৬.০৭ প্রহণনপ্রয়োগ ও তদ্‌যুক্ত সীৎকৃতক্রম

ষষ্ঠ ভাগ – সপ্তম অধ্যায়

এইরূপে সম্বিষ্টা নায়িকার যন্ত্রযোগ হইলে, প্রধানত প্রহণনপ্রয়োগ করা বিধেয় এবং প্রহণনের প্রয়োগ করিলে, তৎপ্রভাব সীৎকৃতও হওয়া উচিত। সুতরাং প্রহণনযোগ ও সীৎকৃত অবলম্বন করিয়া দুইটি প্রকরণ আরম্ভ করা যাইতেছে।

প্রহণন ত দ্বেষজনিত; তাহা কিরূপে সুরোতপযোগী হইতে পারে, তাহার বিষয় কথিত হইতেছে—

প্রথমত সুরতব্যাপারটি কলহসদৃশ; কারণ, স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই স্ব স্ব অভিপ্রায়সিদ্ধির জন্য সম্প্রযুক্ত হইয়া থাকে। এইজন্য বলিতে হয়, সুরতব্যাপার বিবাদাত্মক। তারপর, কাম সুকুমারব্যাপারজন্মা হইলেও সুরতকালে নির্দয়োপক্রমেই অতিবাহিত হইয়া থাকে; সুতরাং হেতু ও ফলভেদে অবস্থান করায় কামের স্বভাব দ্বিবিধ।।’১।।

অতএব, সুরতের প্রহণনস্থান আঙ্গ, অর্থাৎ উপকরণ—স্কন্ধদ্বয়, মস্তক, স্তনযুগলের মধ্যে, পৃষ্ঠ, জঘন ও পার্শ্ব। এইগুলিই সাধারণত স্থান।।’২।।

তাহা চতুর্বিধ; অপহস্তক, প্রসৃতক, মুষ্টি এবং সমতলক, এই কয়প্রকার জানিবে।।’৩।।
অপহস্তক—হস্তপৃষ্ঠ, প্রসৃতক পরে বলিবেন; মুষ্টি—প্রসিদ্ধ এবং সমতলক—চপেট।।৩।।

দ্বিতীয় প্রকরণ যে প্রহণনান্তর্গত তাহা দেখাইতেছেন—

সীৎকার সেই প্রহণন হইতেই উৎপন্ন হয়; সুতরাং সীৎকৃত তাহারই ফলস্বরূপ। তাহা অনেকবিধ।।’৪।।

বিরুত আট প্রকার।।’৫।।
যদ্যপি সীৎকৃত, প্রহণনপীড়া হইতেই উত্থিত শব্দ, তাহার সহিত বিরুতধ্বনির কোনই সম্বন্ধ নাই, তথাপি বিরুত ও সীৎকৃত উভয়েই ধ্বনি-স্বভাব বলিয়া, একই প্রকরণে কথিত হইয়াছে; বিরুত অষ্টবিধ। বিরূত ধ্বনি রতিজন্য হয়। তাহা প্রহণন থাকুক, আর নাই থাকুক, অত্যন্ত মনোজ্ঞ বলিয়া প্রযোজ্য। সীৎকৃত কিন্তু কেবল প্রহণন হইতেই উত্থিত হইয়া থাকে; সুতরাং বিশেষ পার্থক্য আছে। এজন্য উভয়কেই পৃথক পৃথক বলা হইল।।৫।।

হিংকার, স্তনিত, কুজিত, রুদিত, সূৎকৃত, দূৎকৃত এবং ফুৎকৃত—এই সাতটি অব্যক্তাক্ষর শব্দ।।’৬।।

হিং’ শব্দের অনুকরণে যে শব্দ হইয়া থাকে, তাহাকে হিংকার কহে। সুরতকালে কটিপ্রেঙ্ক্ষণ সময়ে (কটির প্রত্যেক চালনে) যে অনুকরণ করা হয়। উক্ত প্রকারেই নিষ্পাদিত। ‘হং’ শব্দের অনুকরণে যে শব্দ হয়, তাহাকে স্তনিত কহে। আর রুদিত রোদনের ন্যায়; তবে তাহা মনোহারি হইয়া থাকে, এইটুকু বিশেষ। সূৎকৃত বা সূৎকরণ নিশ্বাসের বেগজ শব্দকেই বলিয়া থাকে। কুজিতাদির লক্ষণ পরে বলিবেন।।’৬।।

অস্বার্থ (মাগোঃ! ইত্যাদি), মোক্ষনার্থ (ছাড় না, সর ইত্যাদি), বারণার্থ (থাক, না ইত্যাদি), অলমর্থ (আরোঃ-আরোঃ ইত্যাদি), শব্দও সেই অর্থে ব্যবহার হইয়া থাকে। তাহা শুনিতে মধুর; কিন্তু অর্থত তাহার কিছুই নাই, কেবল উচ্ছ্বাসবশে কথিত হয়।।’৭।।
এতদ্ভিন্ন আরও (ম’লাম যে, ওগো বাঁচাও গো, ইত্যাদি) শব্দ ব্যবহার হইয়া থাকে। তাহাও পীড়ার্থক; কিন্তু তাহারও কিছুই অর্থ নাই, কেবল উচ্ছ্বাসদ্যোতক বুঝিতে হইবে।।৭।।

পারাবত, কোকিল, হারীত (হরিতাল-ঘুঘু), শুক, মধুকর, দাত্যূহ (ডাহুক), হংস, কারণ্ডর (বালিহাঁস) ও লাবকের (লাওয়ার) বিরুত (শব্দ), সীৎকৃতের সহিত প্রচুর পরিমাণে থাকিয়া থাকিয়া প্রয়োগ করিবে।।’৮।।

প্রহণন ও সীৎকৃত যে দেশে এবং যে অবস্থায় প্রযোজ্য, তাহা কীর্তন করিতেছেন—

ক্রোড়ে উপবিষ্টার পৃষ্ঠে মুষ্টি প্রহার করিবে।।’৯।।

মুষ্টি প্রহার করিলে যেন তাহা সহিতে না পারিয়াই স্তনিত, রুদিত ও কূজিত শব্দ করিয়া তাহার প্রতিঘাত করিবে।।’১০।।

উত্তানশায়িনীর সম্বাধে সাধন-যোগানন্তর স্তুনযুগলমধ্যে অপ-(অর্দ্ধচন্দ্রাকৃত) হস্তক দ্বারা প্রহার করিবে।।’১১।।

যতক্ষণ ক্রিয়াপরিসমাপ্তি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত—আরম্ভকাল হইতেই উপক্রম করিয়া, যতক্ষণ তাহার রাগবৃদ্ধি না হইবে, ততক্ষণ পর্যন্ত।।’১২।।
স্ত্রীলোকের রাগস্থান তিনটি; মস্তক, জঘন ও হৃদয়। এই কয় স্থানে আঘাত করিলে, চিরচণ্ডবেগাও অতিসত্বরই রাগমোচন করিয়া ফেলে।।১২।।

সে সময়ে, হিংকারাদির অনিয়মে, বারংবার এবং বিকল্পের অনুসারে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োগ করিবে।।’১৩।।
অর্থাৎ যতক্ষণ অপহস্তক দ্বারা প্রহার করিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত হিংকারাদি শব্দ মৃদু মধ্য ও অতি তীব্রবেগে বারংবার করিবে।।১৩।।

যদি বিবাদ করিতে অভ্যুত্থিত (অগ্রসর) হয়, তবে করতল ফণাকার করিয়া, নায়িকার মস্তকে ফূৎকার করিয়া, যে প্রহার করা যায়, তাহাকে প্রসতক কহে।।’১৪।।

প্রসৃতকের আঘাতকালে অন্তর্মুখ দ্বারা (জিহ্বা দ্বারা ও গাল দ্বারা) কূজিত ও ফূৎকৃত শব্দ করিবে।।’১৫।।

রতান্তে শ্বসিত ও রুদিত কর্তব্য। বাঁশ ফুটিয়া যে শব্দ করে, তাহাকে দূৎকৃত কহে। জিহ্বা দ্বারা ‘টক্কর’ দেওয়ার অনুকরণ।।’১৬।।

জলে কুল পড়িলে যে শব্দ হইয়া থাকে, তাহার অনুকরণ করাই ফূৎকৃত।।’১৭।।

সর্বত্রই চুম্বনাদি করিয়া ছাড়িয়া দিলে, নায়িকা সীৎকারের সহিত প্রতিচুম্বনাদি দিয়া প্রত্যুত্তর করিবে। এইরূপ নায়কও করিবে।।’১৮।।
যে আকারের চুম্বনাদি করিবে ও সীৎকারাদি করিবে সেই আকারে করিয়া প্রত্যুত্তর দিতে হইবে।।১৮।।

নায়ক রাগের উদ্রেকবশত বারংবার প্রহার করিতে থাকিলে বারণ, মোক্ষণ, অলমর্থ ও অম্বার্থ শব্দ, বিরুত, খিন্ন, শ্বসিত ও রুদিতের সহিত স্তনিত-শব্দের মিশ্রণ করিয়া, প্রয়োগ এবং সাধন হইতে রতি আসন্ন জানিয়া জঘনে ও বক্ষস্থলে সমতল বা সমতলক দ্বারা তাড়ন করিবে। অত্যন্ত ত্বরাসহকারে তাড়ন করিলে, স্খলনোম্মুখ রতি নিবর্তিত হইবে। এইরূপ যতক্ষণ পরিসমাপ্তি না হয়, করিবে।।’১৯।।

সমতল কর তাড়ন করিলে, অতি সত্বর লাবক ও হংসের ন্যায় বিকুজিত করিবে। এই প্রকার স্তনন ও প্রহণনযোগ।।’২০।।

সীৎকৃত ও বিরূত শব্দের সহিত প্রহণনের প্রয়োগ কথিত হইল। এক্ষণে স্ত্রী ও পুরুষের প্রহণন ও সীৎকৃত বিষয়ে কাহার কত তেজঃ সহজ, তাহা বলিতেছেন–
চিত্ত ও শরীরে কঠোরতা, অবিমৃষ্যকারিতা বা ধৃষ্টতা এতদুভয় পুরুষের তেজঃ সহজ; সুতরাং পুরুষ এই অনুসারে প্রহার করিয়া থাকে। অশক্তি—অর্থাৎ হননে অসামর্থ, হস্তসৌকুমার্যবশত পীড়া, মারিতে যাইয়া হাত ফিরাইয়া লওয়া এবং অবলত্ব নিষ্প্রাণতা, এইগুলি স্ত্রীলোকের তেজঃ বা সহজ ধর্ম। ইহাই যে সর্বত্র, তাহা নহে; ইহার ব্যতিক্রমও দেখা যায়; কারণ, রাগের উৎকর্ষে বা দেশস্বভাবানুসারে স্ত্রীও পুৎধর্মে দীক্ষিত হয়; সুতরাং তখন স্ত্রীধর্ম গ্রহণ করিয়া, পুরুষ সীৎকৃত ও বিরুত করিবে; কিন্তু তাহা কিছুকাল করিবে, তাহার পরেই আবার পুরুষ পুৎধর্মের যোজন করিবে।।’২১।।

প্রহণন চতুর্বিধ বলা হইতেছে, তাহাই আবার অষ্টবিধ করিয়া দেখাইতেছেন–
বক্ষঃস্থলে কীল, মস্তকে কর্তরী, কপোলদেশে বিদ্ধা, স্তনযুগলে সন্দংশিকা, পার্শ্বদেশেও সন্দংশিকা, এই চারিটি, পূর্বকথিত চারিটির সহিত আটটি প্রহণন দাক্ষিণাত্যদিগের মধ্যে প্রচলিত আছে। দাক্ষিণাত্য যুবতীদিগের বক্ষস্থলে দাক্ষিণাত্যগণ কীল প্রহার করে দেখিতে পাওয়া যায়। ইহা সেই দেশের স্বভাব।।’২২।।

মুষ্টিই কীলা হয়, যদি তর্জনী ও মধ্যমার বহিঃপৃষ্টভাগ নিষ্ক্রান্ত করিয়া দিয়া, তাহার উপরিভাগে অঙ্গুষ্ঠ-যোজনা করা হয়; তাহাকে অধোমুখ করিয়া তাড়ন করা হয়। কর্তরী দ্বিবিধ; প্রসৃতাঙ্গুলি ও কুঞ্জিতাঙ্গুলি ভেদে। তাহার মধ্যে আবার প্রসৃতাঙ্গুলি দ্বিবিধ; এক হস্তে ভদ্রকর্তরী এবং সংশ্লিষ্ট উভয় হস্তে যমলকর্তরী। আর যে কুঞ্জিতাঙ্গুলি কর্তরী, তাহা অঙ্গুষ্ঠের অগ্রের উপরি বিন্যস্ত কুঞ্চিত তর্জনী; তাহাকে শব্দকর্তরী কহে। তাহার প্রয়োগ করিলে শ্লথাঙ্গুলি বলিয়া অমিতশব্দবর্তী হয়। ইহাকে কেহ কেহ উৎপলপত্রিকাও বলিয়া থাকেন। এই উভয় দ্বারাই কনিষ্ঠাগ্রভাগের সাহায্যে মস্তকে প্রহার করিবে। তর্জনী ও মধ্যমার মধ্যভাগ দিয়ে অঙ্গুষ্ঠকে বাহিরে নিলে বা মধ্যমা ও অনামিকার মধ্য দিয়া অঙ্গুষ্ঠকে বাহিরে নিলে, যে বদ্ধমুষ্টি হয়, তাহাকে বিদ্ধা কহে। তদ্দ্বারা কপোল ব্যাধন করিবে। মুষ্টিই তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা বা তর্জনী ও মধ্যমা দ্বারা বেড় দিয়ে ধরাকে সন্দংশিকা কহে। তদ্বারা স্তনযুগলের বা পার্শ্বযুগলের মলনপূর্বক মাংসের আকর্ষণ করাকে তাড়ন বলা যায়। ইহা দাক্ষিণাত্যদিগের মতে অষ্টবিধ; কিন্তু আচার্যের মতে চতুর্বিধ। কেবল উরঃস্থলেই নহে; কিন্তু মস্তকে, সীমন্তমুখে ও কপোলদ্বয়ে। ইহা এরূপ দৈশিকব্যবহার যে রাগবশত কৃতপ্রহারে চিহ্ন জন্মাইলে, বা তদ্দ্বারা বিরূপতা ঘটিলেও তাহা শ্লাঘনীয় বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে। তাই বলিয়া, তাহা আর অন্যত্র প্রযোজ্য হইতে পারে না।।২২।।

আচার্য বাৎস্যায়ন বলেন—এইরূপ অসাধুচরিত, দুঃখাবহ নির্দয় কর্ম নিতান্ত অনাদরণীয়; কারণ, ইহা অত্যন্ত দোষাবহ।।’২৩।।

সেইরূপ অন্যান্য নির্দয়কর্মও, যাহা অনার্যচরিত বলিয়া বোধ হইবে, তাহা সেই দেশের প্রকৃতিক ব্যবহার বলিয়া, তদ্দেশে প্রচলিত হইলেও তাহা আর অন্যত্র প্রযুক্ত হইতে পারে না।।’২৪।।

দাক্ষিণাত্যে প্রস্তরাদি দ্বারা আঘাত করাও প্রচলিত আছে, তাদৃশ ব্যাপার অন্যত্র হইতে পারে না।।২৪।।

যদি বা কেহ কেহ তাহার ব্যবহার করে, তথাপি যাহা প্রাণ ও অঙ্গের ব্যাঘাত ঘটাইতে পারে, তাহা কোন মতেই অন্যত্র প্রযুক্ত করা উচিত নহে। তাহা নিশ্চয়ই পরিহার করিবে।।’২৫।।

চোলরাজ রতিপ্রাম্ভবে চিত্রসেনানাম্নী একটি গণিকার বক্ষঃস্থলে কীল প্রহার করিয়া, মারিয়া ফেলিয়াছিলেন।।’২৬।।

কুন্তলদেশোদ্ভূত শতকর্ণের পুত্র শাতবাহন, মহাদেবী মলয়বতীকে মদনোৎসবে কর্তরীপ্রহার করিয়া, মারিয়া ফেলিয়াছিলেন।।’২৭।।

পাণ্ড্যরাজ্যের সেনাপতি শস্ত্রপ্রহারে কুপাণি হইয়াছিলেন; কিন্তু অভিজ্ঞতা না থাকায়, সেই সেনাপতি নরদেব, রাজকূলে নৃত্যকারিণী চিত্রলেখানাম্নী নটীকে দেখিয়া অনুরাগবশত তাহার সহিত সম্প্রযোগে লিপ্ত হইয়াছিলেন। ক্রমশ রাগান্ধ হইয়া কপোলতলে বিদ্ধার প্রয়োগ করিয়াছিলেন; কিন্তু কুপাণি বলিয়া বিদ্ধা দুষ্প্রযুক্ত হওয়ায় নটিকে কানা করিয়া দিয়াছিলেন।।’২৮।।

এ বিষয়ে শ্লোক আছে–
এই প্রহণনব্যাপারের অনুষ্ঠানবিষয়ে যে শাস্ত্রতত্ত্বজ্ঞ, বা যে তদ্বিপরীত, তদুভয়েরই—এইটি ইহার পক্ষে সঙ্কটাবস্থানয়নকর কি না, সে বিষয়ে গণনা বা শাস্ত্রপরিগ্রহজনিত তত্ত্বজ্ঞানের অপেক্ষাই করে না। তবে রতিসংযোগে প্রবৃত্ত হইলে রাগ হ্রাস বা বৃদ্ধিই এবিষয়ে কারণ, অর্থাৎ যে ব্যক্তি বিমৃষ্যকারী, সে অত্যন্ত অনুরক্ত হইলেও তাদৃশ গণনা ও তত্ত্বজ্ঞানের সাহায্য লইয়া প্রহণন কর্তব্য কি না, নির্ধারণ করে, আর যে তদ্বিপরীত, সে কেবল রাগবশেই পরিচালিত হইয়া নিতান্ত আত্যয়িক ব্যাপারের অনুষ্ঠান করিয়া ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়া বসে। তন্মধ্যে বিমৃষ্যকারীর রাগ জ্ঞানপরিষ্কৃত, অন্যের রাগ জ্ঞানবিকল; সুতরাং তদ্দ্বারা যে আত্যায়িক ব্যাপার সংঘটিত হইবে, সে বিষয়ে আর সন্দেহ কি?’।।২৯।।

যে সময়ে উভয় সঙ্গত হয়, তখন উভয়েই রাগান্ধ হইয়া যে ব্যবহার করে, তাহা নিতান্ত অশ্রুতপূর্ব—

সুরতব্যবহারে তৎক্ষণাৎ যে সকল চেষ্টিত কল্পিত হইয়া থাকে, তাহা স্বপ্নেও দেখিতে পাওয়া যায় না।।’৩০।।

তুরগ যেমন জব নামক পঞ্চমী ধারাকে অবলম্বন করিয়া পথে মুড়াগাছ, (গতিকে) কল্পিতগর্ত বা গিরিগুহাকে বেগান্ধতাবশত দেখিতে পায় না; সেইরূপ রাগান্ধ কামীযুগল, সুরতসম্মর্দে লিপ্ত হইয়া, চণ্ডবেগে প্রবর্তিত হয়, তখন আর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।।’৩১।।

যেহেতু জ্ঞানবৈকল্য আত্যয়িক ঘটনাও ঘটিয়া যায়, এই হেতু জ্ঞান-প্রধান হইয়া, সম্প্রযুক্ত হইবে, এই কথা বলিতেছেন—

অতএব মৃদুতা, চণ্ডতা, যুবতীর বল এবং নিজেরও বল জানিয়া-শুনিয়া, সেই ভাবে শাস্ত্রজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি সম্প্রয়োগে প্রবৃত্ত হইবে।।’৩২।।

সকল সময়ে, সকল অবস্থায়, সকল নায়িকাপ্রাপ্ত হইয়াও সাম্প্রয়োগিক প্রয়োগ ব্যবহার করিতে পারা যায় না। তবে স্থান, দেশ ও কাল বিবেচনা করিয়া ইহার প্রয়োগ হইতে পারে।।’৩৩।।

ইতি শ্রীমদ্‌-বাৎস্যায়নীয়কামসূত্রে সাম্প্রয়োগিকনামক ষষ্ঠ-অধিকরণে প্রহণনপ্রয়োগ ও তদ্‌যুক্ত সীৎকৃতক্রম এই সপ্তম অধ্যায় সমাপ্ত।।৭।।



Post a Comment

Previous Post Next Post

POST ADS1

POST ADS 2