া—একথা বলিয়া তিরস্কার এবং অঙ্গ আচ্ছাদিত করিয়া প্র্যতিকূল্য প্রদর্শন করিবে না।।’৫১।।

স্বামী যাহার সহিত কলহিত হইবেন, প্রবোধাদি দ্বারা তাহাকে বুঝাইয়া অভিলাষপূর্বক প্রত্যাবর্তন করাইবে।।’৫২।।

স্বামী যাহাকে প্রচ্ছন্নভাবে কামনা করে, তাহার সহিত স্বামীর সঙ্গম করিয়া দিবে ও গোপন করিয়া রাখিবে।।’৫৩।।

প্রচ্ছন্নভাবে অবস্থিত পরস্ত্রীকে যদি স্বামী কামনা করে, তবে দূতীকর্মদ্বারা তাহাকে স্বামীর সহিত সঙ্গত করিবে।।’৫৪।।

যাহা হইলে পতিব্রতাত্ব ও অশাঠ্য নায়ক মনে করে, সেইভাবে প্রতিবিধান করিবে। ইহাই দুর্ভগার কর্তব্য।।’৫৪।।

ইতি দুর্ভগাবৃত্তনামক প্রকরণ।।

যেমন ভার্যার অধিকার, সেইরূপ সপ্তমীসমাস করিলে ভার্যাতে অধিকার হওয়ায় নায়কেরও ভার্যার কিছু অধিকার আছে। অন্যথা নায়ক সঙ্গমের চেষ্টা করিলেও নায়িকা অনুবর্তিত না হইয়া সম্প্রযুক্ত নাও হইতে পারে, সুতরাং উভয়েরই অধিকার উভয়ের উপর অব্যাহত ভাবেই আছে বলিতে হইবে।
নায়ক দ্বিবিধ—রাজন্যক ও জানপদ। তাহার মধ্যে রাজন্যক নায়ককে অধিকার করিয়া আন্তঃপুরিকপ্রকরণ আরম্ভ করা হইতেছে।
যেমন রাজার অন্তঃপুরে কর্তব্য কিছু আছে, সেইরূপ অন্যেরও কিছু-না-কিছু থাকিতে পারে। সুতরাং তাহাও ত বক্তব্য। অতএব সে সম্বন্ধে কিছু বলিতেছেন—

অন্তঃপুরচারিণী স্ত্রীগণের কর্তব্য এইসকল প্রকরণমধ্যেই লক্ষ্য করিবে।।’৫৫।।
অন্তঃপুরেও একচারিণী ও জ্যেষ্ঠাদি আছে, তাহা পৃথক করিয়া আর বলিবার আবশ্যক নাই। তবে রাজার পক্ষে একটু বিশেষ থাকায়, তাহাই বলা যাইতেছে।।৫৫।।

কঞ্চুকীয়গণ বা মহত্তারিকগণ, রাজার অন্তঃপুরস্থস্ত্রীগণের নিকট হইতে মাল্য, অনুলেপন ও বস্ত্রাদি লইয়া আসিয়া রাজার নিকট নিবেদন করিবে, দেবীরা ইহা পাঠাইয়াছেন। রাজা তাহা গ্রহণ করিয়া তাহার নির্মাল্য সেই সকল স্ত্রীগণের উদ্দেশ্যে তাহাদিগের দ্বারা পাঠাইবেন। নিজে অলঙ্কৃত হইয়া সুন্দররূপে অলঙ্কৃত অন্তঃপুরচারিণীগণকে একই প্রকারে দর্শণ করিবে।।’৫৭।।
রাজার পরিণীতা স্ত্রীগণ এইরূপ সম্মান পাইবে বা রাজা পরিণীতা স্ত্রীগণের উপর এরূপ সম্মান প্রদর্শন করিবেন।।৫৭।।

পরিণীতা স্ত্রী দর্শনানন্তর সেইভাবেই ও সেইরূপেই পুনর্ভয় স্ত্রীগণকে দর্শন করিবেন।।’৫৮।।
নিয়োগ ও পূজার অনুবর্তন করিবে।।৫৮।।

তারপর বেশ্যা, অন্তঃপুরিকা ও নাটকব্যবসায়িনী স্ত্রীগণের নিয়োগ ও পূজা সেইভাবে ও সেইরূপেই করিবে।।’৫৯।।

তাহাদিগের কক্ষও সেইরূপভাবে নিরূপণ করিবে।।’৬০।।
প্রথমে দেবীর, তারপর পুনর্ভূর, তার বাহিরে বেশ্যার ও তাহারও বাহিরে আন্তঃপুরুক নাটকীয়স্ত্রীগণের আবাসভূমির ব্যবস্থা করিবে।।৬০।।

সম্প্রতি যাহার বাসক (নির্দিষ্টবাসের সময়) অতীত হইয়াছে এবং যাহার ঋতুকাল উপস্থিত, তাহাদিগের পরিচারিকার সহিত মিলিত হইয়া, তাহাদিগের প্রহিত (প্রেরিত) অঙ্গুষ্ঠাঙ্গুলিচিহ্ন, অনুলেপন ও ঋতুকাল এবং বাসককথা দিনের বেলা শয্যোত্থিত রাজার নিকট বিজ্ঞাপিত করবে।।’৬১।।

তাহার মধ্যে রাজা যেটি গ্রহণ করিবেন, তাহারই সেই দিন বাসক আজ্ঞাপিত করিবে।।’৬২।।

উৎসবে ও সঙ্গীতদর্শনে সকলেরই অনুরূপ পূজা ও আপানক ব্যবস্থা কর্তব্য।।’৬৩।।

অন্তঃপুরচারিণীগণের বাহিরে নিষ্ক্রমণ ও বাহ্যস্ত্রীগণের অন্তঃপুরে প্রবেশ নিষিদ্ধ। অবশ্য শুচি থাকিলে এইরূপ ব্যবস্থা। অশুচি হইলে ইহার অন্যথাও কর্তব্য। রজোপচারে নিশ্চয়ই কদর্থিত হইবে না।।’৬৪।।

ইতি আন্তঃপুরিকনামক প্রকরণ।।

অথ বহ্বীপ্রতিপত্তিনামক প্রকরণ।।

যেমন রাজার বহু স্ত্রী হয়, সেইরূপ জানপদ ব্যক্তিরও বহু স্ত্রী হইতে পারে, সুতরাং সেই পুরুষের বহু স্ত্রীতে প্রতিপত্তির বিষয় কীর্তন করা যাইতেছে। অন্মধ্যে সামান্যত কিছু বলা যাইতেছে—
এ বিষয়ে কতকগুলি শ্লোক আছে—

পুরুষ বহুদার গ্রহণ করিয়া সকলের নিকট সমানভাবে থাকিতে চেষ্টা করিবে। তাহাদিগের উপর অবজ্ঞা প্রকাশ করিবে না। তাহা বলিয়া তাহাদিগের অপরাধ সহ্য করিবে না।।’৬৫।।
অন্যথা ক্ষমা করিলে আবার করিবে।।৬৭।।

একের সহিত মিলিত হইলে যে রতিক্রীড়া, শরীরজ বিকার বা প্রণয়কলহবশত যে তিরস্কারাদি হইবে, তাহা অন্যের নিকট বলিবে না।।’৬৬।।
কারণ তাহা অন্যের বৈরাগ্যহেতু হইতে পারে।।৬৬।।

সপত্নীর সহিত বিবাদ হইলে যদি একজন অভিযোগ উপস্থাপিত করে, তবে তাহাকে প্রশ্রয় দিবে না। বলিবে, ইহাতে দোষ তোমারই দেখিতেছি—এরূপ বলিয়া তাহাকেই তিরস্কার করিবে।।’৬৭।।

যে লজ্জাবতী, তাহাকে বিশ্বাসদ্বারা; যে সপত্নীর সহিত মিলিয়া-মিশিয়া থাকিতে ইচ্ছা করে, তাহাকে সকলের সমক্ষে পূজা করিয়া এবং যে মনস্বিনী, তাহাকে গৌরব প্রকাশ করিয়া—এইরূপে সকল স্ত্রীরই রঞ্জন করিবে।।’৬৮।।

যে উদ্যানগমনশীলা, তাহাকে উদ্যানগমন দ্বারা; যে পরিভোগলালসাসম্পন্না, তাহাকে ভোগদ্বারা; যে জ্ঞাতিপ্রিয়া, তাহাকে তজ্‌জ্ঞাতিপূজা দ্বারা, যে রতিপ্রিয়া, তাহাকে রতি প্রদান করিয়া অনুরক্ত করিবে।।’৬৯।।

যদি কোন যুবতী ক্রোধের জয় করিয়া যথাশাস্ত্র প্রবর্তিত হয়, তবে ভর্তাকে বশ করিতে ও সপত্নীগণের উপর অধিষ্ঠিত হইয়া থাকিতে পারে।।’৭০।।

ইতি শ্রীমদ্‌বাৎস্যায়নীয়কামসূত্রে ভার্য্যাধিকারিকনামক তৃতীয় অধিকরণে সপত্নীর মধ্যে জ্যেষ্ঠাবৃত্ত, কনিষ্ঠাবৃত্ত, পুনর্ভূবৃত্ত, দুর্ভগাবৃত্ত, আন্তঃপুরিক, পুরুষের বহ্বীপ্রতিপত্তিনামক দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত।।২।।

ইতি ভার্য্যাধিকারিকনামক তৃতীয় অধিকরণ সমাপ্ত।।৩।।



Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2