৬.০৬ সম্বেশন-প্রকার ও চিত্ররত (স্ত্রী-পুরুষের দৈহিক মিলন)

ষষ্ঠ ভাগ – ষষ্ঠ অধ্যায়

পূর্বাধ্যায়ে দেশপ্রকৃতি-সাত্ম্যানুসারে আলিঙ্গনাদি-উপচার-সকল কথিত হইয়াছে; সুতরাং তদ্দ্বারা অনুরাগ বৃদ্ধি হইলে নায়ক-নায়িকা সম্বেশনের যোগ্য হইবে। তাহার প্রারম্ভে কদাচিৎ বিশেষভাবেও সম্বেশনে প্রবৃত্তি হইয়া থাকে। অতএব চিত্ররতও এই অধ্যায়ে কথিত হইবে। এই অধ্যায়ে সম্বেশনপ্রকার এবং চিত্ররত, এই দুইটি প্রকরণ থাকিবে।

রাগকালে মৃগী, উচ্চরত হইলে জঘন বিশালভাবে ফেলিয়া রাখিয়া সম্বিষ্ট হইবে।।’১।।
সাধনের উচ্ছ্রায়তা যৎকালে হইবে, সেই কালকে রাগকাল বলা যায়। সাধন ও সম্বাধের সংযোগার্থ যে আসনে উপবেশন বা শয়ন করা যায়, তাহাকে সামান্যত এই সম্বেশন শব্দে ব্যবহার করা হইয়া থাকে। এ প্রকরণে প্রমাণত রতের অধিকার করিয়া সম্বেশনপ্রকার কথিত হইবে। প্রমাণত উচ্চরত ও উচ্চতররতকালেও সম্প্রয়োক্ষ্যমাণা নায়িকা জঘনকে বিশাল করিয়া সম্বিষ্ট হইবে।।১।।

নীচরতে হস্তিনী, জঘনদ্বয় অবহ্রাসিত বা সংশ্লিষ্ট করিয়া (কুড়াইয়া লইয়া) সম্বিষ্ট হইবে।।’২।।
যাহা হইলে সম্বাধের মুখ সম্বৃত হয়, বৃষযোগে হস্তিনী এইরূপে সম্বেশন করিবে। শশযোগে নীচতররতে হস্তিনী, সম্বাধের হ্রাস যাহাতে হয়, তাদৃশ করিয়া ঊরুযুগল সংশ্লিষ্ট করিয়া সম্বেশ করিবে। ইহার অতিদেশন পরে কথিত হইবে।।২।।

যে স্থলে উভয়ের সমতা থাকিবে, সেখানে সমপৃষ্ঠভাবে সম্বেশ করিবে।।’৩।।
সঙ্কোচন ও প্রসারণ করিবার প্রয়োজন হইবে না বলিয়া জঘনপৃষ্ঠ সমান যাহাতে থাকে, তাদৃশভাবে সম্বেশ করিবে। ইহাতে উভয়েরই সমতার আনুকূল্য হইবে।।৩।।

মৃগী ও হস্তিনীর উচ্চরত, নীচরত ও সমরত-সম্বেশনপ্রকারদ্বারা বড়বার সম্বেশনপ্রকার কথিত হইল।।’৪।।

এ বিষয়ে কথিত হইয়াছে—
উচ্চরতে বিবৃতোরু, ঊরুদ্বয় বিবৃত করিয়া, (হাঁ করার ন্যায় করিয়া), নীচরতে সম্বৃতোরু—ঊরুদ্বয় সঙ্কুচিত করিয়া (মুখবোজার ন্যায় করিয়া) এবং সমরতে যথাস্থিতোরু (যেমন থাকে, সেইরূপ রাখিয়া) জঘনপৃষ্ঠকে সমান রাখিয়া সম্বেশন করিবে।।’৪।।
ইহার দ্বারা সম্প্রয়োগে প্রীতিসাম্য হইবার বিশেষ সম্ভাবনা।।৪।।
সম্বেশনের ফল প্রতিগ্রহ করা। অতএব প্রতিগ্রহবিষয়ে উপদেশ প্রদান করিতেছেন—
সঙ্কোচন, প্রসারণ ও সমপৃষ্ঠভেদে ত্রিবিধ সম্বেশনের যে কোন একটায় সম্বিষ্ট হইয়া নায়িকা নায়ককে জঘনপ্রদেশে, অর্থাৎ স্ত্রীকটির সম্মুখভাগের নিম্নদেশে প্রতিগৃহীত করিবে।।’৫।।

নীচরতে সবিশেষ অপদ্রব্য গ্রহণ করিবে।।’৬।।

যে যুক্তিবশে চলিলে বিবৃত বা সম্বৃতজঘন হইবে, তাহার ক্রম ক্রমশ বলিতেছেন–
উৎফুল্লক, বিজৃম্ভিতক ও ইন্দ্রাণিক—এই তিনপ্রকার মৃগীর প্রায়িক দেখিতে পাওয়া যায়।।’৭।।

সমরতে লৌকিকী যুক্তি কথিত হইয়াছে, শাস্ত্রীয় নহে। লোকে দেখিতে পাওয়া যায়—গ্রাম্য ও নগর ভেদে উত্তানশায়িনীর সম্বেশনদ্বয় প্রথিত আছে; এক পার্শ্বে, পার্শ্বে আর সম্পুটকভাবেও বিখ্যাত। সে তিনটিই সমপৃষ্ঠতা ঘটাইয়া দেয়। এবিষয়ে কথিত হইয়াছে–
সম্বেশনে আসীন নায়কের ঊরুর উপরে নায়িকার ঊরু বিন্যস্ত হইলে, তাহাকে গ্রাম্য বলা হয়। আর উত্তানশায়িনীর উপর শায়িত নায়কের ঊরুপরি নায়িকার ঊরু থাকিলে, তাহাকে নগর বলা যায়।।’৭।।
এই তিনটিই প্রচলিত।।৭।।

জঘনশিরোভাগকে শয্যায় বিনিপাতিত করিয়া (কটিস্থানে ভার রাখিয়া) জঘনকে উর্ধ্বমুখ করিলে, সম্বাধের যে উপরি-বিবৃততা হেতুক উৎফুল্লের ন্যায় হয়, তাহাকে উৎফুল্লক বলা হয়।।’৮।।

তাহাতে বারংবার অপসৃত করিয়া করিয়া সাধনদান করিবে।।’৯।।
হঠাৎ উপসৃপ্ত করিলে, সাধনের চর্ম অবপাটিত হইতে পারে। বৈদ্যেরা এই পীড়াকে অপপাটিকা বলে।।৯।।

ঊরুদ্বয় উচ্চদিকে বক্রভাবে অবসক্ত করিয়া অভিগত হইবে। ইহাকে বিজৃম্ভিতক বলা যায়।।’১০।।

উভয়পার্শ্বে সমানভাবে ঊরুদ্বয় বিন্যস্ত করিয়া, উভয় পার্শ্বে জানুদ্বয় (হাঁটুদ্বয়) স্থাপন করিবে। ইহার অভ্যাস যোগে ইন্দ্রাণিক নামক রত হইবে।।’১১।।
ঊরুদ্বয়ে জঙ্ঘাদ্বয় (গুল্‌ফ অবধি হাঁটুদ্বয় পর্যন্ত) সংশ্লিষ্ট করিয়া, উভয় পার্শ্বে জানুদ্বয় স্থাপন করিবে। অর্থাৎ কক্ষের বহির্ভাগে নায়িকার হাঁটু রাখিবে। শচী ইন্দ্রপত্মী এই প্রকার উপদেশ করিয়াছিলেন বলিয়া, ইহার নাম ইন্দ্রাণিক।।১১।।

ইন্দ্রাণিক দ্বারা উচ্চতররতেরও পরিগ্রহ করিতে পারে।।’১২।।

নীচরতে সম্পুট দ্বারা প্রতিগ্রহ করিবে।।’১৩।।

ইহাদ্বারা নীচতররতেরও সম্পুটক, পীড়িতক, বেষ্টিতক এবং বাড়বক—এই চারিপ্রকার হস্তিনীর পক্ষেই বিহিত জানিবে।।’১৪।।
শশ-আদির গ্রহণকালে পীড়তকাদি প্রয়োগ করিলে, আর ক্ষোভ হইবার আশঙ্কা থাকিবে না।।১৪।।

নায়ক ও নায়িকার চরণদ্বয় সরলভাবে প্রসারিত থাকিবে। ইহাকে সম্পুটক কহে।।’১৫।।
যাহা হইলে যন্ত্রযোগ সম্ভবে, তাদৃশ সরলভাবে প্রসারিত করিব। সম্পুটভাবে উভয়ে একত্র থাকায় সম্পুটক নাম।।১৫।।

তাহা দ্বিবিধ—পার্শ্বসম্পুট এবং উত্তানসম্পুট; সেই প্রকারে রতানুষ্ঠান হইয়া থাকে বলিয়া, ঐ নামে কথিত হইল। পার্শ্বভাগে শয়ন করিয়া নারীকে দক্ষিণ দিকে শায়িত করিবে। ইহা সার্বত্রিক।।’১৬।।

সম্পুটকে প্রযুক্ত যন্ত্রদ্বারা ঊরুদ্বয় দৃঢ়ভাবে পীড়িত করিবে। ইহাকে পীড়িতক কহে।।’১৭।।
নায়িকা উত্তানসম্পুটে বা পার্শ্বসম্পুটে সম্প্রযুক্ত হইয়া সেই অবস্থায় থাকিয়াই জঘনভাগ দ্বারা নায়কের ঊরুদ্বয় খুব জোরে আপীড়িত করিয়া ধরিবে। তাহাতে যুক্তযন্ত্র বিশ্লিষ্ট হইয়া যাইবে এবং খুব সম্বৃত হইবে, কিন্তু নায়ক চেষ্টা করিয়া যন্ত্রযোগ করিবে, পীড়িতক ছাড়াইবে না।।১৭।।

সম্পুটকে প্রযুক্ত যন্ত্রদ্বারা পরস্পর পরস্পরের ঊরু বেষ্টন করিবে। ইহাকে বেষ্টিতক বলা যায়।।’১৮।।

বড়বার ন্যায় সম্বাধের ওষ্ঠপুটদ্বারা সাধনকে নিষ্ঠুরভাবে গ্রহণ করিয়া ধরিবে। ইহা অভ্যাস করিয়া শিক্ষা করিতে হয়। ইহাকে বাড়বক বলে।।’১৯।।

অন্ধ্রদেশোৎপন্ন নায়িকারা (কলিঙ্গের পশ্চিম দেশকে অন্ধ্র বলে) প্রায়শ এই বাড়বক-রতের পরিতিত। ইহা সম্প্রদায়গত শিক্ষার ফল; সুতরাং বিজ্ঞেয়। বাভ্রব্য এই সপ্তপ্রকার সম্বেশন বলিয়াছেন।।’২০।।

সৌবর্ণনাভ বলিয়াছেন—হস্তিনী নায়িকা ঊরুদ্বয় ঊর্ধভাবে অবস্থাপিত করবে। ঊরুদ্বয় পরস্পর সংশ্লিষ্টভাবেই থাকিবে। ইহাকে ভূগ্নক কহে।।’২১।।

নায়ক, নায়িকার চরণদ্বয় নিজস্কন্ধদেশে স্থাপন করিয়া ঊর্ধভাবে ধারণ করিবে। ইহাকে জৃম্ভিতক বলা যায়।।’২২।।

নায়কের বক্ষঃস্থলে নায়িকার চরণদ্বয় ঊর্ধস্থিত বক্রভাবে স্থাপন করিবে। ইহাকে উৎপীড়িতক কহে।।’২৩।।
উভয়েই বক্ষঃস্থল বক্ষঃস্থল দ্বারা আশ্লিষ্ট করিতে চেষ্টা থাকিবে।।২৩।।

তদুভয়ের মধ্যে একখানি চরণ প্রসারিত করিয়া দিলে, তাহাকে অর্ধপীড়িতক কহে।।’২৪।।

নায়কের স্কন্ধে একখানি চরণ, অপরখানি প্রসারিত থাকিবে। এইরূপে বারংবার ব্যাতাস করিলে—অর্থাৎ একবার বামচরণ প্রসারিত, দক্ষিণ চরণ স্কন্ধস্থিত, আবার দক্ষিণ চরণ প্রসারিত, বামচরণ স্কন্ধস্থিত করিতে থাকিলে, তাহার নাম বেণুদারিতক বলা যায়।।’২৫।।

বাম বা দক্ষিণ চরণ নায়িকার মস্তকে থাকিবে, অন্য চরণ আধোভাবে থাকিবে। তাহাকে শূলাচিতক বলে। ইহার অভ্যাস না করিলে সিদ্ধি হয় না।।’২৬।।

নায়িকার চরণদ্বয় জানুসঙ্কোচ দ্বারা নায়ক নিজ নাভিমূলে স্থাপন করিবে। তাহাকে কার্কটক কহে।।’২৭।।

নায়িকার বাম ঊরু দক্ষিণদিকে ও দক্ষিণ ঊরু বামদিকে স্থাপন করিবে। তাহাকে পীড়িতক বলে।।’২৮।।

নায়িকা উত্তানভাবে শায়িত হইয়া, পদদ্বয় ঊর্ধভাবে লইয়া, পদ্মাসন করিবে। তাহাকে পদ্মাসন বলা যাইবে।।’২৯।।

নায়িকার পৃষ্ঠভাগে আশ্লেষ করিয়া, পরাঙ্মুখভাবে ব্যাপত থাকিবে। তাহাকে পরামৃত্তক বলে। ইহার অভ্যাস করা আবশ্যক।।’৩০।।
যন্ত্রকে বিশ্লিষ্ট না করিয়া পূর্বকায়ভাগ দ্বারা পরাবৃত্ত (ফিরে যাওয়া) নায়কের পৃষ্ঠভাগ আলিঙ্গন করিবে। নায়ক পরাঙ্মুখ হইয়া সম্প্রয়োগ করায় ইহার নাম পরাবৃত্তক। এইরূপে নায়িকাও পরাঙ্মুখী হইয়া সম্প্রয়োগ করিতে পারে। অভ্যাস ব্যতীত ইহার ব্যবহার করা যায় না। উভয় দেহভাগের পরিবর্তিত করিয়া সম্বিষ্ট নায়িকার পৃষ্ঠভাগ নায়ক আশ্লেষ করিয়া সম্প্রয়োগও করিতে পারে, সেটিও পরাবৃত্তক।।৩০।।

এই সম্বেশনগুলি চিত্র নহে; কারণ, স্থলদেশে থাকিয়া পৃষ্ঠভাগে বা পার্শ্বভাগে শয়ন প্রচলিত আছে। তদ্ভিন্ন যাহা কিছু, তাহাকেই চিত্ররত মধ্যে ফেলিতে হইবে। ইহা দ্বারাই তাহার বিষয় নির্দিষ্ট করিতে হইবে; ইহা বলিতেছেন—

সুবর্ণনাভ বলেন—জলদেশে সম্বিষ্ট বা উপবিষ্ট, কিংবা ঊর্ধস্থিতভাবে অবস্থিত থাকিয়া চিত্রযোগ কল্পিত করিয়া লইবে। সেইরূপেই ব্যাপার সুখকর হইবে।।’৩১।।
কূলে মস্তক রাখিয়া শায়িত, জলতলস্থ স্থলে উপবিষ্ট, কিংবা ঊর্ধস্থিতভাবে অবস্থিত থাকিয়া চিত্রযোগের অনুশীলন করিবে।।৩১।।

বাৎস্যায়ন বলেন—স্মৃতিকারগণ তাহার নিষেধ করিয়া গিয়াছেন বলিয়া, তাহা নিতান্তই অসার।।’৩২।।

এই পর্যন্তই সম্বেশনপ্রকারের প্রকরণ জানিবে।
ইহার পর চিত্ররতপ্রকরণ আরম্ভ করা যাইতেছে। তাহার যেরূপভাবে প্রকরণসম্বন্ধরক্ষা করিতে হইবে, তাহা দেখাইতেছেন—

ইহার পর চিত্ররত বলা যাইতেছে।।’৩৩।।
সম্বেশনপ্রস্তাবের মধ্যে চিত্ররত কিছু বিশেষ। অতএব সম্বেশন প্রকরণের পরেই তাহার প্রকরণ আরম্ভ করা যাইতেছে। বলিতে হইবে যে, ইহা স্থলপ্রযোজ্য, জলপ্রযোজ্য নহে।।৩৩।।

তন্মধ্যে ঊর্ধ্বপ্রক্রিয়াকে অধিকার করিয়া বলিতেছেন—
কোনও একটি কুড্য বা স্তম্ভের গায়ে ঠেস দিয়া ঊর্ধভাবে অবস্থিত হইয়া, পরস্পর পরস্পরকে ধরিয়া নায়ক-নায়িকা যে ব্যাপত হয়, তাহাকে স্থিতরত কহে।।’৩৪।।
ইহা তিন প্রকা—ব্যায়তসম্মুখ, দ্বিতল এবং জানুকূর্পর। নায়িকার একখানি পা তুলিয়া ধরিয়া, নায়ক যে ব্যাপার করে, তাহাকে ব্যায়তসম্মুখ; নায়িকার কুঞ্চিত জানুদ্বয় নায়ক দুই হাতে ধরিয়া রাখিয়া যে ব্যাপার করে, তাহাকে দ্বিতল এবং নায়ক কূর্পরের উপর (কনুইয়ের উপর) কুঞ্চিত-স্ত্রীজানুদ্বয় রাখিয়া নায়ক যে ব্যাপার করে, তাহাকে জানুকূর্পর কহে। ইহা অতীব সাবধানপ্রযোজ্য। এ বিধি অত্যন্ত বিশুদ্ধ, এই কথা পূর্বাচার্যগণ বলিয়া থাকেন।।৩৪।।

কুড্য বা স্তম্ভাশ্রিত নায়কের কন্ঠদেশ বাহুপাশ দ্বারা আশ্লিষ্ট করিয়া, পৃষ্ঠদেশে বিলম্বিত নায়কহস্তের উপরি উপবিষ্ট নায়িকা, ঊরুপাশ দ্বারা নায়কের জঘন বেষ্টন করিয়া থাকিবে এবং কুড্য বা স্তম্ভে বারংবার চরণবিক্ষেপ করিয়া কটিপ্রেঙ্খন (কটি-চালনা) করিতে থাকিবে। ইহাকে অবলম্বিতক কহে।।’৩৫।।

ভূমিতে চতুষ্টপদের ন্যায় অবস্থিত নায়িকার কটিভাগে নায়ক বৃষচেষ্টা দ্বারা অভিপতিত হইবে। ইহাকে ধেনুক কহে।।’৩৬।।

তাহাতে বক্ষঃস্থলসাধ্যকর্ম নায়িকাপৃষ্ঠেই সাধিত করিবে।।’৩৭।।

ইহা দ্বারাই শৌন (কুক্কুরবৎ), ঐণেয় (হরিণবৎ), ছাগল (ছাগবৎ), গর্দভাক্রান্ত (গর্দভবৎ), মার্জারললিতক (বিড়ালবৎ), বাঘ্রাবস্কন্দন (ব্যাঘ্রবৎ), গজোপমর্দিত (হস্তিবৎ), বরাহঘৃষ্টক (শূকরবৎ) এবং তুরগাধিরূডঢ়ক (অশ্ববৎ) প্রয়োগগুলিকে তত্তন্নামে কথিত করা যায়। এতদ্ভিন্ন যে স্থলে কিছু বিশেষত্ব আছে, তাহা দেখিয়া ঠিক করিয়া লইবে।।’৩৮।।

উভয়-নায়িকার বিশ্বাস জন্মাইয়া, যদি একই শয়নে সেই দুইজনকে অবলম্বন করিয়া, ব্যাপার করিতে পারা যায়, তবে তাহাকে চিত্রসঙ্ঘাটক বলা যায়।।’৩৯।।

যদি বহু-নায়িকাকে তাদৃশপ্রকারে অবলম্বন করিয়া, নায়ক ব্যাপারে রত হইতে পারে, তবে তাহাকে গোযূথিক নামে আখ্যাত করা যায়।।’৪০।।

ছাগ বা হরিণের ব্যাপারের অনুকরণ করিয়া, কিংবা জলভাগে ক্রীড়নকারী গজের ন্যায় নায়ক ব্যাপারে লিপ্ত হয়, তবে ক্রমে ছাগল, ঐণেয় এবং বারিক্রীড়িতক বলা যায়।।’৪১।।

স্ত্রীরাজ্যের সমীপে পরদিকে গ্রাম-নারীদেশ। তথায়, স্ত্রীরাজ্যে ও বাহ্লীকদেশে বহুযুবক একত্রক স্ত্রীর পরিগ্রহভূত হইয়া অন্তঃপুর মধ্যে রক্ষিত হইয়া থাকে। তথায় তাহারা সেই একই স্ত্রী কর্তৃক একইকালে স্বভাবানুসারে যেমন সম্ভব, সেইরূপে অনুরঞ্জিত হইয়া থাকে। সেইরূপেই তাহারা একই স্ত্রীকে অনুরঞ্জিত করিবে।।’৪২।।

সেই সময়ে বহু নায়কের কর্তব্য কি, তাহা বলিতেছেন—
নায়িকাকে একজন ক্রোড়াশ্রিত করিয়া রাখিবে, অন্যে মুখ নিষেবণ করিবে। অপর একজন জঘন-সেবা করিবে, ইতরে মুখজঘনের মধ্যভাগে চুম্বন নখচ্ছেদ্য ও প্রহণন করিবে। কেহ বা নখদশনচ্ছেদ্য প্রদান করিবে। এইরূপে বারংবার পরিবর্তিত কর্মের সাহায্যে তাহার অনুরাগের পরিতৃপ্তি সাধন করিবে।।’৪৩।।

এই ব্যাপার দ্বারা গোষ্ঠীতে পরিগ্রহীত-বেশ্যা ও অন্তঃপুরচারিণীগণ কর্তৃক গৃহীত পরপুরুষের ব্যাপারও ব্যাখ্যাত হইল। রাজার অন্তঃপুরের বহু স্ত্রী মিলিত হইয়া, যে পরপুরুষকে গ্রহণ করিবে, তাহাদিগেরও সেইরূপ একার প্রতি বহুকর্তৃক, কিংবা বহুর প্রতি একের রত-ব্যতিকর ব্যাখ্যা করা হইল।।’৪৪।।

দক্ষিণাত্যগণ পায়ুস্থানেও অধোরতব্যাপার সাধিত করে। এই পর্যন্তই চিত্ররত ব্যাখ্যাত হইল।।’৪৫।।

এই বিমার্গমেহন তৃতীয়প্রকৃতি-বিষয়ক; (ক্লীব) কারণ, ঔপরিষ্টক ব্যাপার স্ত্রীপুরুষের প্রয়োজন হয় না। যদিই তাহারা এই বিমার্গ মেহন অবলম্বন করে, তবে যে তাহাদিগের পক্ষে চিত্ররত হইবে না, এরূপ নহে; তবে এটি অত্যন্ত গর্হিত বলিয়া, ইহাকে অধোরতনামে অখ্যাত করা হইয়াছে। ইহার অধমতা-হেতুই ঐ নাম প্রদত্ত হইয়াছে।।৪৫।।

পুরুষোপসৃপ্তকগুলি পুরুষায়িতপ্রকরণে বলিব।।’৪৬।।
যদ্যপি পুরুষোপসৃপ্তকগুলি সম্বেশনান্তরই বলা উচিত ছিল; কারণ, এই অবসরই তাহার প্রকৃত সময়; তথাপি তাহা পুরুষায়িতপ্রকরণে বলা যাইবে। তখনই তাহার বিষয়গুলি বুঝিবার সুন্দর অবকাশ আসিয়া উপস্থিত হইবে।।৪৬।।

এ বিষয়ে দুইটি শ্লোক আছে–
যাহাদিগের কেবল অধোদশন আছে, সেই সকল পশুদিকের, যাহাদিগের ঊর্ধাধোদশন আছে, সেই সকল মৃগদিগের এবং পক্ষিগণের স্বরগত ও কায়গত চেষ্টিত দ্বারা, স্ত্রীচিত্ত বুঝিয়া রত্যর্থ যোগের বর্ধন করিবে।।’৪৭।।

সে যোগের বৃদ্ধিতে কি ফল, তাহা বলিতেছেন—
স্ত্রীর প্রকৃতি ও দেশস্বভাবানুসারে সেই সেই পশ্বাদিকৃত স্বর ও কায়চেষ্টিত ভাব দ্বারা স্বীয়ভাব প্রযোজিত হইলে, স্ত্রীগণের স্নেহ, রাগ ও গৌরব বৃদ্ধি পায়। স্ত্রীগণ অত্যন্ত আসক্ত, তৃপ্ত ও গৌরব প্রকাশ করিয়া থাকে।।’৪৮।।

 

ইতি শ্রীমদ্‌-বাৎস্যায়নীয়কামসূত্রে সাম্প্রয়োগিকনামক ষষ্ঠ-অধিকরণে সম্বেশনপ্রকার ও চিত্ররতনামক ষষ্ঠ অধ্যায় সমাপ্ত।।৬।।



Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2