৬.০২ আলিঙ্গনবিচার

ষষ্ঠ ভাগ – দ্বিতীয় অধ্যায়

পূর্বাধ্যায়ে রতব্যাপারের ব্যবস্থাপন করা হইয়াছে। সম্প্রতি উপচারনির্ণয়ার্থ তাহার অঙ্গভূত চতুঃষষ্টিপ্রকার উপাঙ্গ নির্দেশ করিতেছেন—
পূর্বাচার্যগণ সম্প্রয়োগের অঙ্গ চতুঃষষ্টিপ্রকার বলিয়া থাকেন; কারণ, সম্প্রয়োগেই চতুঃষষ্টিপ্রকারময়।।’১।।

আচার্যগণ বলিয়া থাকেন, ঐপ্রকার চতুঃষষ্টি প্রকরণ অবলম্বন করিয়া এই কামশাস্ত্রের প্রবৃত্তি বলিয়া কামশাস্ত্রও চতুঃষষ্টিপ্রকার।
এই শাস্ত্রের সহিত চতুঃষষ্টির সম্বন্ধ থাকায়, শাস্ত্রের চতুঃষষ্টিপ্রকরণাত্মকতা নিতান্ত অনুপপন্ন নহে।

কলাও চতুঃষষ্টিপ্রকার। সেগুলিও সম্প্রয়োগের অঙ্গ; সুতরাং সেই কলাসমূহ বা চতুঃষষ্টি, সম্প্রয়োগের অঙ্গ। এই জন্য এ-শাস্ত্র সেই নামে অভিধেয়। তাহা এ-শাস্ত্রের একদেশ ও সাম্প্রয়োগিক অধিকরণ, তন্মধ্যে নির্দিষ্ট হইয়াছে। তাহার পর, দশমণ্ডলাত্মক ঋকে, দশাবয়ব সম্প্রয়োগে যে চতুঃষষ্টি, ইহা নাম করিয়া বলা হইয়াছে। এ-শাস্ত্রে সেই ঋক্‌প্রতিপাদিত বিষয়ের বিশেষ সম্বন্ধ থাকায় এবং পঞ্চালনামক ঋষিকর্তৃক ঋগবেদে চতুঃষষ্টি নিগদিত হইয়াছে বলিয়া বহ্বৃচগণ (ঋগবেদের ব্রাহ্মণগণ) পূজার্থে এই নাম প্রবর্তিত করিয়াছেন। এই কথা কেহ কেহ বলিয়া থাকেন।।’৩।।
সম্প্রয়োগের দশ অবয়ব, যথা—আলিঙ্গন, চুম্বন, দন্তকর্ম, নখক্ষত, সীৎকৃত, পাণিঘাত, সম্বেশন, উপসৃত, ঔপরিষ্ট এবং নরায়িত। বাভ্রব্যও পাঞ্চালকূলজাত ব্রাহ্মণ এই বিদ্যার উপদেষ্টা ছিলেন।।৩।।

বাভ্রব্যের মতানুসারিগণ বলিয়া থাকেন, আলিঙ্গন, চুম্বন, নখচ্ছেদ্য, দশনচ্ছেদ্য, সম্বেশন, সীৎকৃত, পুরুষায়িত ও ঔপরিষ্টক, এই আটটির আটপ্রকার ভেদ থাকায় ‘আট্‌-আট্টা’ চতুঃষষ্টি।।’৪।।

বাৎস্যায়ন বলেন—যেমন সপ্তপর্ণ-বৃক্ষ ও পঞ্চবর্ণ-বলি। এস্থলে সপ্তপর্ণ বৃক্ষের যে সমস্ত পল্লবেই সপ্ত সপ্ত করিয়া পর্ণ থাকে বা বলিতে যে পঞ্চবর্ণই থাকে, তাহা নহে। তবে তাহার মাত্রাধিক্য বা প্রায়িকত্বনিবন্ধন সপ্তপর্ণ (ছাতিয়ান), বা পঞ্চবর্ণ নামে ব্যবহার করা হয়; সেইরূপ এস্থলেও ঐ চতুঃষষ্টি কথাটি প্রায়িকরূপে নিশ্চিত ব্যবহার হয়, কারণ, যে আটটির বিকল্পভেদ আছে বলা হইয়াছে, তাহার মধ্যে কোন দুইটি ন্যুন বা কোন দুইটি অধিকও আছে। তদ্ভিন্ন প্রহণন, বিরুত, পুরুষোপসৃপ্ত ও চিত্ররতাদিও অন্য বর্গের, ইহার মধ্যে প্রবেশ করিবে। ইহা দ্বারা স্থির করিতে হয়, চতুঃষষ্টি কথাটি প্রায়িগকথন ভিন্ন আর কিছুই নহে।।’৫।।

-শাস্ত্র চতুঃষষ্টিকে অবলম্বন করিয়াই প্রবৃত্ত হইয়াছে। তাহার মধ্যে চতুঃষষ্টিকলা-ত বিদ্যাসানুদেশেই একপ্রকার ব্যাখ্যাত হইয়াছে, সুতরাং এখানে আর তাহার উল্লেখের কিছুই প্রয়োজন নাই। এখন পাঞ্চালিকী চতুঃষষ্টিপ্রকার কলার কথা বলা যাইতেছে—
তাহার মধ্যে আলিঙ্গনপূর্বকই চুম্বনাদিপ্রয়োগ হইয়া থাকে; সুতরাং অগ্রেই আলিঙ্গনবিচার করা যাইতেছে। আলিঙ্গন দুই প্রকার হয়—যাহার সমাগম পূর্বে হয় নাই, আর যাহার সমাগম পূর্বে ঘটিয়াছে। তাহার মধ্যে যে সমাগমরহিত নায়ক ও নায়িকা, তদুভয়ের আলিঙ্গন বলা যাইতেছে—
তাহার মধ্যে সমাগমরহিত নায়ক ও নায়িকাদ্বয়ের প্রীতির চিহ্ন প্রকাশার্থ আলিঙ্গন চারিপ্রকারের—স্পৃষ্টক, বিন্ধক, উদ্‌ঘৃষ্টক এবং পীড়িতক।।’৬।।

সর্বত্র নামের অর্থ দ্বারাই কর্মের স্বরূপ জানিতে হইবে। স্পৃষ্টক, অর্থাৎ স্পর্শ করিয়া থাকাই স্পৃষ্টক আলিঙ্গন। সেইরূপে, অন্যান্যগুলিও জানিতে হইবে।।’৭।।

নায়িকা সম্মুখে আসিতে থাকিলে যদি সাধারণভাবে তাহাকে আলিঙ্গন করিতে না পারা যায় অথচ তাহাকে নিজের অনুরাগ জানাইবার বিশেষ প্রয়োজন হয়, তবে অন্য কর্ম করিবার ছলে তাহার পার্শ্ব দিয়া যাইবার সময় গাত্রে গাত্রে স্পর্শ করানকে স্পৃষ্টক বলে।।’৮।।
ইহা যেন অন্যে জানিতে না পারে, এ ব্যক্তি জ্ঞানপূর্বক উহার গাত্রে নিজগাত্রের স্পর্শ করাইয়াছে।।৮।।
যাহাকে লক্ষ্য করিয়া বেধ করিতে হইবে, সে নায়ক কোন বিজনপ্রদেশে স্থিত বা উপবিষ্ট দেখিলে কিছু গ্রহণ করিবার ছলে নায়িকা পয়োধর দ্বারা নায়ককে বিদ্ধ করিবে। নায়কও বহুপাশ দ্বারা তাহাকে অবপীড়িত করিয়া ধরিবে। ইহাকেই বিদ্ধক বলে।।’৯।।

যে অপ্রাপ্তসমাগম নায়ক-নায়িকার সম্ভাষণ অতিপ্রবৃত্ত না হইয়াছে, ‘এ দুইটিই তাহাদিগের পক্ষে প্রযোজ্য জানিবে।।’১০।।
যাহাদের সম্ভাষণ একেবারেই হয় নাই, তাহাদিগের-ত ইহা একেবারেই অসম্ভব ও অপ্রযোজ্য।।১০।।

অন্ধকারে, জনসম্বান্ধে (বহুজনের যেখানে ভারি ঠেলাঠেলি, কোনও পর্বোপলক্ষে দেবালয়াদিতে, যাত্রাদিস্থানে ইত্যাদি), অথবা বিজনপ্রদেশে, ধীরে ধীরে বহুক্ষণ ধরিয়া নায়িকার গাত্রে ও নায়কের গাত্রে যে ঘর্ষণ, তাহাকে উদ্‌ঘর্ষণ বা উদ্‌ঘৃষ্টক বলে।।’১১।।
পরস্পরের ঘর্ষণকে উদঘৃষ্টক বলে, আর একের ঘর্ষণকে ঘৃষ্টক বলা হয়। তাহাও ইহার অন্তর্ভূত।।১১।।

সেই উদ্‌ঘৃষ্টকভাবে একটি কুড্যকে বা স্তম্ভকে সংদষ্ট (দুই বাহু দ্বারা জড়াইয়া ধরিয়া) করিয়া স্পষ্টই আপীড়িত করিবে। ইহাকে পীড়িতক বলে।।’১২।।
ইহাও দুইপ্রকার হইতে পারে—যে কোন অন্যকে এইরূপ অবপীড়িত করা বা স্তম্ভ-কুড্যাদি অবপীড়িত করা।।১২।।

সেই উদঘৃষ্টক ও পীড়িতক, যদি নায়ক-নায়িকারা পরস্পর পরস্পরের আকার-ভাবাদি জানিতে পারে, তবেই ব্যবহার্য।।’১৩।।

লতাবেষ্টিকত, বৃক্ষাধিরূঢ়ক, তিলতন্ডুলক এবং ক্ষীরনীয়ক,–এর চারিটি সম্প্রয়োগকালে কর্তব্য।।’১৪।।
যখন সমাগমকালে উভয়েই আদ্রীকৃত হইবে, সেই সময়েই এই উপগূহন চারিটি প্রয়োগ করিবে।।১৪।।

লতা যেমন বৃক্ষকে আবেষ্টিত করিয়া থাকে, সেইরূপ নায়ককে বাহুপাশ দ্বারা আবেষ্টিত করিয়া অতিরিক্ত শীৎকার না করিয়া চুম্মনার্থ মুখ উঠাইয়া নায়কের মুখ অবলামিত করিবে। অথবা সেইরূপে আবেষ্টিত করিয়াই আবার নিজাঙ্গ কিঞ্চিত উঠাইয়ে কিছু রমণীয়দর্শন বস্তু দেখাইবে। ইহাকে লতাবেষ্টিত বলে।।’১৫।।

একপদ দ্বারা নায়কের এক পদ আক্রান্ত করিয়া দ্বিতীয় পদদ্বারা উরুদেশকে আক্রান্ত করিয়া, কিংবা নায়কের পৃষ্ঠে একখানি হস্ত দ্বারা বেষ্টিত করিয়া দ্বিতীয় বাহুদ্বারা নায়কের অংস (বাহুমূল) অবনামিত করিয়া অল্প অল্প শীৎকরণ ও কুজন কূজন করিবে। চুম্বনের জন্যই আরোহণ করিতে ইচ্ছা করিবে। ইহাকে বৃক্ষাধিরূঢ়ক বলা হয়।।’১৬।।

এই দুটিই স্থিত ব্যক্তির কর্ম।।’১৭।।
উর্দ্ধস্থিত নায়ক-নায়িকার মধ্যে যাহার যাহাতে সুবিধা হয়, সে সেই ভাবেই রাগবৃদ্ধির জন্য এই কর্ম করিবে।।১৭।।

শয্যায় শায়িত নায়ক ও নায়িকা বামকক্ষ দিয়া দক্ষিণ বাহু ও দক্ষিণ কক্ষ দিয়া বাম বাহু এবং দক্ষিণপদের ঊরুর উপরে বাম ঊরু ও বাম ঊরুর উপরে দক্ষিন ঊরু বিন্যাস করিয়া অত্যন্ত গাঢ় সংঘর্ষ করিবার জন্যই যেন সুন্দররূপ পরস্পর পরস্পরকে আলিঙ্গিত করিয়া ধরিবে, ইহাকে তিলতগডুলক বলে।।’১৮।।

নায়কের ক্রোড়ে অভিমুখোপবিষ্ট-নায়িকার বা শয়নগত নায়িকার শরীর তাদৃশভাবে বেষ্টিত করিয়া রাগান্ধবশতঃ পরস্পর অস্থিভঙ্গাদি অপেক্ষা না করিয়াই যে পরস্পর পরস্পরের মধ্যে প্রবেশ করিবে। ইহাকে ক্ষীরনীরক বলে।।’১৯।।

সে দুইটিই রাগকালে প্রযোজ্য।।’২০।।
সম্প্রোয়গকালবিশেষকে রাগকাল বলে। যখন সাধন উচ্ছ্রিত হয় ও সম্বাধ ক্লিন্ন হয়, অথচ যন্ত্রযোগ আরম্ভ হয় নাই, তখনই পূর্বোক্ত দ্বিবিধ আলিঙ্গন কর্তব্য।।২০।।

বাভ্রব্যের মতানুসারে এইসকল আলিঙ্গন ব্যাখ্যাত হইল।।’২১।।
বাভ্রব্যই এই প্রকারের উপগূহন বা আলিঙ্গনযোগ বলিয়াছেন।।২১।।

সূবর্ণনাভের মতের একাঙ্গোপগূহনচুষ্টয়, বাভ্রব্যের মতে উক্ত অষ্টবিধ উপগূহন অপেক্ষা অধিক।।’২২।।
এই একাঙ্গালিঙ্গনচতুষ্টয় সম্প্রয়োগকালেই কর্তব্য, ইহা বলিতে হইবে; কারণ পূর্বোক্ত আলিঙ্গন সম্প্রয়োগকালে কর্তব্য বলিয়া মত প্রকাশ করা হইয়াছে।।২২।।

তাহার মধ্যে ঊরুসন্দংশ দ্বারা (সন্দংশ—বেড়ি) একটি বা দুইটি ঊরুকে সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করিয়া অবপীড়িত করিবে; ইহাকে ঊরুপগূহন কহে।।’২৩।।

জঘন দ্বারা জঘন অবপীড়িত করিয়া কেশকলাপ এলাইয়া দিয়া নখ, দশন, প্রহণন ও চুম্বনের প্রয়োগ করিবার জন্য স্ত্রী, পুরুষের উপরি অবস্থান করিবে। ইহাকে জঘনোপগূহন বলে।।’২৪।।

স্তনদ্বয় দ্বারা নায়কের বক্ষঃস্থলে যেন প্রবেশ করিয়া, সে স্থলে সমস্তভার অর্পণ করিবে। ইহাকে স্তনালিঙ্গন কহে।।’২৫।।
স্তনেই ভার অর্পিত করিবে। এইরূপে নায়ক স্তনভারাক্রান্ত হইলে, হৃদয়ে পিণ্ডীকৃত স্পর্শসুখ অনুভব করিবে।।২৫।।

মুখে মুখ দিয়া, চক্ষুতে চক্ষু দিয়া, ললাট দ্বারা ললাটে আঘাত করিবে। সেই ক্রিয়ার নাম ললাটিকা।।’২৬।।
উত্তানসম্পুট (নায়কোপরি নায়িকার অবস্থানবিশেষ, বুকোবুকি-ভাব) বা পার্শ্বসম্পুট অবস্থায় থাকিয়া, বক্ত্রে বক্ত্র সংযোজিত করিয়া, চক্ষুতে চক্ষু (দৃষ্টি লক্ষ্য করিয়া) মিশাইয়া, ললাটে ললাট দ্বারা দুই-তিনবার আঘাত করিবে। ইহা দ্বারা নায়কের ললাট, নিজের ললাটস্থ রঞ্জনদ্রব্য দ্বারা রঞ্জিত করা হইবে।।২৬।।

সম্বাহন এক প্রকার উপগূহন বা আলিঙ্গনবিশেষ; কারণ, তদ্বারা অত্যন্ত স্পর্শসুখের অনুভব হইয়া থাকে, এই কথা কেহ কেহ বলেন।।’২৭।।
তিন প্রকার সম্বাহন বা অঙ্গমর্দন ত্বক, মাংশ, ও অস্থি’র সুখকর বলিয়া তাহাও আলিঙ্গনবিশেষ বলিতে হইবে, ইহা কেহ কেহ বলেন।।২৭।।

বাৎসায়ন বলেন—সম্বাহন আলিঙ্গন হইতে সম্পূর্ণ পৃথক; কারণ, আলিঙ্গন ও সম্বাহন পৃথক পৃথক কালে প্রযোজ্য হইয়া থাকে। প্রয়োজনও ভিন্ন ভিন্ন এবং নায়ক-নায়িকা উভয়েরই স্পর্শসুখকারী নহে।।’২৮।।
যদ্যপি সংস্পর্শসুখ উভয়েরই আছে, তথাপি সম্প্রয়োগকালেই ঐ উপগূহন প্রযোজ্য এবং অন্যকালৈ সম্বাহন প্রযোজ্য; সুতরাং কালতঃ ভিন্ন উপগূহন একই সময়ে প্রযুক্ত হইলে, দুই-ই একই কালে কার্য্যকারী হয়। আর সম্বাহন, পুরুষকর্ত্তৃক প্রযুক্ত হইলে স্ত্রীর ও স্ত্রীকর্ত্তৃক প্রযুক্ত হইলে পুরুষের কার্য্যকারী হয়; সুতরাং আলিঙ্গন হইতে ভিন্ন; তদ্ভিন্ন সম্বাহন, অর্থের উদ্দেশ্যে প্রযোজ্য বলিয়া গীতাদিচতুঃষষ্টিকলার মধ্যে তাহার উল্লেখ করা হইয়াছে। কেবল স্পর্শসুখকারী বলিয়া যদি সেই সম্বাহনকে আলিঙ্গন মধ্যে ফেলিতে হয়, তবে চুম্বনও আলিঙ্গনমধ্যে অন্তর্ভূত হইতে পারে; সুতরাং সম্বাহন ও আলিঙ্গন একজাতীয় নহে ও একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার্যও নহে। বাৎসায়ন এইরূপ মনে করিয়া থাকেন।।২৮।।

আলিঙ্গন-বিধিতে আদর প্রদর্শন করিবার জন্য বলিতেছেন–
উপগ্রহণবিধির প্রশ্নকারী, শ্রবণকারী এবং কথনকারীনরেরও সম্পূর্ণভাবে রমনেচ্ছা হইয়া থাকে। আর যাহারা প্রয়োগকারী তাহাদিগের সম্বন্ধে আর বক্তব্য কী?’।।২৯।।

যাহা কিছু কথিত হইল, তদ্ব্যতীত অন্যবিধও যদি জানিতে পারা যায়, তবে তাহাও গ্রাহ্য; ইহা বলিতেছেন–
যেসকল অনুরাগবর্ধক আশ্লেষ এ শাস্ত্রে অভিহিত হয় নাই, অথচ লোকে বিদিত আছে, বা হইতে পারে, সেগুলির প্রয়োজন যখন সম্প্রয়োগের অনুরাগ বৃদ্ধিই, তখন আদরপূর্বক তাহার প্রয়োগ কর্ত্তব্য।।’৩০।।
যেগুলির অভিধায়ক শাস্ত্র আছে, সেগুলির সেইগুলিই শাস্ত্রিত, অর্থাৎ অনুশাসনপ্রাপ্ত। যেগুলি এবংবিধ নহে, অথচ স্বেচ্ছানুসারে উৎপ্রেক্ষিত মাত্র সেগুলিও সুরতব্যাপারে আদরের সহিত প্রযোজ্য বলিয়া জানিবে; যেহেতু, সম্প্রয়োগেই সেগুলির একমাত্র প্রয়োজন। অতএব প্রযোজ্য।।৩০।।

যাহার অনুশাসন শাস্ত্র-প্রযোজ্য নহে, তাহা বিপরীতফল-প্রদর্শক হইতে পারে; সুতরাং তাদৃশ আশ্লেষ কীরূপে গ্রাহ্য?
যতক্ষণ পর্যন্ত মানবের অনুরাগ মন্দীভূত থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্ত্র, অনুশাসনবলে তাহার বেগবৃদ্ধি করিয়া দিতে পারে; কিন্তু রতিচক্র প্রবর্তিত হইলে, শাস্ত্র ও ক্রম কিছুরই প্রয়োজন হয় না।।’৩১।।
অর্থাৎ, যেমন একটি ঘটীযন্ত্র যতক্ষণ পরিচালিত না হয়, ততক্ষণ তাহার পরিচালনার্থ কারুর অনেক কর্তব্যই বিদ্যমান থাকে; কিন্তু যখন যন্ত্রটি আপনা-আপনিই চলিতে থাকিল, তখন আর কারুর কিছুই কর্তব্য রহিল না। যাহা কিছু কর্তব্য ছিল, তাহার অবসান সেইখানেই হইল। আবার যদি কখনও বিকৃত হয়, তবেই কারুর আবশ্যক, নতুবা নহে। এস্থলে ঠিক এইরূপ; যতদিন সুরতচক্র প্রবর্তিত না হয়, ততদিন শাস্ত্রের পরিচর্যা কর্তব্য, শাস্ত্র যেপ্রকারে আলিঙ্গনাদির লক্ষণ করিয়াছে, সেগুলি স্বরূপতঃ ও অর্থতঃ গ্রহণ করিয়া শিক্ষা করা কর্তব্য; কিন্তু সুরতচক্র আপনা-আপনি চলিতে থাকিলে, তখন আর শাস্ত্রের কিছুই আবশ্যক থাকে না। তখনকার অনুশাসন-প্রণালীর আবিষ্কর্তা সেই সুরতব্যাপারই। তখন যাহা যেপ্রকারে সুবিধাকর ও অসুবিধাকর, তাহা সেই ব্যাপারই দেখিয়া লইবে; সুতরাং প্রয়োগ-পরিনিষ্ঠিত ব্যক্তির উদ্ভাবিত আশ্লেষাবশেষ যদি কিছু প্রকাশ পায়, তবে তাহা অবশ্য পরিগ্রাহ্য, এবিষয়ে সন্দেহ করিবার কিছুই নাই।।৩১।।

ইতি শ্রীমদ্‌-বাৎস্যায়নীয়কামসূত্রে সাম্প্রয়োগিকনামক ষষ্ঠ-অধিকরণে আলিঙ্গনবিচার নামক দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত।।২।।



Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2