৪.২ কান্তানুবৃত্তম্ (স্থায়ী প্রণয়িনীর অনুসন্ধান)

চতুর্থ ভাগ – দ্বিতীয় অধ্যায়

পূর্বাধ্যায়ে যাহা কথিত হইয়াছে, তাহাই স্পষ্ট করিয়া বলা এই অধ্যায়ের উদ্দেশ্য; সুতরাং কান্তানুবৃত্তনামক প্রকরণের আরম্ভ করা যাইতেছে—

নায়কের সহিত সংযুক্ত হইয়া নায়িকা নায়কের রঞ্জনার্থ (যদি একচারিণী হয়, তবে) একচারিণীবৃত্ত অনুষ্ঠান করিবে। যদি একচারিণী না হয়, তবে কান্তের মনোহনুকূল ব্যবহার করিয়া অনুরঞ্জন করিবে; কিন্তু তাহার প্রতি আসক্ত হইবে না। আসক্তের ন্যায় সমস্ত চেষ্টাই প্রকাশ করিবে। ইহা সংক্ষেপে বলা গেল। মাতার শীল (স্বভাব) অতীবক্রূরভাবাপন্ন হইবে এবং মাতা অর্থপর হইবে; নায়িকাও মাতার আয়ত্তা হইবে। মাতা না থাকিলে, কৃত্রিম মাতাকে (পাতান মাকে) তাদৃশ করিয়া তাহার আয়ত্ত হইবে। সেই মাতাও গম্য নায়ক দ্বারা অতীব প্রীত হইবে না। মধ্যে মধ্যে সেই মাতা যাইয়া বলপূর্বক দুহিতাকে (নায়িকাকে) আনয়ন করিবে—অর্থাৎ একটি গম্যনায়ককে নিরাশ করিয়া অন্য গম্যনায়কের অভিমুখে পরিচালিত করিবে। তারপর, সেই ব্যাপার লইয়া নায়িকার নিরবধি রম্যবস্তুতে অরতি নির্বেদ (বৈরাগ্য), ব্রীড়া (আমি কি করিয়া আর মুখ দেখাইব বলিয়া লজ্জা) ও ভয় (না জানি আমাকে কি করিবে বলিয়া) হইবে; কিন্তু মাতার শাসনের অতিক্রম করিবে না। একটি অকারণ-জনিত, অনিন্দনীয়, চক্ষুর্গ্রাহ্য না হয়, বহুকালস্থায়ী নহে, এরূপ ব্যাধির কথা প্রকাশ করিবে। কারণ থাকিলে, তাহার চ্ছলে নায়কের অভিগমন করিবে না; কিন্তু নায়কোপভুক্ত মাল্যাদির নির্মাল্য পরিবার জন্য, কিংবা কিছু তাম্বুল পাইবার জন্য নায়িকাই চেটিকাকে নায়কের নিকট পাঠাইবে—অর্থাৎ পীড়ায়-ত যাই, আর দেখা-সাক্ষাৎ হয় কিনা সন্দেহ; তবে যে থাকিতে পারি না, তাই চেড়ী পাঠাইতেছি। কিছু কিছু নির্মাল্য দিলে, তাহাই আমার তাপ নিবারণ করিবে। কি করিব?—ইত্যাদি কথার প্রেরণ-চ্ছলে উক্ত প্রার্থনা করিয়া পাঠাইবে।।’১।।

নায়ক সম্প্রয়োগ করিলে ও সম্প্রয়োগের উপচার সরক (মদ্যবিশেষ) ও তাম্বুলাদি প্রদান করিলে, তাহার বর্ণনায় বিস্ময় প্রকাশ করিবে। পাঞ্চালিকী চতুঃষষ্টি কলায় নায়কের শিষ্য হইতে অত্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করিবে। নায়ক যেসকল কলার উপদেশ করিবে, বারংবার তাহার অনুশীলনার্থ নায়ককে তাহারই অনুযোগ করিবে। যাহা হইলে নায়কের সুখ হয়, নির্জনে তাহারই অনুবৃত্তি করিবে। তারপর, নিজ মনোরথ—‘আমার মনের ভাব এই ছিল যে, কবে যে তোমার সহিত সুদীর্ঘ রজনীতে সপরিহাস সম্প্রয়োগ করিতে পারিব। তাহা এখন-ত পূর্ণপ্রায়। এখন বাঁচি আর মরি। তাহাতে আক্ষেপ নাই’—ইত্যাদির আখ্যান করিবে। গুহ্য, কক্ষ, ঊরু ও জঘন প্রদেশে যাহা কিছু বৈরূপ্য—দেখিতে বিকটতা, তাহার প্রচ্ছাদন করিতে যত্ন করিবে। নায়ক পরাবৃত্ত হইয়া শয়ন করিলে, নায়কের অভিমুখেই শয়ন করিবে এবং অনুদর্শন করিবে। নায়ক গুহ্যদেশ স্পর্শ করিতে প্রস্তুত হইলে, তাহার অনুকূলতাই করিবে। নায়ক নিদ্রিত হইলে চুম্বন ও আলিঙ্গন করিতে যত্ন পাইবে।।’২।।

নায়ক যখন অন্যচিত্ত হইয়া কিছু দর্শন করিবে, সেই সময়ে নায়ককে একদৃষ্টিতে প্রেক্ষণ করিবে। প্রাসাদস্থ নায়িকা নায়ককে দর্শন করতেছে, যদি ইহা নায়ক পথ হইতে দেখিতে পায়, তবে অত্যন্ত লজ্জা পাইবে। তাহার যেটি দ্বেষ্য, তাহার উপর দ্বেষ ও তাহার যেটি প্রিয়, তাহার উপর প্রেম করিবে। তাহার পক্ষে রমণীয় যেটি, তাহার উপর অনুরাগ প্রকাশিত করিবে। সে হর্ষ বা শোক পাইলে, হর্ষ বা শোক পাইবে। অন্যস্ত্রীতে নায়ক আসক্ত কিনা? তাহা জানিবার জন্য গুপ্তচরাদি দ্বারা অনুসন্ধানের ইচ্ছা করিবে। কোপ করিবে; কিন্তু দীর্ঘকাল স্থায় না হয়। নিজেরক-নখ-দর্শন-পদচিহ্ন করিয়াও অন্যা স্ত্রী করিয়াছে বলিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করিবে।।’৩।।

নায়িকা যে নায়কের প্রতি বিশেষ অনুরাগ করিয়া থাকে, তাহা কথায় প্রকাশ করিবে না; কিন্তু তাহা আকারেই দেখাইবে।–অর্থাৎ আমি তোমার উপর অত্যন্ত অনুরক্ত হইয়াছি, আমাকে কামনা কর—এরূপ বলিবে না। লজ্জাপরিহারার্থ কামাতুরা হইয়া থাকিবে। যদি তাহাতেও নায়ক বুঝিতে না পারে, তবে মত্ততাকালে বা স্বপ্নাদিতে ‘তোমার সম্ভোগ না করিতে পারিয়াই পীড়িত হইয়া পড়িয়াছি’—এই কথা প্রকাশ করিবে। নায়ক যে সমস্ত শ্লাঘাকর দেবগৃহ তড়াগাদি করিয়াছে, তাহার বর্ণনা করিবে। নায়ক কোনও কথা বলিতে থাকিলে, সে বাক্যার্থগ্রহণে যত্নবতী হইবে। যদি কোনরূপে অবজ্ঞা প্রকাশের আবশ্যক হয়, তবে অবজ্ঞা প্রকাশ ক্রিবে। আর যদি তাহার অবধারন করিয়া প্রশংসার আবশ্যক বোধ করে, তবে নায়কের প্রশংসা করিবে। ‘তাই-ত ভাল বলিয়াছ। এ তোমার মতো লোকেরই কথা। এরূপ না বলিলে কি মনুষত্ব থাকে’? ইত্যাদি। নায়কের যে বিষয়ে রুচি, তাহার অনুষ্ঠান করিবে। নিজের বুদ্ধিবৈদগ্ধ্যখ্যাপনার্থ নায়ক সে সকল কথা বলিবে, তাহার উত্তর যথাশ্রুত করিতে প্রয়াস পাইবে। বিশেষতঃ যদি নায়ক স্নেহবান্‌ হয়, তবে অবশ্যাবশ্য কথার প্রত্যুত্তর করিতে হইবে। নায়ক কথা বলিতে থাকিলে, তাহার অনুবর্তন করিবে—অর্থাৎ মুখের দিকে তাকাইয়া থাকা ও মধ্যে মধ্যে হুঁ দেওয়ার চেষ্টা করিবে। অন্যথা সে কথায় অবজ্ঞা করা হইবে।– কিন্তু যদি সপত্মীর কথা উঠিয়া থাকে, তবে তাহার উত্তর বা শ্রবণ না করিলেও ক্ষতি নাই, বরং ঈর্ষ্যাপ্রকাশ করিতে ত্রুটি করিবে না। দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়িলে—বিজৃম্ভণ (হাঁই) করিলে, কোনও দ্রব্য ভুলিয়া গেলে বা পড়িয়া যাইলে ‘এখন কোন অসুখ না হইলেই বাঁচি’,–এই কথা বলিবে। ক্ষুত (হাঁচি), বাহৃত (স্খলিতবাক্‌), বিস্মিত (বিস্ময়প্রাপ্ত) হইলে ‘জীব শত সহস্র’, বলিবে। যদি দৌর্মনস্যভাবে নায়ক অবস্থান করে, তবে পীড়া ও দৌহৃদ্য কারণ জিজ্ঞাসা করিবে। অন্যের গুণ অবলম্বন করিয়া তাহার বর্ণনা করিবে না। নায়কের সহিত তুল্যদোষ যে ব্যক্তি, তাহারও নিন্দা করিবে না। যাহা দিবে তাহাই ধারণ করিবে। নায়ক যখনই জানিতে পারিবে, নায়িকা অপরাধ করিয়াছে, তখনই সে অপরাধের ক্ষালনার্থ খেদ, অভ্যঙ্গ ও উপবাসাদি দ্বারা শরীরপীড়া দেখাইবে, কিংবা নায়কের পুত্রভ্রাতাদির নাশে বা ব্যাধিতে অলঙ্কারাদির ধারণ করিবে না। তদুপযুক্ত বিলাপ করিবে। নায়কের সহিত সে দেশ ছাড়িতেও প্রস্তুত আছে জানাইবে। অর্থাৎ বলিবে,–‘আমার মাতার যেরূপ বিষমস্বভাব, তা তুমি আমাকে চুরি করিয়া অন্যদেশে লইয়া যদি যাইতে পার, তবে ভাল হয়। আর যদি রাজার সাহায্যে, আমি পলায়িত হইলেও আমার মাতা আমাকে আনিতে চেষ্টা করে, তবে রাজার নিকট আমাকে ক্রয় করিয়া লইও। তাহা হইলে আর কোনও গণ্ডগোল হইবে না।’ নায়ককে প্রাপ্ত হইলেই আয়ুর সামর্থ্য প্রকাশ করিবে।–অর্থাৎ ‘যাহা প্রায়শঃ পাওয়া যায় না, তাহা পাইলে যে আয়ু বৃদ্ধি হয়, তাহা তোমার প্রাপ্তি হইতেই বুঝিতে পারিতেছি’—এইরূপ বলিবে। নায়কের অর্থাধিগম হইলে, অভিপ্রেতসিদ্ধি হইলে, শরীরের পুষ্টি সম্পাদিত হইলে, বলিবে—‘আমি ইহার জন্য কতই না ইষ্টদেবতার নিকট প্রার্থণা করিয়াছি। আজ আমার যিনি প্রার্থণা পূরণ করিয়াছেন, এখন তাঁহার পূজা দিব মানস পূর্ণ করিব।’ প্রত্যহ অলঙ্কার পরিধান করিবে। পরিমিত ভোজন করিবে। বহুভক্ষণ স্তনাদিপাতের কারণ। তাহার মধ্যে আবার স্নিগ্ধ-ভোজন করিবে। রুক্ষ জ্বরকারী। গীতে নাম ও গোত্র গ্রহণ করিবে।–অর্থাৎ ভণিতার ছলে নায়কের নাম ও গোত্রাদির পরিচয় করিবে। নায়কের গ্লানি উপস্থিত হইলে বক্ষঃস্থলে ও ললাটে, হস্ত দ্বারা নায়কের হস্ত গ্রহণ করিয়া দিবে। নায়কের হস্তস্পর্শসুখ অনুভব করিয়া নিদ্রালাভ করিবে। নায়কের ক্রোড়ে উপবেশন ও স্বপন (নিদ্রা করিবে)। গৃহ বা দেবতা দেখিতে নায়ক যাইতে থাকিলে তাহার অনুগমন করিবে। ‘আমি এখন ঋতুমতী হইয়াছি। এখন অন্যত্র শয়ন করিব না’—এই কথার ছলে নায়কের নিকট পুত্রার্থিনী হইবে। নায়ক অপেক্ষা অধিক দিন বাঁচিতে ইচ্ছা করিবে না।।’৪।।

নায়কের অভিজ্ঞাত কোনও বিষয় নির্জনে কাহারও সহিত প্রকাশ করিবে বা বলিবে না। নায়কের কোনও ব্রত বা উপবাস নিজেই করিবে। ‘ইহা করিলে আমাকে দোষ স্পর্শ করিবে,’—এই বলিয়া অশক্তি প্রকাশ করিলে নায়িকাও নিজে তদ্রুপা হইবে। অর্থাৎ ‘আমাতেও দোষ স্পর্শ করিবে। আমিও ইহা করিতে পারিব না।’ এই বলিয়া নায়কের ন্যায় অবস্থান করিবে। কোনও একটি বস্তু লইয়া বিপ্রতিপত্তির উপস্থিতি হইলে, সে তাহা পারে না, এই কথাই প্রকাশ করিবে। নায়কের বা নিজের কোনও দ্রব্য সমানভাবে দর্শন করিবে। নায়ক ব্যতীত কোনও গোষ্ঠীতে গমন করিবে না। নায়কের নির্মাল্য ও উচ্ছিষ্ট ভোজনে শ্লাঘা করিবে। পরের উচ্ছিষ্ট ও মাল্য বিষবৎ প্রদর্শন করিবে। নায়কের কুল উত্তম, শীল শোভন, শিল্প প্রকৃষ্ট, জাতি বিশুদ্ধা, ইহাই আম্বীক্ষিকী আদি বিদ্যা নির্মল্য, কনকপিঞ্জর স্বর্গ, ইহার ন্যায়ানুসারে ধন উপার্জিত, ইহার দেশ পূজ্য, মিত্রগণ গুণবান্‌ গুণগুলি, শোভন, বয়স এই প্রথম, বাক্য মধুর, এইরূপে পূজা করিবে। গীতাদিতে যে অভিজ্ঞ, তাহাকেই নিযুক্ত করিবে। ভয়, শীত, উষ্ণ ও বর্ষার অপেক্ষা না করিয়া অনুগমন করিবে। যখন জন্মান্তরের কথা উঠিবে, তখন বলিবে ‘সেই যেন আমার প্রিয় হয়।’ নায়কের ইষ্ট রস, ভাব, শীলাদিতে অনুবর্তন করিবে—অর্থাৎ নিজেও তাহা ভালবাসিবে। ‘কে যেন বশীকরণ করিতেছে যে, আমি যেন তোমার নিতান্ত অপ্রিয়া হই’—এইরূপ আশঙ্কা প্রকাশ করিবে। ‘আমি নায়কের অনুগমন করিব, তুমি কেন আমাকে ধরিয়া রাখিবে?’—এই কথা বলিয়া মাতার সহিত কৃত্রিম কলহ করিবে। যদি মাতা বলাৎকারে অন্যত্র নিয়া যায়, তবে ‘আমি বিষপানে মরিব। অনশনে দেহ ত্যাগ করিব। গলায় ছুরি দিব। গলায় রজ্জু দিব।’—এইরূপ বারংবার উচ্চৈঃস্বরে কামনা করিবে। তাহাদ্বারা নায়কের প্রত্যায়ন করিবে। অথবা নিজেই বলিবে যে, ‘বেশ্যার কি কুৎসিত জীবিকা। আমি যাহাকে ভালবাসি, যে আমাকে ভালবাসে, অর্থতৃষ্ণায় মাতা তাহার সহিত বিচ্ছিন্ন করিয়া দেয়। ধিক্‌ আমার বেশ্যাজীবনে।’ অর্থের জন্য কখনও বিবাদ করিবে না। মাতার অনুমতি ব্যতীত কিছুই করতে চেষ্টা করিবে না।।’৫।।

নায়ক প্রবাসে যাইতে উদ্যত হইলে ‘যদি শীঘ্র না আইস, তবে আমার মাথা খাও।’ এইরূপ শাপ প্রদান করিবে। নায়ক প্রোষিত হইলে শরীরসংস্কার ও অলঙ্কারধারণ প্রতিষিদ্ধ। শঙ্খ-বলয়াদি মঙ্গলাভরণ অবশ্যধার্য। অথবা একটি শঙ্খ ও একগাছি বলয় ধারণ করিবে। অতীতোপভোগের স্মরণ করিবে। যাহারা প্রশ্ন গণনা করিতে পারে, তাহাদিগের গৃহে গমন করিবে এবং নিশীথকালে শুভাশুভপরিজ্ঞানার্থ প্রথম বাক্য গ্রহণ করিতে রথ্যা ও চত্বরাদিতে গমন করিবে। এই নক্ষত্র, এই চন্দ্র, এই সূর্য, এই তারা, নায়ক দেখিয়া প্রীত হইতেন। আহা, কি প্রীতিদর্শন এগুলি!—এইরূপ করিয়া স্পৃহা প্রকাশ করিবে। রাত্রে শুভস্বপ্ন দেখিয়া প্রভাতে নায়কের কোনও লোকের নিকটে তাহার আমূল বর্ণনা করিয়া শেষে বলিবে, ‘আর কিছু হউক আর নাই হউক, ইনি এখন আসিলে, তাহার মুখ দেখিয়া বাঁচি’—এইরূপে সমাগম প্রার্থনা করিবে। নায়কের কোনও অনিষ্টকর সংবাদ পাইলে উদ্বেগ ও শান্তিকর্ম করিবে। নায়ক প্রত্যাগত হইলে কামপূজা করিবে। দেবতাদিগের উপহার দিবে, আর বলিবে, ‘আমার ইহা মানসিক ছিল।’ ‘ইষ্টবুদ্ধিতে স্বজনের নিকট হইতে যে উত্তরীয় বলপূর্বক কাড়িয়া লওয়া হয়, তাহাকে পূর্ণপাত্র বলে।’ সুখীগণ দ্বারা তাহার আনয়ন করিবে। ‘বল্লভ আসিলে তোকে যে পিণ্ড একটি দিব বলিয়াছিলাম, তাহা এই নে’—এই বলিয়া বায়সপূজা করিবে। নায়কের সহিত যে প্রথম সমাগম, তাহার পর সমাগমে এই কামপূজাদি কর্তব্য। ‘যে আমাকে এত ভালবাসে, যে এত সক্ত, সে মরিলে আমি কিছুতেই বাঁচিতে পারি না। আমিও সঙ্গে সঙ্গে মরিব।’—এই কথা বলিবে।।’৬।।

কে সক্ত, তাহা বলা যাইতেছে—
যে সকল প্রকারে বিশ্বস্ত, প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তিতে যে সমানভাবাপন্ন, যে নায়িকার প্রয়োজন জানিবামাত্রই তৎক্ষণাৎ তাহার পূরণ করে; যে তাহার নিকটে যাইতে কোন কিছুর আশঙ্কা করে না এবং যে ব্যক্তি কোন বিষয়ের অপেক্ষাই রাখে না, সেই ব্যক্তিই সক্ত বলিয়া কথিত।।’৭।।

ইহা দত্তকের প্রণীত শাস্ত্র হইতে উদ্ধার করিয়া কেবল নিদর্শনার্থ আমি প্রদর্শন করিলাম। আর যাহা অনুক্ত রহিল, তাহা পরের উপাসনা-কুশল ব্যক্তির নিকট হইতে ও পুরুষপ্রকৃতির পর্যালোচনা করিয়া গ্রহণ করিবে ও তদ্দ্বারা ব্যবহার করিবে।।’৮।।

এ বিষয়ে দুটি শ্লোক আছে—
স্ত্রীগণের ইচ্ছালক্ষণ কাম স্বরূপতঃ নিতান্ত দুর্বচনীয়—অর্থাৎ স্বাভাবিক, কি কৃত্রিম, তাহা সহজেই জানিতে পারা যায় না; কারণ কাম চিত্তের ধর্ম; তাহা-ত অতীন্দ্রিয়; সুতরাং অন্যন্ত সূক্ষ্ম। ক্রিয়া দ্বারাও তাহার সুজ্ঞান সম্ভবপর নহে; কারণ, লুব্ধা স্ত্রী স্বাভাবিক কামের ন্যায় রূপিত (অনুকরণ) করে; সুতরাং প্রবৃত্তিদ্বারা জানিতে পারা যায় না। বিশেষতঃ কামপন্না স্ত্রীতে পুরুষগণ বিশ্বাস করিয়া থাকে। অতএব তাহাদিগের স্বভাবতই রাগাচরণ সম্ভব; এইজন্য জানিতে পারা যায় না। তারপর, তাহাদিগের রাগের পরিজ্ঞানকর অভিযোগ দ্বারাও এটা স্বাভাবিক কি কৃত্রিম, তাহা বুঝিতে পারা যায় না। তাহারা কামনা করে, আবার কৃত্রিম কেলিবশে তার পরক্ষণেই বিরাগ প্রাপ্ত হয়। আবার কৃত্রিম কেলিবশে নায়ককে রঞ্জিত করে। আবার কিছুদিন পরেই সেই নায়ককে ত্যাগ করে; সুতরাং তাহারা—অর্থাৎ সেই সকল স্ত্রীগণ সকলপ্রকার অর্থ গ্রহণ করিয়াও সর্বথা জ্ঞায়মান হয় না। অতএব তাহাগিদের উপর কিছুতেই আসক্তি করিবে না।।’৯।।

ইতি কান্তানুবৃত্তনামক প্রকরণ।।
ইতি শ্রীমদ্‌বাৎস্যায়নীয়কামসূত্রে ধৈশিকনামক চতুর্থ অধিকারণে কান্তানুবৃত্তনামক দ্বিতীয় অধ্যায়।।২।।



Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2